, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

admin admin

এই বর্বতার শেষ কোথায়, মানুষ দিন দিন পাষান্ড হচ্ছে কেন ?

প্রকাশ: ২০১৬-০৫-১৯ ১২:৪৫:১৮ || আপডেট: ২০১৬-০৫-১৯ ১২:৪৫:১৮

Spread the love

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার রাত ১২টার দিকে সীতাকু-ের সোনাইছড়ি ইউনিয়নের চৌধুরীঘাটা এলাকার আজবা কোয়ালিটি ড্রিংকিং ওয়াটার ফ্যাক্টরির মালিক রিফাত চৌধুরী ও আজমের নেতৃত্বে ১৩/১৪ জন কারখানার কর্মী হঠাৎ পার্শ্ববর্তী শীতলপুর বগুলা বাজার এলাকার বাসিন্দা মো. বশিরের ভাড়াটিয়া চাঁদপুরের ছিদ্দিক পাটোয়ারীর বাড়িতে উপস্থিত হয়ে দরজায় ধাক্কা-ধাক্কি শুরু করে এবং আব্দুল মালেককে খুঁজতে থাকে। এক পর্যায়ে মালেক ঘর থেকে বের হলে আজমের নেতৃত্বে পানির কারখানার কর্মীরা তাকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যেতে থাকে। আব্দুল মালেকের প্রতিবেশী প্রত্যক্ষদর্শী মো. সেলিম পূর্বকোণকে জানান, গভীর রাতে আজমের নেতৃত্বে কিছু লোকজন লাঠি-সোটা নিয়ে মালেককে ধরে নিয়ে যাচ্ছে জানতে পেরে আমি সেদিকে এগিয়ে গেলে মালেক আমার কাছে সাহায্য চায়। কিন্তু তাদের সবার হাতে লাঠি ও রড জাতীয় অস্ত্র থাকায় আমি বাধা দিতে পারিনি। দুষ্কৃতীরা তাকে চৌধুরী মসজিদের সামনে ব্যাপক মারধর করে। শেষে ঐ পানির কারখানার ভেতরে নিয়ে যায়। রাত ১টার দিকে ঐ কারখানার দিকে ছুটে যান মালেকের বাবা ও প্রতিবেশী সেলিম।
তার বাবা ছিদ্দিক পাটোয়ারী  বলেন, রাত ১টার দিকে আমি ও সেলিম আজবা পানির কারখানায় গেলে মো. আজম ও কারখানার মালিক রিফাত চৌধুরী এগিয়ে এসে বলেন, এখানে থেকে কোন লাভ হবে না। ছেলেকে নিয়ে যেতে হলে মোবাইল বাবদ ৪০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দিলে তাকে ফেরত দেওয়া হবে। নইলে তাকে পুলিশে দেওয়া হবে। বহু চেষ্টা করেও তাকে ছাড়াতে না পেরে শেষে আমরা ফিরে আসি। ঘরে ফিরে সারা রাত তার মা ও আমি ছটফট করতে থাকি। পরে জানতে পারি আজবা কোয়ালিটি ড্রিংকিং ওয়াটার কারখানার দারোয়ানের কক্ষে নিয়ে গিয়ে আব্দুল মালেকের হাত পিছমোড়া করে শিকলে বেঁধে লাঠি, রড ও বিভিন্ন অস্ত্র দিয়ে সারা রাত তাকে নির্মমভাবে পিটানো হয়। মাথার পেছনে ভারি আঘাতের কারণে সারা রাত রক্ত ঝরে তার শরীর থেকে। এভাবে বিনা চিকিৎসায় গুরুতর আহত অবস্থায় পড়ে থেকে গতকাল (বুধবার) সকাল ৭টার দিকে তার মৃত্যু হয়।

 
মালেকের মা মাজেদা বেগম বলেন, ছেলেকে ঘর থেকে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়ার পর পথে পথে ব্যাপক মারধর করেছে শুনে আমি ও তার বাবা সারারাত ঘুমোতে পারিনি। ভোরের আলো ফোটার সাথে সাথে আমরা দুইজন সেখানে ছুটে যাই। ঘটনাস্থলের কাছাকাছি পৌঁছালে কয়েকজন নারী-পূরুষের কানাঘুষা দেখতে পাই। এসময় তারা বলতে থাকে ছেলেটি মারা গেছে। একথা শুনে আমি শক্তি হারিয়ে সেখানে পড়ে যাই। পরে আবারও উঠে কারখানার ভেতরে গিয়ে ছেলেকে খুঁজতে থাকি। শেষে পানির কারখানার দারোয়ানের রুমের ভেতর থেকে গোঙানির শব্দ পেয়ে সেদিকে গেলে ছেলে আমার কাছে পানি চায়। এসময় আব্দুল মালেক আমাকে বলতে থাকে মা আজম মামা (মামা বলে ডাকত) আমাকে শেষ করে দিয়েছে। মা আমি আর বাঁচব না। এসময় সেখানে আজমের সাথে দেখে হলে ছেলেকে ছেড়ে দিতে আর্জি জানাই।

 

কিন্তু আজম বলেন, স্থানীয় মেম্বারকে নিয়ে আসলে তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে। পরে তারা ইউপি সদস্যের বাড়িতে গেলে পরিবারের সদস্যরা জানান, তিনি ঘুম থেকে উঠেন সকাল ১০টায়। একথা শুনে তারা ফিরে আসেন। সকাল ৭টার দিকে আজম মারা যায়। পরে পুলিশে খবর দিলে সকাল সাড়ে ১০টা সীতাকু- থানার এস আই ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে সুরতহাল শেষে পোস্টমর্টেমের জন্য প্রেরণ করেন। এসময় এলাকাবাসী মালেকের উপর হামলায় জড়িত ঐ কারখানার ৫ কর্মীকে আটক করে পিটুনি দিতে চেষ্টা করলে পুলিশ তাদেরকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যান। আটককৃত ৫জন হলো, সীতাকু-ের বাড়বকু- দক্ষিণ মাহমুদাবাদ গ্রামের আলতাফ হোসেনের পুত্র কামরুল হোসেন শ্যাম (১৮), কক্সবাজার পেকুয়া শিলখালী গ্রামের মৃত আনোয়ার হোসেনের পুত্র মো. জামান (২৪), চকরিয়ার উত্তর সাদা গ্রামের নুর মোহাম্মদের পুত্র মো. ফোরকান (২০), হাটহাজারী চিকনদ-ী গ্রামের ছাদেক আহমদের পুত্র নুরুল আলম (২৮) ও লোহাগাড়া আমিরাবাদ মাস্টারপাড়ার মৃত হাজি আমিন উল্লাহর পুত্র মো. খায়ের আহমদ (৫০)।
সীতাকু- থানার এস আই মো. কামাল উদ্দিন জানান, মোবাইল চুরির অপবাদ দিয়ে আব্দুল মালেক নামক ঐ যুবককে পিটিয়ে হত্যার খবর পেয়ে আমি সেখানে গিয়ে লাশ উদ্ধার করেছি। এসময় তার শরীরে ব্যাপক পিটুনির চিহ্ন ছিলো। হাত পেছনে শেকলে বাঁধা ছিলো। এ ঘটনায় নিহতের বড় ভাই আব্দুল মালেক প্রকাশ আব্দুল বাদি হয়ে সীতাকু- থানায় মামলা দায়ের করেছেন। পানির কারখানার মালিক রিফাত ও আজমসহ সুনির্দিষ্ট ১৪ ও অজ্ঞাত ৭/৮ জনকে আসামি করা হয়েছে। ৫ জনকে আটক করেছে পুলিশ ।

Logo-orginal