, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

admin admin

জাতীয় পরিচয়পত্র নেননি সন্তু লারমা” ভোগ করছেন মন্ত্রীত্বসহ সকল সুবিধা!

প্রকাশ: ২০১৯-১২-০২ ১৯:৫০:০৩ || আপডেট: ২০১৯-১২-০২ ১৯:৫০:০৩

Spread the love

আলোচিত জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা। যিনি সন্তু লারমা নামেই বেশি পরিচিত। পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) সভাপতি ও পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান তিনি। ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর ঐতিহাসিক পার্বত্য শান্তি চুক্তির পর দীর্ঘদিন ধরেই প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদায় পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। রাষ্ট্রীয় বা সরকারের সকল সুযোগ-সুবিধাও ভোগ করছেন তিনি। রাষ্ট্রীয় টাকায় চলাফেরা, জাতীয় পতাকা বহনকারী গাড়ি, আলিশান বাড়ি-সবকিছুই ভোগ করছেন। অথচ, অবাক হওয়ার মত বিষয় হচ্ছে স্বাধীন সার্বভৌমত্ব বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নেননি সন্তু লারমা। একজন প্রতিমন্ত্রী মর্যাদার সাংবিধানিক পদের এই ব্যক্তির জাতীয় পরিচয়পত্র না নেওয়া বা না থাকাটা অতি বিস্ময়কর বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। কেউ কেউ বলছেন দেশের প্রতি তার আনুগত্য বা দায়বদ্ধতা না থাকারই প্রমাণ এই জাতীয় পরিচয়পত্র না নেওয়ার বিষয়টি।

রোববার রাজধানীর হোটেল সুন্দরবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসে সন্তু লারমা পার্বত্য অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠা না হওয়ার জন্য সরকারকে দায়ী করে নানা বক্তব্য দেন। এমনকি ‘দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। পেছনে যাওয়ার আর কোনও পথ নেই। পার্বত্য অঞ্চলের জুম্ম জনগণ তাদের অস্তিত্ব সংরক্ষণে বদ্ধপরিকর’ বলেও কৌশলে সরকারকে হুমকি দেন। এ সময় উপস্থিত সাংবাদিকরা সন্তু লারমাকে জাতীয় পরিচয়পত্র নেননি বা নিচ্ছেন না ? এমন প্রশ্নের জবাবে সন্তু লারমা বলেন, ‘জাতীয় পরিচয়পত্র নিতে হবে, আইনে এমন বাধ্যবাধকতা আছে কি না?’ এরপরই সেখানে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর দু’একজন সাংবাদিকদের অশিক্ষিত, মূর্খ, হারামজাদা বলে কটূক্তি করতে থাকেন। তখন সাংবাদিকরা প্রতিবাদ করলে সন্তু লারমা তার লোকদের পক্ষ নিয়ে বলেন, ‘আমি তো কিছু শুনিনি।’

জানা যায়, ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর জেএসএস’র (সন্তু লারমা) সঙ্গে সরকারের চুক্তির ফলে রাষ্ট্রীয় সকল সুযোগ-সুবিধা ভোগ করার সুযোগ পান সন্তু লারমা। কিন্তু জেএসএস’র অন্য নেতারা তুলনামূলক সুবিধা পাননি। এর ফলে জেএসএস ভেঙে তাৎক্ষণিক ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া হিসেবে প্রসীত খীসার নেতৃত্বে গঠন হয় সশস্ত্র সংগঠন ‘ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ-প্রসীত)’। এরপর হয় ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) ও জেএসএস (সংস্কার)।

নতুন নতুন দল ও বাহিনী গঠিত হয়ে জড়িয়ে পড়ে চাঁদাবাজি, হত্যা, ধর্ষণ ও অপহরণের মত অপকর্মে। এই সংগঠনগুলোর অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব এবং আধিপত্যের কারণে বেড়েছে রক্তক্ষয়ী লড়াই ও সংঘাত। অভিযোগ রয়েছে বেপরোয়াভাবে ওইসব অপকর্ম ঘটালেও কঠোরভাবে তাদের দমন করা হচ্ছে না। উল্টো ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সুযোগ নিয়ে সরকার ও নিরাপত্তা বাহিনীসহ পার্বত্য অঞ্চলের নিরীহ বাঙালিদের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার ও প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছে তারা। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চুক্তির পরে খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটিতে চার আঞ্চলিক সংগঠনের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে ভ্রাতৃঘাতী সংঘাতে মারা যান বহু মানুষ। এই সময় পাহাড়ে একমাত্র শান্তিপূর্ণ এলাকা ছিল বান্দরবান। কিন্তু এখানেও সম্প্রতি অশান্তি প্রকট আকার ধারণ করেছে।

বান্দরবান জেলা আওয়ামী লীগের সদ্য সাধারণ সম্পাদক কাজী মো. মুজিবুর রহমান বলেন, রাষ্ট্রীয় সকল সুযোগ-সুবিধা ভোগ করলেও সন্তু লারমা দেশের জাতীয় পরিচয়পত্রই নিচ্ছেন না। এটা তার রাষ্ট্রকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানোর মত বিষয়। জাতীয় পরিচয়পত্র না নিয়েও তিনি প্রতিমন্ত্রীর সব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন। জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকলেও তার রয়েছে পাসপোর্ট। তিনি অধিকাংশ সময়ই ভারত বা মিয়ানমার হয়ে বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করে থাকেন। মুজিবুর রহমান বলেন, এই সন্তু লারমা কেবল এখানেই ক্ষান্ত হননি, তিনি পার্বত্য অঞ্চলের বাসিন্দাদের জন্য আলাদা পরিচয়পত্র এবং ভোটার তালিকা করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। এটি তার গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ।

উইকিপিডিয়ার তথ্য অনুসারে সন্তু লারমার জন্ম ১৯৪৪ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি রাঙামাটি জেলার মহাপুরম এলাকায় তার জন্ম। তার পিতার নাম চিত্তকিশোর চাকমা, মাতা সুভাষিণী দেওয়ান। তিনি ১৯৫৯ সালে রাঙামাটি সরকারি উচ্চবিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। এরপর চট্টগ্রামের স্যার আশুতোষ কলেজ থেকে আইএ এবং কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে বিএ পাস করেন। ১৯৬৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় এম এ পাস করেন। তিনি বাম রাজনীতির সঙ্গেও জড়িত ছিলেন।

পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি ও গেরিলা জীবন: ১৯৭২ সালে গঠিত পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন সন্তু লারমা। তার ভাই মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা ছিলেন এর সাধারণ সম্পাদক। নিয়মতান্ত্রিকভাবে পার্বত্য অঞ্চলের বিভিন্ন দাবি আদায় সম্ভব হবে না মনে করে ১৯৭৩ সালে তারা সংগঠনের সামরিক শাখা শান্তিবাহিনী গঠন করেন এবং সশস্ত্র সংগ্রাম করার সিদ্ধান্ত নেন। ১৯৭৫ সালে সন্তু লারমা আত্মগোপনে যান। সেই বছরের ২৬ অক্টোবর তিনি গ্রেপ্তার হন।

১৯৮০ সালে ছাড়া পান। ১৯৮১-তে একবার গ্রেফতার হয়ে মুক্ত হওয়ার পর আবার তিনি আত্মগোপন করেন। এদিকে এ সময় সংগঠনের মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দল সৃষ্টি হয়। প্রাথমিকভাবে সমঝোতা হলেও ১৯৮২ সালে অপর গ্রুপের আক্রমণে নিহত হন মানবেন্দ্র লারমাসহ আরো আটজন। সন্তু লারমা দল পুনর্গঠনের কাজ শুরু করেন। এরপর ১৯৮৫ সালে সভাপতি নির্বাচিত হন সন্তু লারমা। সম্মেলনে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় সংগ্রামের পাশাপাশি সরকারের সাথে সংলাপের প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখা হবে।

সে অনুসারেই সশস্ত্র সংঘাত ও রক্তক্ষয়ী লড়াই শুরু করেন তিনি। এতে করে পার্বত্য অঞ্চলের বহু নিরীহ বাঙালি ও উপজাতি মানুষ নিহত হয়। এক পর্যায়ে ১৯৯৭ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে পাহাড়ে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে শান্তি চুক্তি করে। প্রায় ৭২টি শর্তের মধ্যে সরকার অধিকাংশই বাস্তবায়ন করেছে। কিন্তু অস্ত্র জমাসহ আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ শর্তই মানেননি সন্তু লারমাসহ পাহাড়ি সংগঠনগুলো।
#সংগৃহীত।

Logo-orginal