, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

Avatar Arfat

মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ড বহাল: রায় রিভিউ আবেদনের সিদ্ধান্ত

প্রকাশ: ২০১৫-০৬-১৬ ১০:২০:২৬ || আপডেট: ২০১৫-০৬-১৬ ১০:২০:২৬

Spread the love

b6b274d92e7f84efdaf8bb81b07cd9cb_XL

আরটিএমনিউজ২৪ডটকম, ঢাকা: একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদকে দেয়া ট্রাইব্যুনালের মৃত্যুদণ্ডের রায় বহাল রেখেছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।

আজ (মঙ্গলবার) সকালে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের চার সদস্যের বেঞ্চ এই রায় ঘোষণা করেন। এ বেঞ্চের অপর সদস্যরা হলেন: বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।

 

যে ৩টি অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল মুজাহিদকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল তার মধ্যে বুদ্ধিজীবী হত্যায় সহযোগিতা ও পরিকল্পনার অপরাধে তার মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছে আপিল বিভাগ। তবে সাংবাদিক সিরাজুদ্দিন হোসেনকে অপহরণের হত্যার অপরাধে দেয়া  মৃত্যুদণ্ড থেকে মুজাহিদকে অব্যহতি দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত। আর ফরিদপুরের বকচর গ্রামে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ওপর হামলা চালিয়ে হত্যা ও নির্যাতনের অপরাধে মৃত্যুদণ্ডের পরিবর্তে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছে আপিল বিভাগ। এছাড়া অন্য দুটি অপরাধে মুজাহিদকে দেয়া ট্রাইব্যুনালের সাজা বহাল রাখেন আপিল বিভাগ।

এ নিয়ে আপিল বিভাগে এ পর্যন্ত মানবতাবিরোধী অপরাধের চারটি মামলার চূড়ান্ত রায় ঘোষণা হলো। এর মধ্যে জামায়াতের দুই সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামান ও আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকর হয়েছে। আর জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আমৃত্যু কারাদণ্ডের রায় ঘোষণা হলেও এখনো পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়নি। আপিল বিচারাধীন থাকা অবস্থায় মারা গেছেন জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযম ও বিএনপির নেতা আবদুল আলীম।

 

এদিকে, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের প্রধান আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন রায়ের পর এক প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছেন, “যে অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে সেই হত্যাকাণ্ডের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ তারা আনতে পারেনি। এখানে ঢালাওভাবে অভিযোগ আনা হয়েছে।”

 

তিনি বলেন, ‘সর্বসম্মতিক্রমে এ রায় দেয়া হয়েছে। কাজেই এখন বিস্তারিত কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে পূর্ণাঙ্গ রায়ের কপি হাতে পাওয়ার পরই আমরা রিভিউ করব। আমরা আশাবাদী সেখান থেকে সঠিক সিদ্ধান্ত বেরিয়ে আসবে।’ আপিল বিভাগ আসামিপক্ষের আবেদন আংশিকভাবে মঞ্জুর করেছেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

 

মানবতাবিরোধী অপরাধে ২০১৩ সালের ১৭ জুলাই মুজাহিদকে মৃত্যুদণ্ড দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আনা সাতটি অভিযোগের মধ্যে পাঁচটি প্রমাণিত হয়। এর একটিতে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা ও সহযোগিতার দায়ে তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেয় ট্রাইব্যুনাল। ফরিদপুরের সদর থানার বাকচর গ্রামে হিন্দু নিপীড়ন ও নির্যাতনের দায়েও তাঁকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেয়া হয়।
২০১৩ সালের ১১ আগস্ট এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে মুজাহিদ খালাস চান। সর্বোচ্চ সাজা হওয়ায় রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করেনি। গত ২৯ এপ্রিল থেকে আপিল শুনানি শুরু হয়। নয় কার্যদিবস ধরে চলা শুনানির প্রথম ছয় দিনে ট্রাইব্যুনালের রায় ও সাক্ষ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করে আসামিপক্ষ। এরপরের তিন কার্যদিবসে রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের যুক্তি-পাল্টা যুক্তির মধ্য দিয়ে এ মামলার কার্যক্রম শেষ হয়। কার্যক্রম শেষে চূড়ান্ত রায় ঘোষণার জন্য ১৬ জুন দিন ধার্য করা হয়।

 

১৯৪৮ সালের ২ জানুয়ারি ফরিদপুরের পশ্চিম খাবাসপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন মুজাহিদ। তার বাবা পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক পরিষদের অন্যতম সদস্য আবদুল আলী। ১৯৮৯ থেকে দুই বছর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেলের দায়িত্ব পালনের পর ২০০০ সালে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল হন তিনি।

২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের মন্ত্রী হয়েছিলেন তিনি। মুজাহিদকে ২০১০ সালের ২৯ জুন ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার অভিযোগে আটক করা হয়। একই বছরের ২ অক্টোবর মানবতাবিরোধী অপরাধে গ্রেপ্তার দেখানো হয় তাকে। তখন থেকে কারাগারেই রয়েছেন তিনি।

 

Logo-orginal