, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

admin admin

ঢাকার আলোচিত রুম্পা হত্যা মামলায় আটক হল প্রেমিক সৈকত

প্রকাশ: ২০১৯-১২-০৮ ০০:৪৮:০৪ || আপডেট: ২০১৯-১২-০৮ ০০:৪৮:০৪

Spread the love

স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রুবাইয়াত শারমিন রুম্পার মৃত্যুর ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তার বন্ধু আব্দুর রহমান সৈকতকে আটক করেছে গোয়েন্দা পুলিশ।

শনিবার সন্ধ্যার পর তাকে আটক করা হয় বলে গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান জানিয়েছেন।

তিনি  বলেন, “সৈকতকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে।”

গত বুধবার রাতে মালিবাগের শান্তিবাগের বাসা থেকে আধা কিলোমিটার দূরত্বে আয়েশা শপিং কমপ্লেক্সের পেছনে সিদ্ধেশ্বরী সার্কুলার রোডের এক গলি থেকে রুম্পার লাশ উদ্ধার করা হয়। আশপাশের কোনো ভবন থেকে পড়ে ওই তরুণীর মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করলেও কীভাবে এই ঘটনা ঘটেছে বা পড়ার আগে তার উপর নির্যাতন হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

রুম্পাকে হত্যা করা হয়েছে অভিযোগ করে সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবিতে দুই দিন ধরে ক্যাম্পাসে মানববন্ধন করছেন স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

রুম্পার পরিবারেরও অভিযোগ, পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে মেয়েটিকে। আর রুম্পার সাবেক প্রেমিককে নিয়ে সন্দেহের কথা বলেছেন তার সহপাঠী এক বান্ধবী।

কথিত ওই সাবেক প্রেমিকই সৈকত বলে জানিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তারা।

রুম্পার মৃত্যু রহস্যজনক মনে হওয়ায় রমনা থানার এসআই আবুল খায়ের সেই রাতেই অজ্ঞাতপরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

থানা পুলিশ ছাড়াও গোয়েন্দা পুলিশ ওই মামলার তদন্ত করছে জানিয়ে মাসুদুর রহমান বলেন, সন্ধ্যার পর খিলগাঁও এলাকা থেকে সৈকতকে আটক করা হয়েছে।

২২ বছর বয়সী সৈকত আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজের বিবিএ’র ছাত্র বলে জানিয়েছেন মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (দক্ষিণ) উপ-কমিশনার রাজিব আল মাসুদ।

“তাকে খিলগাঁ এলাকা থেকে আটক করা হয়, সে রুম্পার বন্ধু।”

স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছিলেন রুম্পা। তার বাবা রোকনউদ্দিন পুলিশ পরিদর্শক। রুম্পার একমাত্র ভাই আশরাফুল খিলগাঁও আইডিয়াল কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র।

চাকরির কারণে পুলিশ কর্মকর্তা রোকনউদ্দিন থাকেন হবিগঞ্জে। আর তার পরিবারে থাকে ঢাকার মালিবাগে শান্তিবাগের বাসায়।

পরিবারের সদস্যরা জানান, দুটো টিউশনি করতেন রুম্পা। সেদিনও সন্ধ্যার আগে বাসা থেকে টিউশনিতে বের হন। পরে সাড়ে ৬টার দিকে শান্তিবাগের বাসার নিচে এসে ফোন করে পুরানো একজোড়া স্যান্ডেল পাঠিয়ে দিতে বলেন।

তার কথায় ক্লাস টু পড়ুয়া চাচাতো ভাই এক জোড়া স্যান্ডেল নিয়ে বাসার নিচে যায়। রুম্পা তার পায়ে থাকা স্যান্ডেল জোড়া বদলে পুরনো স্যান্ডেল পরেন। এরপর কানের দুল, আংটি, মোবাইল ফোন আর সেই স্যান্ডেল চাচাতো ভাইকে দিয়ে আবার বেরিয়ে যান।

এর কয়েক ঘণ্টা পর সিদ্ধেশ্বরী সার্কুলার রোডে ৬৪/৪ নম্বর বাসার নিচে লাশ পায় পুলিশ। অন্যদিকে রুম্পা বাসায় না ফেরায় এবং তার কাছে ফোন না থাকায় পরিবারের সদস্যদের রাত কাটে উদ্বেগের মধ্যে। পরদিন তারা রমনা থানায় গিয়ে ছবি দেখে রুম্পাকে শনাক্ত করেন।

পুলিশের রমনা জোনের সহকারী কমিশনার এসএম শামীম জানান, রাস্তার যে জায়গায় রুম্পার লাশ পড়েছিল, তাতে আয়েশা শপিং কমপ্লেক্সসহ তিনটি ভবনের যে কোনো একটি থেকে সে পড়ে থাকতে পারে।

তিনটি ভবনের ছাদে সরাসরি যাওয়ার সুযোগ ছাড়াও একটি ভবনের ৫ ও ৮ তলা দিয়ে নিচে পড়ার সুযোগ রয়েছে জানিয়ে শামীম বলেন, “রুম্পা ভবন থেকে পড়ে মারা গেছে, না নির্যাতনের পর লাশ ফেলে দেওয়া হয়েছে- সেটা তদন্ত শেষ না করে বলা মুশকিল।”

পুলিশ যখন রুম্পার মৃত্যু রহস্যের কোনো কূলকিনারা করতে পারছে না তখন তার এক বান্ধবী স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী একটি টেলিভিশনকে বলেন, একটি ছেলের সঙ্গে রুম্পার প্রেমের সম্পর্ক ছিল গত কয়েক মাস। কিন্তু সম্প্রতি তাদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়। এ নিয়ে টানাপড়েন ছিল।

কথিত সেই সাবেক প্রেমিকের সঙ্গে ফোনে কথা বলে তার একটি অডিও প্রচার করা হয় সময় টেলিভিশনের খবরে। সেখানে বলা হয়, ঘটনার দিনও রুম্পার সঙ্গে তার দেখা হয়েছিল।

অডিওতে তাকে বলতে শোনা যায়, “৪ তারিখে আমার একটা ফ্রেন্ডের বার্থডে ছিল। আমাকে ইনভাইট করা হয়েছিল আমাদের ফ্রেন্ডের মাধ্যমে। দেন আমি ওইখানে গেছিলাম আর কি। আমি তো রুম্পাকে বুঝায়ে বলছি যে আমাদের মধ্যে রিলেশন সম্ভব না।”

রুম্পাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে অভিযোগ করে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চেয়েছেন তার ভাই আশরাফুল।

Logo-orginal