, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

Ismail hossain Ismail hossain

রাঙ্গুনিয়ার ঐতিহ্যবাহী আশুরা মেলা ও কারবালার স্মরণে জারি গানের আসর

প্রকাশ: ২০১৯-০৯-১০ ২১:২০:২২ || আপডেট: ২০১৯-০৯-১০ ২১:২০:২২

Spread the love

ইসমাঈল হোসেন নয়ন, রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধি: পবিত্র আশুরা উপলক্ষে রাঙ্গুনিয়ার ঐতিহ্যবাহী আশুরা মেলা ও জারি গানের আসর মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) পূর্ব সৈয়দবাড়ি রাহাতিয়া দরবার সংলগ্ন দীঘির পাড় ঘিরে অনুষ্ঠিত হয়েছে।

প্রতি বছরের ন্যায় মেলায় এবারো হাজার হাজার শিশুসহ সব বয়সীরা অংশ নিয়েছে।

দেড়শত বছরের পুরনো দিনব্যাপী এ মেলার সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় ছিল অনেকটা বিলুপ্তির পথে থাকা গ্রামীণ জারি গান।

কারবালার প্রান্তরে হযরত মুহাম্মদ(দ:) এর দৌহিত্র ইমাম হোসাইন(রা:) এর শহীদ ও কারবালার হৃদয়বিদারক ঘটনা বর্ণনা করে জারি গান করেন স্থানীয় গায়করা। কয়েকজন মিলে স্পিকারের চারপাশে ঘুরে ঘুরে জারি গান গাওয়া হয়। জারি গান দেখতে চারপাশে হাজার হাজার লোকসমাগম হয়।

ইছামতী গ্রাম থেকে জারী গান করতে এসেছে বৃদ্ধ ইছহাক মিয়া (৭৫)। তিনি বলেন, আমাদের ছোটবেলায় জারি গানের বেশ প্রচলন ছিল। তবে এই গান এখন বিলুপ্তির পথে। প্রতি বছর মোহরম মাসের ১০ তারিখ ইতিহ্যবাহী দীঘির পাড়ে এই জারী গানের আসর বসে। আমরা এখানে গানের মাধ্যমে এখানে আগতদের মাঝে কারবালার করুন কাহিনী বর্ণনা করি। ঐতিহ্যবাহী এই গান বাচিয়ে রাখতে তরুণ প্রজন্মকে এগিয়ে আসতে হবে।’

অন্যদিকে জারী গানের সাথে পাল্লা দিয়ে পসরা সাজিয়ে বসেছে ছটপটি, ঝালমুড়ি, চানাবুট-বাদাম সহ বিভিন্ন ধরণের খেলনার দোকান। এক পর্যায়ে এটি মেলায় রূপ নেয়। এই মেলায় নানা কায়দার দোলনা সহ উপভোগ করার মতো বিভিন্ন রাইড মেলায় আগত শিশুদের আকর্ষণের কেন্দ্র ছিল। সকাল থেকে মেলা শুরু হলেও বিকাল হতে হতে লোকসমাগম বাড়তে থাকে। দোকানীদের এসময় পন্য বিক্রি করতে হিমশিম খেতে হয়েছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। এছাড়াও সকাল থেকে আশুরা উপলক্ষে মরিয়মনগর ইউনিয়নের বিভিন্ন পাড়ায় পাড়ায় মোরগ লড়াই অনুষ্ঠিত হয়েছে।

এদিকে জারি গানের পাশাপাশি আগত সাধারণের মাঝে শরবত বিতরণ করেছে রাহাতিয়া দরবারের সাজ্জাদানশীন সৈয়দ ওবাইদুল মোস্তফা নঈমী। ১০ মহরম মাহফিলে শরবত ফাতেহা দরবারের ঐতিহ্য। এটার প্রচলন জারি গানের মতো শত বছরের পুরানো। এটি এখনো প্রচলন রয়েছে।

এই মেলার উৎপত্তি সম্পর্কে তিনি জানান, ‘আমার দাদা বড় হুজুর কেবলার আমলে এখানে ১০ মহরম কারবালার হৃদয়বিদারক ঘটনা নিয়ে জারি হতো। জারিতে লোকজন সমবেত হলে এখানে ছোট ছোট খাবারের দোকান বসত। পরবর্তীতে এটি মেলাতে রূপ নেয়। তবে এখানে শত শত বছর আগে দরবার এলাকায় শোহাদায়ে কারবালা মাহফিল হতো।’

মেলায় নিজের দুই বাচ্চাকে নিয়ে ঘুরতে এসেছেন পোমরা শান্তিরহাট এলাকার মোহরম মিয়া। তিনি জানান, ‘এটি ছোটদের জন্য আকর্ষনীয় । সারা বছর ছোটরা সহ এলাকার জনসাধারণ অপেক্ষা করতে থাকে এই মেলার জন্য। নিজের বাচ্চারা এখানে আসলে ঐতিহ্যবাহী জারি গান দেখার পাশাপাশি ১০ মহরমের তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা সম্পর্কে জানতে পারে।’

সরফভাটা থেকে মেলায় আসা জামাল উদ্দিন জানান, প্রতি বছরের মতো তিনি এবছর বন্ধুদের সাথে নিয়ে মেলায় এসেছেন। এই মেলা মহরমের তাৎপর্যের পাশাপাশি রাঙ্গুনিয়ার ঐতিহ্যের একটি নিদর্শন।’

রাণীরহাট থেকে আসা মো. জসিম জানান, ‘মেলার ঐতিহ্য সম্পর্কে শুনলেও কখনো আসা হয়নি। তবে এবার এসে ধারণার চাইতেও বেশি ভাল লাগছে।’

রাঙ্গুনিয়া পৌরসভার ৯ ওর্য়াড কাউন্সিল মো. লোকমানুল হক তালুকদার জানান, তার এলাকায় প্রতি বছর মেলা বসে। কোন রকম প্রচার প্রচারণা ছাড়াই এখানে প্রচুর লোকসমাগম হয়। তিনি র্দীঘদিন এ মেলার আয়োজকদের বিভিন্ন রকম সহায়তা করে আসছেন। এবারও তিনি মেলায় উপস্থিত থেকে সহায়তা করে করছেন।

মেলার অন্যতম আয়োজক মোরশেদ তালুকদার জানান, মেলার আইন শৃঙ্খলা ঠিক রাখতে প্রতি বছর মেলার শেষ পর্যন্ত তদারকি করতে হয়। মেলায় বসা দোকানীদের কাছ থেকে তেমন টাকা পয়সা নেওয়া হয়না জানিয়ে তিনি বলেন, স্থানীয় মসজিদের উন্নয়ন কাজের জন্য ১০/২০ টাকা নেওয়া হয়। তবে যারা দিতে চায়না তাদের কাছ থেকে জোর করে নেওয়া হয়না।

Logo-orginal