, রোববার, ৫ মে ২০২৪

admin admin

আমাদের সাইফুল জংগী না, লাশটাও পেলাম না”

প্রকাশ: ২০১৬-০৯-২৩ ০৮:২০:৫৫ || আপডেট: ২০১৬-০৯-২৩ ০৮:২০:৫৫

Spread the love
আমাদের সাইফুল জংগী না, লাশটাও পেলাম না"
আমাদের সাইফুল জংগী না, লাশটাও পেলাম না”

 

 আরটিএমনিউজ২৪ডটকম,অনলাইন ডেস্ক:  আমাদের সাইফুল তো জঙ্গি না। জঙ্গি হইলে মনটারে বুঝ দিতে পারতাম যে সে অন্যায় করছে,  বিচার সে পাইছে। আমাদের ইচ্ছা ছিল লাশটা নিজ গ্রামের বাড়ির পাশে দাফন করবো। তার বউ-বাচ্চারা অন্তত কবরটা দেখে মনটারে সান্ত্বনা দিবে। কিন্তু সেই সুযোগ আমাগো দিলো না। জীবিত পাই নাই, লাশটাও ফেরত পাইলাম না।’

কথাগুলো বলছিলেন গুলশান হামলার ঘটনায় নিহত সাইফুল ইসলাম চৌকিদারের ভায়রা কবির। গুলশান হামলার ঘটনায় নিহত পাঁচ জঙ্গির সঙ্গে হোলি আর্টিজান বেকারিতে নিহত সাইফুল ইসলাম চৌকিদারের লাশও গতকাল আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামের কাছে হস্তান্তরিত করা হয়। দুপুরে পাঁচ জঙ্গির সঙ্গে সাইফুল ইসলামের লাশও জুরাইন কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।

গত ১ জুলাই রাজধানীর গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গিদের জিম্মির ঘটনায় দেশি বিদেশি ২০ নাগরিক নিহত হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা অভিযান চালালে জঙ্গিদের হামলায় পুলিশের দুই কর্মকর্তা নিহত হয়। পরবর্তীতে সেনাবাহিনীর কমান্ডো অভিযানে ৬ হামলাকারী নিহত হয়। যাদের একজন সাইফুল ইসলাম চৌকিদারকে ওই রেঁস্তোরার শেফ বলে দাবি করেছে তার স্বজন ও রেস্তোরাঁ কর্তৃপক্ষ।

মামলার তদন্ত সূত্র বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, গুলশান হামলার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় সাইফুলকে প্রাথমিকভাবে সন্দেহভাজন জঙ্গি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। যদিও তদন্তে তার বিরুদ্ধে জঙ্গি সম্পৃক্ততার তেমন কোনও প্রমাণ পায়নি সংশ্লিষ্টরা।

সাইফুল ইসলামের স্বজনরা বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ঘটনার পর থেকেই তারা সাইফুলের লাশ নেওয়ার জন্য নানাভাবে যোগাযোগ করে আসছিলেন। মামলার তদন্ত সংস্থা কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের কাছে দুই দফা লিখিত আবেদনও করেছেন। এমনকি সর্বশেষ গত বুধবার (২১ সেপ্টেম্বর) মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হুমায়ূন কবীরের সঙ্গেও দেখা করেন। প্রতিবারই সাইফুলের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তরিত করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পরিবারকে না জানিয়েই আঞ্জুমান মফিদুলের মাধ্যমে লাশ দাফন করা হয়।

সাইফুল ইসলাম চৌকিদারের ভায়রা কবির বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গত বুধবারও আমরা মামলার তদন্ত কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি শনিবার লাশ হস্তান্তর করা হবে বলে জানিয়েছিলেন। আমরা সেই অপেক্ষায় ছিলাম। সন্ধ্যায় হঠাৎ টিভিতে খবর দেখি লাশ দাফন করা হয়েছে। আমাদের লাশ দিবে না সেটা আগেই জানিয়ে দিলো। কিন্তু আমাদের বারবার আশ্বাস দেওয়া হলো কেন?’

নিহত সাইফুলের ছবি হাতে স্বজনদের একজননিহত সাইফুলের ছবি হাতে স্বজনদের একজন

 

কবির বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, সাইফুলের লাশ দাফনের কথা শুনে তার গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুরের নড়িয়ার কলুকাঠি গ্রামের আবারও শোকের মাতম শুরু হয়েছে। সাইফুলের মা শবমেহেরসহ অন্যান্য স্বজনরা ছেলের লাশ শেষ দেখা দেখতে পারলেন না বলে আহাজারি করছেন। দুই মেয়ে সন্তান সামিয়া ও ইমনিকে নিয়ে অঝোর ধারায় কেঁদে চলছেন স্ত্রী সোনিয়া। সন্তানসম্ভবা সোনিয়ার আগামী মাসে সন্তান প্রসব করার কথা রয়েছে।

সাইফুলের স্ত্রী সোনিয়ার বোন শাবানা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দুইটা বাচ্চা তার বাবার কবরটাও দেখতে পারবো না। কবরটা দেখতে পারলেও মনেরে তারা সান্ত্বনা দিতে পারতো। সাইফুল তো কোনও অন্যায় করে নাই। তাইলে তার লাশটা দেওয়া হইলো না কেন?’ প্রশ্ন করেন শাবানা। আরও বলেন, ‘আমরা প্রতি সপ্তাহেই পুলিশের কাছে গেছি। দুই দুইবার লিখিত আবেদনও করছি। কিন্তু প্রতিবারই আশ্বাস দিছে। বলছে, একটা টেস্ট করতে দেওয়া হইছে। ওইটা হইলেই লাশ ফেরত পাবেন। কিন্তু শেষমেষ লাশটা আঞ্জুমান মফিদুলরে দিয়া দিলো। আমরা কি নিজেরা দাফন করতে পারতাম না?’

এদিকে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়া বৃহস্পতিবার দুপুরে সাংবাদিকদের বলেন, নিহতদের কারও পরিবারের কোনও সদস্যের পক্ষ থেকেই লাশ গ্রহণের আবেদন আমরা পাইনি। ফলে দাফনের জন্যে আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের কাছে হস্তান্তরিত করা হয়েছে।

সাইফুলের ভায়রা কবির বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এইটা সরকারের সিদ্ধান্ত। আমরা গরিব মানুষ, আমরা তো আর সরকারের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করতে পারুম না। যা হইছে তাই মাইনা নিতে হইবো। আমাদের কিছু করারও নাই। কিন্তু এই দুঃখটা সারা জীবন থাকবো।’

এর আগে গুলশান হামলার পর নিহত জঙ্গিদের পরিবারের অনেকেই তাদের সন্তানদের লাশ নিতে অনীহা প্রকাশ করেন। বুধবার নিহত পাঁচ জঙ্গির স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও কেউ ফোন রিসিভ করেননি।

উৎসঃ বাংলাট্রিবিউন

Logo-orginal