, শনিবার, ৪ মে ২০২৪

admin admin

নবী ইব্রাহীম (আঃ)এর ত্যাগের কথা, শিক্ষা নেবে বিশ্ব মানবতা

প্রকাশ: ২০১৫-০৯-২০ ১৯:৪১:৪৬ || আপডেট: ২০১৫-০৯-২০ ১৯:৪১:৪৬

Spread the love

নবী ইব্রাহীম (আঃ)এর ত্যাগের কথা, শিক্ষা নেবে বিশ্ব মানবতা
নবী ইব্রাহীম (আঃ)এর ত্যাগের কথা, শিক্ষা নেবে বিশ্ব মানবতা

শিহাবূজ্জামান কামাল আরটিএমনিউজ২৪ডটকম ইসলাম ডেস্কঃ: বছর পেরিয়ে আমাদের মাঝে আবার ফিরে এল পবিত্র হজ্বে ও ঈদুল আযহা। বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর ইবাদতের প্রধান প্রাণ কেন্দ্র পবিত্র মক্কা নগরীতে এখন লক্ষলক্ষ মানুষের সমাগম। ইতোমধ্যে পবিত্র কাবা শরীফে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মুসলমান নারীপুরুষ এসে জমায়েত হয়েছেন। তাঁরা নয়ন ভরে খানায়ে কাবা শরীফ দেখে তাঁদের তাপিত হৃদয়কে শান্ত করছেন। বার বার আল্লাহর পবিত্র ঘর তাওয়াফ করছেন। আল্লাহপাকের দরবারে চোখের পানি ছেড়ে তাঁদের সমস্ত মন বাসনার কথা বলছেন।

ইসলামের পাঁচটি মূল ভিত্তি কালেমা, নামাজ, রোজা এবং জাকাতের পর পবিত্র হজ্ব হচ্ছে ইসলামের অন্যতম ফরজ ইবাদত। মুসলমানদের ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক দুটি খুশীর দিন হচ্ছে পবিত্র ঈদুল ফিতর এবং আরবী জিলহজ্ব মাসের ঈদুল আযহার দিন। এমাসেই মুসলমানদের সেই মহা উৎসব পবিত্র হজ্ব ও কোরবানি অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। পবিত্র মহাণ্গ্রন্থ আল কোরআন এবং মহানবীর (সাঃ) এর পবিত্র হাদিসের আলোকে এই হজ্ব ও কোবাণীর পিছনে রয়েছে এক ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট।

মুসলিম মিল্লাতের পিতা নবী ইব্রাহিম (আঃ) এর আল্লাহর প্রতি যে দৃঢ় ঈমান ছিল এবং আল্লাহর জমিনে আল্লাহর একত্ববাদ ও তাওহীদের দাওয়াত পৌছাতে গিয়ে যে সীমাহীন অগ্নি পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছিলেন সেই ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের ঘটনা রয়েছে এখানে। বাতিলের মোকাবেলায় নবী ইব্রহিম (আঃ) একের পর এক কঠিন পরীক্ষার মোকাবিলা করতে হয়েছিল। সমস্ত কুফুর ও মুশরিক শক্তির বিরুদ্ধে তাওহীদ ও আল্লাহ্‌র একত্ববাদের দাওয়াত দিতে গিয়ে তৎকালীন কুফুরি শাসক অগ্নি কুণ্ডে তাঁকে পতিত করেছিল ।

ঈমানের অগ্নি পরীক্ষায় নবী ইব্রাহিম (আঃ) কে মহান আল্লাহপাক সেই অগ্নি কুণ্ড থেকে রক্ষা করেছিলেন। পরীক্ষা এখানেই শেষ নয়। জাহেলি সেই যুগে তাওহীদের দাওয়াত দিতে গিয়ে নবী ইব্রহিম (আঃ)কে সমাজ ছাড়তে হয়েছিল। নিজ পিতা তাঁকে পরিত্যাগ করলেন। তিনি নিজ দেশ ত্যাগে বাধ্য হয়ে হিজরত করলেন।

আল্লাহ্‌র হুকুম পালনে শিশু পুত্র হজরত ইসমাইল(আঃ) এবং স্ত্রী বিবি হাজেরা (রাঃ) কে মক্কার সেই অচিনপূরে জন মানব হীন স্থানে রেখ আসলেন। যেখানে না ছিল পানি, খানি বা কোন জনবসতি। যেখানে বিবি হাজেরা তাঁর কূলের শিশু পানির জন্য ছটফট করছিলেন। একটূ পানির খোঁজে বিবি হাজেরা যখন মক্কার সাফা পর্বত থকে মারওয়া পর্বত পর্যন্ত দৌড়াদৌড়ি করছিলেন। আল্লাহপাকের নিকট বিবি হাজেরার সেই কাজটাও পছন্দ হয়েছিল।

পরবর্তী কালে আল্লাহপাক গোটা মুসলিম উম্মাহর জন্য বিবি হাজেরার সেই সুন্নতকে পবিত্র হজ্বব্রত মুসলমান নরনারীর জন্য কিয়ামত পর্যন্ত চালু রাখার ব্যবস্থা করে দিলেন। অবশেষ মহান আল্লাহপাক তাঁদেরকে সকল প্রতিকূল অবস্থা থেকে রক্ষা করলেন। নবী ইব্রাহিম ( আঃ) এর ঈমানের পরীক্ষা শুধু এখানেই শেষ নয়।

এরপর তাঁকে আল্লাহর হুকুম পালনে স্বীয় প্রাণ প্রিয় পুত্র হযরত ইসমাইল (আঃ) কে আল্লাহর রাহে কোরবাণী করার যে নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত স্থাপন রেখেছিলে, সেটা ছিল সব চয়ে গ্রহণীয় এবং আল্লাহর কাছে অত্যন্ত পছন্দনীয়। তাই মহান রাব্বূল আলামীন নবী ইব্রাহিম (আঃ) সেই কোরবাণীর সুন্নতকে মুসলিম জাতীর উপর কেয়ামত পর্যন্ত বহাল রেখেছেন।

নবী ইব্রাহিম (আঃ) এবং নবী ইসমাইল (আঃ) এর হাতে নির্মিত হয়েছে আল্লাহর সেই পবিত্র ঘর। আর সেই নবী ইসমাইলের বংশধরের উত্তরসূরি হলেন আমাদের শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ আঃ)। বিশ্ব মুসলিম ঊম্মাহ এবং ইসলামের অনুসারীরা বিগত পাঁচ হাজার বছর ধরে মুসলিম জাতীর পিতা হজরত ইব্রাহীম (আঃ) সেই সুন্নতকেই নিয়ম তান্ত্রিক ভাবে এযাবৎ প্রতি বছর পালন করে আসছেন। এবং কিয়ামত পর্যন্ত মুসলিম জাতীর মধ্যে নবী ইব্রাহিম (আঃ) সেই সুন্নত পালনের ধারা অব্যাহত থাকবে।

তাই প্রতি বছর বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থকে আল্লাহ প্রেমিক বান্দারা পবিত্র হজ্ব পালনের উদ্দেশ্যে মক্কা নগরীতে ছুটে আসেন। তাই নবী ইব্রাহিম (আঃ) এর সেই পবিত্র সুন্নতকে অনুসরণ করে আরবী জিলহজ্ব মাসের ১০ তারিখে প্রত্যেক স্বচ্ছল, সামর্থ্যবান মুসলমানেরা নবী ইব্রহিম (আঃ) এর সেই সুন্নত হিসেবে পশু কোরবানি করে থাকেন।

পবিত্র মক্কা নগরী হচ্ছে পৃথিবির সব চেয়ে পবিত্র স্থান। যেখানে রয়েছে আল্লাহ্‌র ঘর পবিত্র কাবা শরীফ। যে পবিত্র মাটিতে মহানবী (সাঃ) সহ আল্লাহপাকের অগণিত নবী রাসুলগন জন্ম গ্রহণ করেছেন। যে দেশে ইসলামের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও আল্লাহপাকের অনেক নিদর্শনে ভরপুর।

হজ্বব্রত অবস্থায় আল্লাহ্‌র মেহমানরা সেই সমস্ত নিদর্শন গুলো স্বচক্ষে দেখে তাঁদের ঈমানি জজবা পয়দা হয়। ফলে তাঁরা আরও বেশি বেশি করে আল্লাহপাকের ইবাদত বন্দেগী করার প্রেরণার উৎস খোঁজে পান। তাছাড়া আল্লাহ্‌র ঘর খানায়ে কাবা শরীফ। মাকামে ইব্রহিম, পবিত্র হাতিম। ঐতিহাসিক সাফা ও মারওয়া পর্বত। নবীজির বাড়ি। ঐতিহাসিক হেরা, সাওর পাহাড় ও আবু কুরাইশ পাহাড়। জান্নাতুল মুয়াল্লা কবর স্থান।

ঐতিহাসিক সেই আরাফাতের ময়দান এবং মিনা, মুজদালিফাসহ পবিত্র মক্কা এবং মদিনা শরীফের সেই সমস্ত পবিত্র স্থান গুলোর পরতে পরতে রয়েছে মহান আল্লাহপাকের অসীম নিদর্শন এবং মুসলিম উম্মাহর নানা ইতিহাস ঐতিহ্য। যে গুলো কালের সাক্ষী হয়ে আজো রয়েগেছে।

আল্লাহর জমিনে তাঁর হুকুমাত কায়েমের জন্য যুগে যুগে প্রত্যেক কওমের নিকট আল্লাহপাক অগণিত নবী রাসুল প্রেরণ করেছেন। তাঁরা সমস্ত ভ্রান্ত, পথহারা মানব জাতিকেকে সত্যের পথে ফিরিয়ে আনতে জীবনভর ইসলামের দাওয়াত দিয়েগেছেন। সেজন্য তাঁদেরকে অনেক ত্যাগ কোরবানি স্বীকার করতে হয়েছিল। অবশেষ তাঁদের সেই কষ্টের ফসল ফুলে ফলে সুসভিত হয়ে, ধরার বুকে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল শান্তির ধর্ম ইসলাম।

আজকেও যদি এই অশান্ত, সংঘাতময় পৃথিবীতে একটু সুখ শান্তির সুবাতাস ফিরিয়ে আনতে হয়, তাহলে মুসলিম উম্মাহকে নবী ইব্রাহিম (আঃ) এর সেই ত্যাগ, কোরবানির মহিমায় উজ্জীবিত হতে হবে। ঘরে ঘরে দাওয়তি দ্বীনের কাজের প্রচার বাড়াতে হবে। একাজের প্রাধান্য দিয়ে, প্রয়োজনে জান, মাল কোরবানি দেয়ার মন মানুষিকতা সৃষ্টি করতে হবে। পবিত্র হজ্বের শিক্ষা অনুযায়ী, বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর মধ্যে পারস্পরিক ঐক্য, ভ্রাতৃত্ববোধ ও সম্প্রিতির বন্ধন আরও সুদৃঢ় করতে হবে।

নবী ইব্রাহিম (আঃ)এর মত আত্নত্যাগ এবং ঈমানের অগ্নি পরীক্ষায় আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভে আমাদের সবকিছু কোরবাণী করার জজবা সৃষ্টি করতে হবে। সেই সাথে ঈমানের দৃঢ় শপথ নিয়ে মুসলিম উম্মাহকে আবার জাগতে হবে। মহান রাব্বুল আলামীন হজব্রত লক্ষ লক্ষ মুসলমান এবং বিশ্ব মুসলিম উম্মাহকে নবী ইব্রাহিম (আঃ) এর সেই ঈমাণী ত্যাগের মহিমায় উজ্জীবিত হওয়ার তৌফীক দান করুণ। যারা এবছর আল্লাহপাকের মেহমান হয়ে হজ্ব গেলেন, আল্লাহ যেন তাদেরকে হজবের সমস্ত হুকুম আহকাম যথাযথ ভাবে পালনের তৌফিক দান করেন। সমস্ত হূজ্জাজে কেরামদের হজ্বকে, হজ্বে মাবরুর হিসেবে কবূল করেন।
লেখকঃ শিহাবূজ্জামান কামাল
কবি, সাংবাদিক ও গীতিকার।

Logo-orginal