, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

admin admin

তীর্থস্হান’ চন্দ্রনাথের পাহাড় চূড়ায় এক দিন”

প্রকাশ: ২০১৯-১১-০৩ ২০:৩১:৪০ || আপডেট: ২০১৯-১১-০৩ ২০:৩১:৪০

Spread the love

রাকিবউদ্দিন, বিনোদন ডেস্কঃ রাজীব কাব্য সার্দান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করেছে কিছু দিন হলো।সে ট্রাভেল করতে আর ছবি তোলতে পছন্দ করে।তিনি তার বন্ধুদের সাথে গিয়ে ছিলেন চন্দ্রনাথ পাহাড়ের চূড়ায়। তার পাহাড় যাত্রা কেমন ছিল সে গল্প আর নতুন বন্ধুরা কিভাবে চন্দ্রনাথ পাহাড় ভ্রমণে সহজ হবে। এক এক করে সব প্রশ্নের উত্তর দেন রাজীব কাব্য।

ভ্রমন কার না ভালো লাগে? ভ্রমনের নেশা প্রায় সবারই থাকে যদি সেটা হয় সমুদ্র কিংবা সবুজে ঘেরা অরণ্য। কারও কারও ভালোলাগার তালিকায় থাকে এ্যাডভেঞ্চার, হিল ট্রেকিং, কাই কিং ইত্যাদি। আমাদের ক্ষেত্রেও তার বিপরীত হলো না, আমি রাজীব, লুসাই দাদা, মূর্ছনা, আদি, রাকিব, রাহিম ও জয় ৭ সদস্য বিশিষ্ট বন্ধুদের নিয়ে চলে ভ্রমনের পরিকল্পনা তবে আমাদের ৭ জনের মধ্যে ২জন রাকিব আর জয় যেতে পারছে না তাদের ব্যক্তিগত কাজের কারণে। একে তো ছুটির দিন ২য়ত পরের দিন কারও কারও অফিস তো কারও কারও পড়াশোনা। আমাদের বন্ধুদের মধ্যে আমাদের লুসাই দাদা ছিলেন সিনিয়র বন্ধু, বয়সের তুলনায় তিনি আমাদের মত প্রাপ্তবয়স্ক ছেলে-মেয়েদের সাথে মিসতে ভালোবাসেন বিশেষ করে আমাদের কয়েকজনের সাথে। তো আমাদের আড্ডা প্রায় শিল্পকলা ঘিরেই চল, সেই দিনও তার ব্যতিক্রম হলো না আড্ডা দেয়ার সময় হঠাৎ আদি বলে বসলো চলেন সবাই মিলে কোথাও ঘুরতে যায়, কাছে কোথাও, সকালে বের হলে বিকেলে ফিরে আসা যায় এমন তো সবাই চিন্তা করতে থাকলো কোথায় যাওয়া যায়? রাহিম বলছে একটা, মূর্ছনা বলছে একটা, আর আমি বলছি একটা এভাবে বলতে বলতে হঠাৎই আদি বলে উঠলো সীতাকুণ্ড চন্দ্রনাথ পাহাড়ের কথা আদি বললো এ্যাডভেঞ্চারও হবে সাথে হিল ট্রেকিংও হবে তো আমাদের ডেসটিনেশন ঠিক করা হলো চন্দ্রনাথ অভিযান।এরপর পরিকল্পনা করা হলো কিভাবে যাওয়া যায় ও খাওয়াদাওয়া নিয়ে, তাও ঠিক করা হল। ঠিক করা হলো .

সকাল ৭টায় সবাই জিইসি মোড়ে হাজির হবে (ভ্রমণ প্রিয়দের সুবিধার্থে ছোট্ট করে ভ্রমণ গাইড দিচ্ছি, এটা আমাদের যাওয়া অনুযায়ী,এক্ষেতে যাত্রার ভাড়া এদিক-সেদিক হতে পারে যাই হোক মূল কথায় ফিরে আসি।

তো চন্দ্রনাথ পাহাড় ও মন্দির দেখতে কিভাবে যাবেন : চন্দ্রনাথ পাহাড় চট্রগ্রাম জেলার সীতাকুণ্ড উপজেলায় অবস্থিত। তাই যে জায়গা থেকেই চন্দ্রনাথ পাহাড় দেখতে চান আপনাকে প্রথমে সীতাকুণ্ড বাজার আসতে হবে। সীতাকুণ্ড বাজার থেকে জনপ্রতি ২০ টাকা সিএনজি ভাড়ায় চলে যেতে পারবেন চন্দ্রনাথ পাহাড়ের পাদদেশে।

ঢাকা থেকে বাসে সীতাকুন্ড : ঢাকার সায়েদাবাদ, ফকিরাপুল, মহাখালি যে কোন বাস স্ট্যান্ড থেকে চট্রগ্রাম গামী যে কোন বাসে করেই যেতে পারবেন সীতাকুন্ড। এস আলম, শ্যামলি, সৌদিয়া, ইউনিক, হানিফ, ঈগল, এনা প্রভৃতি পরিবহনের নন এসি বাস ভাড়া ৪২০- ৪৮০ টাকা। এসি বাসের মধ্যে গ্রিনলাইন, সৌদিয়া, সোহাগ, টি আর এইসব বাস ভাড়া ৮০০-১১০০ টাকা

ঢাকা থেকে ট্রেনে সীতাকুন্ড : ঢাকা থেকে চট্রগ্রাম গামী যে কোন আন্তঃনগর ট্রেনে এসে ফেনী স্টেশনে নামতে হবে। শ্রেনী ভেদে ট্রেন ভাড়া জন প্রতি ২৬৫-৮০০ টাকা। ফেনী স্টেশন থেকে ১০-১৫ টাকা রিক্সা/অটো দিয়ে ফেনী মহিপাল বাস স্ট্যান্ড যেতে হবে। সেখান থেকে লোকাল বাসে ৫০-৮০ টাকা ভাড়ায় সীতাকুন্ড যেতে পারবেন।

চট্টগ্রাম থেকে সীতাকুন্ড: চট্টগ্রাম থেকে সিএনজি বা অটোরিক্সা রিজার্ভ নিয়ে সীতাকুণ্ডে আসতে ভাড়া লাগবে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। আর বাসে করে যেতে চাইলে আপনাকে চট্টগ্রাম নগরীর অলংকার, এ কে খান মোড় অথবা কদমতলী যেতে হবে। লোকাল বাসে সীতাকুণ্ড যেতে পারবেন ৪০- ৮০ টাকা ভাড়ায়।

কোথায় থাকবেন: সীতাকুণ্ডে থাকার জন্য হোটেল সৌদিয়া, সাইমুন আবাসিক সহ সীতাকুণ্ড বাজারে কয়েকটি মাঝারি মানের আবাসিক হোটেল আছে। হোটেল সৌদিয়ায় বুকিং দিতে ফোন করতে পারেন 01991-787979, 01816-518119 নাম্বারে। এছাড়া এখানে টেলি-কমিউনিকেশনের অধীনস্থ একটি ডাকবাংলো আছে। অনুমতি নিয়ে সেখানে থাকার চেষ্টা করতে পারেন। ভালো কোথাও থাকতে চাইলে চট্টগ্রাম অলংকার মোড়ে মোটামুটি মানের ৬০০-১৫০০ টাকায় হোটেলে রাত্রি যাপন করতে পারবেন। এছাড়া স্টেশন রোড, নিউমার্কেট, জিইসি মোড়ের আশেপাশে বিভিন্ন মানের আবাসিক হোটেলে রাত্রি যাপন করতে পারবেন।

কোথায় খাবেন : সীতাকুণ্ডে সাধারণ মানের হোটেলের মধ্যে সৌদিয়া রেস্টুরেন্ট, আপন রেস্টুরেন্ট এবং আল আমিন উল্লেখ্যযোগ্য। তবে ভাল খাবার পরিবেশনায় এখানে আল আমিনের বেশ সুনাম রয়েছে।

সীতাকুন্ডের অন্যান্য দর্শনীয় স্থান : সীতাকুণ্ডে ঘুরে বেড়ানোর জন্যে অনেক জায়গাই আছে। কাছাকাছি হওয়ায় চাইলে দিনে দিনে অনেক গুলো জায়গাই ঘুরে দেখতে পারবেন। এক রাত থেকে দুইদিনের জন্যে ঘুরতে গেলে প্রায় সবগুলো জায়গাই ঘুরে দেখা সম্ভব। আপনার কত সময় আছে, সেই হিসেব করে পরিকল্পনা করে নিতে পারেন কি কি দেখবেন। সীতাকুণ্ডে জনপ্রিয় ভ্রমণ স্পট গুলো হলোঃ সীতাকুণ্ড ইকো পার্ক, গুলিয়াখালি বীচ, বাঁশবাড়িয়া বীচ, ঝরঝরি ঝর্ণা, কুমিরা সন্দ্বীপ ফেরী ঘাট, নাপিত্তাছড়া ঝর্ণা, কমলদহ ঝর্ণা ইত্যাদি সমূহ।

আমাদের প্ল্যান অনুযায়ীআমরা জিইসি থেকে এলাম এ,কে,খান মোড় ওখানে নেমেই হালকা নাস্তা খেয়ে নিলাম তারপর আমরা উঠে পরলাম বাসে। বাস তার নির্দিষ্ট সময়ে যাত্রা শুরু করলো। প্রায় ৪০ থেকে ৪৫ মিনিটে পৌঁছে গেলাম আমাদের গন্তব্যস্থল সীতাকুণ্ড বাজার। বাজার থেকেই আমরা সিএনজি ঠিক করেই উঠে পরলাম, যাত্রা আবার শুরুহলো সীতাকুণ্ড চন্দ্রনাথ পাহাড় অভিযান। (এখানে বলে রাখা ভালো সিএজিতে উঠার আগে পানির বোতল আর স্যালাইন অবশ্যই নিতে ভুলবেন না) এরপর ২.৪ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ১৫ মিনিটের মধ্যেই পৌঁছে গেলাম আমাদের ফাইনাল ডেসটিনেশন সীতাকুণ্ড চন্দ্রনাথ পাহাড়। চন্দ্রনাথ পাহাড়ে যাবার পথে ছোট একটি ঝর্ণা দেখাঁ যায়। এই ঝর্ণার কাছ থেকে পাহাড়ে উঠার পথ দুই দিকে চলে গেছে। ডান দিকের পথটির পুরোটাতেই পাহাড়ে উঠার জন্য সিঁড়ি তৈরি করা আর বাম পাশের পথটি সম্পূর্নই পাহাড়ি। সাধারণত পাহাড়ি পথ দিয়ে উপরে উঠা তুলনামুলক সহজ আর সিঁড়ির পথে নামাতে সহজ হয়। চন্দ্রনাথ পাহাড়ের উচ্চতা ১১৫২ ফুট। হেঁটে উঠতে একটু পরিশ্রমের কাজ হলেও আপনার হাঁটার উপর নির্ভর করবে কতক্ষণ লাগবে।

সাধারণত ১ ঘন্টা ৩০ মিনিটের মত সময় লাগবে আসতে ধীরে উঠলে। চন্দ্রনাথ পাহাড়ের উপরেই চন্দ্রনাথ মন্দির অবস্থিত। চন্দ্রনাথ পাহাড়ের মাঝামাঝি দূরত্বে এবং চূড়ায় মন্দিরের কাছে ছোট টং দোকান আছে সেগুলিতে হালকা খাবার এবং পূজা দেয়ার উপকরণ পাওয়া যায়, তবে ভালো হয় উঠার সময় সাথে পর্যাপ্ত পানি ও কিছু শুকনো খাবার সাথে রাখলে। আর এই হলো আমাদের ছোট ভ্রমণ অভিজ্ঞত।

Logo-orginal