n_carcellar1957
প্রকাশ: ২০১৫-০৭-২৬ ১৯:০৭:১২ || আপডেট: ২০১৫-০৭-২৬ ১৯:১৫:৫৩
এম মাঈন উদ্দিন,
মিরসরাই (চট্টগ্রাম),প্রতিনিধি:
আরটিএমনিউজ২৪ডটকম, চট্টগ্রাম: টানা বর্ষন ও পাহাড়ি ঢলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার ১৬ ইউনিয়ন, দুটি পৌরসভার প্রায় অর্ধলক্ষ মানুষ পানিবন্ধী হয়ে পড়েছে। এতে করে স্বাভাবিক জীবন-যাপনে ব্যঘাত ঘটছে। বসতঘর ও রান্না ঘরে পানি প্রবেশ করায় রান্না বন্ধ থাকায় না খেয়ে থাকতে হচ্ছে অনেককে।
গত তিনদিনের প্রবল বর্ষন তার সাথে পাহাড়ি ঢলে অনেক সড়ক ভেঙ্গে গেছে। চলাচল করতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে হাজার হাজার মানুষকে। পানিতে ভেসে গেছে উপজেলার মৎস্য জোন খ্যাত মুহুরী প্রকল্প এলাকার শতাধিক প্রকল্পের লাখ লাখ টাকার মাছ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে উপজেলার খাল-ছরাগুলো সংস্কার না থাকা ও অপরিকল্পিতভাবে বাড়ি-ঘর নির্মাণ করায় পানি নিস্কাসন সুবিধা না থাকার কারণে সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। উপজেলার বড়কমলদহ এলাকায় অপরিকল্পিতভাবে সিপি বাংলাদেশ লিমিটেডের কারখানা নির্মাণের কারণে পানি নিস্কাসন না হওয়ায় পানিবন্ধী হয়ে আছে ওয়াহেদপুর ইউনিয়নের প্রায় ৫ শতাধিক পরিবার।
বিগত চার বছর ধরে বৃষ্টি হলেই ওই এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এছাড়া বিভিন্ন বাজার বা পাড়া মহল্লায় বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের জন্য যেসব পুল-কালভার্ট বা ড্রেন চালু ছিল তার গতিপথ বন্ধ করে অনিয়মতান্ত্রিকভাবে বাড়ি-ঘর নির্মাণ করেছে অনেকেই।
সরেজমিনে মিরসরাইয়ের বন্যা কবলিত বিভিন্ন স্থানে গিয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে। বর্তমানে উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন এবং দুইটি পৌরসভার প্রায় অর্ধলাখ লোক পানিবন্ধী হয়ে পড়েছে। গত তিন দিনের এই জলাবদ্ধতা স্থায়ী হতে পারে বলেও অনেকে আশংকা করছেন।
জানা গেছে, গত ২৩ জুলাই থেকে মিরসরাইয়ে টানা বৃষ্টি হচ্ছে। পানি নিষ্কাশনের পর্যাপ্ত সুবিধা না থাকায় বিস্তির্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
উপজেলার ৩ নম্বর জোরারগঞ্জ ইউনিয়নের উত্তর সোনাপাহাড় এবং বারইয়াহাট পৌরসভার দুই নম্বর ওয়ার্ডে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় শুধুমাত্র অপরিকল্পিতভাবে বহুতল বাড়ি এবং মার্কেট নির্মাণের ফলে দুইশ পরিবার গত ৩ দিন ধরে পানি বন্দি রয়েছে।
উপজেলার ৯ নম্বর ইউনিয়ন ও মিরসরাই পৌরসভার দক্ষিণ তালবাড়িয়া গ্রাম, খৈয়াছড়া ইউনিয়নের ফেনাপুনি গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, গত তিনদিন ধরে গ্রামের মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছে। ঘরে কাঁচা চুলা পানিতে ডুবে যাওয়ায় রান্না-বান্না করতে পারছেনা, গ্রামগুলোর কোন ছেলে-মেয়ে তিনদিন ধরে স্কুলে যেতে পারেনি।
স্থায়ী এই জলাদ্ধতার কারণ হিসেবে জানতে চাইলে গ্রামের বাসিন্দা ছায়েফ উল্লাহ ও আব্দুল আজিজ জানান, ফেনাপুনি গ্রামের প্রায় সব পরিবার পানি বন্ধি হয়ে আছে। রান্নাঘরে পানি প্রবেশ করায় চুলায় আগুন দেয়া যাচ্ছেনা। অনেকে না খেয়ে দিন যাপন করছে।
মুহুরী প্রজেক্ট এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ শহীদ বলেন, বড় বড় মৎস ব্যবসায়ীরা প্রকল্প খনন করেছে তবে পানি নিস্কাশনের জন্য কোন ড্রেন রাখেনি। এমন কি পানি নিস্কাশনের যে ব্রিজ,খাল,নদী ছিল তা জবর দখল করে পানি চলাচলের রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছে ওছমানপুর ও ইছাখালী ইউনিয়নের প্রায় ২০ গ্রামের মানুষ। এমনকি টিউবওয়েল (চাপকল) পানিতে ডুবে যাওয়ায় সুপেয় পানি পারন করতে অসুবিধা হচ্ছে।
এছাড়া উপজেলার ৭ নম্বর কাটাছরা, ১২ নম্বর খৈয়াছরা, ১১ নম্বর মঘাদিয়া, ৫ নম্বর ওছমানপুর, ৬ নম্বর ইছাখালী, ৮ নম্বর দুর্গাপুর (কিছু অংশ), ১৩ নম্বর মায়ানী, ১৫ নম্বর ওয়াহেদপুর, ১০ নম্বর মিঠানালা (কিছু অংশ) ও ১ নম্বর করেরহাট ইউনিয়নের কিছু অংশে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এসব এলাকার শত শত পুকুর পানিতে ডুবে গেছে। ১৭টি কাঁচা ঘর ধেবে গেছে। বর্তমানে কয়েক’শ ঘর-বাড়ি পানিতে ডুবে আছে। গ্রামীণ সড়কগুলোর অবস্থা নাজুক। গ্রামের অধিকাংশ সড়কে ৩ থেকে ৬ ফুট পর্যন্ত পানি উঠেছে।
উপজেলার ৫ নম্বর ওছমানপুর ইউনিয়নের মুহুরী প্রকল্প এলাকার মৎস্য চাষী কামরুল হোসেন জানান, বন্যায় মুহুরী প্রকল্প এলাকার মৎস্য খামার থেকে প্রায় কয়েক লাখ টাকার মাছ পানিতে ভেসে গেছে।
সৈদালী এলাকার বাসিন্দা প্রবাসী জহুরুল হকের স্ত্রী মনোয়ারা বেগম বলেন, ‘রান্না ঘরে পানি উঠার কারণে গত দুইদিন ধরে রান্না করা সম্ভব হচ্ছেনা। এভাবে আর কতদিন থাকতে হবে বুঝতে পারছিনা।’
এদিকে পাহাড়ী ঢলের কারণে গীস্মকালীন ফসলের ক্ষতি হয়েছে। উপজেলায় সবচেয়ে বেশী উৎপাদিত শাকসবজি বরবটি, ঢেঁডশ, পুঁইশাক, কাঁকরোল, চিচিঙ্গা, ঝিঙ্গাসহ বিভিন্ন ধরণের শাকসবজির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
উপজেলার ১৫ নম্বর ওয়াহেদপুর ইউনিয়নের বাওয়াছড়া প্রকল্পের গেইটের উপর দিয়ে অতিরিক্ত পানি প্রবাহিত হওয়ার কারণে হাবিব উল্লাহ ভূঁইয়া সড়ক সহ কয়েকটি গ্রামীণ রাস্তার ব্যাপক ক্ষতির সম্মুক্ষীণ হয়েছে।
উপজেলার ১৫ নম্বর ওয়াহেদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সালাহ উদ্দিন সেলিম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে খালগুলো সংস্কার না করায় বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে ফসলের ব্যপক ক্ষয়ক্ষতি হয়ে থাকে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শাহ আলম জানান, গীস্মকালীন সবজির কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। তবে বৃষ্টি কমে গেলে তেমন সমস্যা হবেনা। যদি বৃষ্টি অব্যাহত থাকে তাহলে আমনের বীজতলার ক্ষতি হতে পারে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জিয়া আহমেদ সুমন জানান, টানা বর্ষনে উপজেলায় ক্ষয়ক্ষতির খবর আমাদের কাছে আসেনি। তবে পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডে পাহাড়ি ঢলে সড়ক ভেঙ্গে কিছু পরিবার পানি বন্ধি হয়েছে বলে খবর পেয়েছি।
আরটিএমনিউজ২৪ডটকম/এন এ কে