admin
প্রকাশ: ২০১৫-০৬-১৪ ০৯:০১:১৫ || আপডেট: ২০১৫-০৬-১৪ ০৯:০১:১৫
কুর্মিটোলার ওই ক্যাম্পে ৭০টি ঘর জুড়ে প্রায় ২ হাজার মানুষ বসবাস করে। পাকিস্তানি ক্যাম্পের চুক্তি অনুযায়ী বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগের কোনো বিল পরিশোধ করে না বসবাসকারীরা। এই ক্যাম্পের বিপরীতেই ৬০টি ঘর নিয়ে তৈরি করা হয় রাজু বস্তি। সেখানে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয় ওই ক্যাম্প থেকে। কিন্তু বেশি লোড নিতে না পারায় প্রায়ই লাইন পুড়ে যেত। পরে তারা লাইন কেটে দিলে তা নিয়েই রাজু বস্তি ও বিহারি ক্যাম্পের মধ্যে ঝগড়া হতো। বিদ্যুতের লাইন দেওয়া নিয়েই এ সংঘর্ষ ঘটে বলে দাবি করে আসছে বিহারিরা।
২০১৪ সালের ১৪ জুন পবিত্র শবে বরাতে আতশবাজি ফোঁটানোকে কেন্দ্র করে শুরু হয় সংঘর্ষ। বিহারিদের অভিযোগ, এক পর্যায়ে সকাল ৭টার দিকে পুলিশের উপস্থিতিতে স্থানীয় জনতা বিহারিদের কয়েকটি ঘরে তালা দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় আগুন নেভাতে এলে বিহারিদের ওপর স্থানীয় জনতা হামলা চালায়। পুলিশও গুলি ছোড়ে। অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট।
তবে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা পৌঁছানোর আগেই একটি ঘরে আটকে পড়া একই পরিবারের আটজন পুড়ে অঙ্গার হয়ে যায়। এরা হলেন- ইয়াসিন আলীর স্ত্রী বেবী আক্তার (৪৫), তিন মেয়ে শাহানি (২০), আফসানা (১৮), রুখসানা (১৪), যজম ছেলে লালু ও ভুলু (১২), পুত্রবধূ শিখা (১৯) ও শাহানির ছেলে মারুফ (৩)। ইয়াসিনের ঘরে তালা ঝুলিয়ে আগুন দেওয়ার পর তার ছেলে আশিক তাদেরকে উদ্ধার করতে গেলে হামলাকারীরা আশিকের মাথায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপ দেয়। সেখানেই পড়ে যায় আশিক এবং অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যায়।
এ ছাড়া পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ টিয়ার সেল ও রাবার বুলেট এবং গুলি ছোড়ে। পুলিশের ছোড়া গুলিতে আজাদ (৩০) নামে এক বিহারি যুবক বিদ্ধ হয়। পরে তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
আজাদের ভগ্নিপতি সুমন অভিযোগ করেন, স্থানীয় সংসদ সদস্য ইলিয়াস মোল্লার স্থাপিত রাজু বস্তিতে পাকিস্তানি ক্যাম্প থেকে বিদ্যুৎ লাইনের সংযোগ স্থাপন নিয়ে আগে থেকেই দ্বন্দ্ব ছিল। ওই ক্যাম্প থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ রাজু বস্তিতে দেওয়া হয়নি। এর জের ধরে শবে বরাতে আতশবাজি ফোটানোকে কেন্দ্র করে ভোরে স্থানীয় জনতার সঙ্গে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা যুক্ত হয়ে হামলায় অংশ নেয়।
তবে ঘটনার এক বছর পেরিয়ে গেলেও কালশী হত্যাকাণ্ডের নির্দিষ্ট কোনো কারণ এখনো বের করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংঘর্ষের ভিডিও প্রকাশিত হলেও শনাক্ত কিংবা গ্রেফতার হয়নি কেউই। সংঘর্ষের সময় শতাধিক লোক উপস্থিত ছিল।
এত লোকের ভেতরে কারা আগুন দিয়েছিল, তাদের শনাক্ত করতে সময় লাগছে। তবে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
মামলার তদারককারী কর্মকর্তা ডিবির পশ্চিম জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) সাইফুল ইসলাম বলেন, মামলাগুলোর তদন্তে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই। তবে আমরা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গেই মামলাগুলো তদন্ত করছি। কাউকে গ্রেফতার বা শনাক্ত করা যায়নি। তবে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।