admin
প্রকাশ: ২০১৬-১২-১২ ১৯:১১:৫৪ || আপডেট: ২০১৬-১২-১২ ১৯:১১:৫৪
আরটিএমনিউজ২৪ডটকম, অনলাইন ডেস্কঃ বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক ইয়াসিন মোহাম্মদ তালুকদারকে (৩৫) আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিচয়ে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠলেও এর সাথে র্যাবের কোনো সম্পর্ক নেই বলে র্যাবের পক্ষ থেকে দাবী করা হয়েছে।
সোমবার বেলা সাড়ে ১১টায় রাজধানীর কারওয়ান বাজারস্থ র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং এর কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন র্যাব-৪ এর অধিনায়ক(সিও)লুৎফুল কবির।
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক ইয়াসিন মোহাম্মদ তালুকদার(৩৫)নিখোঁজ হওয়ার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সোর্স পরিচয়ে ৫০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে হাজি আলম নামে একজনকে গ্রেফতারের পর সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে র্যাব।
র্যাব-৪ এর অধিনায়ক (সিও) লুৎফুল কবির বলেন, গত ১৪ জুলাই ইয়াসিন বনানী রেল স্টেশন থেকে নিখোঁজ হন। এরপর ইয়াসিনের মা ডা. সুরাইয়া পারভিন ভাষানটেক থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিচয়ে ইয়াসিনকে অপহরণ ও ৫০ লাখ টাকা আত্মসাতের সংবাদ গণমাধ্যমে পরিবেশনের পর র্যাব তদন্ত শুরু করে।
তদন্তের ভিত্তিতে টাকা আত্মসাতকারী হাজি আলমকে রোববার দিনগত রাত পৌনে ৪টার দিকে রাজধানীর শাহআলী থানাধীন দিয়াবাড়ি এলাকা থেকে গ্রেফতার করে র্যাব-৪।
তিনি বলেন, হাজি আলমের সঙ্গে ডা. সুরাইয়ার পরিচয় হয় মিস্ত্রি ইকবালের মাধ্যমে। লাবু ও মজিবর নামে দুই সহযোগীসহ হাজি আলম আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছ থেকে ইয়াসিনকে উদ্ধার করে দেয়ার কথা বলে সুরাইয়ার কাছ থেকে ২ কোটি টাকা দাবি করেন। নিজেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সোর্স পরিচয়ে ১৫ দিনের মধ্যে ইয়াসিনকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার কথা জানায়। পরে ৫০ লাখ টাকায় দফারফা হয়। ডা. সুরাইয়া উদ্ধারের আশ্বাসে ৪ দফায় মোট ৫০ লাখ টাকা পরিশোধ করেন।
পরবর্তীতে হাজি আলমের মোবাইল নম্বর বন্ধ করে দেয়। এরপর সুরাইয়া পারভীন গণমাধ্যমে বিষয়টি প্রকাশ করেন। টাকা উদ্ধারের বিষয়ে লুৎফুল কবির বলেন, হাজী আলম নিজে ২৬ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। বাকি ২৪ লাখ টাকা দুই
সহযোগী মজিবর ও লাবু আত্মসাৎ করেন। ইয়াসিনের সন্ধান সম্পর্কে জানতে চাইলে লুৎফুল কবির বলেন, ইয়াসিনকে সন্ধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। আমাদের উদ্দেশ্য ছিল আগে টাকা আত্মসাৎকারী হাজি আলমকে গ্রেফতার করা। আলমকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
আরও বলেন র্যাবের ইনটেলিজেন্স উইং-এর মেজর নাহিদসহ দুই কর্মকর্তা ইয়াসিনদের ডিওএইচএসের বাসায় ঢুকে কম্পিটারসহ বিভিন্ন ডিভাইস জব্দ করে নিয়ে যায়। পরিবারের অভিযোগ র্যাব ইয়াসিনের সন্ধান জানে। এব্যাপারে লুৎফুল কবির বলেন, আমরা এটা নিশ্চিত করছি যে, মেজর নাহিদ নামে আমাদের কোনো ইনজেলিজেন্স উইং এর কর্মকর্তা নেই। তাছাড়া বাসায় র্যাবের কেউ যায়নি। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে র্যাব ইয়াসিনকে উঠিয়ে নিয়েও যায়নি বলে দাবি করেন।
উল্লেখ্য, চিকিৎসক সুরাইয়া পারভীন তালুকদারের অভিযোগ, চলতি বছরের গত ১৪ জুলাই দুপুরে বনানী পুলিশ ফাঁড়ির খুব কাছাকাছি বনানী রেলস্টেশনের সামনে থেকে ইয়াসিনকে একটি মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। ছেলে নিখোঁজের পর মা র্যাবের ও পুলিশের কাছে একাধিকবার যোগাযোগ করেছেন। ভাষানটেক থানায় ছেলের সন্ধান চেয়ে জিডিও করেন মা।
সুরাইয়া পারভিনের দাবি, ইয়াসিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছেই রয়েছে। ওই সময় তিনি দাবি করেন, ‘ক্রসফায়ার’এর ভয় দেখিয়ে কয়েক দফায় ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণও নিয়ে গেছে নিয়ে র্যাবের সোর্স পরিচয়ে হাজী আলম।
অন্যদিকে শাহবাগ থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গুলশান হামলায় নিহত জঙ্গি নিবরাসের বিরুদ্ধে যে মামলা হয়েছিল সেই মামলায় ইয়াছিনেরও নাম রয়েছে। ইয়াসিন ঢাকায় ইংরেজি মাধ্যমে ও লেভেল, এ লেভেল পাস করেন। এরপর লন্ডনের কুইনমেরি ইউনিভার্সিটি থেকে প্রকৌশলে স্নাতক পাস করেন। তিনি প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হওয়ায় কলেজ কর্তৃপক্ষ স্নাতকোত্তর ছাড়াই তাঁকে সরাসরি পিএচডির জন্য বৃত্তি দেয়।
সুরাইয়া পারভীন বলেন, ২০০৫ সালের শেষের দিকে লন্ডনের হোয়াইট চ্যাপেল এলাকায় ছিনতাইয়ের কবলে পড়ার পর পরিবর্তন আসতে শুরু করে ইয়াছিনের। ধর্মীয় বিষয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। পরে পিএইচডি বাদ দিয়ে ২০০৬ সালে দেশে চলে আসেন ইয়াসিন। ইয়াসিন বনানীর দুটি কোচিং সেন্টারে এবং নিজের বাসায় এ-ও লেভেলের ছাত্র পড়াতেন। ইয়াসিনের স্ত্রী একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের শিক্ষক। তাঁদের পাঁচ বছরের একটি ছেলে আছে।