, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

admin admin

আরাফাহ দিবসের ফযিলত ও আমল

প্রকাশ: ২০১৫-০৯-১৪ ২০:০০:২৩ || আপডেট: ২০১৫-০৯-১৫ ১০:১৭:৪০

Spread the love

bd hajj makkah
হাবীবুল্লাহ মুহাম্মাদ ইকবাল
আরটিএমনিউজ২৪ডটকম ডেস্ক: আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের জন্য এমন কিছু দিন বা স্থানকে বিশেষভাবে ফযিলতপূর্ণ করেছেন যাতে বান্দারা নিজেদেরকে গুনাহমুক্ত করতে পারে। এ রকম একটি দিন হলো যিলহজ্জ মাসের ৯ তারিখ ইয়াউমে আরাফা-আরাফার দিন। আর এমন একটি স্থান হলো আরাফার ময়দান। আরাফার ময়দানে অবস্থান করাটা হজ্জ পালনকারীদের জন্য অবশ্য পালনীয় বিষয়গুলোর মধ্যে একটি। আরাফার ময়দান ক্ষমা পাওয়ার ময়দান হিসেবেও পরিচিত। যেখানে পনেরশ’ বছর আগে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজ্জ উপলক্ষে তাঁর শেষ ভাষণ দিয়েছিলেন। আরাফা দিবসের ফযিলত ও আমলগুলো নিম্নে আলোচনা করা হলো।

এক : আরাফার দিনটি মূলত হজ্জের দিন। ইসলামের মূল স্তম্ভসমূহের মধ্যে অন্যতম হলো হজ্জ। আর আরাফার ময়দানে অবস্থান করাই হজ্জ। এদিনের গুরুত্ব ও ফযিলত সম্পর্কে সহীহ হাদীসে এসেছে :

‘‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘‘আরাফাতে অবস্থান করাই হলো হজ্জ।’’ সুনান নাসাঈ : ৩০৪৪

দুই : আরাফার দিনটি ইসলামে এতো মর্যাদাপূর্ণ যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এটাকে ঈদের দিন হিসাবে উল্লেখ করেছেন। উকবাহ বিন আমের রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত সহীহ হাদীসে এসেছে : ‘‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আরাফাতের দিন, কুরবানীর দিন এবং তাশরীকের দিনসমূহ হচ্ছে ইসলামে আমাদের ঈদের দিন। এদিনগুলো হচ্ছে পানাহারের দিন।’’ [সুনান আবু দাউদ : ২৪২১]

তিন : আরাফার দিনে আল্লাহতায়ালা তাঁর নিয়ামত ও দ্বীনকে পূর্ণতা দান করেছেন। সহীহ বুখারীতে এক বর্ণনায় উল্লেখ রয়েছে :
hajj
‘‘ইহুদীরা উমর রাদিআল্লাহু আনহুকে বললো, তোমরা কুরআনের এমন একটা আয়াত তেলাওয়াত করো যদি সে আয়াতটা আমাদের মাঝে নাযিল হতো তাহলে আমরা সেদিনকে ঈদের দিন হিসেবে উদযাপন করতাম। উমর রাদিআল্লাহু আনহু বলেন, নিশ্চয়ই আমি জানি সে আয়াত কোনটি এবং তা কখন কোথায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াম সাল্লামের উপর নাযিল হয়েছে। সেদিন হচ্ছে আরাফাতের দিন, আল্লাহর শপথ আমরা তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে আরাফাতেই ছিলাম। সে আয়াত হচ্ছে :

আজ আমি তোমাদের জন্য আমার দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম, তোমাদের উপর আমার নিয়ামত পূর্ণ করলাম এবং আমি তোমাদের জন্য ইসলামকে জীবন বিধান হিসেবে মনোনীত করলাম।’’ [সূরা আল মায়িদাহ : ৪]

চার : আরাফার দিনটি এত ফযিলতপূর্ণ যে, এই দিনের সিয়াম পালনকারীর দুই বছরের গুনাহ মাফ করা হয়। আবু কাতাদা রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করা হলো, আরাফাতের দিবসের সিয়াম পালনের ফযিলত কী: উত্তরে তিনি বলেন : ‘‘যে ব্যক্তি আরাফার দিনে (একটি) সিয়াম পালন করলো, আমি আশা রাখি আল্লাহতায়ালা তার পেছনের এক বছরের ও আগামী এক বছরের গুনাহ মাফ করে দিবেন।’’ [সহীহ মুসলিম : ২৮০৩]

তবে এই দিনে হাজী সাহেবরা সিয়াম পালন করবেন না। কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাজীদেরকে এই দিনে সিয়াম পালন করতে নিষেধ করেছেন।

পাঁচ : এদিন হচ্ছে জাহান্নাম থেকে মুক্তির দিন। উম্মুল মু’মিনীন আয়েশা রাদিআল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন : ‘‘আরাফাতের দিনে এত অধিক সংখ্যক বান্দাকে আল্লাহতায়ালা জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে দেন, যা অন্য কোন দিন দেয়া হয় না। সেদিন তিনি বান্দার অত্যন্ত নিকটবর্তী হয়ে যান এবং ফেরেশতাদের সাথে গর্ব করে বলেন, আমার এসব বান্দারা কী চায়?’’ [সহীহ মুসলিম : ৩৩৫৪]

ছয় : আরাফার দিন হলো দোয়া করার উত্তম দিন। আমর বিন শুয়াইব তার বাবা থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘‘সর্বোত্তম দোয়া হচ্ছে আরাফাতের দিনের দোয়া। আমি এবং আমার পূর্ববর্তী নবীগণ এদিনে উত্তম যে দোয়াটি পড়তাম তা হচ্ছে ‘‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকালাহু, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইইন ক্বাদীর।’’ [সুনান আত তিরমিযী : ৩৫৮৫, হাসান]

সাত : আরাফার দিনসহ যিলহজ্জ মাসের প্রথম দশদিন বেশি বেশি যিকির করার বিষয়ে হাদীসে উল্লেখ আছে। আবদুল্লাহ ইবন উমার রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘‘যিলহজ্জ মাসের প্রথম দশদিনের অধিক মর্যাদাবান আর কোন দিন নেই এবং নেক আমল করার জন্য এ দিনগুলোর চেয়ে বেশি প্রিয় দিন আর নেই। অতএব তোমরা এদিনগুলোতে বেশি বেশি ‘‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’’ ‘‘আল্লাহু আকবার’’ ও ‘‘আলহামদু লিল্লাহ’’ পাঠ কর।’’ [মুসনাদ আহমাদ : ৬১৫৪]

আট : এদিনকে কুরআন মাজীদে বেজোড় দিবস হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। মহান আল্লাহতায়ালা পবিত্র কুরআনের সূরা আল ফাজরে এ দিনের কসম করেছেন। এ বিষয়ে আবদুল্লাহ ইবন আববাস রাদিআল্লাহ আনহু বলেন, ‘‘জোড় দ্বারা কুরবানীর দিন, বেজোড় দ্বারা আরাফার দিবসকে বুঝানো হয়েছে।’’ [ফাতহুল ক্বাদীর-শাওকানী, খ-৭ পৃষ্ঠা : ৪৮৯]

নয় : এদিনটি যিলহজ্জের মাহিমান্বিত দশ দিবসের মধ্যে অন্যতম। এ দিনে নেক আমলের বিষয়ে উৎসাহ প্রদান করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ও সাল্লাম বলেছেন, ‘‘ইবন আববাস রাদিআল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, এ দিনগুলোর নেক আমলের চেয়ে আল্লাহতায়ালার কাছে বেশি প্রিয় কোন আমল নেই, অর্থাৎ যিলহজ্জের দশ দিবসের নেক আমল।’’ সাহাবীরা প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহও কি নয়? তিনি বলেন, জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহও এ দিনগুলোর নেক আমলের চেয়ে আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয় নয় কেবল সে ব্যক্তির আমল ব্যতীত, যে স্বীয় জীবন ও সম্পদ নিয়ে আল্লাহর রাস্তায় বেরিয়ে পড়েছে আর কিছু নিয়ে প্রত্যাবর্তন করেনি।’’ [সুনান আবু দাউদ : ২৪০০]

প্রতি বছর এদিনে হজ্জের ভাষণ দেয়া হয়, যা গোটা মুসলিম বিশ্বের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যাতে রয়েছে গোটা মিল্লাতের জন্য পথ নির্দেশনা। আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হজ্জ উপলক্ষে তাঁর শেষ ভাষণ দিয়েছিলেন। হাদীসে এসেছে, ‘‘জাবির রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ও সাল্লাম আরফার ময়দানে উপস্থিত হলেন। যখন সূর্য ঢলে পড়লো, কাছওয়াতে আরোহণ করে বাতনে ওয়াদিতে আসলেন এবং মানুষের উদ্দেশ্যে খুতবাহ দিলেন।’’ [সহীহ মুসলিম : ২১৩৭]

আরাফা দিবসের করণীয় আমলগুলো :

১. এ দিনে ৯ যিলহজ্জ সিয়াম পালন করা। কেননা এ দিনে সিয়াম পালন দুই বছরের সিয়ামে পালনের সমতুল্য। তবে হাজী সাহেবরা এ দিনে সিয়াম পালন করবেন না।

২. বেশি বেশি যিকির করা। গুরুত্বপূর্ণ যিকিরগুলো হলো : লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবর,, আলহামদুলিল্লাহু।

৩. আল্লাহর নিকট বেশি বেশি দোয়া করা। নিজেকে গুনাহমুক্ত করার জন্য কান্নাকাটি করা।

৪. হজ্জের খুতবাহ শোনা ও অনুধাবন করা। এর মাধ্যমে আমরা অনেক ফায়দা হাসিল করতে পারি।

আল্লাহতায়ালা আরাফা দিবসের ফযিলত হাসিল করার তাওফিক দিন।

আরটিএমনিউজ২৪ডটকম/ একে

Logo-orginal