, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

Avatar n_carcellar1957

বাংলাদেশে অনলাইন সাংবাদিকতার বিকাশ

প্রকাশ: ২০১৫-০৭-১৯ ১২:১৯:২৩ || আপডেট: ২০১৫-০৭-১৯ ১২:২০:৪৬

Spread the love

eeeeee

আরটিএমনিউজ২৪ডটকম, ঢাকা: এই তো কয়েক বছর আগেও মফস্বলের অধিকাংশ এলাকায় দিনের পত্রিকা দিনে পাওয়া যেত না। দেশে কোথায় কি ঘটেছে বা ঘটছে তা জানার জন্য দীর্ঘ প্রতীক্ষায় থাকতে হতো সচেতন নাগরিকদের। স্বাধীনতার কয়েক বছর পরও বাসি খবরের জন্যই আমাদের অন্তত ৩৬ ঘণ্টা, কখনো কখনো ৪৮ ঘণ্টা অপেক্ষায় থাকতে হতো।

 

 

 

ঢাকার আশপাশের জেলাগুলোতেও পত্রিকা পৌঁছতে বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে যেত। বিকালে বাজারে গিয়ে তীর্থের কাকের মতো বসে থাকতাম পত্রিকা পড়ার জন্য। যে কয়টি দোকানে পত্রিকা রাখা হতো প্রায় সব দোকানেই পাঠকদের একটা জটলা লেগে থাকত। সময়ের ধারাবাহিকতায় পরিস্থিতি বদলেছে অনেকটাই।

 

 

 

প্রযুক্তির কল্যাণে সংবাদমাধ্যমেও এসেছে বিরাট পরিবর্তন। সচেতন পাঠকদের এখন অন্তত খবরের জন্য প্রিন্ট মিডিয়ার ওপর আর নির্ভর করতে হয় না। বিশ্বায়নের এই যুগে মানুষ এখন মুহূর্তের খবর মুহূর্তে পেয়ে যাচ্ছেন। মোবাইল এবং ইন্টারনেট হাতের নাগালে চলে আসায় মানুষের জানার আগ্রহও এখন ভীষণভাবে বেড়ে গেছে। পাঠকের এই আগ্রহ পূরণ করছেপ্র যুক্তিনির্ভর অনলাইন নিউজ পোর্টালগুলো।

 

 

 

পৃথিবীর উন্নত দেশে আগে থেকে এর যাত্রা শুরু হলেও বাংলাদেশে এটি আসে অনেক পরে। এর ফলে ছাপাখানা, কাগজসহ নানাবিধ ব্যয় থেকে যেন মুক্তি  পেতে শুরু করেন পত্রিকার মালিকগণ। এমনকি মধ্যস্বত্বভোগী হকারদের বিড়ম্বনা থেকেও রেহাই পায় পত্রিকার মালিকগণ। নিউজ পোর্টালে উপরের দিকে দু-চারটা পদ বাদে লোকবল বলতে সাব-এডিটর, রিপোর্টার, ফিচার, বিনোদন, মফস্বল, ক্রীড়া বিভাগ ছাড়াও আপলোডার, আইটি আর বিজ্ঞাপন বিভাগ।

 

 

 

বাংলাদেশে অনলাইন সাংবাদিকতার বিকাশ:
সবার আগে সর্বশেষ সংবাদ প্রকাশের সুযোগ করে দিচ্ছে এই মাধ্যমটি। একই সঙ্গে এই সংবাদমাধ্যমটি পৃথিবীর আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে থাকা পাঠকদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারছে সহজেই। কেবল বাংলাদেশেই নয়, বিশ্বজুড়েই এখন অন লাইন নিউজ পোর্টালের যুগ। পরিবর্তনের এই হাওয়ায় চিন্তার রাজ্যে হাবুডুবু খাচ্ছেন প্রিন্ট মিডিয়া নিয়ে এখনো আঁকড়ে থাকা মালিকগণ।

 

 

তবে তারা এখন নতুন করে ভাবতে শুরু করেছেন। অবস্থা বেগতিক বুঝে আপাতত এই কাতারে শামিল হয়েছেন তাদের অনেকেই। টিকে থাকার চেষ্টার অংশ হিসেবে প্রিন্ট মিডিয়ার মালিকগণ অফ লাইনের পাশাপাশি  অনলাইন সংস্করণও চালু এবং এটার ওপর জোর দিতে শুরু করেছেন।

 

 

মোবাইলে নিউজ পোর্টাল:
বিশ্বায়নের এই জুগে মানুষের হাতে একেবারেই সময়  নেই। সবাই এখন যে যার মতো করে ছুটছেন। কর্মক্ষম মানুষ এখন একই সঙ্গে একাধিক কাজে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন। চলন্ত পথে অর্থাৎ বাসে-ট্রেনে মোবাইলে ক্লিক করে প্রতি মুহূর্তের আপডেট জেনে নিচ্ছেন। দৈনিক পত্রিকা পড়ার জন্য মাসে একজন পাঠককে অন্তত ৩০০ টাকা খরচ করতে হয় এখন। অথচ এই ৩০০ টাকা ইন্টারনেটের পেছনে খরচ করে একজন মোবাইল গ্রহীতা দেশ-বিদেশের অসংখ্য পত্রিকা দেখার পাশাপাশি তাৎক্ষণিক খবরটাও জানতে পারছেন।

 

 

 

বিটিআরসি’র সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, দেশে এখন মোবাইল গ্রাহকের সংখ্যা ১১ কোটি ছাড়িয়েছে। এ সংখ্যা দিনদিন বাড়ছে। জানা গেছে, চীনে এখন মোট ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৬৩ কোটি ২০ লাখ, যা যুক্তরাষ্ট্রের মোট জনসংখ্যার দ্বিগুণের কিছু বেশি।

 

 

অন্যদিকে ইন্টারনেট অ্যান্ড মোবাইল অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়া (আইএএমএআই) বছরের শুরুতে দেওয়া এক ঘোষণায় বলছে, ইন্টারনেট ব্যবহারকারী দেশের মধ্যে তাদের অবস্থান দুই নম্বরে উঠে আসছে। ভারতে এ বছর ২৪ কোটি ৩০ লাখ মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করেছে।

 

 

যুক্তরাষ্ট্রে এ সংখ্যা ২০ কোটি ৭০ লাখ। আর নিউজ পোর্টালগুলোর মোবাইল পাঠকই বেশি। মোবাইল গ্রাহকের সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি ইন্টারনেটের সহজলভ্যতার সুযোগে নিউজ পোর্টালগুলোর প্রসার দ্রুতগতিতে বাড়ছে।

 

 

পাঠক এখন পত্রিকার পাতা উল্টানোর পরিবর্তে মোবাইলে ক্লিক করেই ঢুকে পড়ছে নিউজ পোর্টালগুলোতে। এই তো কয়েক বছর আগেও প্রিন্ট মিডিয়া ছিল অনেকটাই নিউজ-নির্ভর। নিউজ পোর্টালগুলো ২৪ ঘণ্টা সক্রিয় থাকায় পাঠক ধরে রাখার জন্য প্রিন্ট মিডিয়াকে এখন নতুন কিছু দেওয়ার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হতে হচ্ছে।

 

 

আর যাই হোক সিনিয়র সাংবাদিক জগলুল আহমেদ চৌধুরীর মতো লোকদের মৃত্যু সংবাদ দেখার জন্য পরের দিন কেউ পত্রিকা কিনবে না। পাঠক ধরার জন্য প্রিন্ট মিডিয়াকে নতুন কিছু দিতেই হবে। পাঠকদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে নতুন কিছু দিতে না পারলে সময়ের ধারাবাহিকতায় প্রিন্ট মিডিয়া আরো সংকুচিত হয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

 

 
কি নেই নিউজ পোর্টালে:

আসলে কি নেই নিউজ পোর্টালগুলোতে। প্রিন্ট মিডিয়ায় যা আছে তার সবই এখানে রয়েছে, বরং বাড়তি সুবিধা হচ্ছে যখনকার নিউজ তখন। প্রতি মুহূর্তের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে নিউজ পোর্টালগুলোতে অর্থনীতি, রাজনীতি, সাহিত্য, সংস্কৃতি, খেলাধুলা, বিনোদন, স্বাস্থ্য, প্রযুক্তি, মতামত, সাক্ষাৎকার, মফস্বল বিভাগ, সম্পাদকীয়, প্রবাসের খবরের জন্য আলাদা স্পেস রয়েছে।

 

 

 

বর্তমানে নিউজ পোর্টালের প্রকৃত সংখ্যা কত তা জানা না থাকলেও সারা দেশে এর সংখ্যা কয়েক হাজার হবে ধারণা করছি। তবে ইতোমধ্যেই বেশ কয়েকটি নিউজ পোর্টাল পাঠকপ্রিয়তা পেয়ে গেছে। বিডি নিউজ, বাংলানিউজ, ঢাকাটাইমস, বাংলা মেইল, দ্য রিপোর্ট, নতুন বার্তা ইতোমধ্যেই পাঠকের মন জয় করতে পেরেছে।

 

 

 

বাংলাদেশে ইলেকট্রনিক মিডিয়া প্রসার লাভের পর প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য দর্শকদের ঘণ্টায় ঘণ্টায় আপডেট নিউজ দিচ্ছে। নিউজ পোর্টালগুলো আসার চাপে এখন অবশ্য ব্রেকিং নিউজের নামে স্ক্রলে হেডিং দিয়ে দর্শকদের চাহিদা পূরণের একটা নিরন্তর চেষ্টা চালাচ্ছে ইলেকট্রনিক মিডিয়াগুলো। তবে দর্শক এখন আর কেবল হেডিংয়ে তৃপ্ত নয়।

 

 

 

বিস্তারিত নিউজের জন্য এক ঘণ্টা অপেক্ষা করতেও রাজি নয়। দর্শক বা পাঠক যাই বলি না কেন তারা এখন নিউজের আরো ভেতরে ঢুকতে চায়। আরো জানতে চায় এবং পাঠকদের এই জানার চাহিদা পূরণ করছে নিউজ পোর্টালগুলো। দেশ-বিদেশে কোথায় কি হচ্ছে, কি ঘটছে তা জানার জন্য টিভির সামনে বসারও এখন আর দরকার হয় না, সময়ও নেই। চলন্ত পথে অর্থাৎ বাসে, ট্রেনে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বসে, ক্লাসের ফাঁকে, ক্যাম্পাসের খোলা ময়দানে গল্প করতে বসেই তরুণ-তরুণীরা মোবাইল অন করেই জেনে নিচ্ছে দেশ-বিদেশের সর্বশেষ খবরটি।

 

 

 

 

হট ইস্যুতে টিভি টক শোতে যাওয়ার আগে আজকাল প্রায় সব আলোচকই অনলাইন নিউজ পোর্টালগুলোতে চোখ বুলিয়ে নিজেকে আপডেট করে বাসা থেকে পা ফেলছেন।

 

 

 

বিজ্ঞাপনদাতারাও এগিয়ে আসছে:
অনলাইন নিউজ পোর্টালগুলোর জনপ্রিয়তার সুযোগ নিচ্ছে বিজ্ঞাপনদাতারাও। এই সাত-আট বছর আগেও বিজ্ঞাপনদাতারা নিউজ পোর্টালগুলোর ব্যাপারে একেবারেই আগ্রহী ছিলেন না। গত কয়েক বছরে হাওয়া বদলেছে, বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো এখন তাদের পণ্যের প্রসারে নিউজ পোর্টালগুলোর ওপর অনেকাংশে নির্ভর করছে।

 

 

তারা মনে করছে, প্রিন্ট মিডিয়ায় বিজ্ঞাপন দিলেও তা কেবল বাংলাদেশের পাঠকদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। আর নিউজ পোর্টালগুলোতে দিলে সারা দুনিয়ার মানুষের কাছে তাদের পণ্যের পরিচিতি ঘটে। বাংলাদেশের বাইরে বিভিন্ন দেশে লাখ লাখ বাংলাদেশি বসবাস করছে। তারা প্রায় প্রতিদিন দেশের কোথায় কি ঘটছে তা জানার জন্য বাংলাদেশের নিউজ পোর্টালগুলোতে ঢুকছে।

 

 

বিজ্ঞাপনদাতারা এই সুযোগটি নেওয়ার জন্য এখন আগ্রহী হয়ে উঠছে। থ্রিজি  এবং ফোরজির মতো দ্রুতগতির ইন্টারনেট সুবিধা কাজে লাগিয়ে মানুষ এখন সহজেই নিউজ পোর্টালগুলোর সুবিধা কাজে লাগাতে পারছে। অনলাইন মিডিয়াকে আরও জনপ্রিয় করার জন্য দেশি-বিদেশি টেলি কোম্পানিগুলোও তাদের হাত প্রসারিত করছে।

 

 

ব্যবসায়িক স্বার্থেই তারা এখন এটা করছে এবং করবে। মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা যত বাড়বে তাদের ব্যবসাও তত বাড়বে। মোবাইল ইউজাররা যতবেশি নেটে থাকবেন ততই তাদের লাভ। নিউজ পোর্টালগুলোও এই সুবিধা কাজে লাগিয়ে পাঠকের চাহিদা পূরণে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।

 

 

 

পাঠকের চাহিদার কথা মাথায় রেখে কেবল নিউজ নয়, অডিও ও ভিডিও আপ করার সুবিধাও থাকছে নিউজ পোর্টালগুলোতে। আর এ ব্যাপারে টেলি কোম্পানিগুলোও তাদের স্বার্থেই সার্বিকভাবে সহায়তা করছে।

 

 

 

 

টিকে থাকবে প্রিন্ট মিডিয়া:
তবে অনলাইন মিডিয়ার পাঠক সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় বাংলাদেশের প্রিন্ট মিডিয়ার প্রচারসংখ্যা কমে যাওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে সম্প্রতি। মুনাফাও কমেছে কারো কারো। রব উঠেছে যে, প্রিন্ট মিডিয়ার দিন শেষ। এটা বলার সময় বোধকরি এখনো আসেনি। তবে এটা ঠিক প্রিন্ট মিডিয়া বড় ধরনের চাপে পড়েছে। প্রযুক্তির কল্যাণে সাংবাদিকতার ধরন-ধারণও পাল্টে গেছে।

 

 

নিউজ প্রিন্টের প্যাডে হাতের লেখা নিউজ নিয়ে দৌড় ঝাঁপের সেই যুগ এখন শেষ। ডেস্কটপ, ল্যাপটপ, নেটওয়ার্কিং ব্যবস্থা, নোটবুক, ই-মেইল, স্মার্টফোনসহ নানাবিধ ডিজিটাল ডিভাইসের ধাক্কায় প্রিন্ট মিডিয়া চাপের মধ্যে পড়লেও আধুনিকতার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার পাশাপাশি সময়ের স্রোতে তাল মিলাতে পারলে শেষ পর্যন্ত হয়ত টিকে যাবে প্রিন্ট মিডিয়া।

 

 

 

চাপে পড়ে বিশ্বের নামিদামি অনেক প্রিন্ট মিডিয়া মালিকানা বদল হয়েছে। ওয়াশিংটন পোস্ট বা ওয়ালস্ট্রিট জার্নালের মালিকানা বদল হয়েছে। তবে তারা এখনো প্রিন্ট ভার্সন চালু রেখেছে। মালিকানা হস্তান্তরের সময় (২০১৩ সালে) প্রচারসংখ্যার দিক থেকে ওয়াশিংটন পোস্ট ছিল সপ্তম বৃহৎ পত্রিকা, যার প্রতিদিনের বিক্রি ছিল চার লাখ ৭৪ হাজার ৭৬৭ কপি। ১৩৫ বছরের পুরনো এবং ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারির মতো ঘটনা ফাঁস করে আলোড়ন সৃষ্টিকারী এই পত্রিকাটি দিনদিন পাঠক হারাচ্ছিল, কমে আসছিল বিজ্ঞাপনও।

 

 

নতুন মালিক জেফ বিজোস অবশ্য মালিকানা গ্রহণ করে সাংবাদিকতার ঐতিহ্য ও মান পুরোমাত্রায় বজায় রাখার ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন। গত দেড় বছর আগেই নিউজউইকের প্রিন্ট ভার্সন বন্ধ হয়ে গেছে। তারা এখন অনলাইনে সচল রয়েছে।

 
আর্থিক সংকটের কারণে বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী পত্রিকা নিউইয়র্ক টাইমস বন্ধ হয়ে যাওয়ার শঙ্কার কথা আমরা পত্রিকার মাধ্যমে জেনেছিলাম। কয়েক বছর আগে আমেরিকার অর্থনীতি যখন মন্দার কবলে পড়ে তখন বহু মিডিয়া প্রিন্ট ভার্সন বন্ধ করে দিয়ে অনলাইনে তাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখে। আর ওই সময়ই নিউইয়র্ক টাইমসের প্রিন্ট ভার্সন বন্ধ করে দেওয়ার কথাও জোরেশোরে শোনা যায়। নিজেদের লেজে গোবরে অবস্থার কথা নিউইয়র্ক টাইমস নিজেও স্বীকার করেছিল।

 

 

 

অনলাইন নিউজ পোর্টালের যাত্রা শুরু:
অনলাইন নিউজ পোর্টালের যাত্রা শুরু সেই ১৯৭৪ সালে। যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয়েস স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে নিউজ রিপোর্ট নামে নিউজ পোর্টালটি প্রকাশিত হতো। এর পর থেকে আরো অনেক নিউজ পোর্টালের আগমন ঘটে।

 

 

২০০০ সালে যুক্তরাজ্য থেকে প্রকাশিত সাউথপোর্ট রিপোর্টার নামে নিউজ পোর্টালটিও বেশ জনপ্রিয়তা পায়। সেই তুলনায় বাংলাদেশে অনলাইন নিউজ পোর্টালের যাত্রা শুরু আরও কিছুটা পরে। তবে এক্ষেত্রে বাংলাদেশ খুব বেশি পিছিয়ে নেই। ২০০৫ সালের প্রথম দিকে যাত্রা শুরু করে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।

 

 

২০০৬ সালের ২২ অক্টোবর পুরোপুরি কাজ শুরু করে বিডিনিউজ। এখন পর্যন্ত এটিই বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি পঠিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল। এর পর যাত্রা শুরু করে বাংলা নিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।

 

 

এরপর আরও দু-একটি নিউজ পোর্টালের সঙ্গে বাজারে আসে ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোরডটকম। পর্যটন শহর কক্সবাজারে প্রথম অনলাইন পোর্টালের পথ দেখায় ‘কক্সবাজার নিউজ ডটকম’(সিবিএন) এখন তো শত শত। মানুষের আগ্রহের কথা বিবেচনা করে বিভিন্ন পত্রিকার অনলাইন সংস্করণও এখন ২৪ ঘণ্টাই আপডেট করা হচ্ছে।

 

 

 

নিউজ পোর্টালের দুর্বলতা:
বাংলাদেশে নিউজ পোর্টালের বয়স এখনো আট বছর পার হয়নি। সে দিক থেকে বলতে গেলে এখনো শিশু। এর বিকাশ নতুন হওয়ায় এতে অনেক দুর্বলতা রয়ে গেছে। স্বল্প সময়ে ব্যাপক সংখ্যায় নিউজ পোর্টাল বাজারে চলে এসেছে। এর ফলে এই গণমাধ্যমগুলোর মধ্যে একটা প্রতিযোগিতা গড়ে উঠেছে এবং পাঠকের চাহিদার দিকে তাগিয়ে কার আগে কে নিউজ দেবেÑএ নিয়ে একটি প্রতিযোগিতা রয়েছে।

 

 

 

মুহূর্তের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে গিয়ে নিউজের মান নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। তাছাড়া রুচিবোধ, এডিটিং নিয়ে প্রশ্ন করাই যেতে পারে। তবে আস্তে আস্তে একটা শক্ত অবস্থান পাবে নিশ্চয়ই। আমি সব নিউজ পোর্টালের কথা বলছি না। ইতোমধ্যেই বেশ কয়েকটি নিউজ পোর্টাল পাঠকের মন জয় করতে পেরেছে। আজ থেকে প্রায় দুইশ বছর আগে ১৮১৮ সালে এই অঞ্চলে প্রথম প্রিন্ট ভার্সনের সংবাদপত্র প্রকাশিত হয়।

 

 

‘বেঙ্গল গেজেট’ নামের ওই পত্রিকাটি শ্রীরামপুর থেকে প্রকাশিত হতো। পরে ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের সম্পাদনায় ‘সংবাদ প্রভাকর’ নামের একটি পত্রিকা প্রকাশিত হতো। অর্থাৎ এই অঞ্চলে দৈনিক পত্রিকার প্রিন্ট ভার্সনের বয়স ১৭৫ বছর পার হয়েছে।  সে দিক থেকে প্রিন্ট মিডিয়াও কী সব বিতর্কের ঊর্ধ্বে উঠতে পেরেছে। একাধিক হাত ঘুরে একটা নিউজ ছাপা হওয়ার পর যে ভুলত্রুটি হয় না তা নয়। এক সময়ের প্রভাবশালী দৈনিক ইত্তেফাকের প্রথম পাতার ক্যাপশনে মৌন মিছিলের জায়গায় যৌন মিছিল ছাপা হওয়াসহ নানাবিধ ভুলত্রুটির কথা আমাদের কমবেশি সবারই জানা।

 

 

 

এখনো রাজধানীর আরামবাগে রাতদুপুরে একই কক্ষ থেকে অসংখ্য পত্রিকার প্রিন্ট বের হয়। যা পরের দিন দেয়ালে আঠা দিয়ে লাগিয়ে দেওয়া হয়। এখনো অনেক পত্রিকা রয়েছে যা ছাপা থেকে শুরু করে নিউজের প্রেজেন্টেশনÑ সব মিলিয়ে তা হাতে নেওয়ার মতো নয়।
সেদিক থেকে নিউজ পোর্টালের বয়স বেশি নয়। এখনো সেভাবে সংগঠিত হয়ে বাজারে নামতে পারেনি বেশিরভাগ নিউজ পোর্টাল। অসুস্থ প্রতিযোগিতার কারণে , আনএডিটেড নিউজ আপ হয়ে যাচ্ছে। পাঠক ধরার জন্য যৌন সুড়সুড়ি দেয় এমন সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ করার একটা প্রবণতাও কাজ করছে অনেক ক্ষেত্রে।

 

 

বেশিরভাগ নিউজ পোর্টাল দুই-তিনজন লোক দিয়ে কাট পেস্ট করে চালাচ্ছে। সময়ের সাথে সাথে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা এসব নিউজ পোর্টাল এক সময় টিকে থাকতে পারবে না। যেমন টিকতে পারছে না আন্ডার গ্রাউন্ডের প্রিন্ট ভার্সনও।

 

 

 

নিউজ পোর্টালগুলোকে পাঠকপ্রিয়তা করার জন্য প্রতিষ্ঠানের মালিকদের আরো একটু এগিয়ে আসতে হবে। যেনতেনভাবে কম লোকবল দিয়ে এ ধরনের মিডিয়া চালানোর প্রবণতা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। নিয়মিত প্রশিক্ষণ দেওয়ার পাশাপাশি পেশাদার সাংবাদিকদের নিয়োগ দিতে হবে। প্রতিটি নিউজ পোর্টালের প্রকাশিত নিউজের একটা নিজস্বতা থাকা জরুরি।

 

 

একই নিউজ ভিন্ন ভিন্ন পোর্টালে ঢুকে তথ্য পাওয়াসহ লেখার গাঁথুনিতে যেন পাঠক ভিন্ন ভিন্ন স্বাদ পায় সেটা নিশ্চিত করা দরকার।
এ ক্ষেত্রে দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত প্রিন্ট মিডিয়াকে অনুকরণ করা যেতে পারে। একজন সিনিয়র সাংবাদিকের হাত ছাড়া কোনো নিউজ প্রুফে যাওয়ার নজির নেই প্রিন্ট মিডিয়ায়। সিস্টেমের কারণে প্রেসে যাওয়ার আগে একটা নিউজ একাধিক হাত হয়ে যায়। এর পরও ছাপা হওয়ার পর অনেক ভুলত্রুটি ধরা পড়ে।

 

 

 

আবার ঢাকার সচেতন পাঠকদের জন্য সর্বশেষ নিউজটা ধরার পাশাপাশি প্রথম দফা ছাপা পত্রিকার ভুলত্রুটি সংশোধন করে আবার নগর সংস্কর বের করা হয়। পাঠকদের সামনে নির্ভুল নিউজ উপস্থাপন করার এই চেষ্টা নিউজ পোর্টালগুলোতে এখনো গড়ে ওঠেনি।

 

 

 

আরটিএমনিউজ২৪ডটকম/এন এ কে

 

Logo-orginal