, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

jamil Ahamed jamil Ahamed

ফেইচবুকের কল্যাণে ১০ বছর পর যেভাবে ছেলেকে ফিরে পেলেন মা বাবা

প্রকাশ: ২০২০-০২-০৩ ১৯:১৫:১২ || আপডেট: ২০২০-০২-০৩ ১৯:১৫:১২

Spread the love

সাত বছর বয়সে হারিয়ে গিয়েছিল শফিক। হারানো সন্তানকে খুঁজতে বহু জায়াগায় ঘুরেছেন বাবা-মা। কিন্তু কোথায় খুঁজে পাননি তাদের প্রিয় সন্তানকে। সেই সন্তানের খোঁজ পেলেন ১০ বছর পর। ফেসবুকের কল্যাণে ছেলে শফিকুল ইসলামকে খুঁজে পেলেন তাঁরা। কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার সিদলা ইউনিয়নের ধুলিহর গ্রামের কৃষক শহীদ মিয়ার বাড়িতে তাই এখন খুশির বন্যা বইছে।

জানা গেছে, ফেসবুকের একটি লাইভ সুযোগ করে দেয় হারিয়ে যাওয়া শফিককে বাবা-মায়ের কাছে ফিরে যেতে। গত ২৫ জানুয়ারি মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার সিন্দুরকান ইউনিয়নের শ্রীগাঁও গ্রামের ব্যবসায়ী ও সমাজকর্মী শেখ জসীম হারানো শফিককে সাথে নিয়ে ফেসবুকে একটি লাইভ করেন। সেখানে বিস্তারিত তুলে ধরে ছেলেটির প্রকৃত বাবা-মায়ের সন্ধান চাওয়া হয়। এ ফেসবুক লাইভ সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়। আর এভাবেই শফিকের খোঁজ পান তার বাবা-মা।

নিখোঁজ শফিক গত ১০ বছর শ্রীমঙ্গলের পুরানগাঁওয়ের কাবুল মিয়ার কাছে লালিত পালিত হচ্ছিল। এখন তার বয়স সতেরো। কাবুল মিয়া ১০ বছর আগে রাজধানী ঢাকার একটি রাস্তা থেকে কুড়িয়ে পেয়েছিলেন শফিককে। তিনি এ শিশুটিকে পরম মমতায় কোলে তুলে নেন। তার কোনো অভিভাবক না পেয়ে নিয়ে যান বাড়িতে। সেখানে কাবুল মিয়ার আট মেয়ে ও দুই ছেলের সঙ্গে সন্তানের মতো বড় হচ্ছিল সে। বিষয়টি ব্যবসায়ী জসীম জানতে পেরে ফেসবুকে তুলে ধরেন শফিকের জীবন কাহিনী।

ফোন ও নানাভাবে যোগাযোগ তৈরির পর বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে রবিবার বাবা শহীদ মিয়া ও মা সুফিয়া খাতুন শ্রীমঙ্গলের পুরানগাঁওয়ের কাবুল মিয়ার বাড়িতে গিয়ে হাজির হন। তারা বুকে টেনে নেন প্রিয় সন্তান শফিককে। তখন সেখানে এক আবেগঘন পরিবেশ তৈরি হয়।

অন্যদিকে শফিককে সন্তানের মতো লালন-পালনকারী কাবুল মিয়ার চোখে জল। এতদিনে যাকে সন্তান স্নেহে বড় করেছিলেন, সে চলে যাবে। কিছুতেই মনকে শান্ত করতে পারছিলেন না তিনি। পুরো পরিবারে নেমে আসে বিষাদের ছায়া। কাবুল মিয়া জানালেন, তার মন খারাপ হলেও শফিক তার প্রকৃত বাবা-মাকে ফিরে পেয়েছে এতেই তিনি খুশি হয়েছেন। নিজের সন্তান না হলেও সে আমার সন্তানতুল্য। এটা আমার জীবনের একটা স্মরণীয় ঘটনা হয়ে থাকবে। তার সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ থাকবে। ওর জন্য আরো কিছু যদি করতে হয়, আমি করব।

পরিবারের সদস্যরা জানান, শিশু শফিককের বয়স তখন মাত্র ৭ বছর। ওই সময়ে কোনো একদিন বাড়ি থেকে বের হয় শফিক। ঢাকাগামী গাড়িতে উঠে ঘুমিয়ে পড়ে। অচেনা ঢাকা শহরে গিয়ে বিপদে পড়ে শিশুটি। নিজের গ্রামের ঠিকানা এমনকি বাবা-মায়ের নামও বলতে পারত না সে। রাস্তার পাশে কান্নারত শিশুটিকে দেখতে পান শ্রীমঙ্গলের ব্যবসায়ী কাবুল মিয়া। অভিভাবকের খোঁজ না পেয়ে বাড়িতে নিয়ে যান শিশুটিকে। সেখানে নিজের সন্তানের মতোই লালন-পালন করতে থাকেন তাকে। তাঁর অন্য আট মেয়ে ও দুই ছেলের সঙ্গেই বেড়ে ওঠে সে। কাবুল মিয়া জানান, পরে তিনি আরো অনেক দিন শিশুটির বাবা-মায়ের খোঁজ করেছিলেন। কিন্তু খোঁজ পাননি।

পালক বাবা কাবুল মিয়া জানান, অসহায় শিশুটিকে রাস্তায় ফেলে আসতে বিবেকে বেঁধেছিল। তাই তাকে নিজের বাড়ি নিয়ে যাওয়ার তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি।

শেখ জসীম বলেন, তার মা-বাবা, চাচা ও বড় ভাই-ভাবি, ভাতিজা গতকাল রবিবার তাকে নিতে এসেছে। আজ সোমবার বিকেল চারটার দিকে শফিকের বাবা-মা, বড় ভাই, চাচাসহ অন্য আত্মীয়রা তাকে নিয়ে কিশোরগঞ্জের দিকে রওয়ানা হয়েছে। বিষয়টি শ্রীমঙ্গল থানা পুলিশকেও জানানো হয়েছে।

শফিককে ফিরে পেতে হোসেনপুর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আশরাফ হোসেন কবির এবং পার্শ্ববর্তী নান্দাইল উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান সারোয়ার হাসান জিতু সহযোগিতা করেছেন বলে জানান শেখ জসিম।

শফিক জানায়, আমি শুধু গ্রামের নাম ধুলিহর বলতে পারতাম। আর কিছুই জানতাম না। আমি বাবা-মায়ের সন্ধান পেয়েছি। খুব ভালো লাগছে। কিন্তু পালক বাবার জন্য খারাপ লাগছে। তিনি আমাকে অনেক আদর করতেন।

শফিকের বাবা শহীদ মিয়া ও মা সুফিয়া খাতুন বলেন, আজ নিজের হারিয়ে যাওয়া ছেলেকে ফিরে পেয়েছি। যে কষ্ট এতদিন বুকে বিঁধে ছিল তা দূর হয়েছে। তারা তখন কাবুল মিয়ার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, উনি আমাদের চিরদিনের মতো আত্মার আত্মীয় হয়ে গেলেন। উৎসঃ কালের কন্ঠ ।

Logo-orginal