, বৃহস্পতিবার, ২ মে ২০২৪

Avatar Ziaul Hoque

যেখানেই অপরাধ সেখানেই রেড ব্রিগেড ‘যম’

প্রকাশ: ২০১৫-১২-০৩ ১৬:২৩:৫২ || আপডেট: ২০১৫-১২-০৩ ১৬:২৫:৫৭

Spread the love

2015_12_03_10_22_27_CebtaJfy7rFxaz0Xr4WjeLgdmEX142_original

আরটিএমনিউজ২৪ডটকম, ঢাকা: লাল টি-শার্ট। কালো ট্রাউজার। সবার পোশাক একই। লাল ফৌজি এরা। দলের সবাই মেয়ে। বয়সেও তরুণ। মেয়ে বলে যারা নাম সিটকাচ্ছেন, তারা সাবধান। এমন চটকনা দেবে, ভুলে যাবেন বাপের নাম! সংখ্যায়ও এরা কম নয়। সবমিলিয়ে সাড়ে আট হাজার। তবে, লাল ফৌজ শুনে বামপন্থি বা মাওবাদীদের মহিলা স্কোয়াড বলে ধরে নেবেন না। এরা ধর্ষকদের সাক্ষাৎ যম। যার কমান্ডার ঊষা বিশ্বকর্মা, যিনি নিজেও যৌননিপীড়নের শিকার।

ঊষা তখন সদ্য যৌবনে পা রেখেছেন। আঠারোর যুবতি পড়লেন ধর্ষকদের খপ্পড়ে। যৌননিগ্রহের শিকার হলেও, শেষ পর্যন্ত ওই লম্পটদের হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পেরেছিলেন তিনি।

সেই থেকে জ্বলছে ক্ষোভের আগুন। নিজেকে বলা- দমে যেও না মেয়ে। লড়াই করো। দুমড়ে-মুচড়ে ফেলো… বুকে স্লোগান : ‘বাধা আসবে যেখানে, লড়াই হবে সেখানে’।

চার বছর আগে, ২০১১ সালে লখনৌয়ে আত্মপ্রকাশ ঘটে রেড ব্রিগেড বা লাল ফৌজের। সেই ব্রিগেডের সদস্য তখন ১৫। আর তার নিউক্লিয়াস ঊষা। তাকে ঘিরেই আবর্তিত হতে লাগল রেড ব্রিগেড। আজ, ২০১৫ সালে এসে রেড ব্রিগেডের সদস্য সংখ্যা সাড়ে ৮ হাজার ছাড়িয়েছে।

যখন ধর্ষকদের পাল্লায় পড়েছিলেন ঊষা, সে সময়ের বর্ণনা শুনুন তার মুখ থেকেই, ‘আমাকে ধর্ষণ করবে বলে ওরা যখন ঘিরে ধরেছিল, তখন আমি এতটুকু ভয় পায়নি। বরং, প্রচণ্ড রেগে গিয়েছিলাম। এমন একটা কিছু করতে চেয়েছিলাম, যাতে ভুলেও ওরা ভবিষ্যতে এমন কাজ করার সাহস না দেখায়।’

এর পরই ঊষা যোগ করেন, ‘কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে, আমরা কী করেই বা আশা করব পরিস্থিতি পাল্টে যাবে? সেই উদ্যোগ থেকেই জন্ম রেড ব্রিগেডের।’ লখনৌয়ের সীমানা ছাড়িয়ে গোটা বিশ্ব আজ চেনে ঊষার এই মহিলা ব্রিগেডকে।

কালো ট্র্যাকশুটের ওপর লাল টি-র্শাট। আক্ষরিক অর্থেই ওরা লাল ফৌজ। এই নামটা ঊষাকে দিতে হয়নি। একসঙ্গে এই মহিলা ব্রিগেডকে দেখে লোকজনই এই নাম ঠিক করে দিয়েছেন।

কী কাজ এই বাহিনীর? কোথাও কোনো মেয়ে যৌননিগ্রহের শিকার হচ্ছে শুনলে, ওরা ঝাঁপিয়ে পড়ে। অভিযুক্তের বাড়িতে পর্যন্ত চড়াও হয়। পুলিশ অভিযোগ করার পাশপাশি সেই অভিযুক্তকে নিয়ে আসে জনসমক্ষে। যাতে লোকজন অভিযুক্তকে চিনে নিতে পারেন। অর্থাত্‍‌ অভিযুক্তের ভালোমানুষির মুখোশটাকে টেনে খুলে দেন।

কাজ আরও আছে। নিজেরা মার্শাল আর্ট জানেন। স্কুলে স্কুলে গিয়ে ছাত্রীদের আত্মরক্ষার প্রশিক্ষণও দেন। রাস্তায় ঘুরে ঘুরে করেন পথনাটক। যাতে লোকজন সচেতন হয়। মেয়েরা সংকোচের আগল ভেঙে বেরিয়ে আসতে পারে। প্রতিবাদ করার সাহস পায়।

যৌননিপীড়ন প্রতিরোধে ব্রিগেডের সদস্যরা আওয়াজ ছড়িয়ে দিচ্ছেন সবখানে : Raise your voice against Sexual Violence।

শুধু তাই-ই নয়, এসিড সন্ত্রাসের বিরুদ্ধেও রেড ব্রিগেড সোচ্চার। এসিডদগ্ধ নারীর চিকিৎসার জন্য তারা অর্থ সংগ্রহ করে ভিকটিমকে সহযোগিতা করেন। সরকারকে অধিক অর্থ সাহায্য দিতে বাধ্য করা হয় সংগঠনের পক্ষ থেকে। তা ছাড়া জনসচেতনামূলক কার্যক্রম তো আছেই।

সাফ কথা, যেখানেই নারীর বিরুদ্ধে অপরাধ সংগঠন, সেখানেই রেড ব্রিগেডের ‘যম’ উপস্থিত।

আরটিএমনিউজ২৪ডটকম/জেড এইচ

Logo-orginal