admin
প্রকাশ: ২০১৯-১০-২৯ ০৮:৩৭:৫৯ || আপডেট: ২০১৯-১০-২৯ ০৮:৩৭:৫৯
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যায় জড়িত ৩ জনের নাম মামলার এজাহার থেকে বাদ পড়েছে।
এমনকি আবরারকে রুম থেকে ডেকে নেয়া এবং পিটিয়ে হত্যার পর লাশ নামিয়ে আনা একজনের নামও আসেনি। এসব দাবি করে আবরারের পরিবারের সদস্যরা বলছেন, সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যালোচনা করে দেখা যাচ্ছে, হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নেয়া ৩ শিক্ষার্থীর নাম মামলার এজাহার থেকে বাদ পড়েছে।
এরা হলেন- ১৭ ব্যাচের শিক্ষার্থী সাইফুল, ছাত্রলীগের উপদফতর সম্পাদক মুজতবা রাফিদ ও গালিব। চার্জশিটে এদের নাম অন্তর্ভুক্তির দাবি করেছেন আবরারের বাবা বরকতউল্লাহ। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বলেছেন, কোনো আসামি বাদ পড়লে অবশ্যই চার্জশিটে তার নাম অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
আবরারের ছোট ভাই আবরার ফাইয়াজ বলেন, সিসিটিভির ফুটেজে হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের অবস্থান পরিষ্কার হয়ে গেছে। কয়েকটি ফুটেজে বিভিন্নভাবে হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয়াদের শনাক্ত করা যাচ্ছে।
মামলার সময় সব ফুটেজ দেখা হয়নি। তাই অনেকেই মামলার এজাহার থেকে বাদ পড়েছেন। তিনি বলেন, হত্যায় অংশ নেয়া ১৭ ব্যাচের শিক্ষার্থী সাইফুল সরাসরি জড়িত ছিল।
ভাইয়াকে রুম থেকে ডেকে নেয়ার সময় সাইফুলকে দেখা গেছে এবং পিটিয়ে যখন লাশ বাইরে বের করা হচ্ছে, তখন অনেকের সঙ্গে সাইফুলও ভাইয়াকে ধরে বের করেছে। অথচ এজাহারে তার নাম নেই।
১৭ ব্যাচের আরেক শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের উপদফতর সম্পাদক মুজতবা রাফিদ টর্চার সেলে ভাইয়ার মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে চেক করতে থাকে, তার সঙ্গে শিবিরের কোনো কানেকশন আছে কি না তা দেখার জন্য?
তার নামও মামলার এজাহারে আসেনি। ভাইয়াকে ধরে নিয়ে যাওয়া থেকে শেষ পর্যন্ত সিসিটিভির ফুটেজ পর্যালোচনা করে দেখা যাচ্ছে, আরেক শিক্ষার্থী গালিব একাধিকবার টর্চার সেলে আসা-যাওয়া করেছে। তার নামও নেই এজাহারে।
আবরারের বাবা ও মামলার বাদী বরকতউল্লাহ বলেন, সিসিটিভির ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, হত্যায় অংশ নেয়া অনেকের নামই মামলায় নেই। ৭ অক্টোবর আবরারের লাশ আনতে আমি ঢাকায় যাই। ওই সময় তাড়াহুড়া করে পুলিশ আমাকে যেভাবে বলেছে আমি সেভাবে মামলা করেছি। আমি তো কাউকে চিনি না। পুলিশ নিজেই আসামিদের শনাক্ত করে রেখেছিল। আমি শুধু মামলার কপিতে স্বাক্ষর করেছি।
এখন একের পর এক সিসিটিভির ফুটেজ দেখছি। হত্যায় অংশ নেয়া অনেকেই এজাহার থেকে বাদ পড়েছে। মামলা থেকে বাদ পড়া খুনিদের চার্জশিটে নাম অন্তর্ভুক্তির দাবি করেন বরকতউল্লাহ। রোববার সন্ধ্যায় এ প্রতিবেদককে আবরারের বাবা ও ভাই এসব কথা বলেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) এসআই ওহিদুজ্জামান বলেন, মামলার তদন্ত চলছে। সিসিটিভির ফুটেজসহ সবকিছুই পর্যালোচনা করা হচ্ছে। কোনো আসামি বাদ পড়লে চার্জশিটে অবশ্যই তাদের নাম আসবে।
৬ অক্টোবর রাতে ছাত্রলীগের নির্মম নির্যাতনে মারা যান বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ। ভারতের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি নিয়ে ৫ অক্টোবর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন ফাহাদ।
পরদিন ৬ অক্টোবর রাতে শেরেবাংলা হলের নিজের ১০১১ নম্বর কক্ষ থেকে তাকে ডেকে নিয়ে ২০১১ নম্বর কক্ষে বেধড়ক মারধর করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। পিটুনির সময় নিহত আবরারকে ‘শিবিরকর্মী’ হিসেবে চিহ্নিত করার চেষ্টা চালায় খুনিরা।
এসএম মাহমুদ ওরফে সেতু ৪ দিনের রিমান্ডে : আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় বুয়েটের সাবেক ছাত্র এসএম মাহমুদ ওরফে সেতুর চারদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। সোমবার শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম মোহাম্মদ জসিম আসামির রিমান্ডের এ আদেশ দেন। সেতু বুয়েটের ১৪তম ব্যাচের ছাত্র।
চলতি বছরের এপ্রিলে তিনি কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ থেকে স্নাতক পাস করেন।
এদিন আসামিকে আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। অপরদিকে আসামিপক্ষে রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করা হয়। শুনানিতে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা বলেন, চলতি বছরেই সেতু পড়ালেখা শেষ করেছে।
এরপর সে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছে। নতুন ছাত্র না এলে পুরনো ছাত্রের নামে রুম এন্ট্রি করা থাকে। এজন্য আসামির নামে রুম বরাদ্দ আছে। আসামির নাম এজাহারে নেই।
রিমান্ডের প্রয়োজন হলে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করা হোক। অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষে হেমায়েত উদ্দিন খান হিরনসহ কয়েকজন আইনজীবী আসামির রিমান্ড চেয়ে শুনানি করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত আসামির রিমান্ডের ওই আদেশ দেন।
এদিকে শুনানির আগে সেতু সাংবাদিকদের বলেন, ঘটনার সময় আমি রুমেই ছিলাম। পাশের রুম থেকে চিৎকার শুনতে পাই। এরপর সেখানে যাই। মিজান (আসামি) আবরারকে মারা শুরু করলে আমি ওই রুম থেকে চলে আসি।
এরপর ক্যান্টিনে গিয়ে খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ি। আমি কিছু করিনি। আমার দেখা ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না। আবরারকে রনি, সকাল, মিজান, রবিন, জেমিসহ সাত থেকে আটজন মেরেছে। আমি শুধু দেখেছি। কিন্তু প্রতিবাদ করতে পারিনি। আর প্রতিবাদ না করাটাই আমার অন্যায় হয়েছে।
সেতুকে রোববার সন্ধ্যা ৭টার দিকে রাজধানীর বাংলামোটর থেকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি বুয়েটের শেরেবাংলা হলের ২০১২ নম্বর রুমে থাকতেন। মামলার এজাহারে তার নাম না থাকলেও স্বীকারোক্তি দেয়া আসামিরা তার নাম প্রকাশ করেছেন।
আবরার নিহতের ঘটনায় তার বাবা মো. বরকতউল্লাহ বাদী হয়ে চকবাজার থানায় মামলা করেন। মামলায় ১৯ জনের নাম উল্লেখ করা হলেও আরও অজ্ঞাতনামাদের আসামি করা হয়। মামলায় ২১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এর মধ্যে ১৬ জন মামলার এজাহারভুক্ত আসামি। এছাড়া গ্রেফতার হওয়া আসামিদের মধ্যে আটজন আদালতে দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। স্বীকারোক্তি দেয়া সবাই বুয়েট ছাত্রলীগের নেতাকর্মী। উৎসঃ যুগান্তর ।