, শনিবার, ৪ মে ২০২৪

Avatar n_carcellar1957

বন্দরে ভাসছে আরো ৩ লাখ টন গম

প্রকাশ: ২০১৫-০৭-৩০ ১৪:৫৮:১৮ || আপডেট: ২০১৫-০৭-৩০ ১৪:৫৮:১৮

Spread the love

shi p

আরটিএমনিউজ২৪ডটকম, ঢাকা: গম বোঝাই সাতটি জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে দীর্ঘদিন ধরে ভাসছে। এসব জাহাজে প্রায় সোয়া তিন লাখ টন গম রয়েছে।

 

 

 

 

এর মধ্যে ব্রাজিল ও ফ্রান্স থেকে দুটি জাহাজে আনা এক লাখ পাঁচ হাজার টন গম নিম্নমানের হওয়ায় তা গ্রহণে অস্বীকৃতি জানিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। এছাড়া পাঁচটি জাহাজে আনা প্রায় দুই লাখ টন গম কাগজপত্র সংক্রান্ত জটিলতা এবং মান পরীক্ষা না হওয়ার কারণে ছাড়পত্র পায়নি।

 

 

 

 

ব্রাজিল ও ফ্রান্স থেকে দুটি জাহাজে আনা এক লাখ পাঁচ হাজার টন গম সরকারি খাদ্যগুদামে সরবরাহ করা হবে বলে কথা ছিল সেগুলো। কিন্তু নিম্নমানের হওয়ায় খাদ্য অধিদপ্তর সেই গম গ্রহণ করেনি। তাই এখন বেসরকারিভাবে আমদানির ঘোষণা দিয়ে সেই গম বন্দরে খালাসের চেষ্টা চলছে। এ জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদনও করেছে তারা। তবে এখনো অনুমতি মেলেনি। খালাস করতে পারলে নিম্নমানের এই গম দেশের বাজারে ছাড়বে আমদানিকারকরা।

 

ব্রাজিল থেকে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ২ লাখ টনের বেশি নষ্ট গম আমদানি নিয়ে দেশজুড়ে তোলপাড়ের পর এই প্রথমবারের মতো খাদ্য অধিদপ্তর গমের চালান ফেরত দিল।

 

 

 

 

সুপ্রিম কোর্ট ওই ২ লাখ টন গম সরবরাহ স্থগিত রাখার নির্দেশ দিয়েছে।

 

 

 

 

গত কয়েক বছরে সরকারি খাদ্যগুদামে সরবরাহের জন্য নিম্নমানের গম আমদানি হলেও সেগুলো ফেরত পাঠানোর কোনো নজির খাদ্য অধিদপ্তরের নেই।

 

 

 

 

এক লাখ পাঁচ হাজার টন গম  নিয়ে বহির্নোঙরে ভাসমান জাহাজ দুটি হলো-শান্তা ক্যাটারিনা ও অ্যালবাট্রস। ব্রাজিল থেকে সাড়ে ৫২ হাজার টন গম নিয়ে শান্তা ক্যাটারিনা চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে ভিড়েছে গত ১২ জুন। ফ্রান্স থেকে আনা সাড়ে ৫২ হাজার টন গম নিয়ে অ্যালবাট্রস বহির্নোঙরে ভিড়েছে গত ৯ জুলাই।

 

 

 

খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ফয়েজ আহমদ বলেন, ‘মানোত্তীর্ণ না হওয়ায় ও কাগজপত্র অসম্পূর্ণ থাকায় শান্তা ক্যাটারিনা ও অ্যালবাট্রসের গম গ্রহণ না করে ফেরত পাঠিয়েছি। চুক্তির মানদণ্ড অনুযায়ী এখন সরবরাহকারী সংশ্লিষ্ট দুটি প্রতিষ্ঠানকে সমপরিমাণ নতুন গম সরকারি গুদামে সরবরাহ করতে হবে।’

 

 

 

 

ফয়েজ আহমদ আরো জানান, এ দুই জাহাজের বাইরে ওয়েস্টার্ন টেক্সাস নামের আরেকটি জাহাজের কাগজপত্র ঠিক না থাকায় সংশ্লিষ্ট ব্যাংক গমের চালান গ্রহণ না করে বাতিল করে দিয়েছে। ওই জাহাজেও সাড়ে ৫২ হাজার টন গম রয়েছে, সেগুলো সরকারি গুদামে সরবরাহের কথা ছিল। সেই জাহাজটিও বহির্নোঙরে ভাসছে।

 

 

 

চট্টগ্রাম বন্দর সূত্র জানায়, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে সরকার ৯ লাখ টন গম কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল। এ জন্য বাজেটে বরাদ্দ করা হয়েছিল ২,৪১৭ কোটি টাকা। এরই অংশ হিসেবে দরপত্রের মাধ্যমে পৃথক দুটি চালানে সাড়ে ৫২ হাজার টন করে এক লাখ পাঁচ হাজার টন গম সরবরাহের কাজ পায় বিদেশি প্রতিষ্ঠান গ্রেন কোর ও অ্যাগ্রো কর্প। তারাই ব্রাজিল ও ফ্রান্স থেকে ওই গম এনেছে।

 

 

 

 

নিয়ম অনুযায়ী বহির্নোঙরে ভেড়ার পর জাহাজ থেকে গমের নমুনা সংগ্রহ করে খাদ্য অধিদপ্তরের পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করা হয়। কিন্তু পরীক্ষায় নির্ধারিত মানদণ্ড পূরণ করতে না পারায় সেই গম গ্রহণ করেনি খাদ্য অধিদপ্তর।

 

 

 

 

খাদ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, খাদ্য অধিদপ্তরের নিয়ম অনুযায়ী আমদানি করা গমে বিনষ্ট (ক্ষতিগ্রস্ত) দানার পরিমাণ মোট গমের ৪ শতাংশের বেশি হতে পারবে না। আর ক্ষতিগ্রস্ত দানার পরিমাণ সর্বোচ্চ ৭ শতাংশ হলেও তা জরিমানাসহ গ্রহণের নিয়ম রয়েছে।

 

 

 

কিন্তু ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষায় ওই দুই জাহাজের গমের নমুনায় বিনষ্ট দানা পাওয়া গেছে ১০ শতাংশের বেশি। মানদণ্ড পূরণ না হওয়ায় গত ১৪ জুলাই সরবরাহকারীকে চিঠি দিয়ে সেই গম গ্রহণে অস্বীকৃতির কথা জানিয়ে দিয়েছে খাদ্য অধিদপ্তর। পাশাপাশি সরবরাহকারীর অনুরোধে সেই গমবাহী জাহাজকে চট্টগ্রাম বন্দর ত্যাগেরও ছাড়পত্র দিয়েছে অধিদপ্তর।

 

 

 

অভিযোগ রয়েছে, ছাড়পত্র পাওয়ার পর ব্রাজিলে ফেরত না পাঠিয়ে সেই গম ফের বাংলাদেশের বাজারে ছাড়ার চেষ্টা চালাচ্ছে আমদানিকারকরা। এ জন্য বেসরকারিভাবে আমদানির ঘোষণা দেখিয়ে শান্তা ক্যাটারিনা জাহাজটির জন্য চট্টগ্রাম বন্দরের কাছে অনুমতি চাওয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরের কাছে জমা হওয়া তালিকায় জাহাজটির গমকে বেসরকারিভাবে আমদানি দেখানো হয়েছে। তবে এখনো বন্দর কর্তৃপক্ষ অনুমতি দেয়নি।

 

 

 

 

দৈনিক কালের কণ্ঠের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্রাজিলের গম সরবরাহকারী নেদারল্যান্ডসভিত্তিক প্রতিষ্ঠান গ্রেন কোর দেশীয় এজেন্ট ইমপেক্স লিমিটেডের কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাহেদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে কিছু জানেন না বলে জানান। তবে খাদ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে গম ফেরত দেওয়ার কথা তিনি স্বীকার করেন।

 

 

 

 

 

তার ভাষ্য, ‘অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ছাড়পত্র (এনওসি) দেওয়ার পর গমগুলো পুনরায় ব্রাজিলে নেওয়া হবে, নাকি দেশের বাজারে বিক্রি করা হবে সে বিষয়ে এখনো আমরা সিদ্ধান্ত নিইনি।’

 

 

 

তবে নিম্নমান সত্ত্বেও এসব গম দেশের বাজারে খালাসের চেষ্টার বিষয়ে তিনি কিছু বলতে রাজি হননি।

 

 

 

বেসরকারিভাবে গম আমদানির সঙ্গে জড়িত একাধিক আমদানিকারক বলেন, ‘কড়াকড়ি আরোপ না হলে আগের মতো এই নিম্নমানের গমও মানোত্তীর্ণ দেখিয়ে সরকারি গুদামে গছিয়ে দেওয়া হতো। কিন্তু ব্রাজিলের গম নিয়ে হইচই হওয়ায় এ চালানটি ধরা পড়ল।’

 

 

 

 

খাদ্য আমদানির বিধি মতে, দরপত্রে নির্বাচিত সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তির মানদণ্ড পূরণ না হলে সরকার সেই গম গ্রহণ না করে ফেরত পাঠায়। অধিদপ্তরের কাছ থেকে ছাড়পত্র নিয়ে পরে এই গম স্থানীয় বাজারে কিংবা পুনরায় একই দেশে ফেরত পাঠাতে হয়।

 

 

 

কিন্তু গম সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো খরচ সাশ্রয় করতে সেই গম নানা কৌশলে দেশের বাজারেই প্রবেশের চেষ্টা চালায়। কারণ এক মাস জাহাজ বহির্নোঙরে বসিয়ে রেখে পুনরায় সেই গম আবার যে দেশ থেকে আমদানি করা হয়েছে সেই দেশে ফেরত নেওয়া হলে অনেক খরচ পড়ে। সাগরে একটি জাহাজে পণ্য নিয়ে বসে থাকতে হলে প্রতিদিন ১০ হাজার মার্কিন ডলার খরচ হয়। শান্তা ক্যাটারিনা ও অ্যালবাট্রস দীর্ঘদিন ধরে সাগরে বসে আছে।

 

 

 

এ বিষয়ে শান্তা ক্যাটারিনা ও আলবাট্রসের শিপিং এজেন্ট লিটমন্ড শিপিংয়ের কর্ণধার বেলায়েত হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সরকারের সাথে চুক্তির ধারা নম্বর-২ পরিপূর্ণ না করায় খাদ্য অধিদপ্তর গমগুলো গ্রহণ করেনি। ছাড়পত্রের কপি আমাদের দেওয়া হলেও জাহাজটি কখন বন্দর ছাড়বে তা বলা হয়নি। গমগুলো পুনরায় বন্দরে খালাস করতে চাইলে ডকুমেন্টগুলো নতুন করে তৈরি করে আবেদন করতে হবে। গমের সরবরাহকারী যেভাবে চাইবে সেভাবেই সেগুলো করা হবে।’

 

 

তবে ওই গম বেসরকারিভাবে আমদানির ঘোষণা দিয়ে বাজারে প্রবেশের চেষ্টার অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেন।

 

 

 

উল্লেখ্য, সরকারি গুদামে সরবরাহের জন্য আনা গম গ্রহণে খাদ্য অধিদপ্তর কড়াকড়ি আরোপ করায় আরো চারটি জাহাজ প্রায় এক লাখ ৬০ হাজার টন গম নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে অবস্থান করছে।

 

 

 

 

এর মধ্যে পিনটেইল নামের জাহাজ পাঁচ হাজার ৭৯৭ টন গম নিয়ে ৩০ জুন থেকে অপেক্ষা করছে। ৫০ হাজার ১৪৮ টন গম নিয়ে ১৪ জুন থেকে অপেক্ষা করছে জিন ইয়াও, সাড়ে ৫২ হাজার টন গম নিয়ে ওয়েস্টার্ন টেক্সাস অপেক্ষা করছে ২৬ জুন থেকে এবং ৫১ হাজার ৩৪৭ টন গম নিয়ে স্পার কেনিস নামের জাহাজ অপেক্ষা করছে ২ জুন থেকে।

 

 

 

জাহাজগুলোর গমের মান এখনো যাচাই করা হয়নি। জানা গেছে, কাগজপত্র ঠিকমতো জমা না হওয়ায় জাহাজগুলো থেকে নমুনা সংগ্রহ করে যাচাই করা হচ্ছে না।

 

 

 

 

আরটিএমনিউজ২৪ডটকম/ এন এ কে

Logo-orginal