, রোববার, ৫ মে ২০২৪

admin admin

“সেনাবাহিনীর সাবেক দুই কর্মকর্তার জঙ্গি কার্যক্রমে সংশ্লিস্টতা অনেককে ভাবিয়ে তুলেছে”

প্রকাশ: ২০১৬-০৯-০৬ ০০:২৯:১৯ || আপডেট: ২০১৬-০৯-০৬ ০০:২৯:১৯

Spread the love

গুলশানে জঙ্গী-বিরোধী অভিযানের পর বেরিয়ে আসছেন সেনাবাহিনীর একটি দল। গুলশানে জঙ্গী-বিরোধী অভিযানের পর বেরিয়ে আসছেন সেনাবাহিনীর একটি দল।

আরটিএমনিউজ২৪ডটকম, ঢাকাঃ ঢাকার রূপনগরে শুক্রবার রাতে পুলিশের জঙ্গি বিরোধী অভিযানে নিহত ব্যক্তি সেনাবাহিনীর সাবেক একজন মেজর বলে নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশের আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর।

বিশেষ প্রতিবেদনটি বিবিসি বাংলার ।

সংস্থার একজন কর্মকর্তা বিবিসিকে জানিয়েছেন, নিহত মেজর জাহিদুল ইসলাম গত বছর সেনাবাহিনী থেকে স্বেচ্ছায় অবসরে যান। এর আগে সেনাবাহিনীর আরেকজন চাকুরীচ্যুত মেজর জিয়াউল হককে জঙ্গি কার্যক্রমের পরিকল্পনাকারী হিসেবে বর্ণনা করেছে পুলিশ।

বাংলাদেশে বিভিন্ন সময় জঙ্গি হামলাগুলোর ধরন পর্যালোচনা করে কোন কোন বিশ্লেষক অনেকদিন ধরেই বলে আসছিলেন যে এগুলোর সাথে সামরিক কায়দায় প্রশিক্ষিত ব্যক্তির সম্পৃক্ততা থাকতে পারে। সর্বশেষ ঢাকার রূপনগরে পুলিশের ‘অভিযানে নিহত’ ব্যক্তি সেনাবাহিনীর একজন অবসরপ্রাপ্ত মেজর বলে জানা যাচ্ছে।

নিহত সেই ব্যক্তিকে প্রথমে পুলিশের দিক থেকে ‘মেজর মুরাদ’ নামে সনাক্ত করা হলেো পরবর্তীকালে জানা যায়, তার নাম জাহিদুল ইসলাম এবং গ্রামের বাড়ি কুমিল্লায়। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, নিহত ব্যক্তি বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমির ৪৩ লং কোর্সে প্রশিক্ষণ শেষে ২০০০ সালে কমিশন লাভ করেন।

বাংলাদেশের আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের পরিচালক লে. কর্ণেল মোহাম্মদ রাশিদুল হাসান বিবিসিকে জানিয়েছেন, নিহত ব্যক্তি জাহিদুল ইসলামের পারিবারিক ঠিকানা এবং যেসব তথ্য সংবাদ মাধ্যমে এসছে সেগুলো সঠিক। গত বছর মেজর জাহিদুল ইসলাম পারিবারিক কারণ দেখিয়ে সেনাবাহিনী থেকে স্বেচ্ছায় অবসরে যান।

সেনাবাহিনীর সাবেক দুই কর্মকর্তার জঙ্গি কার্যক্রমে সংশ্লিস্টতা অনেককে ভাবিয়ে তুলেছে।সেনাবাহিনীর সাবেক দুই কর্মকর্তার জঙ্গি কার্যক্রমে সংশ্লিস্টতা অনেককে ভাবিয়ে তুলেছে।

এর আগে সেনাবাহিনীর আরেকজন চাকুরীচ্যুত মেজর জিয়াউল হককে জঙ্গি কার্যক্রমের পরিকল্পনাকারী হিসেবে পুলিশ বর্ণনা করেছে।

সেনাবাহিনীর সাবেক এ দু’জন কর্মকর্তার জঙ্গি কার্যক্রমে সংশ্লিস্টতা অনেককে ভাবিয়ে তুলেছে। কোন কোন বিশ্লেষক মনে করছেন, সেনাবাহিনীর মধ্যে লুকিয়ে থাকা কোন ‘বঞ্চনা’ হয়তো তাদের সেদিকে ঠেলে দিয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে হবে।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, “পেছনের কী ইতিহাস, সেটা তো আমরা ঠিক জানিনা। কেন সে রিজাইন করলো, সে রেজিগনেশনের প্রেক্ষাপটটা কী? হতে পারে সেনাবাহিনীর ভেতরেও কোন ডিপরিভেইশনের ব্যাপার হতে পারে।”

এই ঘটনাকে একটি টেস্ট কেস হিসেবে ভালো করে খতিয়ে দেখা উচিত হবে বলে মি. হোসেন মনে করেন।

বাহিনীর ভেতরে কোন বঞ্চনা নাকি জঙ্গিবাদের আদর্শ তাকে সেদিকে নিয়ে গেছে – এ বিষয়টি খতিয়ে দেখা দরকার বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

সম্প্রতি পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী নিষিদ্ধ সংগঠন জামা’তুল মুজাহিদীন-এর সাথে উচ্চ শিক্ষিত বিভিন্ন পেশার মানুষ জড়িত হয়েছে। এক্ষেত্রে সামরিক বাহিনীর দু’একজন জড়িত থাকার বিষয়টিকে অসম্ভব কিছু মনে করছেন না বিশ্লেষকরা।

জঙ্গিবাদ বিষেয়ে গবেষক নূর খান লিটন দীর্ঘদিন ধরেই বলছেন, বাংলাদেশে ব্লগার হত্যাকাণ্ডসহ যেসব জঙ্গি হামলা হয়েছে সেখানে সামরিক কায়দায় প্রশিক্ষিত ব্যক্তির সম্পৃক্ততা অনুমান করা যায়।

চাকুরিচ্যুত মেজর জিয়াউল হক এবং অবসরপ্রাপ্ত মেজর জাহিদুল ইসলামের ‘জঙ্গি সম্পৃক্ততার’ পর সে ধারণা আরো জোরালো হয়েছে।

মি. লিটন বলেন, “সিভিলিয়ানদের ভেতর কেউ যদি যুক্ত হয়, তার চেয়ে ভয়াবহ রূপ নেয় যখন এ ধরনের বাহিনীর অভ্যন্তরে একজন বা দু’জন যুক্ত হয়। ভয়ের বিষয়টা এখানে, সে যেমন প্রশিক্ষিত, পাশাপাশি সে কিন্তু অস্ত্র সংগ্রহ করার সামর্থ্য রাখে।”

কিন্তু এসব ব্যক্তি সামরিক বাহিনীর ভেতরে থাকতেই উগ্রপন্থায় জড়িত হয়েছে নাকি সেখান থেকে বেরিয়ে গিয়ে এর সাথে জড়িত হয়েছে তা নিয়ে নানা ধরনের অনুমান আছে।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, সেনাবাহিনীর ভেতরে নজরদারী জোরদার থাকায় তারা হয়তো বাইরে গিয়ে জঙ্গি তৎপরতার সাথে জড়িত হয়েছে। সামরিক বাহিনীর ভেতরে যদি জঙ্গি সংগঠনগুলো কাউকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করে তাহলে তাতে অবাক হবার মতো কিছু নেই বলে বিশ্লেষকরা উল্লেখ করেন।

বিভিন্ন আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনের উদাহরণ টেনে সাখাওয়াত হোসেন বলেন, সামরিক বাহিনীর কোন কর্মকর্তা জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়লে সেটি ভিন্ন মাত্রা যোগ করে।

তিনি বলেন, “এ ধরনের কোন কর্মকর্তা যদি এ ধরনের কোন সংগঠনের সাথে জড়িত হয়, তখন তাদের প্রেজেন্স (উপস্থিতি) একটা সংগঠনকে বেশি সংগঠিত করে। কারণ তাকে তখন একটা আইকনিক ফিগার হিসেবে দেখা হয়।”

বিশ্লেষকরা বলছেন, এখনো পর্যন্ত জঙ্গি সম্পৃক্ততায় সেনাবাহিনীর সাবেক দু’জন কর্মকর্তার নাম আসলেও তাতে ব্যাপকভাবে উদ্বিগ্ন হবার কিছু নেই।

আবার বিষয়টিকে একেবারে উপক্ষো না করে এর পেছনের কারণগুলো ভালোভাবে খতিয়ে দেখা দরকার বলেও তারা মনে করেন।

 

Logo-orginal