, শনিবার, ৪ মে ২০২৪

admin admin

আফসানার রহস্য ঘেরা মৃত্যু, রবিনের সঙ্গে ছিল ২ বন্ধু

প্রকাশ: ২০১৬-০৮-২১ ২২:৪৫:৪৬ || আপডেট: ২০১৬-০৮-২১ ২২:৪৫:৪৬

Spread the love

রবিনের সঙ্গে ছিল ২ বন্ধু ঘটনা পাশের বাড়িতেই

 সংবাদ কালের কণ্ঠের,

আরটিএমনিউজ২৪ডটকম, ঢাকাঃ রাজধানীর মিরপুরের সাইক ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড টেকনোলজির শিক্ষার্থী এবং ছাত্র ইউনিয়নকর্মী আফসানা ফেরদৌসীর মৃত্যুর ঘটনাটি ঘটেছে মানিকদি এলাকাতেই। আফসানা ও তাঁর কথিত স্বামী হাবিবুর রহমান রবিন যে বাড়িতে ভাড়া থাকতেন, সেই বাড়ির কাছাকাছি একটি বাড়ি থেকেই ‘বাঁচাও বাঁচাও’ বলে চিত্কার শুনেছে স্থানীয় লোকজন। ওই এলাকায় তিন যুবককে ঘোরাফেরাও করতে দেখা গেছে। পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে গতকাল শনিবার কালের কণ্ঠের কাছে এমনই দাবি করে কয়েকজন। তবে পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, এখনো তাঁরা নিশ্চিত নন আফসানার মৃত্যুর ঘটনাটি কোথায় ঘটেছে। রবিনসহ সন্দেহভাজনদের আটকের চেষ্টা করছে পুলিশ। তবে আফসানার ব্যাপারে স্বজনরা তেমন কোনো তথ্য দিতে না পারায় বিপাকে পড়ছেন তদন্তকারীরা।

আফসানার স্বজনরাও দাবি করেছে, মানিকদি এলাকায়ই আফসানার মৃত্যু হয়েছে। ঘটনার সময় রবিন, তাঁর বন্ধু সৌরভ ও বাবু উপস্থিত ছিলেন। এই তিনজনের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ এনে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছে স্বজনরা। আজ রবিবার বা আগামীকাল সোমবার এ মামলা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মানিকদি এলাকার দুজন বাসিন্দা গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ছাপরা মসজিদ এলাকার আনসার আলীর সাততলা বাড়িটির নিচতলায় স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে থাকতেন আফসানা ও রবিন। এর পাশাপাশি সবুজ ছাতা গলির একটি বাসায়ও যাতায়াত ছিল তাঁদের। সেখানে গুল মোহাম্মদ বাচ্চু নামের স্থানীয় এক ব্যক্তির বাড়ি আছে। ওই বাড়ি বা পাশের কোনো বাড়ি থেকে গত ১২ আগস্ট ‘বাঁচাও বাঁচাও’ বলে চিত্কার শোনা গেছে বলে দাবি করে স্থানীয় লোকজন। সেখানে কোনো তরুণীকে নিতে বা বের করতে দেখেনি কেউ। তবে তিন যুবক ওই এলাকায় ঘুরছিলেন, যাঁরা নিজেদের ছাত্রলীগের নেতাকর্মী বলে পরিচয় দেন। আফসানা যে বাড়িতে ভাড়া ছিলেন, সেই বাড়িটির দ্বিতীয় তলার ভাড়াটিয়া দেলোয়ারা বেগম গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমি নিজে এমন কিছু শুনিনি বা দেখিনি। তবে লোকজনকে বলাবলি করতে শুনেছি। ঘটনাটি নাকি ওইখানে হয়েছে।’ তবে গতকাল এলাকায় গিয়ে লোকজনের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করা হয়। তবে এ ব্যাপারে কেউ মুখ খুলতে চায় না। দু-একটি কথা কেউ বললেও তা বলেছে পরিচয় না দিয়ে বা গোপন রাখার শর্তে। চিত্কারের শব্দ শুনেছে; কিন্তু নিশ্চিত কোন বাড়ি থেকে শব্দটি এসেছে এ প্রশ্নের কোনো নিশ্চিত উত্তর দীর্ঘ সময় সেখানে অবস্থান করেও মেলেনি।

আফসানার মামা হাসানুজ্জামান মিন্টু গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আফসানা ওই এলাকায়ই মারা গেছে। ওকে সেখানেই মেরে ফেলা হয়েছে। কোন বাসা সেটা পুলিশই বের করতে পারবে। তবে বাচ্চু সাহেবের বাড়ি বা আশপাশের কোনো বাড়ি হবে। ঘটনার সময় যাদের উপস্থিতি সেখানে ছিল বলে আমরা জানতে পেরেছি তাদের অন্তত একজন স্থানীয় বাসিন্দা। রবিন ছাড়াও তার দুই বন্ধুর একজন সৌরভ ও অন্যজন বাবু।’ তিনি আরো বলেন, ‘ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনের জন্য আমরা এখন আর অপেক্ষা করব না। কারণ পুলিশের অপমৃত্যু মামলার তদন্ত ঢিলেঢালা হতে পারে। ফলে আমাদের যে অভিযোগ আছে, সেটা আমরা আইনগতভাবে করব। এ জন্য আমরা উকিলের পরামর্শ নিচ্ছি।’ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আইনজীবীর পরামর্শ অনুযায়ী আজকালের মধ্যে মামলা করব।’

এদিকে অপমৃত্যু মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কাফরুল থানার এসআই ফজলুল হক গতকাল বলেন, ‘আমরা গুরুত্ব দিয়েই তদন্ত করছি। তবে সমস্যা হচ্ছে আফসানার ব্যাপারে কোনো তথ্য দিয়ে সহায়তা করতে পারছে না স্বজনরা। তারা জানে না মেয়েটি কোথায় যেত, কার সঙ্গে মিশত। ফলে এসব বিষয়ে খোঁজ নিতে আমাদের একটু বেগ পেতে হচ্ছে। তবে আশা করছি, আসল ঘটনা বের হয়ে আসবে।’ তিনি দাবি করেন, তদন্তকারীরা অভিযুক্ত রবিনসহ কয়েকজনকে খুঁজছে।

প্রসঙ্গত, গত ১২ আগস্ট বিকেলে দুই যুবক সিএনজিতে করে আফসানাকে মিরপুরের আল-হেলাল হাসপাতালে নিয়ে যায়। তবে জরুরি বিভাগে রোগী ভর্তির জন্য স্ট্রেচার নিয়ে আসতে বলে তারা সিএনজির ভাড়া মেটানোর কথা বলে সটকে পড়ে। কর্তব্যরত চিকিৎসক বলছেন, হাসপাতালে আনার আগেই রোগীর মৃত্যু হয়েছে। পরে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠালে স্বজনরা সেখানে গিয়ে লাশ পায়। এর আগে স্বজনদের ভুল তথ্য দিয়ে ঘোরায় রবিন ও তাঁর সহযোগীরা। এরই মধ্যে পুলিশ অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করে। আফসানার কথিত স্বামী ও তেজগাঁও কলেজ ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রবিনের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ তোলে স্বজনরা। এ ঘটনার বিচার দাবিতে সহপাঠী ও সহকর্মীদের কর্মসূচিতে সারা দেশে তোলপাড় শুরু হয়েছে।

 

Logo-orginal