, মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪

admin admin

ডেটলাইন মসুল: ইসলামিক স্টেটের আওতায় জীবন

প্রকাশ: ২০১৫-০৬-০৯ ১৫:৪৯:০৩ || আপডেট: ২০১৫-০৬-১০ ১৫:৩০:৫৭

Spread the love

আরটিএম ডেস্ক: এক বছর আগে ইরাকের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই শহরের দখল নেয়ার পর থেকে আইএস কিভাবে মানুষের জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করেছ, গোপনে তোলা ভিডিও চিত্রে তা ফুটে উঠেছে। বহু মসজিদ গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে, অনেক স্কুল বন্ধ হয়ে গেছে আর মেয়েদের মাথা থেকে পা পর্যন্ত ঢেকে বাইরে বেরুতে বাধ্য করা হচ্ছে। বিবিসির ঘাদি সারি এই ভিডিও ফুটেজগুলো পেয়েছেন। সেসব ফুটেজে মসুলের বাসিন্দারা বলেছেন কিভাবে আইএসের জারি করা শারিয়া আইনের কট্টর ব্যাখ্যা অনুযায়ী জীবন যাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। মহিলাদের ওপর জবরদস্তি হান্না নামের মসুলের এক বাসিন্দা বলছেন মহিলাদের পোশাকের ব্যাপারে আইএস খুবই কট্টর। “মহিলাদের অবশ্যই মাথা থেকে পায়ের আঙ্গুল পর্যন্ত কালো কাপড়ে ঢাকতে হয়।” “একদিন বাড়িতে বসে থাকতে আমার ভালো লাগছিল না। স্বামীকে বললাম বাইরে গোরার জন্য নিয়ে যেতে। আমার মাথার চুল, গলা, কাঁধ ঢেকে তৈরি হলাম। শুধু মুখটা খোলা ছিল। কিন্তু আমার স্বামী বললো, ওরা তোমাকে নিকাব পরতে বাধ্য করবে। আমি আপত্তি করলেও, স্বামীর কথা শুনে মুখ ঢাকা নিকাব পরলাম। আমরা নদীর ধারে একটি রেস্তোরায় গেলাম, যেখানে আমরা আগে নিয়মিত যেতাম। রেস্টুরেন্টে বসার পর আমি আমার মুখের কাপড় সরালাম। কিন্তু রেস্তোরা মালিক সঙ্গে সঙ্গে এসে আমার স্বামীকে অনুরোধ করেলন আমি যেন মুখ ঢেকে বসি। তিনি আমার স্বামীকে বললেন, আইএস যোদ্ধারা যদি আমাকে মুখ খোলা অবস্থায় দেখে, তাহলে তাকে বেত দিয়ে পেটাবে।।” রেস্তোরা মালিকের মধ্যে আতঙ্ক দেখে হান্না মুখ ঢেকে বাকিটা সময় ছিলেন। “আমি ভাবছিলাম কিভাবে মূর্খতা এবং হৃদয়হীনতার মধ্যে পড়ে গেছি আমরা। ফেরার সময় দেখলাম একজন বাবা তার মেয়েকে খুঁজছেন। কারণ অল্প বয়সী মেয়েটি মাথা থেকে পা পর্যন্ত কারো কাপড়ে মোড়া ছিল।” সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, কিভাবে আইএস মসুলের ধর্মীয় এবং জাতিগত সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর বাজেয়াপ্ত করেছে। শহরের সংখ্যালঘু এলাকাগুলো এখন ফাঁকা। মসুলের একজন গাইনোকোলজিস্ট মরিয়ম একজন খ্রিস্টান। “আমি পড়তে ভালোবাসি। আমার ঘরে এখন প্রচুর বই। কারণ আমার আত্মীয় বন্ধুরা ইরাক ছেড়ে যাওয়ার সময় তাদের বইগুলো আমাকে দিয়ে যায়।” “মসুল আইএস-এর দখলে আসার আগে থেকেই সুন্নি কট্টরপন্থীরা আমাকে হেনস্থা করতে শুরু করে। কিন্তু হাসপাতালে আমি ধর্ম সম্প্রদায় নির্বিশেষে সব মহিলার বাচ্চা প্রসবে সাহায্য করেছি।” তারপরও ডা. মরিয়মকে মসুল ছেড়ে পালোতে হয়েছে। কিন্তু বইগুলো ফেলে আসতে হয়েছে। “ইরবিলে (কুর্দিস্তানের রাজধানী) পৌঁছে আমি দু:সংবাদটি পাই। আমার বাড়ি আইএস-এর দখলে। তারা বাড়ির গায়ে ‘এন’ (নাসরানি যা দিয়ে আইএস খ্রিস্টানদের বোঝায়) চিহ্ন দিয়ে দিয়েছে। আমার লাইব্রেরির বইগুলো রাস্তায় ফেলে দিয়েছে। প্রতিবেশীরা কেউ কেউ সেগুলোর কিছু কিছু খুটে নিয়ে গেছে।” হয়রানি, নির্যাতন, শাস্তি ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে মসুলের অনেক মসজিদ, দরগা ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। শহরের বাসিন্দারা বলছে, ইসলামের জিহাদি ব্যাখ্যার সাথে কেই দ্বিমত করলেই চরম নির্যাতন নেমে আসে। যাইদ: “শহরের দখল নেয়ার পর থেকে আইএস বলছে তারা খালিফাতের আইন প্রতিষ্ঠা করেছে। সবচেয়ে কম শাস্তি বেতের বাড়ি। ধূমপান করলেও বেতের বাড়ি খেতে হয়।” “চুরি করলে হাত কাটা হয়। পুরুষরা ব্যভিচার করলে তাদের উঁচু ভবন থেকে ফেলে দেয়া হয়। মেয়েদের ঢিল ছুড়ে মেরে ফেলা হয়। এসব শাস্তি দেয়া হয় প্রকাশ্যে।” বদলে গেছে জীবনধারা ভিডিও ফুটেজে দেখানো হয়েছে এক বছরে মসুলের জীবনধারা আমূল বদলে গেছে। জ্বালানি তেলের প্রচণ্ড অভাব চলছে। রাস্তাঘাট নোংরা আবর্জনায় ভরা। অনেক স্কুল বন্ধ হয়ে গেছে। হিশাম: “কোনও কাজের সুযোগ নেই। ধনীরা তাদের সঞ্চয় ভেঙ্গে খাচ্ছে। গরীবরা আল্লার দয়ার কোনোরকম বেঁচে আছে। যারা বেতন পায়, তাদের বেতনের পঁচিশ শতাংশ আইএস নিয়ে নেয় শহর পুনর্গঠনের কথা বলে। আমার চাকরি গেছে। আইএস-এর মতে সবকিছুই হারাম। মসুলে এখন পিকনিক করাও হারাম।” আইএস-এর কৌশল এবং সম্পদ আই এস যোদ্ধাদের হাতে অনেক ভারি কামান পর্যন্ত আছে। বিমান বিধ্বংসী কামান আছে। যাইদ: “আইএস জানে ইরাকের সেনাবাহিনী মসুল পুনর্দখল করবে, তাই তারা প্রতিরোধের জন্য তৈরি হচ্ছে। সুড়ঙ্গ খুঁড়ে খুঁড়ে শহরটি নষ্ট করে ফেলেছে। বিভিন্ন জায়গায় ব্যারিকেড তৈরি করছে। বোমা, মাইন পুঁতছে। শহরের নানা জায়গায় স্নাইপার মোতায়েন করা আছে।” সূত্র: বিবিসি নতুন,

Logo-orginal