, রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪

Avatar n_carcellar1957

কারাগারে পরীক্ষা দিয়ে জিপিএ-৫ , বন্দী জীবন দমিয়ে রাখতে পারেনি অদম্য রিপাতকে

প্রকাশ: ২০১৫-০৮-১১ ১৭:৫০:০৬ || আপডেট: ২০১৫-০৮-১১ ১৭:৫০:০৬

Spread the love

এম মাঈন উদ্দিন, মিরসরাই (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
Mirsarai Rifat Photo

আরটিএমনিউজ২৪ডটকম, চট্টগ্রামঃ বাবার স্বপ্ন ছেলেকে ডাক্তার বানাবে। সেই স্বপ্ন কি স্বপ্নই থেকে যাবে? মনের মধ্যে তখন শুধু এমন প্রশ্ন বার বার উঁকি দিচ্ছে। কারণ তার প্রিয় সন্তান কারাগারের চার দেয়ালে বন্দী। তবে বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে আরো এক ধাপ এগিয়ে গেলেন রিপাত।

 

 

কারাগারের বন্দী জীবন দমিয়ে রাখতে পারেনি অদম্য মেধাবী রিপাতকে। কঠোর পরিশ্রম, একাগ্রতা ও প্রবল ইচ্ছাশক্তিতে সফল হয়েছে মিরসরাইয়ের ইমরান হোসাইন রিপাত। এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় চট্টগ্রামের সরকারী হাজ্বী মুহাম্মদ মহসিন কলেজ থেকে পরীক্ষা দিয়ে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ লাভ করে। ভবিষ্যতে তার চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন বেঁচে রইলো। কারাগারে পরীক্ষা দিয়ে এমন ফলাফল অর্জন করায় তার মা-বাবা,আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী সকলে আনন্দের জোয়ারে ভাসছে।

 
জানা গেছে, চলতি বছরের ৫ জানুয়ারী চট্টগ্রাম শহরের কাজীর দেউড়ি থেকে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন রিপাত। এরপর কোতয়ালী থানা পুলিশ তার বিরুদ্ধে একটি রাজনৈতিক মামলা দায়ের করেন। ২৭ মে জামিনে মুক্তি পান তিনি। এবারের এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হওয়ার পূর্বে তার পরিবার জামিনের জন্য একাধিকবার আদালতের পরনাপন্ন হয়। কিন্তু আদালত রিপাতের জামিন নামঞ্জুর করে। তাই চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে পরীক্ষা দিতে হয় তাকে। কারা প্রশাসন, সহপাঠি ও পরিবারের সদস্য তাকে পরীক্ষা দিতে সহযোগীতা করেন।

 

 
ইমরান হোসাইন রিপাত বলেন, আমি গ্রেপ্তার হয়ে দীর্ঘসময় কারাবাসের পর হতাশ হয়ে পড়ি আদো পরীক্ষা দিতে পারবো কিনা? পরিবার ও সহপাঠিদের পক্ষ থেকে একাধিকবার জামিন চাইলেও আদালত জামিন দেয়নি। তাই মনস্থির করি কারাগারে পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ পেলে আমাকে ভালো ফলাফল করতেই হবে।তবে বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র হওয়ায় আমার জন্য অনেক কষ্ট হয়েছে। তারপরও কারাগারে থাকা সহপাঠিদের উৎসাহ আমাকে দারুণ অনুপ্রেরনা যুগিয়েছে। বিশেষ করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী দুই বড় ভাই এস এম মাসুদ হোসাইন ও আশরাফ হোসাইন আমাকে অনেক সহযোগীতা করেছেন। আমি তাদের কাছে কৃতজ্ঞ। আমার এমন ফলাফলের জন্য মহান রাব্বুল আালামিনের শুকরিয়া আদায় করছি।

 

 

বর্তমানে মেডিকেলে ভর্তি হতে কোচিং করছি। আমি ভবিষ্যতে চিকিৎসক হতে চাই। রিপাত ২০১৩ সালে সীতাকুন্ড সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছিলো।

 

 
রিপাতের পিতা উপজেলার বড় দারোগাহাট বাজারের ব্যবসায়ী আবু জাফর ছেলের ফলাফল শুনে আবেগ আপ্লুত হয়ে যান। তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করতে পারছিনা আমার ছেলে কারাগারে পরীক্ষা দিয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছেন। পরীক্ষার পূর্বে জামিনের জন্য অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু ব্যর্থ হয়েছি। আমার স্বপ্ন ছেলেকে ডাক্তার বানাবো। আল্লাহ আমার স্বপ্ন যেন পূরণ করেন। আমার ছেলেকে কারাগারে পরীক্ষা দিতে যারা সহযোগীতা করেছেন আমি সকলের কাছে কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা আমার নেই।

 

 
রিপাতের কলেজের বড় ভাই সাজ্জাদ হেসাইন বলেন, রিপাত খুব মেধাবী। তারপরও বাইরে আর কারাগারে পরীক্ষা দেয়া এক নয়। সে অনেক পরিশ্রম করেছে তাই সফল হয়েছে।

 

 
এ বিষয়ে জানতে চট্টগ্রাম সরকারী হাজ্বী মু‏হাম্মদ মহসিন কলেজের অশ্যক্ষ অঞ্জন নন্দীর মোবাইলে একাধিকবার কল করলেও তিনি এ প্রতিবেদকের কল রিসিভ করেন নি।

 
ইমরান হোসাই রিপাত মিরসরাই উপজেলার ওয়াহেদপুর ইউনিয়নের বড়কমলদহ এলাকায় মৌলভী নুর আহম্মদ প্রকাশ বুড়া হজুর বাড়ির ব্যবসায়ী আবু জাফরের পুত্র। তিন ভাইয়ের মধ্যে রিপাত সবার বড়।

 

 

 

আরটিএমনিউজ২৪ডটকম/এন এ কে

Logo-orginal