, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

Avatar n_carcellar1957

যুক্তরাষ্ট্রের কারাগারে ৪৬ বাংলাদেশীর অনশন অব্যাহত

প্রকাশ: ২০১৫-১০-১৬ ১১:১১:১৭ || আপডেট: ২০১৫-১০-১৬ ১১:১১:১৭

Spread the love

62251_136

আরটিএমনিউজ২৪ডটকম, ইন্টা: ডেস্কঃ   যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে আটককৃত ৮২জন বাংলাদেশি নাগরিকের মধ্যে ৪৬ জন টেক্সাসের কারাগারে আমরণ অনশন শুরু করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রে সরকার আটককৃতদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর উদ্যোগের প্রতিবাদে তারা ওই আন্দোলন শুরু করেন বলে জানা গেছে।

সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, টেক্সাসের ‘এল পাসো’ কারাগারের ওই ৮২ জন হাজতি গত বুধবার থেকে আমরণ অনশন ধর্মঘটে যান। এর আগে তারা সকলেই আমেরিকায় রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেছিলেন। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র সরকার তাদের সে আবেদন নাকচ করে দিচ্ছে কারাগারে এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে বন্দিদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেয়। চট্টগ্রামের ফয়েজ আহম্মেদকে ২৫ সেপ্টেম্বও দেশে ফেরত পাঠানোর পর এ আতংকে নতুন মাত্রা যোগ হয়।
প্রসঙ্গত, আমেরিকায় ব্যঙ্গ করে অবৈধ অভিবাসীদের ডাকা হয় ‘ভিনগ্রহের প্রাণী’।
আমেরিকার মানবাধিকার সংস্থা ‘ডেজিজ রাইসিং আপ অ্যান্ড মুভিং’ (ড্রাম) এর কর্মী কাজী ফৌজিয়া অনশনরত সিলেটের বিয়ানীবাজারের মাহবুবুর রহমানকে উদ্ধৃত করে নয়াদিগন্ত প্রতিনিধিকে বলেন, আন্দোলনকারীরা বলছেন, ‘আমাদের হারানোর কিছু নেই; আর তাই আমরা এখন আন্দোলনে!’ ইমিগ্রেসন এন্ড কাস্টমস ইনফোর্সমেন্ট –এর সদস্যরা আমাদেরকে হুমকি দিচ্ছে অনশন ভঙ্গ না করলে পাঁচ থেকে দশ বছরের সাজা দেয়া হবে। আমরা বলছি সাজা পেতে রাজি আছি, কিন্তু দেশে পাঠাবেন না।

কাজী ফৌজিয়া আরো জানান, চার মাস থেকে শুরু করে বছর খানেক আগে আমেরিকায় আশ্রয় নেন ওই ৮৩ জন অবৈধ অভিবাসী। ‘বিএনপি’র কর্মী বলে দেশে তাদের জীবন বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে’ – তারা সকলেই এই যুক্তিতে আমেরিকায় রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেছেন। আর মাস দুয়েক হলো তাদের ওই আবেদন বাতিল হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
তিনি আরো জানান , প্রেসিডেন্ট ওবামার আদেশ অনুযায়ী ২০০ মাইল রাস্তা পার হওয়া ইমিগ্রান্টদেও সাথে মানবিক অধিকারের বিষয়ে প্রশাসনকে বেশী যতœশীল হতে হবে। সেই যায়গায় বাংলাদেশের লোকজন প্রায় ১২হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে ১৭ থেকে ১৮ টি রাষ্ট্র পায়ে হেঁটে, অমানবিক কষ্ট সহ্য করে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছে। তাই বিষয়টি মানবিকভাবেই নিস্পত্তি হওয়া কথা ।
নোয়াখালির কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার মোহাম্মদ শাহজাহান জানান নয়াদিগন্ত প্রতিনিধিকে জানান, আট মাস যাবত এলপাসো কারাগাওে আছি। আমি রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছি। কিন্তু আমার আবেদন গ্রহন হয়নি। বাংলাদেশে বিএনপি করতাম। আমাকে সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে আবেদন গ্রহন করেনি বিচারক। নিরুপায় হয়ে দুই দিন হলো আমরা অনশন কওে যাচ্ছি।
এবিষয়ে জানতে চাইলে ওয়াশিংটনস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রেস মিনিস্টার শামীম আহমেদ নয়াদিগন্ত প্রতিনিধিকে জানান, মানবিক কারণে আটককৃতদেও বিরুদ্ধে যাতে কোনো ব্যবস্থা নেয়া না হয় সেজন্য যুক্তরাষ্ট্র
সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ রক্ষা কওে যাচ্ছে বাংলাদেশ দূতাবাস।
এদিকে, আমেরিকার অভিবাসন সংস্থা ও ‘হোমল্যান্ড সিকিউরিটি’র কাছে এমন অভিযোগ রয়েছে, বিএনপি একটি সন্ত্রাসী দল। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বিএনপি জামাতকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আখ্যা দিতে স্টেইট ডিপার্টমেন্ট, হোমল্যান্ড সিকিউরিটিসহ গুরুত্বপূর্ন সরকারি সংস্থাগুলোতে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ কওে আসছিল। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা এ দাবীতে গেল দুই বছর যাবত বিক্ষাভ সামবেশ করে আসছে ।
এর ফলশ্রুতিতেই যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটির কাছে বিষয়টি নজরে আসে বলে জানায় নিউ ইয়র্কে মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন ‘ডেজিজ রাইসিং আপ অ্যান্ড মুভিং- ড্রাম। আন্তর্জাতিক অভিবাসন আইন অনুযায়ী, সন্ত্রাসীদের রাজনৈতিক আশ্রয় দেয়ার বিধান নেই। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের আরেকটি প্রতিষ্ঠিত মানবাধিকার সংগঠন ‘ন্যাশনাল ইমিগ্রেশন প্রজেক্ট অফ দ্যা ন্যাশনাল লইয়ার্স গিল্ড’ জানায় গেল তিনমাস ধরে বিএনপি সংশ্লিস্ট রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদনগুলো নাকচ করে আসছে আদালত।
বিএনপির মতো গণতান্ত্রিক দলকে সন্ত্রাসী আখ্যা দেয়ার অন্যায় এবং অযৌক্তিক দাবী কওে -এর বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে সংগঠনটি। তারা বলছে, বিএনপি বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক দল। সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে তাদের জড়িত থাকার অভিযোগ তুলে অভিবাসীদের অধিকার ক্ষুন্ন করা যাবে না।
তারা যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী, অভিবাসীদের আইনগত অধিকার সমুন্নত রাখার আহবান জানিয়েছে। পাশাপাশি আলাপাসোতে আটক হওয়া বাংলাদেশীদেও সহায়তা দিতে ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে সংগঠনটি।
হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের অভিযোগ, আবেদনকারী ৮২ জন বাংলাদেশির সকলেই বিএনপি’র সদস্য বলে নিজেদের আবেদনে উল্লেখ করেছে। তবে আবেদনকারীদের যুক্তি, বাংলাদেশে এখন বিএনপি’র বিরুদ্ধে সরকারের যথেচ্ছ নির্যাতন, দমন-পীড়ন চলছে।
প্রসঙ্গত: উল্লেখ্য যে, বিএনপি এবং জামাত-শিবিরের লোকজনকে প্রাথমিক দৃষ্টিতে ‘সন্ত্রাসী’ হিসেবে মনে করে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্ট। এ ধরনের মনোভাবকে সঠিক নয় তা নিয়ে আপিল করেছিলেন নিউইয়র্কের এটর্নি অশোক কর্মকার। আশোক কর্মকারের আবেদনের প্রেক্ষিতে বিএনপি যে সন্ত্রাসী সংগঠন নয় এমন একটি রায় কয়েক সপ্তাহ আগে নিউজার্সির একজন ইমিগ্রেশন জজ রায় প্রদান করেছেন।
উল্লেখ্য আরিজোনা, টেক্সাস, ক্যালিফোর্নিয়া প্রভৃতি স্থানের বিচারকরা এখনও বিএনপিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবেই মনে করছেন।
আরটিএমনিউজ২৪ডটকম/ এ এইচ বি

Logo-orginal