প্রকাশ: ২০১৫-০৬-১২ ১২:৫৮:৩৯ || আপডেট: ২০১৯-০৩-১০ ১০:৪৩:৩৯
প্রথম আয়াত (আরবী) থেকে সূরা নাম গৃহীত হয়েছে । কুরআনের অধিকাংশ সূরার মতো এ নামটিও বিষয়বস্তু ভিত্তিক শিরোনাম নয় বরং আলামত হিসেবে সন্নিবেশিত হয়েছে । তবুও সূরার বিষয়বস্তুর সাথে নামটির একটি ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে রয়েছে । সামনের দিকের আলোচনা থেকে একথা জানা যাবে ।
বর্ণনাভংগী ও বিষয়বস্তু পর্যালোচনা করলে পরিষ্কার মনে হয়, এ সূরাটিও সূরা মু’মিনূন ইত্যাটি সূরাগুলোর সমসময়ে নাযিল হয় । অর্থাৎ সময়টি হচ্ছে, রসূলের (সা) মক্কায় অবস্থানকালের মাঝামাঝি সময় । ইবনে জারীর ও ইমাম রাযী যাহহাক ইবনে মুযাহিম ও মুকাতিল ইবনে সুলাইমানের একটি রেওয়ায়াত উদ্বৃত করেছেন । তাতে বলা হয়েছে, এ সূরাটি সূরা নিসার ৮ বছর আগে নাযিল হয় । এ হিসেবেও এর নাযিল হবার সময়টি হয় মক্কী যুগের মাঝামাঝি সময় । (ইবনে জারীর, ১৯ খণ্ড, ২৮-৩০ পৃষ্ঠা ও তাফসীরে করীর, ৬ খণ্ড, ৩৫৮ পৃষ্ঠা)
কুরআন, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নবুওয়াত এবং তাঁর পেশকৃত শিক্ষার বিরুদ্ধে মক্কার কাফেরদের পক্ষে থেকে যেসব সন্দেহ ও আপত্তি উত্থাপন করা হতো সেগুলো সম্পর্কে এখানে আলোচনা করা হয়েছে । এর প্রত্যেকটি যথাযথ জবাব দেয়া হয়েছে এবং সাথে সাথে সত্যের দাওয়াত থেকে মুখু ফিরিয়ে নেবার খারাপ পরিণামও পরিষ্কারভাবে বর্ণনা করা হয়েছে । শেষে সূরা মু’মিনূনের মতো মু’মিনদের নৈতিক গুণাবলীর একটি নকশা তৈরি করে সেই মানদণ্ডে যাচাই করে খাঁটি ও ভেজাল নির্ণয় করার জন্য সাধারণ মানুষের সামনে রেখে দেয়া হয়েছে । একদিকে রয়েছে এমন চরিত্র সম্পন্ন লোকেরা যারা এ পর্যন্ত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আল্লাইহি ওয়া সাল্লামের শিক্ষার মাধ্যমে তৈরি হয়েছে এবং আগামীতে যাদেরকে তৈরি করার প্রচেষ্টা চলছে । অন্যদিকে রয়েছে এমন নৈতিক আদর্শ যা সাধারণ আরববাসীদের মধ্যে পাওয়া যায় এবং যাকে অক্ষুন্ন রাখার জন্য জাহেলিয়াতের পতাকাবাহীরা সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে । এখন আরববাসীরা এ দু’টি আদর্শের মধ্যে কোনটি পছন্দ করবে তার ফায়সালা তাদের নিজেদেরকেই করতে হবে । এটি ছিল একটি নিরব প্রশ্ন । আরবের প্রত্যেকটি অধিবাসীর সামনে এ প্রশ্ন রেখে দেয়া হয় । মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে একটি ক্ষুদ্রতম সংখ্যালঘু গোষ্ঠী ছাড়া বাকি সমগ্র জাতি এর যে জবাব দেয় ইতিহাসের পাতায় তা অম্লান হয়ে আছে ।
১) বড়ই বরকত সম্পন্ন ১ তিনি যিনি এ ফুরকান ২ যাতে সে সারা বিশ্ববাসীর জন্য সতর্ককারী হয়৷ ৩ তারঁ বান্দার ওপর নাযিল করেছেন ৪
২) যিনি পৃথিবী ও আকাশের রাজত্বের মালিক, ৫ যিনি কাউকে পুত্র হিসেবে গ্রহণ করেননি, ৬ যাঁর সাথে রাজত্বে কেউ শরীক নেই, ৭ যিনি প্রত্যেকটি জিনিস সৃষ্টি করেছেন তারপর তার একটি তাকদীর নির্ধারিত করে দিয়েছেন৷ ৮
৩) লোকেরা তাঁকে বাদ দিয়ে এমন সব উপাস্য তৈরি করে নিয়েছে যারা কোন জিনিস সৃষ্টি করে না বরং নিজেরাই সৃষ্ট, ৯ যারা নিজেদের জন্যও কোন উপকার বা অপকার করার ক্ষমতা রাখে না, যারা না জীবন -মৃত্যু দান করতে পারে আর না মৃতদেরকে আবার জীবিত করতে পারে৷
৪) যারা নবীর কথা মেনে নিতে অস্বীকার করেছে তারা বলে, এ ফুরকান একটি মনগড়া জিনিস, যাকে এ ব্যক্তি নিজেই তৈরি করেছে এবং অপর কিছু লোক তার এ কাজে তাকে সাহায্য করেছে৷ বড়ই জুলুম ১১ ও ডাহা মিথ্যায় তারা এসে পৌছেছে৷
৫) বলে, এসব পুরাতন লোকদের লেখা জিনিস – যেগুলো এ ব্যক্তি লিখিয়ে নিয়েছে এবং তা তাকে সকাল-সাঁঝে শুনানো হয়৷
৬) হে মুহাম্মদ! বলো, “একে নাযিল করেছেন তিনিই যিনি পৃথিবী ও আকাশমন্ডলীর রহস্য জানেন৷” ১২ আসলে তিনি বড়ই ক্ষমাশীল ও দয়ার্দ্র৷১৩
৭) তার বলে, “এ কেমন রসূল, যে খাবার খায় এবং হাটে বাজারে ঘুরে বেড়ায়?১৪ কেন তার কাছে কোন ফেরেশতা পাঠানো হয়নি, যে তার সাথে থাকতো এবং (অস্বীকারকারীদেরকে)১৫ ধমক দিতো?
৮) অথবা আর কিছু না হলেও তার জন্য অন্তত কিছু ধন-সম্পদ অবতীর্ণ করা হতো অথবা তার কাছে থাকতো অন্তত কোন বাগান, যা থেকে সে (নিশ্চিন্তে ) রুজি সংগ্রহ করতো ?”১৬ আর জালেমরা বলে, “তোমরা তো একজন যাদুগ্রস্ত১৭ ব্যক্তির অনুসরণ করছো৷”
৯) দেখো, কেমন সব উদ্ভট ধরনের যুক্তি তারা তোমর সামনে খাড়া করেছে, তারা এমন বিভ্রান্ত হয়েছে যে, কোন কাজের কথাই তাদের মাথায় আসে না ৷১৮
১০) বড়ই বরকত সম্পন্ন তিনি১৯ যিনি চাইলে তাঁর নির্ধারিত জিনিস থেকে অনেক বেশী ও উৎকৃষ্টতর জিনিস তোমাকে দিতে পারেন, (একটি নয়) অনেকগুলো বাগান যেগুলো পাদদেশে নদী প্রবাহিত এবং বড় বড় প্রাসাদ৷
১১) আসল কথা হচ্ছে, এরা “ সে সময়টিকে”২০ মিথ্যা বলেছে২১ এবং যে সে সময়কে মিথ্যা বলে তার জন্য আমি জ্বলন্ত আগুন তৈরি করে রেখেছি৷
১২) আগুন যখন দূর থেকে এদের দেখবে২২ তখন এরা তার ক্রুদ্ধ ও উত্তেজিত চিৎকার শুনতে পাবে৷
১৩) আর যখন এরা শৃংখলিত অবস্থায় তার মধ্যে একটি সংকীর্ণ স্থানে নিক্ষিপ্ত হবে তখন নিজেদের মৃত্যুকে ডাকতে থাকবে৷
১৪) (তখন তাদের বলা হবে) আজ একটি মৃত্যুকে নয় বরং বহু মৃত্যুকে ডাকে৷
১৫) এদের বলো, এ পরিণাম ভলো অথবা সেই চিরন্তন জান্নাত যার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছ মুত্তাকীদেরকে? সেটি হবে তাদের কর্মফল এবং তাদের সফরের শেষ মনযিল৷
১৬) সেখানে তাদের প্রত্যেকটি ইচ্ছা পূর্ণ হবে৷ তার মধ্যে তারা থাকবে চিরকাল তা প্রদান করা হবে তোমার রবের দায়িত্বের অন্তরভুক্ত একটি অবশ্য পালনীয় প্রতিশ্রুতি৷২৩
১৭) আর সেইদিনই (তোমার রব) তাদেরও ঘিরে আনবেন এবং তাদের উপাস্যদেরও২৪ আল্লাহকে বাদ দিয়ে আজ তারা যাদের পূজা করছে৷ তারপর তিনি তাদের জিজ্ঞেস করবেন, “তোমরা কি আমার এ বান্দাদের গোমরাহ করেছিলে? অথবা এরা নিজেরাই সহজ সরল সত্যপথ থেকে বিচ্যূত হয়ে পড়েছিল ?”২৫
১৮) তারা বলবে, “পাক – পবিত্র আপনার সত্তা ! আপনাকে ছাড়া অন্য কাউকে আমাদের প্রভুরুপে গ্রহণ করার ক্ষমতাও তো আমাদের ছিল না কিন্তু আপনি এদের এবং এদের বাপ – দাদাদের খুব বেশী জীবনোপকরণ দিয়েছেন, এমকি এরা শিক্ষা ভুলে গিয়েছে এবং দুর্ভাগ্যপীড়িত হয়েছে৷২৬
১৯) এভাবে মিথ্যা সাব্যস্ত করবে তারা (তোমাদের উপাস্যরা) তোমাদের কথাগুলোকে যা আজ তোমরা বলছো,২৭ তারপর না তোমরা নিজেদের দুর্ভাগ্যকে ঠেকাতে পারবে , না পারবে কোথাও থেকে সাহায্য লাভ করতে এবং তোমাদের মধ্য থেকে যে-ই জুলুম করবে২৮ তাকে আমি কঠিন শাস্তির স্বাদ আস্বাদন করাবো৷
২০) হে মুহাম্মাদ ! তোমার পূর্বে যে রসূলই আমি পাঠিয়েছি তারা সাবাই আহার করতো ও বাজারে চলাফেরা করতো ৷২৯ আসলে আমি তোমাদের পরস্পরকে পরস্পরের জন্য পরীক্ষার মাধ্যমে পরিণত করেছি৷৩০ তোমরা কি সবর করবে?৩১ তোমাদের রব সবকিছু দেখেন৷৩২
২১) যারা আমার সামনে হাজির হবার আশা করে না তারা বলে, “ কেন আমাদের কাছে ফেরেশতা পাঠানো হয় না ?৩৩ অথবা আমরা আমাদের রবকে দেখি না কেন ?৩৪ বড়ই অহংকার করে তারা নিজেদের মনে মনে৩৫ এবং সীমা অতিক্রম করে গেছে তারা অবাধ্যতায়৷
২২) যেদিন তারা ফেরেশতাদের দেখবে সেটা অপরাধীদের জন্য কোন সুসংবাদের দিন হবে না৷৩৬ চিৎকার করে উঠবে তারা, “হে আল্লাহ ! বাচাও বাচাও”
২৩) এবং তাদের সমস্ত কৃতকর্ম নিয়ে আমি ধূলোর মতো উড়িয়ে দেবো৷ ৩৭
২৪) সে দিন যারা জান্নাতের অধিকারী হবে তারাই উৎকৃষ্ট স্থানে অবস্থান করবে এবং দুপুর কাটাবার জন্য চমৎকার জায়গা পাবে৷৩৮
২৫) আকাশ ফুড়ে একটি মেঘমালার সেদিন উদয় হবে এবং ফেরেশাতাদের দলে দলে নামিয়ে দেয়া হবে৷
২৬) সে দিন প্রকৃত রাজত্ব হবে শুধুমাত্র দয়াময়ের৩৯ এবং সেটি হবে অস্বীকারকারীদের জন্য বড়ই কঠিন দিন৷
২৭) জালেমরা সেদিন নিজেদের হাত কামড়াতে থাকবে এবং বলতে থাকবে, “ হায় ! যদি আমি রসুলের সহযোগী হতাম৷
২৮) হায়! আমার দুর্ভাগ্য, হায়! যদি আমি অমুক লোককে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ না করতাম৷
২৯) তার প্ররোচনার কারণে আমার কাছে আসা উপদেশ আমি মানিনি মানুষের জন্য শয়তান বড়ই বিশ্বাসঘাতক প্রমাণিত হয়েছে৷ ”৪০
৩০) আর রসূল বলবে, “ হে আমার রব! আমার সম্প্রদায়ের লোকেরা এ কুরআনকে হাসি – ঠাট্টার লক্ষবস্তুতে পরিণত করেছিল ৷ ”৪১
৩১) হে মুহাম্মাদ! আমি তো এভাবে অপরাধীদেরকে প্রত্যেক নবীর শক্রতে পরিণত করেছি ৪২ এবং তোমার জন্য তোমার রবই পথ দেখানোর ও সাহায্য দানের জন্য যথেষ্ট ৷৪৩
৩২) অস্বীকারকারীরা বলে, “এ ব্যক্তির কাছে সমগ্র কুরআন একই সাথে নাযিল করা হলো না কেন?”৪৪ হ্যাঁ, এমন করা হয়েছে এজন্য, যাতে আমি একে ভালোভাবে তোমার মনে গেঁথে দিতে থাকি৪৫ এবং (এ উদ্দেশ্যে) একে একটি বিশেষ ক্রমধারা অনুযায়ী আলাদা আলাদা অংশে সাজিয়ে দিয়েছি৷
৩৩) আর (এর মধ্যে এ কল্যাণকর উদ্দেশ্যও রয়েছে যে) যখনই তারা তোমার সামনে কোন অবিনব কথা (অথবা অদ্ভুত ধরনের প্রশ্ন) নিয়ে এসেছে তার সঠিক জবাব যথাসময়ে আমি তোমাকে দিয়েছি এবং সর্বোত্তম পদ্ধতিতে বক্তব্য স্পষ্ট করে দিয়েছি৷৪৬
৩৪) যাদেরকে উপুড় করে জাহান্নামের দিকে ঠেলে দেয়া হবে তাদের অবস্থান বড়ই খারাপ এবং তাদের পথ সীমাহীন ভ্রান্তীতে পরিপূর্ণ৷৪৭
৩৫) আমি মুসাকে কিতাব দিয়েছিলাম৪৮ এবং তার সাথে তার ভাই হারুনকে সাহায্যকারী হিসেবে লাগিয়েছিলাম
৩৬) আর তাদের বলেছিলাম, যাও সেই সম্প্রদায়ের কাছে যারা আমার আয়াতকে মিথ্যা বলেছে৷৪৯ শেষ পর্যন্ত তাদের আমি ধ্বংস করে দিলাম৷
৩৭) একই অবস্থা হলো নূহের সম্প্রদায়েরও যখন তারা রসূলদের প্রতি মিথ্যা আরোপ করলো,৫০ আমি তাদের ডুবিয়ে দিলাম এবং সারা দুনিয়ার লোকদের জন্য একটি শিক্ষণীয় বিষয়ে পরিণত করলাম, আর এ জালেমদের জন্য আমি যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি ঠিক করে রেখেছি৷ ৫১
৩৮) এভাবে আদ ও সামূদ এবং আসহাবুর রস্৫২ ও মাঝখানের শতাব্দীগুলোর বহু লোককে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে৷
৩৯) তাদের প্রত্যেককে আমি (পূর্বে ধ্বংস প্রাপ্তদের) দৃষ্টান্ত দিয়ে দিয়ে বুঝিয়েছি এবং শেষ পর্যন্ত প্রত্যেককে ধ্বংস করে দিয়েছি৷
৪০) আর সেই জনপদের ওপর দিয়ে তো তারা যাতায়াত করেছে যার ওপর নিকৃষ্টতম বৃষ্টি বর্ষণ করা হয়েছিল৷৫৩ তারা কি তার অবস্থা দেখে থাকেনি? কিন্তু তারা মৃত্যুর পরের জীবনের আশাই করে না৷৫৪
৪১) তারা যখন তোমাকে দেখে, তোমাকে বিদ্রুপের পাত্রে পরিণত করে৷ (বলে), “এ লোককে আল্লাহ রসূল করে পাঠিয়েছেন?
৪২) এতো আমাদের পথভ্রষ্ট করে নিজেদের দেবতাদের থেকেই সরিয়ে দিতো যদি না আমরা তাদের প্রতি অঠল বিশ্বাসী হয়ে থাকতাম৷৫৫ বেশ, সে সময় দূরে নয় যখন শাস্তি দেখে তারা নিজেরাই জানবে ভ্রষ্টতায় কে দূরে চলে গিয়েছিল৷
৪৩) কখনো কি তুমি সেই ব্যক্তির অবস্থা ভেবে দেখেছো, যে তার নিজের প্রবৃত্তির কামনাকে প্রভু রূপে গ্রহণ করেছে? ৫৬ তুমি কি এহেন ব্যক্তিকে সঠিক পথে নিয়ে আসার দায়িত্ব নিতে পার৷
৪৪) তুমি কি মনে করো তাদের অধিকাংশ লোক শোনে ও বোঝে? তারা পশুর মতো বরং তারও অধম৷ ৫৭
৪৫) তুমি কি দেখ না কিভাবে তোমার রব ছায়া বিস্তার করেন? তিনি চাইলে একে চিরন্তন ছায়ায় পরিণত করতেন৷ আমি সূর্যকে করেছি তার পথ-নির্দেশক৷৫৮
৪৬) তারপর (যতই সূর্য উঠতে থাকে) আমি এ ছায়াকে ধীরে ধীরে নিজের দিকে গুটিয়ে নিতে থাকি৷৫৯
৪৭) আর তিনিই রাতকে তোমাদের জন্য পোশাক,৬০ ঘুমকে মৃত্যুর শান্তি এবং দিনকে জীবন্ত হয়ে উঠার সময়ে পরিণত করেছেন৷৬১
৪৮) আর নিজের রহমতের আগেভাগে বাতাসকে সুসংবাদদাতারুপে পাঠান৷ তারপর আকাশ থেকে বর্ষণ করেন বিশুদ্ধ পানি৬২
৪৯) একটি মৃত এলাকাকে তার মাধ্যমে জীবন দান করার এবং নিজের সৃষ্টির মধ্য থেকে বহুতর পশু ও মানুষকে তা পান করবার জন্য৷৬৩
৫০) এ বিস্ময়কর কার্যকলাপ আমি বার বার তাদের সামনে আনি৬৪ যাতে তারা কিছু শিক্ষা গ্রহণ করে কিন্তু অধিকাংশ লোক কুফরী ও অকৃতজ্ঞতা ছাড়া অন্য কোন মনোভাব পোষণ করতে অস্বীকার করে৷৬৫
৫১) যদি আমি চাইতাম তাহলে এক একটি জনবসতিতে এক একজন ভীতিপ্রদর্শনকারী পাঠাতে পারতাম৷” ৬৬
৫২) কাজেই হে নবী, কাফেরদের কথা কখনো মেনে নিয়ো না এবং এ কুরআন নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে বৃহত্তম জিহাদ করো৷৬৭
৫৩) আর তিনিই দুই সাগরকে মিলিত করেছেন৷ একটি সুস্বাদু ও মিষ্ট এবং অন্যটি লোনা ও খার৷ আর দু’য়ের মাঝে একটি অন্তরাল রয়েছে, একটি বাধা তাদের একাকার হবার পথে প্রতিবন্ধক সৃষ্টি করে রেখেছে৷৬৮
৫৪) আর তিনিই পানি থেকে একটি মানুষ তৈরি করেছেন, আবার তার থেকে বংশীয় ও শ্বশুরালয়ের দু’টি আলাদা ধারা চালিয়েছেন৷৬৯ তোমার রব বড়ই শক্তি সম্পন্ন৷
৫৫) এক আল্লাহকে বাদ দিয়ে লোকেরা এমন সব সত্তার পূজা করছে যারা না তাদের উপকার করতে পারে, না অপকার৷ আবার অতিরিক্ত হচ্ছে এই যে, কাফের নিজের রবের মোকাবিলায় প্রত্যেক বিদ্রোহীর সাহায্যকারী হয়ে আছে৷৭০
৫৬) হে মুহাম্মদ৷ তোমাকে তো আমি শুধুমাত্র একজন সুসংবাদ দানকারী ও সতর্ককারী করে পাঠিয়েছি৷৭১
৫৭) এদের বলে দাও “একাজের জন্য আমি তোমাদের কাছ থেকে কোন প্রতিদান চাই না, যে চায় সে তার নিজের রবের পথ অবলম্বন করুক, এটিই আমার প্রতিদান৷৭১(ক)
৫৮) হে মুহাম্মদ ! ভরসা করো এমন আল্লাহর প্রতি যিনি জীবিত এবং কখনো মরবেন না৷ তাঁর সপ্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা বর্ণনা করো৷ নিজের বান্দাদের গোনাহের ব্যাপারে কেবল তাঁরই জানা যথেষ্ট
৫৯) তিনিই ছয়দিনে আকাশ মন্ডলী ও পৃথিবী এবং তাদের মাঝখানে যা কিছু আছে সব তৈরি করে রেখে দিয়েছেন, তারপর তিনিই (বিশ্ব-জাহানের সিংহাসন) আরশে সমাসীন হয়েছেন,৭২ তিনিই রহমান, যে জানে তাকে জিজ্ঞেস করো তাঁর আবস্থা সম্পর্কে৷
৬০) তাদেরকে যখন বলা হয়, এই রহমানকে সিজদাহ করো তখন তারা বলে, “রহমান কি? তুমি যার কথা বলবে তাকেই কি আমারা সিজদা করেত থাকবো”?৭৩ এউপদেশটি উল্টো তাদের ঘৃণা আরো বাড়িয়ে দেয়৷৭৪
৬১) অসীম বরকত সম্পন্ন তিনি যিনি আকাশে বুরুজ নির্মাণ করেছেন৭৫ এবং তার মধ্যে একটি প্রদীপ ৭৬ ও একটি আলোকময় চাঁদ উজ্জ্বল করেছেন৷
৬২) তিনিই রাত ও দিনকে পরস্পরের স্থলাভিষিক্ত করেছেন এমন প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য যে শিক্ষা গ্রহণ করতে অথবা কৃতজ্ঞ হতে চায়৷৭৭
৬৩) রহমানের (আসল) বান্দা তারাই ৭৮ যারা পৃথিবীর বুকে নম্রভাবে চলাফেরা করে৭৯ এবং মূর্খরা তাদের সাথে কথা বলতে থাকলে বলে দেয়,
৬৪) তোমাদের সালাম৷৮০ তারা নিজেদের রবের সামনে সিজদায় অবনত হয়ে ও দাঁড়িয়ে রাত কাটিয়ে দেয়৷৮১
৬৫) তারা দোয়া করতে থাকেঃ “হে আমাদের রব ! জাহান্নামের আযাব থেকে আমাদের বাঁচাও, তার আযাব তো সর্বনাশা৷
৬৬) আশ্রয়স্থল ও আবাস হি্সেবে তা বড়ই নিকৃষ্ট জায়গা৷”৮২
৬৭) তারা যখন ব্যয় করে তখন অযথা ব্যয় করে না এবং কার্পণ্যও করেনা বরং উভয় প্রান্তিকের মাঝামাঝি তাদের ব্যয় ভারসাম্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকে৷৮৩
৬৮) তারা আল্লাহ ছাড়া আর কোন উপাস্যকে ডাকে না, আল্লাহ যে প্রানকে হারাম করেছেন কেআন সংগত কারণ ছাড়া তাকে হত্যা করে নাএবং ব্যভিচার করে না৷ ৮৪ এসব যে-ই করে সে তার গোনাহের শাস্তি ভোগ করবে৷
৬৯) কিয়ামতের দিন তাকে উপর্যুপরি শাস্তি দেয়া হবে৮৫ এবং সেখানেই সে পড়ে থাকবে চিরকাল লাঞ্ছিত অবস্থায়৷
৭০) তবে তারা ছাড়া যারা (ঐসব গোনাহের পর) তাওবা করেছে এবং ইমান এনে সৎকাজ করতে থেকেছে৷৮৬ এ ধরনের লোকদের সৎ কাজগুলোকে আল্লাহ সৎকাজের দ্বারা পরিবর্তন করে দেবেন৮৭ এবং আল্লাহ বড়ই ক্ষমাশীল ও মেহেরবান ৷
৭১) যে ব্যক্তি তাওবা করে সৎকাজের পথ অবলম্বন করে, সে তো আল্লাহর দিকে ফিরে আসার মতই ফিরে আসে৷৮৮
৭২) (আর রহমানের বান্দা হচ্ছে তারা) যারা মিথ্যা সাক্ষ্য দেয় না৮৯ এবং কোন বাজে জিনিসের কাছ দিয়ে পথ অতিক্রম করতে থাকলে ভদ্রলোকের মত অতিক্রম করে যায়৷৯০
৭৩) তাদের যদি তাদের রবের আয়াত শুনিয়ে উপদেশ দেয় হয় তাহলে তারা তার প্রতি অন্ধ বধির হয়ে থাকে না৷৯১
৭৪) তারা প্রার্থনা করে থাকে, “ হে আমাদের রব ! আমাদের নিজেদের স্ত্রীদের ও নিজেদের সন্তানদেরকে নয়ন শীতলকারী বানাও৯২ এবং আমাদের করে দাও মুত্তাকীদের ইমাম৷”৯৩
৭৫) (এরাই নিজেদের সবরের ৯৪ ফল উন্নত মনজিলের আকারে পাবে৷৯৫ অভিবাদন ও সালাম সহকারে তাদের সেখানে অভ্যর্থনা করা হবে৷
৭৬) তারা সেখানে থাকবে চিরকাল৷ কী চমৎকার সেই আশ্রয় এবং সেই আবাস!
৭৭) হে মুহাম্মদ! লোকদের বলো, “আমার রবের তোমাদের কি প্রয়োজন, যদি তোমারা তাকে না ডাকো৷৯৬ এখন যে তোমরা মিথ্যা আরোপ করেছো, শিগগীর এমন শাস্তি পাবে যে, তার হাত থেকে নিস্তার পাওয়া সম্ভব হবে না৷”
(ইসলাম.net.bd)