, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

admin admin

হিংসা বিদ্বেষ গালি নয়” ভালবাসা দিয়ে মন জয় করতে চায় আজহারী

প্রকাশ: ২০২০-০১-০৭ ১১:৩৬:০০ || আপডেট: ২০২০-০১-০৭ ১৫:০১:২০

Spread the love

আবুল কাশেম (মন্তব্য প্রতিবেদন)ঃ আলহামদুলিল্লাহ লিল্লাহি রাব্বিল আলেমিন। ওয়াচ্ছালামু আলা মোহাম্মদ (সঃ)।

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ : لاَ تَبَاغَضُوْا وَلاَ تَحَاسَدُوْا وَلاَ تَدَابَرُوْا وَلاَ تَقَاطَعُوْا وَكُوْنُوْا عِبَادَ اللهِ إِخْوَانًا، رواه البخاري-

অনুবাদ : হযরত আনাস বিন মালেক (রাঃ) হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, তোমরা পরস্পরে বিদ্বেষ করো না, হিংসা করো না, ষড়যন্ত্র করো না ও সম্পর্ক ছিন্ন করো না। তোমরা পরস্পরে আল্লাহর বান্দা হিসাবে ভাই ভাই হয়ে যাও’।[1]

ব্যাখ্যা : অত্র হাদীছে মানবতাকে হত্যাকারী কয়েকটি দুরারোগ্য ব্যাধির কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যা ইসলামী সমাজকে ভিতর থেকে ধ্বংস করে দেয়। এখানে চারটি বিষয় উল্লেখ করা হলেও তা মূলতঃ একটি থেকে উৎসারিত। আর তা হ’ল ‘হিংসা’। এই মূল বিষবৃক্ষ থেকেই বাকীগুলি কাঁটাযুক্ত ও যন্ত্রণাদায়ক ডাল-পালার ন্যায় বেরিয়ে আসে।

হিংসা অর্থأنْ يَحْسُدَ عَلىَ ما أنعَمَ اللهُ عليه به‏،‏ وأن يتمني زَوَالَ نِعْمَتِهِ‏ ‘আল্লাহ অন্যকে যে নে‘মত দান করেছেন তাকে হিংসা করা এবং উক্ত নে‘মতের ধ্বংস কামনা করা’। আর হিংসুক হ’ল, الحريص علي زوالِ النِّعْمَةِ علي الْمَحْسُود ‘হিংসাকৃত ব্যক্তির নে‘মত ধ্বংসের আকাংখী’। হিংসার পিছে পিছে আসে বিদ্বেষ। সে তখন সর্বদা ঐ ব্যক্তির মন্দ কামনা করে। যেমন মুমিনদের বিরুদ্ধে মুনাফিকদের আচরণ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, إِنْ تَمْسَسْكُمْ حَسَنَةٌ تَسُؤْهُمْ وَإِنْ تُصِبْكُمْ سَيِّئَةٌ يَفْرَحُوْا بِهَا ‘যদি তোমাদের কোন কল্যাণ স্পর্শ করে, তাতে তারা অসন্তুষ্ট হয়। আর যদি তোমাদের কোন অকল্যাণ হয়, তাতে তারা আনন্দিত হয়’ (আলে ইমরান ৩/১২০)। বস্ত্ততঃ এ দু’টি বদস্বভাবের মধ্যে ঈমানের কোন অংশ নেই। কেননা মুমিন সর্বদা অন্যের শুভ কামনা করে। যেমন সে সর্বদা নিজের শুভ কামনা করে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, لا يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ حَتَّى يُحِبَّ لأَخِيْهِ مَا يُحِبُّ لِنَفْسِهِ‘তোমাদের কেউ মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না সে তার ভাইয়ের জন্য ঐ বস্ত্ত ভালবাসবে, যা সে নিজের জন্য ভালবাসে’।[2] যে ব্যক্তি মানুষের  প্রতি হিংসা ও বিদ্বেষ পোষণ করে, তার ঈমান হয় ত্রুটিপূর্ণ। হিংসা তার সমস্ত নেকীকে খেয়ে ফেলে যেমন আগুন ধীরে ধীরে কাঠকে খেয়ে ফেলে। এভাবে সে নিজের আগুনে নিজে জ্বলে মরে। পরিণামে তার পূর্বে কৃত সৎকর্ম সমূহের নেকীগুলিও ক্রমে নিঃশেষ হয়ে যায়। ঐ অবস্থায় তার মৃত্যু হ’লে সে নিঃস্ব অবস্থায় আল্লাহর কাছে চলে যায়।

অতএব একজন মুসলিমের কর্তব্য হ’ল সর্বদা সাদা মনের অধিকারী থাকা। তার অন্তরে যেন কারু প্রতি হিংসার কালিমা না থাকে। যদি কোন কারণ বশতঃ সেটা কখনো এসেই যায়, তবে বুদ্বুদের মত যেন তা উবে যায়। কচুর পাতার পানির মত যেন তা ঝরে যায়। হৃদয় যেন সকলের প্রতি উদার থাকে এবং শত্রু-মিত্র সকলের প্রতি হেদায়াতের আকাংখী থাকে। এমন অবস্থায় নিদ্রা যাবে, যেন তার হৃদয়ের কোণে কারু প্রতি হিংসার কালো মেঘ জমে না থাকে। কেননা এই নিদ্রা তার চিরনিদ্রা হ’তে পারে। ( সংগৃহীত, আসাদুল্লাহ গালিবের লেখা থেকে)

সম্প্রতি ওয়াজের ময়দানে গালাগালির মহোৎসব চলছে,গত কয়েকদিন আগে সবচেয়ে আলোচিত গালি দিয়েছেন মাওলানা হাফিজুর রহমান ।

সময়ের জনপ্রিয় বক্তা মাওলানা আজহারীকে উদ্দেশ্য করে দেওয়া সে অশ্লীল গালি সোশ্যাল মিডিয়ার বদৌলতে সবার নজর কেড়েছে।

ভাইরাল সে গালির জবাব ডঃ আজহারী না দিলেও তার সমর্থকরা ফেইসবুক ও ইউটিউবে দিচ্ছে।

তবে দুঃখজনক হলেও সত্য আলেম ওলামার এসব সমর্থকরা সোশ্যাল মিডিয়ায় রীতিমতো গালাগালির বাকযুদ্ধে লিপ্ত।

পরিতাপের বিষয়, কুরআন সুন্নাহর বিধি নিষেধ উপেক্ষা করে কথিত কিছু বক্তা ও সমর্থক এই অশ্লীল কর্মে লিপ্ত।

এটা যে কবিরা গুনাহ তাহা জানার পরও, এহেন ঘৃণিত কর্মে চলছে বাক যুদ্ধ।

আজহারীর বিরোধিতা কেন?

ডঃ আজহারীর বিরোধিতা যতই বাড়ছে, ততই তার জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

ইসলাম প্রিয় বাংলাদেশে ডঃ মাওলানা মিজান আজহারী কুরআন হাদীসের পারফেক্ট জ্ঞান নিয়ে আলোচনা করে, সেটা তার শত্রুরাও বিশ্বাস করে।

গতকাল সোমবার (৬ জানুয়ারি) কুমিল্লার মাহফিলে আজহারীর বক্তব্যটি ইউটিউবে শুনার সুভাগ্য হয়েছিল, সেখানে কুয়াকাটা হুজুর বা অন্য কারো সম্পর্কে কোন কটু কথা বলেননি, বরং বলেছেন ভালবাসা দিয়ে সবার মন জয় করতে হবে।

ভুল হতেই পারে, আজহারী ভুলের উর্ধ্বে নয়” তার ভুল সংশোধন করার দায়িত্ব আলেম ওলামার, কিন্তু আলেমদের রেষারেষিতে ক্ষতি ইসলামের-মুসলমানের।

মনগড়া বা বিভিন্ন কিতাবি কিচ্ছা-কাহিনী তার আলোচনায় থাকেনা” আল্লাহর প্রতি অগাধ বিশ্বাস নবীর প্রতি ভালবাসা ও কুরআন-সুন্নাহর আলোকে জীবন গঠনের আহবান জানান ডঃ আজহারী।

তবে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হল, আজহারী তার বিরোধী সব গোষ্ঠিকে গালিতো দেয়না, বরং তাদের জন্য প্রাণ খুলে দোয়া করে।

আমরা যদি একটু চিন্তা করে দেখি কেন মাজার পন্হী, মিটা সুন্নী, বিশ্ব সুন্নী, চরমোনাই, কুয়াকাটা ইত্যাদি দল বা ওয়াজিন আজহারীকে শত্রু মনে করছে?

কারণ, কুরআন সুন্নাহভিত্তিক জীবন গড়লে মাজার ব্যবসায় মন্দা দেখা দেবে।

কুরআন সুন্নাহভিত্তিক আলোচনায় বে-হক পীরদের ব্যবসায় মন্দা দেখা দেবে।

আব্বা হুজুর আর ওগো টানের ওয়াজ না করে কুরআন সুন্নাহভিত্তিক আলোচনা করলে, কথিত কাটাকাটি হুজুদের মার্কেটে ভাটা পড়বে, ইত্যাদি কারণে আজহারীর বিরোধিতা করে।

তাদের বিরোধিতা আর ডঃ আজহারীর কুরআন হাদীস ভিত্তিক সাবলীল আলোচনা তাকে নিয়ে যাবে সম্মানের উঁচু স্থরে।

সে দোয়া রহিল শাঈখ আজহারীর জন্য।

Logo-orginal