, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

admin admin

সরকারী মেডিকেলে ফাঁদ পেতে বসে আছে সেবক নামের প্রতারক

প্রকাশ: ২০২০-০৭-১১ ২২:৫৯:০৮ || আপডেট: ২০২০-০৭-১১ ২২:৫৯:১১

Spread the love

কায়সার সিকদারঃ এই দেশ উর্বরতার প্রতীক। হিমালয় থেকে নেমে আসা জলের সঙ্গে পলি জমে জমে তৈরি হয়ছে এদেশ।বাংলাদেশের নরম পলিমাটি, ভেজা বাতাস, মৌসুমি বৃষ্টিপাত, সারা বছরের রোদ এই দেশকে করেছে উর্বর। এই দেশে দেয়ালের ওপরে গাছ জন্মায়, নিরেট ছাদের বুকে জন্মায় অশ্বত্থ বৃক্ষ, পাথরের গায়ে জন্মায় লতা-গুল্ম শেওলা, এমনকি আমাদের জামাকাপড়ে ছাতা পড়ে, আমরা বলি তিলা পড়েছে। এই দেশ এমনি সুজলা-সুফলা। কিন্তু এই দেশ সবচেয়ে বেশি করে জন্মদান করেছে ঠক আর প্রতারকদের।

শহীদের রক্তে এই দেশ।কৃষক, শ্রমিক ও প্রবাসীদের গায়ের ঘামে দেশের অর্থনীতি। কোটি টাকার বাজেট হয়,স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ প্রতিটি মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দ হয়।অথচ এসব বরাদ্দ যাদের কল্যাণ হওয়ার কথা সেই আমজনতার কাছে কতটুকু পৌঁছাচ্ছে!?, তবে যা পৌঁছে তা কোটি থেকে লাখ,লাখ থেকে হাজার এরকম চক্রাকারে।

কয়েকদিন ধরে আলোচনার শীর্ষে আমাদের চিকিৎসা খাত।এতোটা আলোচনায় যে আন্তর্জাতিক নিউজ অব্দি হচ্ছে। রিজেন্ট হাসপাতালের খবর তো পুরনো। বেসরকারি হাসপাতাল বলতেই বড়লোকের কারবার। তবে গরিবের হাসপাতাল বলে যে সরকারি হাসপাতালের পথচলা তার অবস্থা নিম্ন থেকে নিম্ন।চিকিৎসা ব্যবস্থার অবহেলা তো আছেই তাঁর চেয়ে বড় ভয়ংকর ওয়ার্ড বয়,আনসার থেকে শুরু করে সবাই।তারা কত ধরনের ফাঁদ পেতে বসে আছে ভুক্তভোগীরা হারে হারে জানে। যে ফাঁদ গরীবদের মৃত্যু পর্যন্ত পৌঁছে দিচ্ছে। টোকেন নেওয়া থেকে শুরু করে প্রতিটি ধাপে টাকার খেলা চলে।করোনার প্রভাবে এর প্রভাব আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।
সকালে হঠাৎ বমি করে বেহুশ হয়ে যায় গার্মেন্টস কর্মী আব্দুর রহিম ।

তাকে চট্রগ্রাম মেডিকেল কলেজে নিয়ে আসে তার ফুফুত ভাই মিজান।মিজানের ভাষ্যমতে-আমার রুগী বেহুশ, অনেকক্ষণ গাড়িতে রেখে ওদেরকে কত কিছুর জবাব দিতে হয়ছে।তারপর ২০টাকা দিয়ে টোকেন নিলাম। টোকেন নিয়ে স্টে চারে করে জরুরি বিভাগে ডুকাই।জরুরি বিভাগে দেখলেও না,না দেখে কাগজ ১টা লিখে দিয়ে সামনে আবার টোকেন সেন্টারে যেতে বলল।গিয়ে কাগজটা দেখাতে আর ১টা কাগজ লিখে দিয়ে আবারও ২০ টাকা নিল।আর বলল ১৩ নং ওয়ার্ডে নিয়ে যান।রাস্তা দিয়ে ঠেলে কোনো মতে ওয়ার্ডে নিয়ে গেলাম।তখন স্টেচার নিয়ে যে মাসিটি আসল ২০০ টাকা চেয়ে বসল।ওনাকে ২০০ দিয়ে, রহিমকে খালি ১টা বেডে রেখে গেলাম নার্স রুমে। তাদের মধ্যে একজন বেহুশ, সিরিয়াস রুগী নিয়ে কোন তৎপরতা দেখলামই না।এমনকি বাহিরে দাঁড়ান বলে দাঁড় করাই দিয়ে নিজেরা গল্পতে মেতে উঠলো। আমি যখন আবার ডুকে বলি আপা আমার রুগী বেহুশ, একটু তাড়াতাড়ি করেন।দমক দিয়ে নার্সটা বলল আপনাকে বাহিরে দাঁড়াতে বলছি না।

অনেক্ষণ পর ফাইলটা ডাক্তার রুমে পাঠাল।তবে ডাক্তার দেখছি মোটেও অবহেলা করেনি।২জন ডাক্তার আছে,১জন আমাকে ডেকে বলল ১৫নং ওয়ার্ডে নিয়ে গিয়ে এক্সরে করে নিয়ে আসেন।আবার স্টেচার লাগবে, এক মাসিকে বলাতে বলল ১৫০ লাগবে।আমি বললাম মগের মুল্লুক পেয়েছেন। তাতেই উনি চড়াও হয়ে উঠল আমার উপর।মনে আসল আমার রুগির অবস্থাতো খারাপ,যাক উনার কথা কানে না নিয়ে ১০০ টাকা দিবো বলে নিয়ে গেলাম এক্সরে রুমে।২০০ দিয়ে টিকেট নিলাম কাউন্টার থেকে। এক্সরে করে রিপোর্ট নিতেই টেকনিশিয়ান চেয়ে বসল ২০টাকা।২০ টাকা দিয়ে রিপোর্ট নিয়ে রহিমকে নিয়ে আসলাম আবার ১৩নং ওয়ার্ডে।ডাক্তার এক্সরে রিপোর্ট দেখে বলল ঔষধ গুলো নিয়ে আসেন আর পরিক্ষাগুলো করান।ঔষধ নিয়ে এসে ওয়ার্ড বয়কে দিলাম।ওয়ার্ড বয় বলল এই ইনজেকশন আর এই স্যালাইনটা আমাদের আছে, এগুলো ফেরত দিয়ে আসেন আমাকে কিছু দিয়েন।এই বলে পাক্কা ১৫০ টাকা নিয়ে নিল। আমার ভাইকে ডুকাতে ওয়ার্ড গেইটের আনসার নিল ২০ টাকা।এর বাইরে পরীক্ষা, ঔষধ বাবদ এমুহূর্তে ৫০০০ টাকা চলে গেলো।আজও প্রথম দিন।আরও কত টাকা দিতে হবে আল্লাহ জানে।
ওরা এরকম কত রহিম নামের রুগীর সাথে প্রতারনা করতেছে।এসব দেখার কেউ নেই। একজন গার্মেন্টস শ্রমিকের কত টাকায় বা জমা আছে।হয়তো এভাবে চিকিৎসা নামে গরিবরা নিঃস্ব হয়ে যায়।
গরীবের চিকিৎসার স্থান নাম দিয়ে গরিব মারার ফাঁদ বসাল সরকার। করোনার দিনে ভেসে আসিতেছে চিকিৎসা খাতের একেকটা নেতিবাচক খবর।হয়তো একদিন আশার আলো জলবে গরীবের মনে।কারণ আশায় বাঁচে মানুষ। তবে এসব প্রতরণার বিষবৃক্ষ যতদিন উপড়ে ফেলা হবে না ততদিন গরীবের মনে শান্তি ফিরে আসবে না।

(বিঃ দ্রঃ- মুক্তমতে প্রকাশিত সকল লেখা সম্পূর্ণ নিজস্ব মতামত। এর দায় লেখকের।)

Logo-orginal