, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

jamil Ahamed jamil Ahamed

ফের অথৈ পানিতে থৈ থৈ করছে বন্দর নগরী

প্রকাশ: ২০১৯-০৯-১৩ ০৯:৪৩:৫৪ || আপডেট: ২০১৯-০৯-১৩ ০৯:৪৩:৫৪

Spread the love

চট্টগ্রামঃ শরতের মুষলধারার টানা ভারী বর্ষণ ও জোয়ারের পানিতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। কোথাও হাঁটু সমান আবার কোথাও কোমর সমান পানিতে নগরীর অধিকাংশ রাস্তাঘাট ডুবে যায়। দুর্ভোগে নাকাল হয়েছে নগরবাসী।

বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানি ঢোকার কারণে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ও ব্যবসা-বাণিজ্য অনেকটা বিপর্যস্ত হয়েছে। বিশেষ করে শিক্ষার্থী ও অফিসগামী নাগরিকদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে অনেক বেশি। খবর দৈনিক আজাদীর ।

এদিকে চট্টগ্রামে আজও ভারি বর্ষণ হতে পারে বলে জানায় পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস। এদিকে ওয়াসার মোড় থেকে আলমাস মোড় পর্যন্ত হাঁটু পানিতে ছিন্নমূল অনেক শিশুকে সাঁতার কাটতে দেখা গেছে। এসময় একটি প্রাইভেট কারে পানি ঢুকে ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়। এদিকে প্রবর্ত্তক মোড়েও কোমর সমান পানি হয়েছে। একটানা ভারী বর্ষণে চট্টগ্রামে পাহাড় ধসের আশঙ্কায় নগরীর ১৭টি পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের নিরাপদে সরে যাওয়ার জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে ৮টি। গতকাল দিনভর টানা বর্ষণে নগরীর অনেক এলাকায় দোকান ও বাসা-বাড়িতে পানি ঢোকেছে।

পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস জানায়, চট্টগ্রামে গত ১২ ঘণ্টায় (সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত) ৮২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় ১০৪ দশমিক ৪মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে বলে জানান আবহাওয়া অফিসের ডিউটি সহকারী মাহমুদুল আলম। তিনি আজাদীকে জানান, মৌসুমী নিম্নচাপের প্রভাবে আরও কয়েকদিন ঝড়ো হাওয়াসহ ভারি বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে। একই সঙ্গে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
সরেজমিন নগরীর বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে এবং খবর নিয়ে জানা গেছে, কোমর পানিতে ডুবে গেছে ষোলশহর রেল স্টেশন থেকে শিক্ষা বোর্ডের সামনের সড়ক। কর্ণফুলী গ্যাস অফিসের সামনের রাস্তাও ডুবে গেছে। কর্ণফুলী গ্যাস অফিসের সামনে রিক্সা ও ট্যাক্সি উল্টে ৩ যাত্রী আহত হয়েছেন বলে এক প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন।

বায়েজিদ বোস্তামী রোড একটানা বর্ষণে পানিতে তলিয়ে গেছে। এছাড়াও পানিতে তলিয়ে গেছে আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকা, হালিশহর, আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকা।এদিকে ঘাটফরহাদবেগ, খলিফাপট্টি, দেওয়ানবাজার, চকবাজার, কাপাসগোলা, মুরাদপুর, ২নম্বর গেটসহ নগরীর বিভিন্ন এলাকা হাঁটু পানিতে ডুবে গেছে।

গতকাল সকাল থেকে থেমে থেমে বর্ষণের ফলে সড়কে কমে যায় গণপরিবহনও। পানির সাথে পাল্লা দিয়ে যানজটের পাশাপাশি গাড়ি ভাড়াও বেড়ে যায় কয়েকগুণ। এতে দুর্ভোগে পড়েন নগরবাসী।

সিডিএ আবাসিক এলাকার ১ নম্বর রোডের বাসিন্দা মো. মিজান জানান, আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকার প্রায় অংশ পানিতে ডুবে গেছে। আমার বাসার আশপাশের পুরো এলাকা পানিতে ডুবে যাওয়ায় বাসায় ফিরতে মাত্র ২০০ ফুট দূরত্বের রাস্তার জন্য ৭০ টাকা রিক্সা ভাড়া দিতে হয়েছে। জলাবদ্ধতার কারণে সড়কে ঘণ্টার পর ঘণ্টা মোড়ে মোড়ে দাঁড়িয়ে জবুথবু মানুষগুলোকে গাড়িতে উঠতে হিমশিম খেতে হয়। নগরের ওয়াসার মোড়, জিইসি মোড়, ২ নং গেট, মুরাদপুর, নিউ মার্কেট, চকবাজার, হালিশহর, বহদ্দারহাট, শুলকবহর, প্রবর্তক মোড়, কাতালগঞ্জ, বাদুরতলা, কাপাসগোলা, অক্সিজেন মোড়, আগ্রাবাদসহ বিভিন্নস্থানে সড়কে বৃষ্টির পানি জমে যাওয়ায় যানবাহন ও পথচারীদের চলাচলে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়।

দুপুর বারোটা থেকে দেড়টা পর্যন্ত একটানা ভারী বর্ষণে চকবাজারের চক সুপারমার্কেট এলাকায় সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, চক সুপার মার্কেটের সামনে হাঁটু পরিমাণ পানি। নগরীর বিভিন্ন স্থানে পানি জমে থাকায় অফিসগামী ও অফিসফেরত চাকরিজীবী, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের দুর্ভোগে পড়তে হয়। নগরীর নাসিরাবাদ হাই স্কুলের মোড়, বাওয়া স্কুলের মোড়, চকবাজার গুলজার মোড় ও অলি খাঁ মসজিদ মোড় এলাকায় স্কুল, কলেজ থেকে ঘরমুখী শিক্ষার্থীদেরকে গাড়ির জন্য দীর্ঘ সময় ধরে অপেক্ষা করতে দেখা যায়। বিকাল ৪টায় স্কুল ছুটির সময়ও ভারী বৃষ্টিপাত হয়। এসময় টানা বৃষ্টির কারণে সেন্ট মেরী’স স্কুলের শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের গাড়ির জন্য রাস্তায় দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে দেখা যায়।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের প্রস্তুতি ঃ নগরীতে ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেনের নির্দেশে নগরীর ঝুঁকিপূর্ণ ১৭ টি পাহাড় সংলগ্ন এলাকা থেকে বসবাসরতদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে মাইকিং করা হয়েছে। এই কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। গতকাল সকাল থেকে চট্টগ্রাম মহানগরের ছয়টি সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগণের সমন্বয়ে ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় গুলো থেকে মানুষ সরিয়ে নেয়ার কাজ শুরু হয়। মতিঝর্ণা-বাটালিপাহাড়, ফয়’স লেক সংলগ্ন ঝিল এলাকা, চান্দগাঁও এলাকাধীন মিয়ার পাহাড়, ট্যাংকির পাহাড় সংলগ্ন এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের নিরাপদ স্থানে সরে যাবার আহবান জানিয়ে সকাল থেকে মহানগরীর ছয়টি সার্কেলের সহকারী কমিশনারের (ভূমি) তত্ত্বাবধানে স্থানীয় মসজিদ থেকেও মাইকিং করা হয়।
আকবর শাহ এলাকা ও পাহাড়তলি এলাকার পাহাড়গুলোর জন্য আশ্রয় কেন্দ্র ঃ পাহাড়তলি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। কৈবল্যধাম, লেকসিটি, ফয়’স লেক এলাকার ১ নং ঝিল, ২ নং ঝিল এলাকার জন্য আশ্রয়কেন্দ্র ঃ কোয়াড পি-ব্লক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বিশ্ব কলোনী, কৈবল্যধাম হাউজিং এস্টেট, পাহাড়তলি, মধুশাহ পাহাড়, পলিটেকনিক কলেজ সংলগ্ন পাহাড়ের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র ঃ চট্টগ্রাম মডেল হাইস্কুল।

জালালাবাদ হাউজিং সংলগ্ন পাহাড়ের জন্য আশ্রয় কেন্দ্র ঃ জালালাবাদ বাজার সংলগ্ন শেড, ট্যাংকির পাহাড়ের আশ্রয়কেন্দ্র ঃ আল হেরা ইসলামিয়া মাদ্রাসা। মিয়ার পাহাড়ে আশ্রয়কেন্দ্র ঃ রৌফাবাদ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়। মতিঝর্ণা পাহাড় ঃ লালখান বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। পোড়া কলোনী এলাকার পাহাড়ের জন্যঃ ছৈয়দাবাদ স্কুল।
পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এ বছর মে-জুলাই পর্যন্ত দুই দফায় নগরীর ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় থেকে প্রায় ৮০০টির মতো ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে বসবাসকারী পরিবারকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। এসব পাহাড় থেকে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার পর ব্যক্তি মালিকানাধীন পাহাড়ের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও সরকারি সংস্থার নিয়ন্ত্রণাধীন পাহাড়গুলোর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে জেলা প্রশাসন চট্টগ্রামের পক্ষ থেকে দখল বুঝিয়ে দেয়া হয়েছিল।

x

Logo-orginal