, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

admin admin

বাবা-মায়ের আকুতিতে সাড়া দেয়নি ওরা”

প্রকাশ: ২০১৬-০৭-১২ ১১:৩৩:২৬ || আপডেট: ২০১৬-০৭-১২ ১১:৩৩:২৬

Spread the love
বাবা-মায়ের আকুতিতে সাড়া দেয়নি ওরা"
বাবা-মায়ের আকুতিতে সাড়া দেয়নি ওরা”

ঢাকা

আরটিএমনিউজ২৪ডটকম, অনলাইন ডেস্কঃ আর্টিজান হামলায় তোলপাড় দেশজুড়ে। বিশেষ করে উচ্চবিত্ত পরিবার থেকে আসা তিন তরুণ ভাবিয়ে তুলেছে অভিভাবকদেরকে। গত কয়েক মাস বা বছর ধরে নিরুদ্দেশ সন্তানরা বিপথে চলে গেছে কি না, ভেবে কূল-কিনারা করতে পারছেন না বাবা-মা। এমন ১০ তরুণকে ফিরে আসার আকুতি জানিয়ে গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হচ্ছে অভিভাবকদের পক্ষ থেকে।

দেশের স্বার্থে, মানবতার স্বার্থে এবং ইসলামের স্বার্থে ফিরে আসতে আহ্বান জানিয়ে অভিভাবকদের এই বিজ্ঞপ্তি প্রতিদিনই দেখা যাচ্ছে টেলিভিশনে। কিন্তু তরুণরা কি ফিরবে?

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, এখন পর্যন্ত বাবা-মায়ের আকুতিতে সাড়া দেয়নি কেউ। ফেরার আশ^াস তো দূরের কথা, তারা কোথায়, কীভাবে আছে, কোনও তথ্যও জানতে পারেননি অভিভাবকরা।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধারণা, আর্টিজানে হামলায় জড়িত তরুণরাও কিছু না বলে ঘর থেকে উধাও হয়েছিল। কোনও খোঁজ না পেয়ে কারও কারও বাবা-মা পুলিশকে জানিয়েওছিলেন। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সেভাবে গুরুত্ব দেয়নি-এমন অভিযোগও এসেছে। আর আর্টিজানে হামলার পর হামলাকারীদের ছবি প্রকাশের পর বলতে গেলে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েন তাদের বাবা-মা।

এই হামলার রেষ কাটতে না কাটতেই ঈদের দিন হামলা হয় কিশোরগঞ্জে। দেশের সবচেয়ে বড় ঈদ জামাত শোলাকিয়া ময়দানে হামলার চেষ্টার সময় পুলিশের সঙ্গে গোলাগুলিতেও প্রাণ হারায় উচ্চবিত্ত পরিবারের এক সন্তান। বিশ^বিদ্যালয়ে পড়া বাদ দিয়ে উধাও হয়ে তিনিও যোগ দিয়েছিলেন জঙ্গি তৎপরতায়।

আর্টিজানে হামলাকারীদের নাম-পরিচয় প্রকাশ হওয়ার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এদের মতো ‘নিখোঁজ’দের বিষয়ে তথ্য দিতে অনুরোধ করে। আর এরপরই ১০ তরুণকে ফিরে আসার আহ্বান জানিয়ে গণমাধ্যমে প্রচার জানানো শুরু হয়।

যেসব তরুণ সাম্প্রতিক সময়ে নিখোঁজ হয়েছেন, তাদের বেশিরভাগ জঙ্গি তৎপরতায় জড়িয়েছেন বলে সন্দেহ করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। দেশের পাশাপাশি বিদেশে গিয়েও তারা প্রশিক্ষণ নিচ্ছে, আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠীর হয়ে লড়াই করছে। বিদেশ থেকে এমন তিন তরুণ সম্প্রতি একটি ভিডিওবার্তায় জিহাদের আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, আর্টিজানের মত হামলা আরও হবে। সরকার তাদেরকে ঠেকাতে পারবে না-এমন হুমকিও দেন ওই তিন তরুণ। এই ভিডিওটি মধ্যপ্রাচ্যের আইএস অধ্যুষিত এলাকা থেকে আপলোড করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

গণমাধ্যমে ফিরে আসার আহ্বান সম্বলিত বার্তা প্রচারের পাশাপাশি ‘নিখোঁজ’ তরুণদের বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। পুলিশ সদর দপ্তরের গোপনীয় শাখা একটি তালিকা তৈরি করে তদন্তের কাজ শুরু করছে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ও র‌্যাবের একাধিক গোয়েন্দা দল এই কাজে নিয়োজিত আছে।

পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক গোপনীয় মো. মনিরুজ্জামান ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘তারা (নিখোঁজ তরুণরা) ফিরেছে- এমন কোন খবর আমাদের কাছে নেই। পরিবারের মত আমরাও অনুরোধ করবো তারা যেন ফিরে আসে’।

যাদের প্রতি ফিরে আসার আহ্বান

যাদেরকে ফিরে আসার আহ্বান জানিয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হচ্ছে তারা হলেন ঢাকার তেজগাঁওয়ের মোহাম্মদ কামরুজ্জামান, বাড্ডার জুনায়েদ খান (পাসপোর্ট নম্বর-এএফ ৭৪৯৩৩৭৮), চাঁপাইনবাবগঞ্জের নজিবুল্লাহ আনসারী, ঢাকার আশরাফ মোহাম্মদ ইসলাম (পাসপোর্ট নম্বর-৫২৫৮৪১৬২৫), সিলেটের তামিম আহমেদ চৌধুরী (পাসপোর্ট নম্বর-এল ০৬৩৩৪৭৮), ঢাকার ইব্রাহীম হাসান খান (পাসপোর্ট নম্বর-এএফ ৭৪৯৩৩৭৮), লক্ষ্মীপুরের এ টি এম তাজউদ্দিন (পাসপোর্ট নম্বর-এফ ০৫৮৫৫৬৮), ঢাকার ধানমন্ডির জুবায়েদুর রহিম (পাসপোর্ট নম্বর-ই ১০৪৭৭১৯), সিলেটের সাইফুল্লাহ ওজাকি (পাসপোর্ট নম্বর-টি কে ৮০৯৯৮৬০) ও জুন্নুন শিকদার (পাসপোর্ট নম্বর-বি ই ০৯৪৯১৭২)।

এই ১০ তরুণ বিদেশে গেছেন কি না সে ব্যাপারে খোঁজ নিচ্ছে ইমিগ্রেশন পুলিশ। এরই মধ্যে তাদের ছবি দেশের সব ইমিগ্রেশন চেক পয়েন্টে পাঠানো হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, নিখোঁজ ১০ জনের মধ্যে এ টি এম তাজউদ্দিন অস্ট্রেলিয়ায় পড়াশোনা করতে গিয়ে সেখান থেকে নিখোঁজ হন। সাইফুল্লাহ ওজাকি নিখোঁজ হন জাপান থেকে। নাশকতার ঘটনায় সন্দেহভাজন হিসেবে আটক হওয়ার পর জুন্নুন শিকদার জামিনে বের হয়ে মালয়েশিয়া চলে যান। সেখান থেকে নিখোঁজ তিনি। তামিম চৌধুরী কানাডা থেকে বাংলাদেশে এসে নিখোঁজ হন। ঢাকার ইব্রাহিম হাসান খান এক বছর আগে গুলশানের আর্টিজান রেস্টুরেন্টে বন্ধুদের নিয়ে খেতে যাওয়ার কথা বলে আর ফেরেননি।

জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের সদস্য হিসেবে ২০১৩ সালের আগস্টে নয় সঙ্গীসহ ঢাকায় আটক হন জুন্নুন শিকদার। এ সময় তাদের কাছ থেকে তিনটি ল্যাপটপ, দুটি কম্পিউটার, হাতে লেখা ও আঁকা বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র, গ্রেনেড ও রকেট-সংক্রান্ত একটি প্রশিক্ষণ ম্যানুয়াল, ধর্মীয় ব্যাখ্যার বিভিন্ন বই, নয়টি মডেম ও ২৫টি সিডি উদ্ধার করা হয়। এরপর দীর্ঘদিন কারাভোগ করে জামিনে বের হয়ে উধাও হন জুন্নুন।

জুন্নুন শিকদার নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। পরে পড়াশোনা বাদ দিয়ে দাওয়াত কার্যক্রম প্রচারের উদ্দেশে দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগে ভর্তি হন। ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার হত্যাকা-ের অন্যতম পরিকল্পনাকারী রেদওয়ানুল আজাদ রানার সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। যেদিন রাজীবকে হত্যা করা হয় সেদিনও তার সঙ্গে যোগাযোগ হয়।

গত বছর ২১ ফেব্রুয়ারি তুরস্কের ইস্তাম্বুলে গিয়ে নিরুদ্দেশ হন আশিকুর রহমান। ওই বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি দেশে ফেরার কথা থাকলেও তিনি ফেরেননি। ওই তরুণ সিরিয়ার আইএসের হয়ে লড়াই করতে গিয়েছেন বলে সন্দেহ করছে আঙ্কারায় বাংলাদেশ দূতাবাস।

জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের দক্ষিণ বিভাগের উপকমিশনার মাশরুকুর রহমান খালেদ ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘১০ তরুণকে ফিরে আসার আহ্বান জানিয়ে তাদের পরিবার টেলিভিশনে বিজ্ঞাপন দিয়েছেন। সেখান থেকে তথ্য এনে আমরাও তদন্ত করছি। তবে তাদের কারো ফেরার খবর এখনো আমাদের কাছে নেই’।

৭৭ তরুণের তথ্য পেয়েছে পুলিশ

এখন পর্যন্ত নিখোঁজ ৭৭ তরুণের কথা জানতে পেরেছে পুলিশ। এরা সবাই গত কয়েক বছর ধরে নিখোঁজ রয়েছে। এদের বেশিরভাগও ধনাঢ্য পরিবারের সন্তান। যে ১০ তরুণের নামে গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন প্রচার করা হচ্ছে এরাও আছেন এই তালিকায়।

উৎসঃ ঢাকাটাইমস

Logo-orginal