, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

admin admin

৪ হাসপাতাল ঘুরে বিনা চিকিৎসায় সিলেটে মারা গেল এক কোটিপতি

প্রকাশ: ২০২০-০৬-০৫ ২৩:২৬:০৮ || আপডেট: ২০২০-০৬-০৫ ২৩:২৬:১০

Spread the love

সরকারি-বেসরকারি চার হাসপাতাল ঘুরেও চিকিৎসা না পেয়ে মারা গেছেন সিলেটের কোটিপতি ব্যবসায়ী ইকবাল হোসেন খোকা (৫৪)। তার এমন মৃত্যুতে নিন্দা জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক থেকে শুরু তার এলাকার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।

আজ শুক্রবার ভোরে মৃত্যু হয় নগরীর বন্দরবাজারের আরএল ইলেকট্রনিকসের স্বত্বাধিকারী ও কুমারপাড়ার বাসিন্দা ইকবাল হোসেন খোকার। মৃত্যুর আগে প্রথমে তাকে নগরীর সোবাহানীঘাটের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে তাকে পাঠানো হয় নর্থ ইস্ট হাসপাতালে। সেখান থেকে শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালে খোকাকে নিয়ে যান পরিবারের লোকজন। সবশেষে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, কিন্তু কোথাও চিকিৎসা পাননি খোকা।

বাবার এমন মৃত্যুর পর চার হাসপাতাল ঘোরার বিষয়টি গণমাধ্যমে জানান খোকার ছেলে তিহাম হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমার মতো অন্য কেউ যেন তার বাবাকে বিনা চিকিৎসায় না হারান। কোটি টাকা খরচ দেব বলেছি, বাবার চিকিৎসা করতে চিকিৎসকদের কাছে মিনতি করেছি। বলেছি, আমার বাবা শ্বাস নিতে পারছেন না। তাকে দয়া করে একটু অক্সিজেন দেন। কোনো হাসপাতাল চিকিৎসা দেয়নি। এমনকি এক বোতল অক্সিজেনও দেয়নি।’

তিহামের বর্ণনায় তার বাবার মৃত্যু

আজ ভোর সাড়ে ৫টার দিকে তার বাবা ইকবাল হোসেন খোকার বুকে ব্যথা ও শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। তখন সোবাহানীঘাট এলাকার একটি হাসপাতালে অ্যাম্বুলেন্সে ডাকেন তারা। অ্যাম্বুলেন্স আসার পর দেখা যায়, সেটির অক্সিজেন সিস্টেম নষ্ট। ওই অবস্থাতেই খোকাকে সোবাহানীঘাটের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে নিয়ে অক্সিজেনের ব্যবস্থা করার অনুরোধ করলেও চিকিৎসক-নার্সরা রোগী রেখে নিয়মকানুন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। একপর্যায়ে তিহামের বাবাকে রাখবে না বলে জানায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। অক্সিজেনের ব্যবস্থাও করে দেয়নি। নগরীর নর্থ ইস্ট হাসপাতালে নিয়ে যেতে পরামর্শ দেওয়া হয় তিহামকে।

ওই অবস্থাতেই খোকাকে দক্ষিণ সুরমার নর্থ ইস্ট হাসপাতালে নিয়ে যান তিহাম। সেখানকার কর্তৃপক্ষ জানায়, তাদের হাসপাতালে সিট নেই। রোগীর চিকিৎসা সম্ভব নেই বলে শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য তাকে পরামর্শ দেওয়া হয়। সেখানে নিয়ে যাওয়ার পর হাসপাতালের সবকিছু বন্ধ দেখতে পান তিহাম। ১০-১৫ মিনিট পর এক নিরাপত্তাকর্মী গেটে এসে জানান হাসপাতালের সবাই ঘুমে। অন্য কোথাও রোগীকে নিয়ে যান।

এ কথা শোনার পর বাবাকে নিয়ে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দিকে রওনা দেন তিহাম। জরুরি বিভাগে নেওয়ার পর খোকাকে সিসিইউতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। কিন্তু ওয়ার্ডের ভেতরে না নিয়ে হাসপাতালের বারান্দায় ইসিজি করা হয় খোকার। পরে জরুরি বিভাগের তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।

তিহাম বলেন, ‘প্রতিটি হাসপাতালেই আমার বাবাকে একটু অক্সিজেন দেওয়ার অনুরোধ করেছি। কিন্তু তারা কেউই আমার অনুরোধ রাখেননি। বিনা চিকিৎসায় আমার বাবা মারা গেলেন।’

আওয়ামী লীগ নেতার পোস্ট

খোকার মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর ঘটনা জেনে ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ করে একটি পোস্ট করেন নগরীর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল। তিনি লেখেন, ‘সিলেটের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, আরএল ইলেকট্রনিকসের মালিক ইকবাল হোসেন খোকা ভাই শুক্রবার ভোরে মারা গেছেন। দুদিন আগে ইকবাল ভাইয়ের সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছে, তিনি অসুস্থতার কথা জানিয়েছেন। ইকবাল ভাই এভাবে চলে গেলেন। সিলেট শহরে তার চিকিৎসা দেওয়া গেল না। আমাদের ক্ষমা করবেন ইকবাল ভাই।’

দেশের সব সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হলেও তা মানছে না

সিলেটের কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতাল। এর আগে গত ১ জুন সিলেট নগরের ছয় হাসপাতাল ঘুরে চিকিৎসা না পেয়ে মারা যান মনোয়ার বেগম (৬৩) নামে এক নারী। এর পর স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে হাসপাতালগুলোকে সতর্ক করে চিঠি দেওয়া হলেও আবারও ঘটলো প্রায় একই ঘটনা। সুত্রঃ আমাদের সময় ।

Logo-orginal