, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪

admin admin

হিংসা পরিহারে মুমিনের করণীয়”

প্রকাশ: ২০১৯-১২-২৮ ১০:৪৮:৪১ || আপডেট: ২০১৯-১২-২৮ ১০:৪৮:৪১

Spread the love

(ছবি, সংগৃহীত গুগল থেকে)
আবুল কাশেম, ইসলাম ডেস্কঃ বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম- (বলো,আমি আশ্রয় চাই) হিংসুকের ক্ষতি থেকে, যখন সে হিংসার কাজ করে। [৫-আল-ফালাক্ব]

আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলেমিন, ওয়াচ্ছালামু আলা মোহাম্মদ (সঃ), সমস্ত আম্বিয়া-সাহাবায়ে কেরাম, ছিদ্দিক, শহীদগন, সালেহীন, মজলুম মানবতার প্রতি আল্লাহর রহম কামনা করছি, আমিন।

আলোচ্য বিষয়ঃ হিংসা।

১) হিংসায় ছবর করা ও পাল্টা হিংসা না করাঃ-আল্লাহ বলেন, ‘যদি তোমরা ছবর কর ও আল্লাহভীরুতা অবলম্বন কর, তাহলে ওদের চক্রান্ত তোমাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না’ (আলে ইমরান ৩/১২০)।

শিশু ইউসুফকে বাঘে খেয়েছে বলে তার মিথ্যা রক্ত মাখানো জামা দেখানোর পর পিতা ইয়াকূব (আঃ) ছেলেদের বলেছিলেন, ‘তোমাদের মন তোমাদেরকে একটা (মিথ্যা) কাহিনী বানিয়ে দিয়েছে। অতএব এখন ছবর করাই উত্তম। আর তোমরা যেসব কাহিনী শুনাচ্ছ, সে বিষয়ে আল্লাহই আমার একমাত্র সাহায্যস্থল’ (ইউসুফ ১২/১৮)। আল্লাহ ইয়াকূরেব দো‘আ কবুল করেছিলেন এবং কূয়ায় সাক্ষাৎ মৃত্যু থেকে উঠিয়ে আল্লাহ ইউসুফকে মিসরের সিংহাসনে বসিয়েছিলেন।

(২) আল্লাহর উপর পূর্ণ ভরসা করাঃ– আল্লাহ বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা করে, তিনিই তার জন্য যথেষ্ট হন। আল্লাহ তার আদেশ পূর্ণ করবেনই। নিশ্চয়ই আল্লাহ প্রত্যেক বস্তুর পরিমাণ নির্ধারণ করেছেন’ (তালাক ৬৫/৩)। বস্তুতঃ এটাই হল সবচেয়ে বড় উপায়।

(৩) হিংসুক ব্যক্তির প্রতি সদাচরণ করাঃ– আল্লাহ বলেন, ‘ভাল ও মন্দ সমান নয়। তুমি ভাল দিয়ে মন্দকে প্রতিরোধ কর। তাহ’লে তোমার সাথে যার শত্রুতা আছে, সে তোমার অন্তরঙ্গ বন্ধুর মত হয়ে যাবে’ (হামীম সাজদাহ ৪১/৩৪)।
আবুদ্দারদা (রাঃ) হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, ‘আমি কি তোমাদেরকে ছিয়াম-ছাদাক্বা ও ছালাতের চেয়েও উত্তম কোন বিষয়ের খবর দিব? আর তা হ’ল পারস্পরিক বিবাদ মিটিয়ে দেওয়া। কেননা পরস্পরের বিবাদ দ্বীনকে মুন্ডনকারী’। (তিরমিযী হা/২৫০৯; আবুদাঊদ হা/৪৯১৯; মিশকাত হা/৫০৩৮)।

(৪) গোনাহ থেকে তওবা করাঃ- বিপদাপদ বান্দার নিজের কারণেই এসে থাকে (আলে ইমরান ৩/১৬৫)। সে নিজের অজান্তেই অনেক গোনাহ করে থাকে। অথবা জেনে শুনে কিংবা বাধ্য হয়ে করে। আর বান্দা যা জানে, তার চাইতে বহুগুণ বেশী গোনাহ তার রয়েছে, যা সে জানে না। অমনিভাবে যেসব গোনাহের কথা তার স্মরণে আছে, তার চাইতে বহুগুণ বেশী গোনাহ তার স্মরণে থাকে না। তাই সর্বদা বান্দাকে জানা-অজানা সকল পাপের জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করতে হয় এবং খালেছ অন্তরে তওবা করতে হয়। তাতে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে হিংসুক ব্যক্তির অনিষ্ট হতে তাকে রক্ষা করে থাকেন।

আল্লাহ বলেন, ‘অতঃপর আমরা নাজাত দিয়ে থাকি আমাদের রাসূলদের এবং একইভাবে মুমিনদের। কেননা আমাদের উপর হক হ’ল মুমিনদের নাজাত দেওয়া’ (ইউনুস ১০/১০৩)।

কিয়ামতের দিন পুলছেরাত পার হবার সময় স্ব স্ব নেক আমল অনুযায়ী মুমিনদের সম্মুখে জ্যোতি থাকবে এবং তাদের ডান হাতে আমলনামা থাকবে। যেখানে জান্নাতের সুসংবাদ থাকবে। এ সময় মুনাফিকদের সম্মুখে জ্যোতি নিভে যাবে। তখন মুমিনগণ আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করবে, যেন পুলছেরাত পার হওয়া পর্যন্ত তাদের জ্যোতি অব্যাহত থাকে। আর এটা তারা ঐসময় বলবে, যখন মুনাফিকরা মুমিনদের উদ্দেশ্যে বলবে, ‘তোমরা একটু থামো। আমরা তোমাদের থেকে কিছু জ্যোতি নিয়ে নিই। বলা হবে, তোমরা পিছনে ফিরে গিয়ে জ্যোতি তালাশ কর’… (হাদীদ ৫৭/১৩)। বস্তুতঃ আল্লাহ মুমিনদের জন্য জ্যোতিকে অব্যাহত রাখবেন। (ইবনু জারীর, ইবনু কাছীর, তাফসীর সূরা হাদীদ ১২-১৩ এবং তাহরীম ৮ আয়াত)।

(৫) সকল চিন্তাকে আল্লাহর উপর ছেড়ে দেওয়াঃ– হিংসা কারু কোন ক্ষতি করতে পারে না আল্লাহর হুকুম ব্যতীত। যেমন তিনি বলেন,‘যদি আল্লাহ তোমার কোন অকল্যাণ করেন, তবে তা দূর করার কেউ নেই তিনি ব্যতীত। আর যদি তিনি তোমার প্রতি কল্যাণের ইচ্ছা করেন, তবে তার অনুগ্রহকে ফিরিয়ে দেওয়ার কেউ নেই। তিনি স্বীয় বান্দাদের মধ্যে যাকে যা চান তাকে তা দান করে থাকেন। বস্ত্ততঃ তিনি ক্ষমাশীল ও দয়াবান’ (ইউনুস ১০/১০৭)।

ওহোদ যুদ্ধে দান্দান মুবারক শহীদ হলে মুখের রক্ত মুছতে মুছতে রাসূল (ছাঃ) দুঃখ করে বলেছিলেন,

ﻳْﻒَ ﻳُﻔْﻠِﺢُ ﻗَﻮْﻡٌ ﺷَﺠُّﻮﺍ ﻭَﺟْﻪَ ﻧَﺒِﻴِّﻬِﻢْ

‘ঐ জাতি কিভাবে সফলকাম হবে যারা তাদের নবীর চেহারাকে রক্তাক্ত করেছে’? এছাড়াও তিনি সেদিন চারজন কাফের নেতার নাম ধরে তাদের বিরুদ্ধে লা‘নত করেছিলেন। এ প্রেক্ষিতে আল্লাহ আয়াত নাযিল করে বলেন, ‘তিনি তাদের ক্ষমা করবেন না শাস্তি দিবেন, সে ব্যাপারে তোমার কিছুই করার নেই। কারণ ওরা সীমালংঘনকারী’ (আলে ইমরান ৩/১২৮)। পরে দেখা গেল ঐ চারজন নেতাকে আল্লাহ ইসলাম কবুলের তাওফীক দান করেন এবং মৃত্যু অবধি তাদের ইসলাম সুন্দর ছিল’।

(আহমাদ হা/১৪১০৪, তিরমিযী হা/৩০০২-০৫; ঐ চারজন ছিলেন আবু সুফিয়ান, হারেছ বিন হিশাম, ছাফওয়ান বিন উমাইয়া (তিরমিযী হা/৩০০৪) এবং সুহায়েল বিন আমর (বুখারী হা/৪০৭০)।

উপরোক্ত আয়াত নাযিলের মাধ্যমে রাসূল (ছাঃ)-কে ধৈর্য ধারণের উপদেশ দেওয়া হয়েছে এবং আল্লাহ যে যালেমদের শাস্তি দিবেনই, সে ব্যাপারে আশ্বস্ত করা হয়েছে। এর দ্বারা কুনূতে নাযেলাহ পাঠ নিষেধ করা হয়নি। কেননা ওহোদের ঘটনার পরের বছর ৪র্থ হিজরীর ছফর মাসে সংঘটিত রাজী‘ ও বি’রে মা‘ঊনার মর্মন্তুদ ঘটনায় বিশ্বাসঘাতকতার শিকার হয়ে যথাক্রমে ১০ জন ও ৭০ জন শ্রেষ্ঠ ছাহাবীর অসহায়ভাবে শাহাদাত বরণের পর তিনি হত্যাকারী সম্প্রদায়গুলির বিরুদ্ধে একমাস ব্যাপী প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত ছালাতে কুনূতে নাযেলাহ পাঠ করেন।

(বুখারী, মুসলিম, আবুদাঊদ, নাসাঈ, মিশকাত হা/১২৮৯-৯১ ‘কুনূত’ অনুচ্ছেদ)।

আল্লাহ অবশ্যই হিংসুক যালেমকে শাস্তি দিবেন দুনিয়াতে ও আখেরাতে। দুনিয়াতে মযলূমের জীবদ্দশায় বা তার মৃত্যুর পরে এ শাস্তি হবে। যেমন রাসূল (ছাঃ)-এর জীবদ্দশায় হিংসুক আবু জাহলরা শাস্তি পেয়েছে এবং তাঁর মৃত্যুর পরে ভন্ডনবী মুসায়লামা কাযযাব আবুবকর (রাঃ)-এর সময় ইয়ামামার যুদ্ধে নিহত হয়েছে।

উল্লেখিত পাঁচটি গুন একজন মানব জীবনের চলার পথে প্রতিষ্টা করা গেলেই হিংসুকের হিংসা থেকে নিজেকে ও নিজের আমলকে বাচানো যাবে বলে মনে করছি। তাই আসুন, হিংসা পরিহার করে নিজের আমলকে পাপমুক্ত করি।

সংকলন ও সম্পাদনা; আবুল কাশেম (প্রবাসী কলামিস্ট)

Logo-orginal