, মঙ্গলবার, ৭ মে ২০২৪

admin admin

ঢাকায় সক্রিয় প্রাইভেট গোয়েন্দারা

প্রকাশ: ২০১৫-০৬-২৭ ০১:০৯:৫৩ || আপডেট: ২০১৫-০৬-২৭ ০১:১০:২৭

Spread the love

আরটিএমনিউজ২৪ডটকম ঢাকা: কিছুটা বিস্ময়কর হলেও ঘটনা সত্য। খোদ ঢাকাতেই সক্রিয় প্রাইভেট গোয়েন্দারা। একটি লিফলেটের সূত্র ধরে খোঁজ পাওয়া গেছে এমন একটি গোয়েন্দা প্রতিষ্ঠানের।

১৭ জনের একটি টিম নিয়ে তৈরি এ গোয়েন্দা বাহিনী। তারা সক্রিয় রয়েছেন ঢাকার অভিজাত এলাকা থেকে শুরু করে অলিগলিতে।

প্রতিদিনই তারা কাউকে অনুসরণ করছেন অথবা কারও মোবাইল ফোন রেকর্ড করে শুনছেন। অগোচরে হয়তো ছবি কিংবা ভিডিও করছেন।

এমন এক চমকপ্রদ সংবাদ ছাপিয়েছে মানবজমিনের আজকের (শনিবার) অনলাইন সংস্করনে ।

১০ হাজার টাকার বিনিময়ে যে কাউকে অনুসরণের জন্য ভাড়া করা যাচ্ছে এ গোয়েন্দাদের। তবে এসব কিছু করা হচ্ছে আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে।

কারও মোবাইল ফোনে আড়িপাততে হলে রাষ্ট্রের উচ্চপর্যায়ের অনুমতি নিতে হয়। এ নিয়ে বিটিআরসির রয়েছে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা। কিন্তু এসবের কোন কিছুই মানা হচ্ছে না। ফিক্স দ্য ফক্স নামে প্রাইভেট এ গোয়েন্দা সেবার ব্যবসা করা হচ্ছে উত্তরার ৬ নম্বর সেক্টরের ১১ নম্বর রোডের ৩৪ নম্বর বাসা থেকে।

নিচতলায় এক কক্ষের ছোট্ট একটি অফিস থেকে পরিচালনা করা হয় গোয়েন্দার সব ধরনের কার্যক্রম। তবে এ নিয়ে কোন ধরনের লুকোচুরি নেই। নিজেদের কার্যক্রমের কথা জানিয়ে এরই মধ্যে রাজধানীর অভিজাত এলাকা হিসেবে চিহ্নিত গুলশান, বনানী, নিকেতন ও বারিধারায় সীমিত আকারে লিফলেট লাগানো হয়েছে।

সেখানে যোগাযোগের জন্য রয়েছে ফোন নম্বর। গুলশানের ফুটপাথে এ ধরনের একটি লিফলেট দেখে যোগাযোগ করা হয়। সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে অপরপ্রান্ত থেকে সঙ্গে সঙ্গে লাইন বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়।

পরে অপর এক নম্বর থেকে পরিচয় গোপন করে তাদের সেবা চাইলে বিস্তারিত জানানো হয়। গোয়েন্দাদের দাবি, তারা সবাই অপরাধতত্ত্ব ও পুলিশ বিজ্ঞান বিষয়ের ওপর ডিগ্রিধারী। বেশির ভাগ পড়াশোনা করেছেন টাঙ্গাইলের সন্তোষে অবস্থিত মাওলানা ভাষানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।

এ ছাড়া কয়েকজন আছেন রাজধানীর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের। নিজস্ব ওয়েবসাইটের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটির রয়েছে ফেসবুকসহ অন্যান্য অ্যাকাউন্ট। এসব সাইটের মাধ্যমে নিজেদের কর্মকাণ্ড তুলে ধরেছেন তারা। তাদের ফেসবুকের পেইজে দেখা গেছে, বিশ্ববিখ্যাত গোয়েন্দা হিসেবে পরিচিত শার্লক হোমস ও অন্য গোয়েন্দাদের বাণী তুলে ধরেছেন।

একই সঙ্গে আবেদন করেছেন যে কোন ব্যক্তিগত ও করপোরেট সমস্যার সমাধানে তারা সর্বদা প্রস্তুত। ২০ ধরনের সেবা নিয়ে তারা মাঠে আছেন বলে দাবি করেন।

প্রতিষ্ঠানটির প্রধান অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা (চিফ ইনভেস্টিগেশন অফিসার) মোহা. মাহাবুব আলম বলেন, ব্যক্তিগত ও পারিবারিক নানা সমস্যা নিয়ে আমাদের টিম কাজ করে। বিশেষ করে স্ত্রী কিংবা হবু স্ত্রীর গতিবিধি নজরদারি, তাদের মোবাইল ফোনে আড়িপাতা ইত্যাদি। নিজেদের অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২০১৪ সালে এ ধরনের ব্যক্তিগত ৩৫১টি ঘটনা নিয়ে কাজ করেছি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আমাদের গোয়েন্দারা প্রমাণসহ (ছবি, ভিডিও ও কথোপকথনের রেকর্ড) কাস্টমারকে সার্ভিস দিয়েছে। সিনিয়র ও জুনিয়র দুই ধরনের গোয়েন্দা রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। গুরুত্বপূর্ণ কেস হলে সিনিয়রদের মাঠে নামানো হয়।

প্রতিষ্ঠানটির জুনিয়র গোয়েন্দা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মো. ইমামুল হক। মানবজমিনকে তিনি বলেন, মাত্র এক মাস আগে এখানে চাকরি নিয়েছি। সব ধরনের গোপনীয়তা রক্ষা করে এখানে কাজ করা হয়। তাই নিশ্চিন্তে যে কেউ সার্ভিস নিতে পারেন।
যেভাবে কাজ করেন গোয়েন্দারা: অনুসরণ কিংবা অন্যান্য সেবা নিতে হলে প্রথমেই গোয়েন্দা সংস্থাটির নির্ধারিত ফরম পূরণ করতে হয়। এতে কাস্টমার ও তার শত্রু সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দিতে হবে। পাশাপাশি কি উদ্দেশ্যে অনুসরণ করতে হবে তা উল্লেখ করতে হয়। অনুসরণের ক্ষেত্রে দুভাবে তদন্ত করে গোয়েন্দা বাহিনী।

একটি টিম মাঠে থাকে অনুসরণের দায়িত্বে। তারা সুযোগ বুঝে ছবি তোলে। আবার কখনও গতিবিধির ভিডিও করে রাখে। অপর টিম অফিসে বসে মোবাইলে আড়িপাতে। কখন, কার সঙ্গে কিংবা কোন নম্বরে বেশি কথা বলে তা রেকর্ড রাখে। এজন্য তারা ব্যবহার করেন অত্যাধুনিক চারটি ট্র্যাকিং প্রযুক্তি। এগুলো হচ্ছে- এন্ট্রি থেপট ড্রিপ শেপড পুল বক্স রিকয়লার, ড্রিপ শেপড এন্ট্রি থেপট পুল বক্স, রাউন্ড এন্ট্রি থেপট পুল বক্স ও নিউ স্মার্টফোন। এ ছাড়া ২১ ধরনের ডিভাইস কাস্টমারদের কাছে বিক্রি করেন তারা। সাধারণত তিন দিন থেকে শুরু করে ৭ দিনের মধ্যে একটি রিপোর্ট তৈরি করেন তারা।

কর্মকর্তারা জানান, অভিযুক্ত ৭ দিনের মধ্যে কোন না কোন ভুল নিশ্চয় করবেন। এ নিশ্চয়তা থেকেই তারা ৭ দিনের সময়টি নির্ধারণ করে এগোন। সর্বনিম্ন ১০ হাজার টাকায় তারা অনুসরণের কাজটি নিয়ে থাকেন। ঢাকার বাইরে হলে ১৫ হাজার থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৩০ হাজার টাকা ফিস নেয়া হয়।

মানবজমিন/আরটিএমনিউজ২৪ডটকম/এ কে

Logo-orginal