, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

jamil Ahamed jamil Ahamed

জুমার দিনে মোহাম্মদ (সঃ) ফজর নামাজের যে সুরা পড়তেন

প্রকাশ: ২০২০-০১-২৩ ২৩:১৮:৫৬ || আপডেট: ২০২০-০১-২৩ ২৩:২২:৫৬

Spread the love

রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি জামাতের সঙ্গে এশার নামাজ আদায় করল, সে যেন অর্ধেক রাত জেগে নামাজ পড়ল। আর যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ জামাতের সঙ্গে পড়ল, সে যেন পুরো রাত জেগে নামাজ পড়ল।’ (মুসলিম : ৬৫৬)

প্রতিদিনের পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সবক’টিই ফরজ এবং অবশ্যপালনীয়। এসবের মধ্যে বিশেষ করে ফজর নামাজের গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি। মোমিন ব্যক্তির দুনিয়া ও আখেরাতের প্রভূত কল্যাণ জড়িয়ে আছে এ নামাজের সঙ্গে। বরং নবী (সা.) ফজর নামাজকে খাঁটি মোমিন আর মোনাফেক পরিচয়ের একটি মাপকাঠি বানিয়ে দিয়েছেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মোনাফেকদের ওপর ফজর ও এশার নামাজ অপেক্ষা অধিক ভারি নামাজ আর নেই। যদি তারা এর ফজিলত ও গুরুত্ব জানত, তাহলে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও অবশ্যই (মসজিদে) উপস্থিত হতো।’ (বোখারি : ২৫৪৩)।

তাছাড়া যে ব্যক্তি ফজর ও এশার নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করল সে যেন সারারাত জেগে নফল (তাহাজ্জুদ) নামাজে দাঁড়িয়ে থাকল। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি জামাতের সঙ্গে এশার নামাজ আদায় করল, সে যেন অর্ধেক রাত জেগে নামাজ পড়ল। আর যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ জামাতের সঙ্গে পড়ল, সে যেন পুরো রাত জেগে নামাজ পড়ল।’ (মুসলিম : ৬৫৬)।

দুই শীতল নামাজ তথা ফজর ও আসর আদায়কারীর জন্য জান্নাতের সুসংবাদ রয়েছে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি দুই শীতল (নামাজ) পড়বে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ (বোখারি : ৫৪৯)। সরাসরি আল্লাহর দরবারে এমন ব্যক্তির নাম আলোচিত হবে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কাছে পালাক্রমে দিনে ও রাতে ফেরেশতারা আসেন। তারা আসর ও ফজরের সময় একত্রিত হয়ে থাকেন। যারা রাতের কর্তব্যে ছিলেন তারা ওপরে উঠে যান। আল্লাহ তো সব জানেন, তবু ফেরেশতাদের প্রশ্ন করেন, আমার বান্দাদের কেমন রেখে এলে? আমরা তাদের নামাজরত রেখে এসেছি। যখন গিয়েছিলাম, তখনও তারা নামাজরত ছিল।’ (বোখারি : ৬৯৯২)।

উপরন্তু এ পুণ্যকাজে পার্থিব অনেক কল্যাণ নিহিত রয়েছে। সে দিনের পুরোটা আল্লাহর জিম্মায় থাকার দুর্লভ সৌভাগ্য। ফজরের নামাজ পড়লেই শুধু এ ঈর্ষণীয় সৌভাগ্য লাভ করা যাবে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ পড়বে, সে আল্লাহর জিম্মায় থাকবে।’ (মুসলিম : ৬৫৭)। ফজরের নামাজ দিয়ে দিনটা শুরু করলে, পুরো দিনের কার্যক্রমের একটা বরকতম সূচনা হবে। নবী (সা.) দোয়া করেছেন, ‘হে আল্লাহ! আমার উম্মতের জন্য তার সকালবেলায় বরকত দান করুন।’ (তিরমিজি : ১২১২)।

নবীজি (সা.) প্রতি শুক্রবারের ফজর নামাজে সূরা আস সাজদাহ এবং সূরা ইনসান তেলাওয়াত করতেন। সেজন্য আমাদের জন্যও এমনটি করা সুন্নাহ। আমাদের দেশে অধিকাংশ মসজিদে সুন্নতটি পালন করা হয় না। ইমামদের উচিত সুন্নতটির প্রচলন ব্যাপক করা।

প্রশ্ন হলো, শুক্রবারের ফজর নামাজে বিশেষ এ সূরা দুটি পড়ার রহস্য কী? শুক্রবারের সঙ্গে এ সূরা দুটোর সম্পর্কইবা কী? এক্ষেত্রে একটি হাদিস আমাদের সহায়তা করবে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘সব থেকে শ্রেষ্ঠ দিন হলো শুক্রবার দিন। এ দিনেই আদম (আ.) কে সৃষ্টি করা হয়েছে। এ দিনেই আদম (আ.) কে জান্নাতে ঢুকানো হয়েছে। এ দিনেই তাকে সেখান থেকে দুনিয়ায় পাঠানো হয়েছে। আর এ শুক্রবার দিনেই কেয়ামত অনুষ্ঠিত হবে।’ (মুসলিম : ৮৫৪)।

শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহ.) বলেন, রাসুল (সা.) জুমার দিন ফজর নামাজে সূরা দুটো এজন্য পড়তেন যে, অতীতে এ দিনে যা হয়েছে এবং ভবিষ্যতে যা হবে, সেসবের বর্ণনা রয়েছে উভয় সূরায়। কেননা এ সূরাদ্বয়ে আদম (আ.) এর সৃষ্টি, পরকাল ও মানুষের পুনর্জীবন ইত্যাদি বিষয়ের আলোচনা করা হয়েছে। সুতরাং নবীজি উম্মাহকে সৃষ্টির সূচনা, সৃষ্টির লক্ষ্য এবং শেষ বিচারের কথা স্মরণ করিয়ে দিতেই জুমাবারের ফজর নামাজে সূরা দুটি তেলাওয়াত করতেন।

শায়খ আবদুস সামি আনিস বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেন, চিন্তা ও অনুসন্ধান করে দেখেছি, মানবজীবনের মৌলিক তিনটি কেন্দ্র সম্পর্কে এ সূরা দুটি স্মরণিকা হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। আর রাসুল (সা.) জুমার দিনের প্রথম প্রহরেই সেগুলো স্মরণ করিয়ে দিতে চাইতেন, যাতে দিনটিকে সেই অনুযায়ী অতিবাহিত করা যায়।

প্রথম বিষয়Ñ মানবজাতির সৃষ্টির সূচনা। প্রথম সূরায় আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যিনি তাঁর প্রত্যেকটি সৃষ্টিকে সুন্দর করেছেন এবং কাদামাটি থেকে মানব সৃষ্টির সূচনা করেছেন। অতঃপর তিনি তার বংশধর সৃষ্টি করেন তুচ্ছ পানির নির্যাস থেকে। অতঃপর তিনি তাকে সুষম করেন, তাতে রুহ সঞ্চার করেন এবং তোমাদের দেন কর্ণ, চক্ষু ও অন্তঃকরণ। তোমরা সামান্যই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।’ (সূরা সাজদাহ : ৭-৯)। আর দ্বিতীয় সূরায় বলেন, ‘আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি মিশ্র শুক্রবিন্দু থেকে, এভাবে যে, তাকে পরীক্ষা করব অতঃপর তাকে করে দিয়েছি শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন।’ (সূরা ইনসান : ২)।

দ্বিতীয় বিষয়Ñ মানুষের জীবন এবং তার ইচ্ছা, মনোবাসনা ও কর্মতৎপরতা। সূরা সাজদায় ফুটে উঠেছে একজন প্রকৃত মানুষের চিত্র; যে একনিষ্ঠ বিশ্বাসী, কৃতজ্ঞ সিজদাকারী (এই সূরায় বাস্তবিক অর্থেই সিজদা রয়েছেও বটে)। তেমনি ফুটে উঠেছে অবিশ্বাসী, অপরাধী, জালেম ও পাপাচারী মানুষটিরও চিত্র! আর সূরা ইনসানে তুলে ধরা হয়েছে এমন কৃতজ্ঞ মানুষের বাস্তব চিত্র; যে অনুগত, ইবাদতকারী, আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে খাবার বিতরণকারী ইত্যাদি শ্রেষ্ঠ গুণাবলির অধিকারী একজন প্রিয় বান্দার।

তৃতীয় বিষয়Ñ মানুষের শেষ পরিণতি। সূরা সাজদায় মোমিনের শেষ পরিণতি সম্পর্কে সংক্ষিপ্তভাবে বলে দেওয়া হয়েছে যে, ‘কেউ জানে না তার জন্য কৃতকর্মের কী কী নয়ন-প্রীতিকর প্রতিদান লুক্কায়িত আছে।’ (সূরা সাজদাহ : ১৭)। আর সূরা ইনসানে সবিস্তারে বলা হয়েছে। মোমিনের জন্য জান্নাতে কী কী নেয়ামত রয়েছে, সেসবেরও সূক্ষ্ম বিবরণ রয়েছে। অন্যদিকে কাফেরের শেষ পরিণতির কথাও সূরা সাজদায় বিস্তারিতভাবে এবং সূরা ইনসানে সংক্ষিপ্তভাবে বলে দেওয়া হয়েছে।

জুমার দিনের সুন্নত

– গোসল করা।

– ফজরের ফরজ নামাজে সূরা সাজদা ও সূরা দাহর বা ইনসান তেলাওয়াত করা।

– উত্তম পোশাক পরা।

– সুগন্ধি ব্যবহার করা।

– আগেভাগে মসজিদে যাওয়া।

– সূরা কাহফ তেলাওয়াত করা।

– মসজিদে গিয়ে কমপক্ষে দুই রাকাত সুন্নত আদায় করা।

– ইমামের কাছাকাছি গিয়ে বসা।

– মনোযোগ দিয়ে খুতবা শোনা। খুতবা চলাকালে কোনো কথা না বলা।

– দুই খুতবার মাঝের সময়ে বেশি বেশি দোয়া করা।

– অন্য সময়ে দোয়া করা।

– রাসুল (সা.) এর প্রতি বেশি বেশি দরুদ পাঠ করা।

#অনলাইন থেকে সংগৃহীত ।

Logo-orginal