, সোমবার, ৬ মে ২০২৪

admin admin

সারোয়ার জাহান: বাংলাদেশে ২২টি সন্ত্রাসী হামলার মূল হোতা?

প্রকাশ: ২০১৬-১০-২২ ০০:৪৬:১০ || আপডেট: ২০১৬-১০-২২ ০০:৪৭:৪৪

Spread the love

গুলশানে হোলি আর্টিজান বেকারির ঘটনা ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ংকর সন্ত্রাসী হামলা
Image captionগুলশানে হোলি আর্টিজান বেকারির ঘটনা ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ংকর সন্ত্রাসী হামলা

 আরটিএমনিউজ২৪ডটকম, অনলাইন সংবাদঃ  কারও কাছে তিনি মোক্তার, কারও কাছে নাজমুল ইসলাম। কেউ চেনেন আবদুর রহমান আয়নাল নামে, কেউ আসিম আজওয়াদ নামে। তবে বাংলাদেশের বিশেষ পুলিশ বাহিনী র‍্যাপিড অ্যাকশনব্যাটালিয়ন বা র‍্যাব দাবি করছে এই ব্যক্তির প্রকৃত নাম সারোয়ার জাহান।

সংবাদ অনলাইন বিবিসি বাংলার ।

র‍্যাবের দাবি যদি সত্যি হয়ে থাকে, বাংলাদেশের ইতিহাসে এযাবতকালের সবচেয়ে ভয়ংকর এবং দুঃসাহসিক সব সন্ত্রাসী হামলার নেপথ্যের মূল ব্যক্তি তিনি।

কয়েক সপ্তাহ আগে ঢাকার অদূরে আশুলিয়ায় এক কথিত জঙ্গী আস্তানায় হানা দেয় পুলিশ। সেই অভিযানের সময় নিহত হন এক ব্যক্তি। সেদিন পুলিশ বলেছিল, নিহত ব্যক্তির নাম আবদুর রহমান আয়নাল। তিনি বাংলাদেশে নব্য জেএমবির সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে মূল অর্থ যোগানদাতা।

কিন্তু ঘটনার দু দুসপ্তাহ পর র‍্যাবের মহাপরিচালক বেনজির আহমেদ আজ ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে করে দাবি করেছেন, নিহত ব্যক্তির নাম আসলে সারোয়ার জাহান। তিনিই বাংলাদেশে নব্য জেএমবির প্রধান নেতা। গুলশানে হোলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে হামলা, শোলাকিয়ায় ঈদের জামায়াতে সন্ত্রাসী হামলা সহ বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ২২টি সন্ত্রাসী হামলা তার নেতৃত্বেই পরিচালিত হয়।

আর আন্তর্জাতিক জঙ্গী সংগঠন ইসলামিক স্টেট দাবি করে, বাংলাদেশে তাদের সন্ত্রাসী সংগঠনের প্রধান ব্যক্তি হচ্ছেন আবু ইব্রাহীম আল হানিফ। বাংলাদেশ সরকার ইসলামিক স্টেটের কোন সাংগঠনিক অস্তিত্বের কথা স্বীকার করে না। কিন্তু ইসলামিক স্টেট বা নব্য জেএমবি, যে নামেই এরা বাংলাদেশে তৎপরতা চালিয়ে থাক, এই সারোয়ার জাহানই হতে পারেন আইএস এর কথিত আবু ইব্রাহীম আল হানিফ।

কে এই সারোয়ার জাহান:

র‍্যাব এর দেয়া তথ্য অনুযায়ী কথিত নব্য জেএমবির শীর্ষ নেতা সারোয়ার জাহানের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলারহাটে। তাঁর বাবা সেখানে দর্জির কাজ করেন। বহুদিন ধরে পরিবারের সঙ্গে তার কোন যোগাযোগ ছিল না।

সারোয়ার জাহানের বড় ভাই কামরুজ্জামান জানিয়েছেন, তারা চার ভাইয়ের মধ্যে সারোয়ার জাহান তৃতীয়। ভোলারহাটে বাড়ির পাশেই দশ বছর বয়সে হাফিজিয়া কেরাতিয়া মাদ্রাসায় পড়তেন সারোয়ার জাহান। দু’বছর পর ১৯৯৮ সালে তিনি নাটোরের নাচোলে একটি কওমী মাদ্রাসায় ভর্তি হয়েছিলেন।

গুলশানে হোলি আর্টিজান বেকারির ঘটনা ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ংকর সন্ত্রাসী হামলা
Image captionগুলশানে হোলি আর্টিজান বেকারির ঘটনা ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ংকর সন্ত্রাসী হামলা

সেখানে তিন বছর পড়ার পর ২০০১সালে সে বগুড়ায় একটি কওমী মাদ্রাসায় পড়তে গিয়েছিলেন। তখন থেকেই পরিবারের সাথে তার যোগাযোগ কমে গিয়েছিল।

কামরুজ্জামান আরও বলেছেন, তার ভাই বগুড়ায় পড়ার সময়ই বাংলা ভাই নামে পরিচিত সিদ্দিকুল ইসলামের নেতৃত্বে জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল মুজাহিদীন বা জেএমবির সাথে সম্পৃক্ত হন। ২০০৩ সালে বাংলা ভাইয়ের নেতৃত্বে পুলিশের ওপর আক্রমণ করার সময় পুলিশের হাতে ধরা পড়েন। সেই ঘটনায় নয় মাস জেল খেটেছিলেন।

জেল থেকে বেরিয়ে সারোয়ার জাহান দু’দিনের জন্য বাড়ি গিয়েছিলেন। এরপর আবার বাড়ি থেকে পালিয়ে যান। তখনই পরিবারের সদস্যরা তার জঙ্গি কর্মকান্ড সম্পর্কে জানতে পারে।

কামরুজ্জামান বলেছেন, তার ভাই জেএমবির সাথে জড়িত হয়েছে, এটা নিশ্চিত হওয়ার পর পরিবারের সদস্যরাও আর তার খোঁজ খবর রাখতো না। পরিবারের সদস্যরা বিষয়টা ভালভাবে নিতে পারেনি বলে কামরুজ্জামান মন্তব্য করেছেন।

তাদের পিতা আব্দুল মান্নান এলাকায় দর্জির কাজ করেন। আব্দুল মান্নান বলছিলেন, তার তৃতীয় ছেলে সারোয়ার জাহান ছোটবেলা থেকেই এলাকার বাইরে ছিল। ফলে এলাকার লোকজনও তাকে চেহারায় সেভাবে চেনে না। ২০০৩ সালে একবার দু’দিনের জন্য বাড়িতে এসে আবার যে পালিয়ে গিয়েছিল। সেই থেকে তেরো বছর তার সাথে বাবা-মা এবং অন্য ভাইদের কোনো যোগাযোগ ছিল না।

ঢাকায় র‍্যাবের অভিযানে নিহত হওয়ার সপ্তাহখানেক পর র‍্যাব ছবি নিয়ে বাড়িতে আব্দুল মান্নানের কাছে যায়। তখন তিনি তার ছেলেকে সনাক্ত করেন এবং ছেলে সম্পর্ক জানতে পারেন।

আব্দুল মান্নান আরও বলেছেন, ছেলে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন নাম নিয়েছে, এ সম্পর্কে তাদের কিছু জানা ছিল না।

তিনি আরও জানিয়েছেন, সারোয়ার জাহান বগুড়ায় প্রথমে একটি বিয়ে করেছিলেন। সেই ঘরে এক মেয়ে এবং এক ছেলে আছে। পরে দিনাজপুরের এক মেয়েকে বিয়ে করেছিলেন। এই ঘরেও এক ছেলে আছে। তবে আব্দুল মান্নানের সঙ্গে এদের কারও কখনো দেখা হয়নি, এসব বিয়ের কথা লোক মুখে শুনেছেন।

গত ৮ই অক্টোবর র‍্যাবের যে অভিযানে সারোয়ার জাহান নিহত হয়, সেই বাড়ি থেকেই তার দ্বিতীয় স্ত্রীকে আটক করা হয়েছিল।

আব্দুল মান্নান বলেছেন, এখন র‍্যাব তার ছেলের মৃতদেহ নিতে বলেছে, তারা মৃতদেহ নেবেন।

তিনি বলেছেন, এলাকার লোকজন তাকে এখন জঙ্গির পিতা হিসেবে খারাপ দৃষ্টিতে দেখে। এটা বড় শাস্তি বলে তিনি মন্তব্য করেছেন।

উৎসঃ বিবিসি বাংলা ।

Logo-orginal