, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

admin admin

সিনেমায় মাফিয়াদের ছাড়িয়ে গেলো সাহেদ পাপিয়ারা,তবে তাদের গডফাদার কে বা কারা!?

প্রকাশ: ২০২০-০৭-১৭ ০০:১৮:৩৩ || আপডেট: ২০২০-০৭-১৭ ০০:১৮:৩৬

Spread the love

কায়সার সিকদারঃ সাহেদকাণ্ড, পাপিয়ার কীর্তি, ক্যাসিনোর আসরসহ সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বলা যায়, এক জমজমাট অ্যাকশন সিনেমার দর্শক হয়ে বসে আছি আমরা।এই সিনেমাতে কী নেই? রাজনৈতিক কমেডিও আছে। ঘটনা জানাজানির পর এখন বলা হচ্ছে সাহেদ আওয়ামী লীগের কেউ না—হাওয়া ভবনের লোক। বিএনপির ঘনিষ্ঠ। কী ভয়ংকর কথাবার্তা। হাওয়া ভবনের লোক আওয়ামী লীগের অন্দর মহলে ঢুকে গেল কী করে।দেশের বড় বড় কর্তা থেকে শুরু করে সংবাদিক, লেখক নেই কার সাথে ছবি।তার উত্তর কেউ দিচ্ছে না।

আমাদের লোকগল্পগুলো প্রতারণার কৌশল বন্দনায় মুখর। এক দেশে ছিল দুই ঠক। একজন আমপাতা নিল এক বস্তা। আরেকজন কলার বিচি নিল এক ঝোলা। রাস্তায় গাছের নিচে বসল দুজন। তোমার বস্তায় কী? তেজপাতা। তোমার বস্তায় কী? গোলমরিচ। দুজনেই বস্তা বদল করল। তারপর খুলে দেখে তেজপাতা নয়, আমপাতা। গোলমরিচ নয়, কলার বিচি।

কিন্তু সব ঠকের সেরা ঠক ছিল ঠগিরা। এই উপমহাদেশে ছিল এক ভয়াবহ সম্প্রদায়, ঠগি সম্প্রদায়।উইকিপিডিয়া বলছে, ‘ঠগি বিশেষ শ্রেণির দস্যু দল যারা পথিকের গলায় রুমাল বা কাপড় জড়িয়ে হত্যা করত। ঠগিরা ১৩ থেকে ১৯ শতকে বাংলায় এবং উত্তর ভারতে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল।এখন কোভিড–১৯ মহামারিকালে বাংলাদেশে আবারও দেখা দিয়েছে এক মারাত্মক ঠগির দল। অতীতের ঠগিরা ১০০ বছরে উপমহাদেশজুড়ে হত্যা করেছিল ১০ লাখ মানুষ, আর এই নব্য ঠগিরা ১০ সপ্তাহে মারতে চায় ১০ লাখ।

এই দেশ কেবল রাশি রাশি ভারা ভারা ধান উৎপাদন করে না, রাশি রাশি প্রতারকও উৎপাদন করে। আমরা দেখেছি, নির্মাণকাজে ইস্পাতের বদলে দেওয়া হয়েছে বাঁশ, বালিশ দুয়ার থেকে তিনতলায় তুলতে খরচ ধরা হয়েছে হাজার হাজার টাকা, তিন শ টাকার পর্দার দাম ধরা হয়েছে লাখ টাকা। আমরা দেখেছি, নকল ক্যাপসুলের কারখানা, ক্যাপসুলের ভেতরে আটা ভরে বিক্রি করা হয়েছে অ্যাসিডিটির ওষুধ হিসেবে। আমরা জানি, জিনের বাদশাহর ফোন আসে, কথা বলে অন্যের পকেটের টাকা নিজের পকেটে পোরার প্রতারণাকে এই দেশের মানুষ অতি নিপুণ শিল্পের পর্যায়ে উন্নীত করেছে। আপনার নামে ভুল করে টাকা পাঠানো হয়েছে কিংবা আমি বিকাশ অফিস থেকে বলছি, এ ধরনের প্রতারক চক্রের খপ্পরে অনেকেই পড়েছেন।

কিন্তু এসব মদদদাতার পিছনে নিশ্চয় কেউ না কেউ জড়িত। রাজার দূর্গে পৌঁছাতে রাজার আশেপাশের হাত থাকতে হয়।নিশ্চয় সাহেদ পাপিয়াদেরও আছে।আমাদের দেশের রাজনীতিকে এখন চিন্তা করা হয় কলা খেয়ে খোসা গোপন হওয়ার মতো। সাহেদের মতো হয়তো এরাও নীতি বাক্য শুনিয়ে আমজনতার কাছে পৌঁছে দেশের ক্রান্তিলগ্নে লালা লাগিয়ে সাহেদ পাপিয়াদের ডন হয়ে ছড়ি ঘুরাচ্ছে।

সাহেদ পাপিয়াদের মতো দুর্নীতিবাজেরা তাদের কর্মকাণ্ড ধামাচাপা দেওয়ার জন্য ক্ষমতাসীন রাজনীতিবিদ, আমলা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সংবাদমাধ্যমকে হাত করে রাখে। ফলে তাদের অপকর্ম প্রকাশ পায় না। চুনোপুঁটি দু-একজন ধরা পড়লেও রুই-কাতলারা অধরাই থেকে যায়!
সবচেয়ে হতাশার বিষয় হলো দুর্নীতিপরায়ণ রাজনীতিবিদ, আমলা, সাংবাদিকেরা দুর্নীতি সম্পর্কে আমাদের নসিহত করেন। রিজেন্ট হাসপাতাল কেলেঙ্কারির নায়ক সাহেদ করিমকে চ্যানেল আইয়ের তৃতীয় মাত্রায় দুর্নীতি বিষয়ে জ্ঞানগর্ভ আলোচনা করতে দেখা গেছে। অর্থাৎ দুর্নীতি আলোচনার অ্যাজেন্ডাটিও এখন হাইজ্যাক হয়ে গেছে। ফলে দুর্নীতি বিষয়ে কোনো অর্থবহ আলোচনাও আর সম্ভব হচ্ছে না।
তবে অর্থবহ রাজনৈতিক পরিবর্তন ও অঙ্গীকার ছাড়া দুর্নীতি দমনে সফলতা অর্জন সম্ভবপর নয়।

নতুনমাত্রায় রূপ নিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের চিঠি টানাটানি নিয়ে।হয়তো এসব রাজনীতির আড়ালে দামাচাপা দিতে চাই তাদের অপকর্ম।

এখান স্বাস্থ্য খাতের মতো প্রতিটি দপ্তর নিয়ন্ত্রণ করেন সাহেদ বা জেকেজির ডা. সাবরিনার মতো প্রভাবশালীরা। এক অদৃশ্য শক্তির জাদুবলে তাঁরা ফুলেফেঁপে ওঠেন। জেকেজি ও রিজেন্ট ভুয়া সনদ দিয়ে রমরমা ব্যবসা করে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকেই এসবের অনুমতি মেলে। কোনো কারণে হয়তো শাহেদের খবর বেরিয়েছে। এ রকম অনেক সাহেদ এখনো ক্ষমতার আশপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সাহেদ, পাপিয়া, শামিম, সম্রাটরা একে অপরের কীর্তিকে ছাড়িয়ে যাওয়ার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত।

তবে,এই দূর্নীতি, প্রতারণা ,অনিয়ম,হত্যা,জাল সনদ, ক্যাসিনো বার, গোলাগুলির দৃশ্য, শিশু নির্যাতন,নারী ধর্ষণ,এ-সব সিনেমাতেই ভালো লাগে। কিন্তু বাস্তবে এসব কারওই ভালো লাগার কথা না। মানুষের মনে প্রশ্ন, জনগণের টাকা লোপাট করার সুযোগ সাহেদ, সাবরিনাদের কে করে দিল? এই প্রশ্নের সমাধান না মিললে সাহেদদের দৌরাত্ম্য সমাজ থেকে যাবে না। একজন যাবে, আরেকজন চলে আসবে।

Logo-orginal