, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪

jamil Ahamed jamil Ahamed

দাঙ্গার দিল্লিতে একটি স্কুলের গল্প

প্রকাশ: ২০২০-০২-২৮ ১৮:৩৬:১৭ || আপডেট: ২০২০-০২-২৮ ১৮:৩৬:১৭

Spread the love

উত্তরপূর্ব দিল্লিতে কয়েকদিনের ভয়াবহ সহিংসতার মধ্যেই শিব বিহার এলাকার একটি স্কুলে ব্যাপক ভাংচুর চালিয়ে আসবাবপত্র ও বইখাতা পুড়িয়ে দেওয়া হয়।

হামলাকারীরা পরে ওই স্কুলটিকেই এলাকার অন্যান্য জায়গায় হামলার ক্ষেত্রে অস্থায়ী ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে বলে উঠে এসেছে এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে।

সহিংসতার মধ্যে সোমবার বিকালে পার্শ্ববর্তী একটি স্কুলের লাগোয়া ভবন থেকে দড়ি বেয়ে হামলাকারীরা শিব বিহারের ডিআরপি কনভেন্ট স্কুলে ঢুকে বলে স্কুলটির প্রশাসনিক প্রথান ধর্মেশ শর্মা জানান।

“তারা ব্ল্যাকবোর্ড ভাংচুর করে, স্কুলের আসবাবপত্র ও লাইব্রেরিতে আগুন দেয়,” বলেছেন তিনি।

২৫ বছর ধরে এই স্কুলটিতে চাকরি করছেন শর্মা। আগে কখনোই এমন আতঙ্কের মুখোমুখি হতে হয়নি তাকে।

শর্মা জানান, প্রতিদিনের মতো সোমবার সকালেও হাজারখানেক শিক্ষার্থীর কলকাকলিতে মুখরিতে ছিল ডিআরপি কনভেন্ট স্কুল। এদিন শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা ছিল; তবে হামলার আগেই তারা স্কুল ছেড়ে যায়।

“২৪ ঘণ্টা ধরে স্কুলটি জ্বলেছে। ফায়ার ব্রিগেড আসেনি। সম্ভবত ফায়ার ব্রিগেডের কর্মকর্তারাও হামলার শিকার হয়েছিলেন। পুলিশের সাড়া দিতে লেগেছে তিনদিন। গতকাল সন্ধ্যায় তারা এসে পৌঁছান,” বলেন এ প্রশাসনিক কর্মকর্তা।

ডিআরপি কনভেন্ট স্কুলের লাগোয়া রাজধানী স্কুলেই আগে হামলা হয় বলে জানিয়েছে এনডিটিভি। স্কুলটির প্রহরী মনোজ এবং গাড়িচালক রাজকুমারকে হামলাকারীরা স্কুলভবনের ভেতরেই বন্দি করে রেখেছিল। ৬০ ঘণ্টা পর বুধবার পুলিশ তাদের উদ্ধার করে।

“তারা আমাদের আটকে রেখে মারধর করেছিল। তারা এমনকী শিশুদেরও মারধর করেছিল। খাওয়ার জন্যও কিছু রেখে যায়নি তারা,” দুর্বিসহ স্মৃতির কথা মনে করে অশ্রুসজল কণ্ঠে জানান মনোজ।

শিব বিহারের এ রাজধানী স্কুলে প্রায় এক হাজার ৩০০ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে বলে প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী ফয়সাল ফারুখ জানিয়েছেন।

“সোমবার স্কুলটি আক্রান্ত হয়েছিল। তারা সবকিছু ভেঙে ফেলেছিল, আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল। আমরা পুলিশকে বার বার ডেকেছি, কিন্তু তারা আসেনি,” বলেছেন তিনি।

হামলাকারীরা এ স্কুলের ছাদেই ইট-পাথর-অ্যাসিড-পেট্রল বোমা জড়ো করেছিল বলে স্থানীয়রা জানিয়েছে।

“অন্তত দু’দিন ধরে সংঘর্ষের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল। না-হলে এত পেট্রল বোমা, বিরাট বিরাট গুলতি, অ্যাসিড, বন্দুক-গুলি জোগাড় করে ফেলা সম্ভব নয়,” আনন্দবাজারকে এমনটাই বলেছেন এক পুলিশ কর্মকর্তা।

সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন ঘিরে রোববার থেকে উত্তরপূর্ব দিল্লিতে কয়েকদিনের সহিংসতায় যেসব এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, শিব বিহার তার মধ্যে অন্যতম।

সহিংসতা পাঁচদিনে অন্তত ৪২ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে বলে জানিয়েছে এনডিটিভি; আহতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৩০০।

হামলাকারীরা দিল্লির বিভিন্ন এলাকার অন্তত তিনটি স্কুলে ভয়াবহ তাণ্ডব চালায়। মঙ্গলবার ব্রিজপুরি এলাকার একটি সিনিয়র সেকেন্ডারি স্কুলে হামলাকারীদের আগুন ধরিয়ে দেয়ার চারঘণ্টা পর দমকলকর্মীরা সেখানে হাজির হন। স্কুলটিতে হাজার তিনেক শিক্ষার্থী থাকলেও পরীক্ষা শেষে তারা চলে যাওয়ার পরেই হামলাকারীরা প্রতিষ্ঠানটিতে আগুন ধরিয়ে দেয় বলে ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে।

এদিকে দিল্লিতে সহিংসতার মধ্যে এক গোয়েন্দা কর্মীকে হত্যার ঘটনায় আম আদমি পার্টির নেতা তাহির হুসেনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।

তদন্ত চলাকালে তাহিরকে দল থেকে সাময়িক বহিষ্কার করার কথাও জানিয়েছে আম আদমি পার্টি।

মঙ্গলবার জাফরাবাদে নিজের বাড়ি সংলগ্ন একটি নর্দমায় গোয়েন্দা কর্মী অঙ্কিত শর্মার মৃতদেহ উদ্ধার হয়। বাড়ি ফেরার সময়ই তার ওপর হামলা চালানো হয়েছিল বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

“যে দলেরই হোক না কেন, সহিংসতায় যুক্ত কারোরই ছাড় মিলবে না,” বলেছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল।
সূত্রঃ বিডি নিউজ ।

Logo-orginal