, রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪

Avatar n_carcellar1957

কক্সবাজারের আদালতে ৬৫ হাজার মামলা বিচারাধীন

প্রকাশ: ২০১৫-০৮-০৯ ১৬:২১:০৪ || আপডেট: ২০১৫-০৮-০৯ ১৬:২১:০৪

Spread the love

ছৈয়দ আলম, কক্সবাজার প্রতিনিধি :
coxbazar

আরটিএমনিউজ২৪ডটকম, কক্সবাজার: কক্সবাজারের আদালত গুলোতে বিচারাধীন রয়েছে ৬৪ হাজার ৫১৪ টি মামলা। জেলা ও দায়রা জজ আদালতের আওতায় ৯ টি এবং চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে ১২ টি সহ ২১ টি আদালতে এত বিপুল সংখ্যক মামলা দীর্ঘদিন ধরে বিচারাধীন রয়েছে। এসবের মধ্যে ফৌজদারী মামলার সংখ্যা হচ্ছে ৪৪ হাজার ৭৫২ টি এবং দেওয়ানি মামলা ১৯ হাজার ৭৬২ টি। মামলার এই অস্বাভাবিক জট দিন দিন বাড়ছে। মামলার জটে বিচারক, বিচার প্রার্থী সহ সংশ্লিষ্টদের এখন কাহিল অবস্থা। একজন বিচারক গড়ে দৈনিক ৪/৫ টি করে মামলা নিষ্পত্তি করেও কুলিয়ে উঠতে পারছেন না। মামলার অনুপাতিক হারে বিচারকের স্বল্পতায় মামলার নিষ্পত্তি তেমন হচ্ছে না। এমনকি একটি আদালতেই কেবল ৬ শতাধিক হত্যা মামলা বিচারের অপেক্ষায় রয়েছে বছরের পর বছর ধরে।

 

 
গতকাল শনিবার কক্সবাজার জেলা জজ আদালতের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্টিত ত্রৈমাসিক বিচার বিভাগীয় সম্মেলন ও পুলিশ ম্যাজিষ্ট্রেসী সম্মেলনে মামলা জটের এ ভয়াল চিত্র তুলে ধরেন জেলা ও দায়রা জজ মোঃ সাদিকুল ইসলাম তালুকদার। সভায় তিনি বলেন-কক্সবাজার হচ্ছে ‘বি’ শ্রেণীর জেলা। দেশের পুরানো জেলাগুলোই কেবল ‘এ’ শ্রেণীভুক্ত। এসব ‘এ’ শ্রেণীভুক্ত জেলা গুলোতে আদালত ও বিচারকের সংখ্যা বেশী। তাই মামলার সংখ্যা যতই বেশী হোক না কেন পুরানো জেলাগুলোতে তেমন সমস্যা হয়না।

 

 
কিন্তু কক্সবাজার হচ্ছে দেশের অন্যান্য জেলার চাইতে ভিন্ন ধরনের জেলা। এখানে অপরাধের মাত্রা এবং হার অত্যধিক বেশী। দেশের ‘বি’ শ্রেণী ভুক্ত অন্যান্য জেলাগুলোর চাইতে কয়েকগুণ মামলার সংখ্যা কক্সবাজারে বেশী। কিন্তু বি শ্রেণীভুক্ত হওয়ায় এখানে সুযোগ সুবিধা কম। তাই সর্বাগ্রে প্রয়োজন কক্সবাজারকে ‘বি’ থেকে ‘এ’ তে উন্নীত করা। সভায় বিচার প্রার্থী সাধারণ লোকজনের ভোগান্তির কথা উলে­খ করে বক্তারা অবিলম্বে কক্সবাজারের আইন-আদালত অঙ্গণকে ‘বি’ থেকে ‘এ’ শ্রেণীতে উন্নীত করে অতিরিক্ত বিচারক নিয়োগের দাবী জানিয়েছেন। সেই সাথে নারী ও শিশু নির্যাতন আইন এবং মানব পাচার আইন সংশোধন করার দাবীও জানানো হয়।

 

 
জেলা ও দায়রা জজের সভাপতিত্বে অনুষ্টিত সভায় বিজিবি কক্সবাজার সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার কর্ণেল এম,এম আনিসুর রহমান, পুলিশ সুপার শ্যামল কুমার নাথ, সিভিল সার্জন ডাঃ কমর উদ্দিন, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্র্যাইব্যুনালের বিচারক সুলতান মাহমুদ, অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মোঃ নুরুল ইসলাম, প্রধান জেষ্ট্য বিচারিক হাকিম মোহাম্মদ তৌফিক আজিজ, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এডভোকেট একে আহমদ হোছাইন, সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট গোলাম ফারুক খান কায়সার, পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) এডভোকেট মমতাজ আহমদ, সরকারি কৌঁশুলি এডভোকেট মোহাম্মদ ইসহাক, নারী ও শিশু আদালতের পিপি এডভেকেট নুরুল ইসলাম, সাবেক পাবলিক প্রসিকিউটর ও সিনিয়র আইনজীবী মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর ও এডভোকেট নুরুল মোস্তফা মানিক, এডভোকেট কামরুল হাসান, এডভোকেট সৈয়দ আলম, এডভোকেট ফরিদুল আলম, এডভোকেট সুলতানুল আলম, কক্সবাজার সদর থানার ওসি কাজী মতিউল ইসলাম ও মহেশখালী থানার ওসি (তদন্ত) দিদারুল ফেরদৌস প্রমুখ বক্তৃতা করেন।

 
সভায় বিজিবি সেক্টর কমান্ডার কর্ণেল এম, এম আনিসুর রহমান কক্সবাজারে এত বিপুল সংখ্যক মামলার জট লেগে থাকায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন-বিলম্বিত বিচারের প্রতি মানুষের অনীহার জন্ম দেয়। সমাজে হতাশা নেমে আসে। একটি মামলা বছরের পর বছর ঝুলে থাকবে এটা কোন ভাবেই মেনে নেয়া যায়না। তিনি এমন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের উপায় বের করার উপর গুরুত্বরোপ করেন। সভায় জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ কমর উদ্দিন বলেন-মেডিকেল সনদ প্রদানে আগের দিন বদলে ফেলা হয়েছে। এখন তিন জন ডাক্তার মিলে মেডিকেল সনদ প্রদান করে থাকেন। তিনি দুঃখের সাথে বলেন-পুরো এক বছর পর আমার কাছে একটি হত্যা মামলার ময়না তদন্তের রিপোর্ট স্বাক্ষরের জন্য পাঠানো হয়। পুলিশ সুপার শ্যামল কুমার নাথ বলেন-মামলায় সাক্ষীদের হাজির করানোর জন্য পুলিশ এখন থেকে সিরিয়াস হয়ে কাজ করছে।-সিবিএন
সভায় কয়েকজন বক্তা জেলা প্রশাসকের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট কর্তৃক পচিালিত ভ্রাম্যমান আদালতের প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন। এ প্রসঙ্গে জেলা ও দায়রা জজ বলেন, মোবাইল কোর্ট আইন-২০০৯ সালের ৭ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, একজন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটকে ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকেই অপরাধীকে শাস্তি দিতে হবে। কিন্তু বাস্তবে পুলিশ অপরাধীকে ধরে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটের নিকট নিয়ে গিয়ে শাস্তির ঘোষণা দিচ্ছে-যা বিধি সন্মত নয়। এ প্রসঙ্গে জেলা ও দায়রা জজ বলেন-অবস্থা এমন পর্যায়ে গিয়ে পৌছৈছে যে, ‘ঘুম থেকে তুলেও মোবাইল কোর্টে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ’তদুপরি ১৪৪ ধারার মামলার নির্ধারিত সময় হচ্ছে দুই মাস। কিন্তু এক্ষেত্রে তিন-চার মাসের পরও এসব মামলায় ম্যজিষ্ট্রেটের অর্ডার প্রদানের ঘটনাও ঘটছে-যা আইন সঙ্গত নয় বলেও বলা হয়।

 
বক্তারা মানব পাচার ও ইয়াবা পাচার প্রতিরোধের উপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, এসব মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তাদের সমস্ত লোভ লালসার উর্ধে উঠে তদন্ত কাজ সম্পন্ন করতে হবে। সেই সাথে মামলার গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীর সাক্ষ্য ও আলামত সংরক্ষণের উপরও গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। কিন্তু এক্ষেত্রে তার ব্যতয় ঘটার অভিযোগ রয়েছে বলে তিনি জানান। ডাঃ সাইফুল ইসলাম নামের একজন সরকারি চিকিৎসকের অনুপস্থিতিতে বহু সংখ্যক হত্যা মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া প্রসঙ্গেও আলোচনা করা হয় সভায়।

 

 

 

আরটিএমনিউজ২৪ডটকম/এন এ কে

Logo-orginal