, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

admin admin

রাঙ্গুনিয়ায় আ. লীগ নেতার রহস্যজনক মৃত্যু, পরিবারের দাবী হত্যা

প্রকাশ: ২০২০-০৯-১৮ ২০:২০:৪৬ || আপডেট: ২০২০-০৯-১৮ ২০:২০:৪৭

Spread the love

ইসমাঈল হোসেন নয়ন, রাঙ্গুনিয়াঃ চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় ইউনুস মিয়া (৫৫) নামে এক আওয়ামী লীগ নেতার রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। জায়গা সংক্রান্ত বিরোধের জেরে দুই পক্ষের সংঘর্ষে তার মৃত্যু হয়েছে বলে জানা যায়। শুক্রবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১টার দিকে উপজেলার হোছনাবাদ ইউনিয়নের মোগলের হাট খামারী পাড়া এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। নিহত ইউনুস মিয়া ওই এলাকার মৃত দুলা মিয়ার ছেলে এবং হোছনাবাদ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য। নিহতের পরিবারের দাবী হোছনাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মির্জা সেকান্দর হোসেনের নেতৃত্বে তাকে পিঠিয়ে হত্যা করা হয়েছে। অন্যদিকে চেয়ারম্যান বলছেন সংঘর্ষ থামানোর পর সবাই যখন ইউনিয়ন পরিষদে চলে আসেন, সেখানেই পরিষদ মাঠে তিনি হঠাৎ মাটিতে পড়ে যান এবং স্ট্রোক করেন। পরে হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়েছে। এদিকে তাকে পিঠিয়ে হত্যা করা হয়েছে নাকি স্ট্রোক করে মারা গেছেন এই বিষয়ে এলাকায় রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করেন। এই ঘটনায় থানায় মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন নিহতের স্বজনরা।
নিহতের স্বজন ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, উপজেলার হোছনাবাদ ইউনিয়নের মোগলের হাট খামারী পাড়া এলাকার নিহত ইউনুস মিয়ার সাথে একই এলাকার জেবল হোসেনের পুত্র হাবিবুর রহমান, আজিজুর রহমান গংদের জায়গা সংক্রান্ত বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। এই ঘটনায় দুই পক্ষের মাঝে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মধ্যস্ততায় একাধিক মিমাংসা বৈঠক হলেও তা নিয়ে দুই পক্ষের মাঝে উত্তেজনা বিরাজ করছিল এবং সর্বশেষ এই নিয়ে আদালতে মামলাও চলছে। এর জেরে শুক্রবার জায়গা দখলকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মাঝে সংঘর্ষ হয়। এতে বেশ কয়েকজন আহতও হয়েছে এবং একজন নিহতের ঘটনা ঘটে।
এই ব্যাপারে নিহতের ভাতিজা ইমরান হোসেন মুন্না বলেন, আজ (শুক্রবার) সকালে আমার চাচা ইউনুস মিয়ার জায়গা দখলের জন্য প্রতিবেশী মহররম মিয়া, হাবিবুর রহমান এবং তার ছেলে এহসানুল হক এবং আজিজুর রহমান ও তার ছেলে মো. মামুন, মনির আহাম্মেদ ও তার ছেলে সাইমুন যান। দখল করতে গিয়ে তারা আমাদের গাছ কাটতে গেলে চাচা ইউনুস মিয়া বাধা দেন। এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি শুরু হলে তারা আমার চাচা ইউনুস মিয়া, তার ছেলে এবং আমাকে বাটাম ও লোহার রড দিয়ে বেধড়ক মারধর শুরু করেন। একপর্যায়ে হোসনাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান মির্জা সেকান্দর লোকজন নিয়ে ঘটনাস্থলে আসেন। এসময় তার হাতে একটি অস্ত্রও ছিল। তিনিসহ এসে আমাদের এলোপাথাড়িভাবে মারধর করেন। তাদের অতর্কিত হামলায় খুন হন আমার চাচা ইউনুস মিয়া। এই ঘটনায় আমি নিজেও আহত হয়েছি। আহত হয়েছেন নিহত ইউনুস মিয়ার ভাই ইছহাক মিয়া (৫০), ইউসুফ মিয়া (৬০), ছেলে মো. রাসেল (৩০), ভাতিজা নাছির উদ্দিন শুভ (২৫)। আমরা এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করছি।
এই ব্যাপারে জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান মির্জা সেকান্দর হোসেন বলেন, শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে হাবিবুর রহমান নামে এক ব্যক্তি আমাকে ফোনে জানায় বহিরাগত কিছু লোক অতর্কিত তাদের গোয়ালঘর ভাংচুর করছেন এবং জায়গা দখল প্রক্রিয়া চালাচ্ছেন। আমি পরিষদের একজন চৌকিদারসহ ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি, স্বনির্ভর রাঙ্গুনিয়া ইউনিয়নের চিহ্নিত কিছু দুর্বৃত্ত জায়গা দখল প্রক্রিয়া চালাচ্ছে এবং এই নিয়ে দুইপক্ষের মাঝে মারামারি চলছে। আমি উভয় পক্ষকে শান্ত করে ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে আসি। পরে বিষয়টি পুলিশ এবং আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতৃবৃন্দকে অবহিত করি। ইতিমধ্যে ঘটনাস্থলে পুলিশ আসেন। তাদের নিয়ে আমরা পরিষদে বসে কথা বলছিলাম। এরমধ্যে হঠাৎ শুনি বাইরে ইউনুস মিয়া মাথা ঘুরে পড়ে গেছেন এবং হাসপাতালে নেওয়ার পথে স্ট্রোক করে তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন। আমার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা এই ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে আমাকে জড়িয়ে নানা ভাবে অপপ্রচার চালাচ্ছেন।’
তার মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. তাহেরাতুল আশরাফী বলেন, ‘হাসপাতালে আনার আনুমানিক আধাঘন্টা আগে তিনি মারা গেছেন। শরীরে আঘাতের কোন চিহ্ন পাওয়া যায়নি। তবে শরীরের অভ্যন্তরীণ কোন আঘাত কিংবা অন্য কি কারণে মারা গেছেন তা ময়নাতদন্তে বুঝা যাবে।’
রাঙ্গুনিয়া থানার ওসি মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানান, পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করেছেন। তিনি কিভাবে মারা গেছেন তা ময়নাতদন্ত শেষে বলা যাবে। এই ব্যাপারে নিহতের স্বজনদের লিখিত এজহারের ভিত্তিতে তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Logo-orginal