, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

jamil Ahamed jamil Ahamed

দক্ষিণ আফ্রিকায় বাংলাদেশীদের দোকানে প্রকাশ্যে লুটপাট

প্রকাশ: ২০১৯-০৯-০৪ ১৩:০৫:০৫ || আপডেট: ২০১৯-০৯-০৪ ১৩:০৫:০৫

Spread the love

দক্ষিণ আফ্রিকার বাণিজ্যিক রাজধানী জোহানেসবার্গে বিক্ষোভকারীরা বিদেশী মালিকানাধীন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে ভয়াবহ লুটপাট চালিয়েছে। এ সময় তারা বেশ কিছু গাড়ি, দোকান ও ভবনে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ ঘটনার পর পুলিশ কয়েক ডজন বিক্ষোভকারীক গ্রেফতার করেছে।

সোমবার এক বিবৃতিতে পুলিশ জানিয়েছে, কমপক্ষে ৭০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তা ছাড়া এক সপ্তাহের মধ্যে দ্বিতীয়বারের মতো শহরজুড়ে দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়েছে। স্থানীয় বার্তা সংস্থা নিউজ ২৪ জানায়, বিদেশীদের দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে চলে যাওয়ার দাবিতে কয়েক দিন আগে জোহানেসবার্গের সেন্ট্রাল বিজনেস ডিস্ট্রিক্টে (সিবিডি) কয়েক শ’ লোক বিক্ষোভ মিছিল করে। ওই বিক্ষোভকারীরাই বিদেশী নাগরিকদের মালিকানাধীন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলোকে হামলার লক্ষ্যবস্তু করেছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থাটি। এ সময় তারা রাস্তার পাশে পার্কিং করা গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিলে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। এ দিকে প্রাদেশিক কমিশনার ফেসবুকে এক বিবৃতিতে বলেন, অপরাধমূলক সুযোগ সন্ধানীদের দ্বারা বিদেশী নাগরিকদের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে হামলা ও সহিংসতার নিন্দা জানায় পুলিশ।
সূত্রের খবরে জানা গেছে, জোহানেসবার্গ শহরের স্মল অ্যাস্টেট, ব্রিরি অ্যাস্টেট, জিপি অ্যাস্টেট, এমটিএন ট্যাক্সি র্যাংগস, ব্রি ট্যাক্সি র্যাঙ্ক, হিলব্রো, নিউটাউনসহ আশপাশের সব শহর যেমন মালভেন, প্রিমরোজ, বস্তুরাজ, থেমবিছা, জার্মিস্টন, রজেটন বিল, নিউক্যাসেল অভিবাসীদের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে দিনভর হামলা ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে পুলিশের পূর্ব প্রস্তুতি ছিল না বা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা কম থাকায় এ হামলা ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। মঙ্গলবার জোহানসবার্গ শহরের আশপাশের সব যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়।

রোববার রাত থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত মালভেনের জুলিস অ্যাস্টেটে স্থানীয় কৃষ্ণাঙ্গ নাগরিকরা নারকীয় তাণ্ডব চালিয়ে প্রায় ২০০ দোকান ১০০ গাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে। এ ছাড়া প্রিটোরিয়া শহর ও তার আশপাশের এলাকায় হামলা ও লুটপাট চলেছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে হামলা ও লুটপাট, অগ্নিসংযোগ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
এ দিকে সোমবার সহিংসতার ঘটনায় নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী জিওফ্রে ওনিয়ামা তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। ২০১৫ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় নাইজেরিয়ার অভিবাসীদের ওপর সহিংস হামলার পর দেশটি তাদের রাষ্ট্রদূতকে প্রত্যাহার করে নিয়েছিল।

বিদেশীদের দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে চলে যাওয়ার জন্য জুলু রাজা গুডউইল যোযেলিথিনির কথিত আহ্বানের পর বিদেশীরা স্থানীয়দের হামলার শিকার হয়ে আসছে। দক্ষিণ আফ্রিকা অঞ্চলসহ মহাদেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে অর্থনৈতিক অভিবাসীদের একটি প্রধান গন্তব্য দক্ষিণ আফ্রিকা। কাজের সন্ধানে প্রতিবেশী লেসোথো, মোজাম্বিক ও জিম্বাবুয়ে থেকে অনেক লোক এখানে আসেন।

উল্লেখ্য, গত রোববার এই অস্থিরতা শুরু হয়েছিল যখন জোহানেসবার্গের সেন্ট্রাল বিজনেস ডিস্ট্রিক্টের (সিবিডি) একটি পুরাতন ভবনে আগুন লেগে সেটি ধসে পড়ে এবং কমপক্ষে তিনজন মারা যান। এ ঘটনার পরপরই সহিংসতা দু’টি পূর্ব শহরতলী এবং কার্যনির্বাহী রাজধানী প্রিটোরিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। যেখানে স্থানীয় গণমাধ্যম দোকানে অগ্নিসংযোগের খবর জানায়। মূলত সিবিডি, অর্থনৈতিক অভিবাসী ঘেরা একটি কেন্দ্রীয় ব্যবসায়িক অঞ্চল।

এ দিকে সোমবার দক্ষিণ আফ্রিকার নিজস্ব সম্প্রদায়ের বাইরের অধিবাসীদের তাড়াতে একটি উসকানিমূলক বুকলেট সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া হয়।
সিসনকে পিপলস ফোরাম নামে পরিচিত একটি গ্রুপ এই বুকলেট ছড়িয়ে দেয়ার পেছনে কাজ করেছে। এতে তারা অভিযোগ করেছে যে, বিদেশীরা তাদের দেশে এসে মাদক বিক্রি করছে এবং চাকরি ছিনিয়ে নিচ্ছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বৃহত্তর জোহানসবার্গ অঞ্চলে বিদেশীদের বিরুদ্ধে নিয়মিত সহিংসতার ঘটনাকে উসকে দিতে এই দু’টি ইস্যুকে তারা ব্যবহার করছে।

প্রধান বিরোধী ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স পার্টি বলেছে, এই ঘটনাগুলো একটি ব্যর্থ অর্থনীতির কারণে ঘটছে, যেখানে ১০ কোটিরও বেশি দক্ষিণ আফ্রিকান কাজ খুঁজে পাচ্ছে না। ক্ষমতাসীন আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস এবং গণতান্ত্রিক জোট উভয়ই এসব ঘটনার জন্য বিদেশভীতিকে দুষছে।

সূত্র : আলজাজিরা।

Logo-orginal