, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

Avatar n_carcellar1957

রাউজানে পাহাড়-টিলায় আমের বাম্পার ফলন

প্রকাশ: ২০১৫-০৬-১১ ১১:২৯:০০ || আপডেট: ২০১৫-০৬-১১ ১১:২৯:০০

Spread the love

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি,আরটিএমনিউজ২৪ডটকম

Mango Garden, Raozan,Ctg

গাজী জয়নাল আবেদীন, (চট্টগ্রাম) : রাউজানে ভালো ফলনে খুশি আম চাষিরা। উপজেলার পাহাড় টিলা ও সমতলের অনাবাদী জমিতে গড়ে উঠেছে শতাধিক আম বাগান। এই আম বাগান থেকে ৬০ মেট্রিক টনেরও বেশী আম উৎপাদন হওয়ার আশা প্রকাশ করেছেন এসব আম বাগান চাষিরা। উপজেলার হলদিয়া, ডাবুয়া, কদলপুর, গহিরা ইউনিয়নের দলই নগর, রাউজান পৌর এলাকার ৯নং ওয়ার্ডের পশ্চিম রাউজান এলাকায় এবছর ৬৮ হেক্টর জমিতে আম্রপালী, হাড়িভাঙ্গা, হিমসাগর, ফজলী, লেংরা প্রজাতির আম বাগানে বাম্পার ফলন হয়েছে।

অনেকেই শখের বসে আবার অনেকেই বানিজ্যিক হিসাবে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে আম চাষের করে আশানুরূপ ফলন পেয়েছে। এখন কয়েক’শ বেকার যুবক জীবিকার তাগিদে আম বাগান গড়ে তোলছে । রাউজানে ৬৮ হেক্টর আম বাগানের মধ্যে ৩৫ হেক্টর একক ভাবে আমের বাগান করা হয়েছে। অবশিষ্ট ৩৩ হেক্টর জমিতে আম বাগানের পাশাপাশি পেঁপে, লিচু, কলা, কমলালেবু, আলিবুট, লেবু ফলসহ মিশ্র ফলের বাগান করা হয়েছে। অনেকে আম বাগানের মধ্যে তরিতরকারী যেমন বরবটি, শষা,কাকরল ক্ষেত করার দৃশ্য দেখা যায় ।
উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, রাউজানে আম বাগানে এ বছর মাঝারী ধরনের ফলন হয়েছে। এসব আম আগামী সাপ্তাহের মধ্যে বাজারে বিক্রি করতে পারবে । গহিরা দলই নগর এলাকার জমিতে উৎপাদিত আম বাগান থেকে ১৬ মেট্রিক টন আম পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন কৃষি বিভাগ। এসব উৎপাদিত আম প্রতি কেজি ৮০ টাকা করে বাজারে বিক্রি করে বাগানিরা পাবে প্রায় এক কোটি আটাশ হাজার টাকা।
সরেজমিন পরিদর্শন কালে দেখা যায়, রাউজান উপজেলা হলদিয়া রাবার বাগান এলাকায় এস এম বাবর নামক এক ব্যক্তি সাড়ে তিন একর জমিতে বিভিন্ন প্রজাতির পাচঁশ আম গাছের চারা রোপন করেছেন গত তিন বছর পূর্বে। প্রতি বছরের মতো এই বছরও বাগানে আম ধরেছে আশানুরূপ পরিমান। হলদিয়া ইউনিয়নের মেম্বার খায়রুল বশর পুর্ব ক্ষিরাম এলাকায় দুই একর বিশ শতক জমিতে পাচঁশত আমের চারা রোপন করেন এক বৎসর পুর্বে।

মেম্বার খায়রুল বশরের আম বাগানে এই বৎসর আমের ফলন হয়েছে প্রচুর। হলদিয়া ইউনিয়নের বৃন্দাবনপুর এলাকায় তিন একর জমিতে দুই হাজার আমের চারা রোপন করে মনসুর নামে এক ব্যাক্তি। তার আম বাগানে আম ধরেছে দেখার মতো। একই ইউনিয়নের রাধামধবপুর এলাকায় রাউজান ফকির হাটের ব্যবসায়ী মাওলনা এনামুল হক দেড় একর জমিতে তিনশত ষাটটি আম গাছের চারা রোপন করেছেন।

মাওলানা এনাম আম বাগানে গত বছরের মতো এবারও আম ধরেছে। গত বছরের ন্যায় তিনি এবছর আরো বেশি লাভবান হবে বলে জানান। গত কয়য়েক বছর ধরে রাউজান উপজেলা হলদিয়া ইউনিয়নের বৃক্ষভানুপুর এলাকায় পাহাড়ী জমিতে রাউজান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এহেসানুল হায়দার বাবুল লোকজন দিয়ে দুই একর বিশ শতক জমিতে পাচঁশত আশিটি আম গাছের চারা রোপন করে ভালো ফল পাচ্ছে । তার আম বাগানে এবার ফলন হয়েছে । তিনি জানান, উৎপাদিত আম গরীব লোকজনের মাঝে বিতরণ করেছেন। বিতরণ করা আমের পরিমান প্রায় দেড় টন হবে বলে জানান। হলদিয়া ইউনিয়নের জানিপথর এলাকার মোঃ সেকান্দর এক হেক্টর পাহাড়ী জমিতে চারশত আম গাছের চারা রোপন করেন গত তিন বছর পূর্বে। গত বছর থেকে তার বাগানের আম ধরা শুরু করে।

গত বছরের মতো এই বছরও সেকান্দরের আম বাগানে তোক্কায় তোক্কায় আম ধরেছে। মনোমুগ্ধকর বাগানটিতে উৎপাদিত আম বিক্রি করে সংসারে সুখে শান্তিতে আছে বলে জানান তিনি। তিনি আরো জানান মৎস্য চাষ ও ম্যেসুমী সবজি চাষ করে থাকে আম বাগানের খালি জায়গায়। রাউজান পৌর এলাকার ৯ নং ওয়াডের পশ্চিম রাউজান এলাকায় ব্যবসায়ী কামাল উদ্দিন দুই একর জমিতে চারশত পঞ্চাশটি আম গাছ রোপন করেছেন । চারশত পঞ্চাশটি আম গাছের মধ্যে একশতটি আম গাছে এবার আম ধরেছে। একই এলাকার আবাসন প্রকল্পের পার্শ্বে দিদারুল আলম দুই একর জমিতে তিনশতটি আম গাছ রোপন করেন গত বছর। তার আম গাছে আম ধরেছে প্রচুর পরিমান।

রাউজানের হলদিয়া ইউনিয়নের বৃক্ষভানুপুর এলাকায় পাহাড়ী জমিতে আম বাগান গড়ে তোলা বিষয়ে রাউজান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এহেসানুল হায়দার বাবুল জানান, এই আম বাগানের আম পাকার পর আম গুলো গাছ থেকে ছিঁড়ে একসাথে এলাকার দরিদ্র মানুষের মধ্যে বিতরন করে আমি আনন্দ পায়। এ বৎসরও বাগানের আম এলাকার গরীর মানুষের মধ্যে বিলিয়ে দিয়েছেন তিনি। জানিপাথর এলাকায় আম বাগানের মালিক সেকান্দর বলেন, এক হেক্টর জমিতে চারশতটি আম গাছের চারা ও মাঝে মাঝে লিচু গাছের চারা রোপন করি গত দুই বছর পূর্বে।

গত বছর আম বিক্রয় করি প্রায় এক লাখ আশি হাজার টাকা এবং লিচু বিক্রয় করে চলি­শ হাজার টাকা আয় করি। তিনি জানান, আম বাগানের ফাঁকে ফাঁকে বরবটির ক্ষেত করে গত বছর বরবটি বিক্রি করেছি প্রায় চলি­শ হাজার টাকার । এবছর আমার বাগান থেকে বাইশ হাজার টাকার বরবটি বিক্রি করি। এবার এক লাখ থেকে দেড় লাখ টাকার আম বিক্রি করার আশা করছেন সেকান্দর।
দেশের অনান্য এলাকায় উৎপাদিত আম এক সময় রাউজানের হাটে বাজারে ব্যাপক চাহিদা থাকলেও গত এক বছর ধরে রাউজানের হাটে বাজারে দেশের অনান্য এলাকার উৎপাদিত আমের চাহিদা বাজারে কমে এসেছে । বাজারে বিক্রির জন্য আনা আম পাঁকাতে ও আমের পচন থেকে রক্ষা করতে ফরমালিন ব্যবহার করায় অন্য এলাকার আমের চাহিদা কমে যায়। এখন বাজারে রাউজানের পাহাড়ী এলাকায় উৎপাদিত আমের চাহিদা বাজারে বেশী ।

Logo-orginal