, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

admin admin

জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর জনাব মকবুল আহম্মেদ আর নেই,

প্রকাশ: ২০২১-০৪-১৩ ১৩:৪৪:১৭ || আপডেট: ২০২১-০৪-১৩ ১৯:১৭:৫৪

Spread the love

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর বিশ্ব ইসলামী আন্দোলনের অন্যতম নেতা জনাব মকবুল আহম্মেদ ইন্তেকাল করেছেন ।

ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।

আজ সোমবার (১৩ এপ্রিল) দুপুরে ঢাকা একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুনিয়া থেকে বিদায় নেন।

২০১০ সালের জুনে জামায়াতের তৎকালীন আমীর মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে মকবুল আহমাদ ভারপ্রাপ্ত আমীরের দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৬ সালের ১৭ অক্টোবর থেকে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর তৃতীয় আমীর হিসেবে নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করে গেছেন।
সংক্ষিপ্ত জীবনী : বাংলাদেশে ইসলামী আন্দোলন শুরু করার ক্ষেত্রে যে কয়জন তাদের মেধা ও শ্রম সর্বোচ্চ বিনিয়োগ করেছেন মকবুল আহমাদ তাদের অন্যতম। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর তৃতীয় আমীর হিসেবে তিনি নির্বাচিত হন। জামায়াতে ইসলামীর আন্দোলনকে সারাদেশে ছড়িয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে মকবুল আহমাদের ভূমিকা উল্লেখ করার মত। সংগঠনকে তৃণমূল পর্যন্ত পৌঁছানো ও সুস্থ সংগঠন হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে তিনি অবিশ্রান্তভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
জন্ম : অত্যন্ত সহজ সরল ব্যক্তিত্ব মকবুল আহমাদ ১৯৩৯ সালের ৮ই আগস্ট ফেনী জেলার দাগনভূঞা উপজেলার ওমরাবাদ গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মরহুম নাদেরুজ্জামান। তাঁরা ৫ ভাই ও ৩ বোন। তাঁর পরিবারের সকল সদস্যই ইসলামী আন্দোলনের সাথে জড়িত।
শিক্ষা ও ক্যারিয়ার : মকবুল আহমাদের প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয় পূর্বচন্দ্রপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এখানে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করে তিনি স্থানীয় দাগনভূঞা কামাল আতার্তুক উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। নবম শেণিতে তিনি জায়লস্কর উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং এই স্কুল থেকে ১৯৫৭ সালে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। প্রাথমিক পর্যায় থেকে মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত সকল পরীক্ষায় তিনি কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন। মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাশের পরে তিনি ফেনী কলেজে ভর্তি হন। তিনি এ কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং ১৯৬২ সালে বিএ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। বিএ পাশের পরে এক বছর সরকারী চাকুরী করার পরে চাকুরী ছেড়ে দেন এবং শিক্ষকতাকে পেশা হিসাবে গ্রহণ করেন। তিনি নিজ এলাকার শরিষাদী উচ্চ বিদ্যালয়ে ৪ বছর এবং ফেনী সেন্ট্রাল উচ্চ বিদ্যালয়ে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত শিক্ষকতা করেন। ১৯৭০ সাল থেকে ৭১ সাল পর্যন্ত তিনি তৎকালীন ফেনী মহকুমার দৈনিক সংগ্রামের প্রথম নিজস্ব সংবাদদাতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশের চিংড়ি মৎস উৎপাদনের উপরে তার বিশেষ প্রবন্ধ (বাংলাদেশের “কালো সোনা” সৌদী আরবের “তরল সোনা”-কে ছাড়িয়ে যাবে) ৭০ দশকে দৈনিক সংগ্রামে ছাপার পর ব্যবসায়ী মহলে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি হয়।
রাজনৈতিক জীবন : ছাত্রজীবন থেকেই তিনি সক্রিয়ভাবে ইসলামী আন্দোলনের সাথে জড়িত রয়েছেন। ছাত্রজীবন শেষ করে ১৯৬২ সালে জামায়াতে ইসলামীতে যোগদান করেন এবং ১৯৬৬ সালে জামায়াতে ইসলামীর রুকন (সদস্য) হন। ১৯৬৭ সাল থেকে ৬৮ সাল পর্যন্ত ফেনী শহর এবং ১৯৬৮ সাল থেকে ১৯৭০ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তৎকালীন ফেনী মহকুমার আমীরের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য পদে ফেনী-সোনাগাজী নির্বাচনী এলাকা থেকে জামায়াতের প্রার্থী হিসাবে তিনি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ১৯৭০ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে ১৯৭১ সালের জুন মাস পর্যন্ত তিনি নোয়াখালী জেলা জামায়াতের আমীরের দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৭৯ সালে বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামীর কাজ পুনরায় শুরু হলে তিনি কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। দীর্ঘ দশ বছর এই দায়িত্ব পালনের পর ১৯৮৯ সাল থেকে ২০০৩ পর্যন্ত তিনি সহকারী সেক্রেটারী জেনারেলের দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি বাংলাদেশ পাবলিকেশন্স লিমিটেডের চেয়ারম্যান ছিলেন ১৯৯৭ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত।
২০০৪ সাল থেকে তিনি কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীরের দায়িত্ব পালন করছেন। একইসাথে ২০০৪ সাল থেকে তিনি বাংলাদেশে ইসলামিক ইনস্টিটিউটের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ ইসলামী সাহিত্য প্রকাশের প্রতিষ্ঠান আধুনিক প্রকাশনী বি.আই. ট্রাস্টের একটি প্রতিষ্ঠান।
২০১০ সালের জুনে জামায়াতের তৎকালীন আমীর মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে মকবুল আহমাদ ভারপ্রাপ্ত আমীরের দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৬ সালের ১৭ অক্টোবর থেকে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর তৃতীয় আমীর হিসেবে নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করে গেছেন।
পারিবারিক জীবন : তিনি ১৯৬৬ সালে লক্ষীপুর নিবাসী প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন ঢাকা আরমানিটোলা সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের হেড মাওলানা মরহুম ওহিদুল হকের কনিষ্ঠা কন্যা জনাবা সুরাইয়া বেগমের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বর্তমানে তাদের ৩ ছেলে ও ২ মেয়ে রয়েছে। তারা সকলেই ইসলামী আন্দোলনের সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত।
সমাজ কল্যাণমূলক কর্মকান্ড : ছাত্র জীবন থেকেই তিনি সমাজ সেবামূলক কাজের সাথেও জড়িত রয়েছেন। নিজ গ্রামের যুবকদের নিয়ে ১৯৬২ সালে “ওমরাবাদ পল্লী মঙ্গল সমিতি” প্রতিষ্ঠা করেন এবং দীর্ঘ দশ বছর পর্যন্ত এ সমিতির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এলাকার রাস্তাঘাট, পুল ও সাঁকো সংস্কার নির্মাণে এবং দরিদ্র লোকদের সাহায্য-সহযোগিতাকল্পে এ সমিতির সভাপতি হিসেবে তিনি বিশেষ অবদান রাখেন।
তিনি ১৯৭৬ সাল থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত “গজারিয়া হাফেজিয়া মাদ্রাসার” ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৬ ও ৭৯ সালে তিনি “রাবেতা আলম আল ইসলামীর” মেহমান হিসাবে দু’বার পবিত্র হজ্জ্বব্রত পালন করেন এবং জাপান ইসলামী সেন্টারের দাওয়াতে জাপান সফর করেন।
১৯৮৪ সালে তিনি ঢাকায় অবস্থিত জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান “ফালাহ-ই-আম ট্রাস্টের” চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৮৪ সাল থেকে স্থানীয় “সিলোনিয়া আঞ্জুমানে ফালাহিল মুসলিমীন ট্রাস্ট” ও “ফেনী ইসলামি সোসাইটির” সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছেন।

সিলোনিয়া ট্রাস্টের উদ্যোগেই সিলোনিয়া মাদ্রাসা সংলগ্ন মসজিদ ও “উম্মুল মোমেনীন মহিলা মাদ্রাসা” প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ফেনী ইসলামিক সোসাইটির উদ্যোগে বিখ্যাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ফেনী শাহীন একাডেমী (কেজি ও হাই স্কুল) প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তিনি ফেনী আল জামেয়াতুল ফালাহহিয়া ট্রাস্টের সদস্য এবং দাগনভূঞা সিরাজুম মুনিরা ট্রাস্টেরও সভাপতি। এর উদ্যোগে একটি এতিমখানা ও হাইস্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ফালাহিয়া ট্রাস্টের উদ্যোগেই ফালাহিয়া কামিল মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ফেনী জিলার মধ্যে প্রথম মানের মাদ্রাসা হিসাবে এ মাদ্রাসা বেশ সুনাম অর্জন করেছে।

সাহিত্যকর্ম ও দেশভ্রমণ : রাবেতা আল-আলম আল-ইসলামীর মেহমান হিসাবে তিনি ২বার হজ্জ পালন করেন। তিনি জাপান ও কুয়েত (সাংগঠনিক প্রয়োজনে) সফর করেন। সাপ্তাহিক সোনার বাংলায় “জাপান সফর- দেখার অনেক, শিখার অনেক” এ বিষয় তার সফর অভিজ্ঞতা নিয়ে একটি সুন্দর লিখা প্রকাশিত হয়।

Logo-orginal