, শুক্রবার, ৩ মে ২০২৪

admin admin

বগুড়ায় এমপির প্রকল্পে পুকুর চুরি

প্রকাশ: ২০১৬-১২-১৮ ১১:৪০:০০ || আপডেট: ২০১৬-১২-১৮ ১১:৪০:০০

Spread the love
বগুড়ায় এমপির প্রকল্পে পুকুর চুরি
বগুড়ায় এমপির প্রকল্পে পুকুর চুরি

ছবি: বগুড়া-৫ আসনের সংসদ সদস্য হাবিবর রহমান এবং তার ছেলে আসিফ ইকবাল

 আরটিএমনিউজ২৪ডটকম, অনলাইন সংবাদঃ  বগুড়া-৫ আসনের সংসদ সদস্য হাবিবর রহমানের নেয়া গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পে পুকুর চুরি হচ্ছে। চলতি অর্থবছরে নেয়া ৮৪ প্রকল্পে কোনো কাজ হয়নি। উল্টো প্রায় প্রত্যেক প্রকল্পে একাধিক কর্মসূচি থেকে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। টিআর, কাবিখা, কাবিটা প্রকল্পে বেশুমার চুরির ঘটনা ঘটছে। চুরির জন্য ভুয়া প্রকল্পের তালিকায় মসজিদসহ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের নামও ব্যবহার করা হয়েছে।

 সচিত্র প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে দৈনিক যুগান্তরের বগুড়া প্রতিনিধি নেসারুল হক খোকন ও নাজমুল হুদা নাসিম । জনস্বার্থে প্রতিবেদনটি আরটিএম পাঠকদের জন্য হুবুহু তুলে ধরা হলো ।

 যুগান্তর সুত্রে প্রকাশ,  ধুনট ও শেরপুরে উন্নয়নের জন্য বরাদ্দের ৮০ ভাগই এমপিপুত্র পকেটে ভরছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ধুনটের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ৮৪টি উন্নয়ন প্রকল্প সরেজমিন ঘুরে একটিতেও কাজ হয়েছে- এমন কোনো প্রমাণ পাননি। ১২ ডিসেম্বর বিষয়গুলো উল্লেখ করে বগুড়া জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন এ কর্মকর্তা।

বগুড়া-৫ আসনের সংসদ সদস্য হাবিবর রহমান। কিন্তু বাস্তবে এমপির ছেলে আসিফ ইকবাল সনিই এলাকার সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করেন। সনির নেতৃত্বে সেখানে গড়ে উঠেছে শক্তিশালী এক সিন্ডিকেট। চলতি অর্থবছরে শুধু ধুনট উপজেলার কোটি কোটি টাকা লোপাট করেছে এ সিন্ডিকেট। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকেই গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পে হরিলুট চলছে। সন্ত্রাসী লালন-পালন, ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ, নিয়োগ বাণিজ্য, স্থানীয় রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ ও অবৈধভাবে বালু উত্তোলনসহ প্রায় সর্বত্রই তার অবাধ বিচরণ। ৮ বছরে এসব খাত থেকে সনি কমপক্ষে শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে এমপি হাবিবর রহমান বলেন, গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পে অনিয়ম বা দুর্নীতি হয়নি। এখান থেকে ভাগ নেয়ার অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমার মেধাবী ছেলের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা সামাজিক সম্মান বিনষ্ট করতে পরিকল্পিতভাবে এসব অভিযোগ উত্থাপন করছে। তবে ইউএনও’র তদন্ত প্রতিবেদনে লুটপাটের চিত্র উঠে এলে এগুলো তদন্তের ব্যবস্থা নেয়া হবে। ধুনট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ ইব্রাহীম বগুড়া জেলা প্রশাসকের কাছে প্রকল্প পরিদর্শন রিপোর্ট পাঠানোর কথা স্বীকার করেছেন। তিনি যুগান্তরকে বলেন, ‘৮৪টি প্রকল্প ঘুরে আমি কাজের কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পাইনি। জেলা প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।’

জেলা প্রশাসকের কাছে ধুনট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার পাঠানো প্রতিবেদনে ৮৪টি প্রকল্পের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এ উপজেলায় গৃহীত প্রকল্পগুলোর বেশিরভাগই যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হয়নি। সংশ্লিষ্ট উপকারভোগীদের অগোচরে কোথাও কোথাও ভুয়া কমিটি গঠনের মাধ্যমে কাগজপত্রে বরাদ্দকৃত অর্থ শতভাগ খরচ দেখানো হয়েছে। অনুমোদিত প্রকল্প বাস্তবায়ন না করে সরকারি অর্থ ভিন্নরূপে খরচ করা তহবিল-তছরুপ এবং দুর্নীতির শামিল। এতে আরও বলা হয়, গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কার কর্মসূচির আওতায় ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ধুনট উপজেলায় বরাদ্দকৃত অর্থের বিপরীতে গৃহীত প্রকল্পগুলো সমাপ্তি প্রতিবেদনে স্বাক্ষরের জন্য ইউএনও বরাবর উপস্থাপন করা হয়। কিন্তু তিনি (ইউএনও মুহাম্মদ ইব্রাহীম) এ উপজেলায় যোগদানের অনেক আগেই প্রকল্পগুলো গ্রহণ ও বাস্তবায়নকাল অতিবাহিত হয়। সুতরাং বাস্তব অবস্থা যাচাইপূর্বক সঠিকতার ভিত্তিতে সমাপ্তি প্রতিবেদনে স্বাক্ষর করা যুক্তিযুক্ত বলে তিনি মনে করেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে তিনি কয়েকটি প্রকল্প সরেজমিন পরিদর্শনে যান।’ বাস্তবে কাজ হয়নি বলে দেখতে পান। বর্ণিত অবস্থায় এই অর্থবছরে উপজেলার গৃহীত প্রকল্পগুলোর সমাপ্তি প্রতিবেদন প্রেরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। যা দুর্নীতির শামিল।’

ইউএনওর তদন্ত প্রতিবেদনে দেখা গেছে- মসজিদ সংস্কার ও বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের নামে ভুয়া প্রকল্প তৈরি করেও টাকা ও খাদ্যশস্য হাতিয়ে নেয়া হয়েছে। ধুনটের মাধবডাঙ্গা পুরাতন জামে মসজিদ সংস্কার ও সোলার প্যানেল স্থাপনে ৫২ হাজার ২শ’ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। এ প্রকল্পে কোনো কাজই হয়নি। আবার ভুতবাড়ি বাইতুল আমান জামে মসজিদ সংস্কার ও সোলার প্যানেল স্থাপনে ২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। এ মসজিদে নিম্নমানের একটি সোলার প্যানেল স্থাপন করা হলেও মাটির কোনো কাজ করা হয়নি। ভুতবাড়ি সর্বদক্ষিণপাড়া ঈদগাহ মাঠ সংস্কার ও নতুন জামে মসজিদে সোলার প্যানেল স্থাপনে ১ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। সেখানেও নিম্নমানের একটি সোলার প্যানেল স্থাপন করা হলেও সংস্কারের কোনো কাজ করা হয়নি। কৈয়াগাড়ি জামে মসজিদ এবং ভাণ্ডারবাড়ি শ্রমিক সমিতিতে সোলার প্যানেল স্থাপনের নামে কাবিখার আওতায় সাড়ে ৫ টন খাদ্যশস্য বরাদ্দ দেয়া হয়। অথচ সেখানেও কোনো কাজ হয়নি।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, এই কৈয়াগাড়ি জামে মসজিদে সোলার প্যানেল স্থাপনের জন্য একাধিক কর্মসূচি থেকে প্রকল্প নেয়া হয়েছে। এদিকে ইউএনওর প্রতিবেদনে দেখা গেছে- দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতর থেকে ১৩ এপ্রিল টিআর (বিশেষ নগদ অর্থ) আওতায় ২৩টি প্রকল্পে গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণে ৫৮ হাজার ৩৫৭ টাকা হারে ১৩ লাখ ৪২ হাজার ২১৫ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। এ ২৩টি প্রকল্পের একটিতেও কাজ হয়নি। একই অধিদফতর থেকে ১১ এপ্রিল গ্রামীণ অবকাঠামোর ৫০টি প্রকল্পে ৫৮ হাজার ৩৫৭ টাকা হারে ২৯ লাখ ১৭ হাজার ৮৫৯ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। সেখানেও কাজের কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। এভাবে ইউএনওর তদন্ত করা ৮৪টি প্রকল্পে ৪৯ লাখ ২০ হাজার ৫১৮ টাকা এবং সাড়ে ২৮ টন খাদ্যশস্য পুরোটাই আত্মসাৎ করা হয়েছে। স্থানীয় বাজার দর অনুযায়ী এ খাদ্যশস্যের মূল্য প্রায় ৯ লাখ ৯৭ হাজার ৫শ’ টাকা।

এদিকে ধুনট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সরেজমিন তদন্তও মানতে চান না প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা রিয়াজুল ইসলাম। এ বিষয়ে পিআইও যুগান্তরকে বলেন, ‘সব কাজই সুষ্ঠুভাবে হয়েছে। কোনো অনিয়ম বা দুর্নীতি হয়নি।’ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার প্রতিবেদন সম্পর্কে জানতে চাইলে এ বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

মসজিদসহ বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের নামে বরাদ্দ কিভাবে আত্মসাৎ করা হল এ বিষয়ে জানতে চাইলে ধুনটের উল্লাপাড়া নয়াপাড়া গ্রামের আমজাদ চাতালসংলগ্ন মসজিদের সভাপতি রফিকুল ইসলাম বলেন, তার মসজিদের নামে ৫৮ হাজার ৩৫৭ টাকা ১৮ পয়সা উত্তোলন করা হয়েছে। অথচ মসজিদের সভাপতি হিসেবে তিনি এ বিষয়ে কিছুই জানেন না। তিনি বলেন, সম্প্রতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মাদ ইব্রাহীম প্রকল্প তদন্ত করতে এলে তিনি বিষয়টি জানতে পারেন। এভাবেই অসংখ্য প্রকল্প চেয়ারম্যানের কোনো হদিস মিলছে না উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার তদন্তে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৪৪৪টি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। অর্থবছরে (টিআর বিশেষ বরাদ্দ) প্রথম পর্যায়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য হাবিবর রহমান তার নিজের প্যাডে ৯৭টি প্রকল্পে বরাদ্দের পরিমাণ উল্লেখ করে একটি তালিকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কার্যালয়ে পাঠান। এমপির দেয়া প্রকল্পের নামের একটি তালিকা যুগান্তরের কাছে আসে। এতে দেখা যায়, এমপি ৯৭টি প্রকল্পের অনুকূলে ২৬০ টন খাদ্যশস্য বরাদ্দ দেন। এর মধ্যে মাত্র ১২টি প্রকল্পে এমপি বরাদ্দ দিয়েছেন ১২০ টন খাদ্যশস্য। বাস্তবে এসব প্রকল্পের একটিতেও কোনো কাজই হয়নি। শুধু এমপির দেয়া এ তালিকা থেকেই স্থানীয় বাজার দর অনুযায়ী ৩৫ হাজার টাকা টন হিসেবে ২৬০ টন চাল বিক্রি করে সনিসহ তার সিন্ডিকেট চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরে অন্তত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। ৪৪৪টি প্রকল্পের মধ্যে অবশিষ্ট ৩৪৭টি প্রকল্প দেয়া হয় উপজেলা প্রশাসন, জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে। ২০০৮ সালের পর প্রতিটি অর্থবছরে একইভাবে ভুয়া প্রকল্প তৈরি করে গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নের নামে সরকারের কোটি কোটি টাকা লোপাট করা হচ্ছে। সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পিআইওকে (প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা) ম্যানেজ করে গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নের সিংহভাগ লোপাট করা হয় বলে খোদ আওয়ামী লীগ নেতারাই অভিযোগ করেছেন।

প্রকল্পে বরাদ্দ চুরির সাক্ষী : জানা গেছে, গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন বরাদ্দ থেকে ভাগবাটোয়ারা সংগ্রহে ধুনট উপজেলায় ধুনট সদর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান এসএম মাসুদ রানা এবং শেরপুর উপজেলায় মহসিন আলম মমিন ডিলারকে দায়িত্ব দিয়েছেন এমপির ছেলে আসিব ইকবাল সনি। এ দু’জনই গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন বরাদ্দের পার্সেন্টিজ আদায় করেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাসুদ রানা যুগান্তরকে বলেন, ‘২৮ ডিসেম্বর আমার জেলা পরিষদে সদস্য পদে ভোট। এ কারণে এখন কোনো কিছু খুলে বলতে পারছি না। ভোটের পর সব কিছু বলব। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘মিথ্যা কথা বলে লাভ নেই। আগে এসব প্রকল্প থেকে এমপি এবং তার ছেলে বড় ভাগ পেতেন। এখন প্রকল্পে সোলার প্যানেল যোগ হওয়ায় তেমন সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায় না। আগে কাবিটার বরাদ্দ থেকে কোটি টাকার মধ্যে ২০ লাখ টাকা খরচ হতো। বাকিটা পকেটে। এর মধ্যে পিআইও অফিসকে প্রতি টনে ২ হাজার টাকা কমিশন, উত্তোলন খরচ ৫শ’ এবং আমাকে এক/দেড় হাজার টাকা দেয়া হতো। এমপির পিএস মিলনের মাধ্যমে তার কাছ থেকে কমিশনের টাকা নেয়া হতো বলে তিনি স্বীকার করেন। শেরপুরের মমিন ডিলার সরকারি বরাদ্দের মালামাল কেনাবেচা করেন। যোগাযোগ করা হলে মমিন যুগান্তরকে বলেন, এখন চাল বরাদ্দ কম। তাই এমপির কাছ থেকে খুব বেশি ডিও কিনতে পারিনি। কত টন কিনেছেন জানতে চাইলে বলেন, খুব বেশি না, আমি কিনেছি, মোস্তফাও কিনেছে। তবে আমাদের ব্যবসা মন্দা। তবে মমিনের বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় একজন সাংবাদিক বলেন, মমিনের কাজই হচ্ছে এমপির ডিও কেনাবেচা করা।

তবে বাস্তবে একজন প্রকল্প চেয়ারম্যান কত টাকা পান, তা অনুসন্ধান করা হয়। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন টিআরের আওতায় প্রথম পর্যায়ে এমপির বিশেষ বরাদ্দের একটি তালিকার ৮১ নম্বর প্রকল্পে ধুনট পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডে জিঞ্জিরতলা ঈদগাহ্ মাঠ সংস্কারে দেড় টন খাদ্যশস্য বরাদ্দ হয়। এ প্রকল্পের সেক্রেটারি ও পৌর কাউন্সিলর ফজলুল হক সোনা বলেন, ‘এ প্রকল্প সংস্কার বাবদ আমি ৮ হাজার টাকা পেয়েছি।’ অথচ স্থানীয় বাজার দর অনুয়ায়ী দেড় টন খাদ্যশস্যের মূল্য ৫১ হাজার টাকা। প্রকল্প চেয়ারম্যানকে ৮ হাজার টাকা দিয়ে বাকি ৪৩ হাজার টাকাই শুধু একটি প্রকল্প থেকে লোপাট করা হয়। এ রকম শত শত অভিযোগ রয়েছে।

উপজেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, গৃহীত এসব প্রকল্পের চেয়ারম্যানদের প্রতি টনে সর্বোচ্চ ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা দেয়া হয়। এ হিসাবে ৪৪৪টি প্রকল্প চেয়ারম্যান কমবেশি সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা পেয়েছেন। বাকি সবই পকেটে ভরেছেন এমপির ছেলে সনি ও তার পিএস মিলনসহ তাদের সিন্ডিকেট। শুধু টিআর আর কাবিখা নয়, কাবিটা (কাজের বিনিময়ে টাকা) প্রকল্পেও একই ভাবে দুর্নীতি-অনিয়ম হয়েছে।

এমপিপুত্র আসিব ইকবাল সনি বলেন, ভাগ নেয়ার প্রমাণ কেউ দিতে পারবে না। এটা সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। সনির সঙ্গে সুর মিলিয়ে একই কথা বলেন এমপি হাবিবর রহমানের পিএস কোরবান আলী মিলন। তিনি বলেন, ‘৭ বছরে কেউ যদি গ্রামীণ অবকাঠামোর উন্নয়নসহ যে কোনো প্রকল্প থেকে এমপি সাহেব, সনি সাহেব ও আমার বিরুদ্ধে এক টাকা নেয়ার অভিযোগ প্রমাণ করতে পারে তাহলে আমি পিএসগিরি ছেড়ে দেব।’ এমপিপুত্রের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ নিয়ে কথা বলতে তার শেরপুরের বাসায় ১ ঘণ্টা ১৪ মিনিট কথা হয়। এর পুরোটা সময়জুড়েই ছিলেন পিতা-পুত্র উত্তেজিত। এমপি হাবিবর রহমানের কাছে যুগান্তরের প্রশ্ন থাকলেও বেশিরভাগ প্রশ্নের উত্তর দেন সনি। এমনকি বারবার পিতাকে থামিয়ে দিয়ে উত্তেজিত কণ্ঠে কথা বলেন সনি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এর আগে ধুনটের ইউএনও ছিলেন হাফিজুর রহমান। যোগাযোগ করা হলে হাফিজুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, ‘আমি ধুনটে ৩ বছর আড়াই মাস দায়িত্বপালন করেছি। এ সময়ে গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে কোনো দুর্নীতি পাইনি। যে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তা পর্যবেক্ষণের জন্য আলাদা কর্মকর্তা নিযুক্ত থাকেন। তাদের রিপোর্ট অনুযায়ী সাধারণত আমরা ব্যবস্থা নিয়ে থাকি।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি কোনো ভাগ পাইনি।’ অপর এক প্রশ্নের উত্তরে সাবেক ইউএনও বলেন, ‘গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে দু’ভাবে বরাদ্দ হয়। একটি সাধারণ, অপরটি বিশেষ বরাদ্দ। বিশেষ বরাদ্দ এমপি নিয়ন্ত্রণ করেন। সাধারণ বরাদ্দগুলো উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের সভাপতিত্বে বাস্তবায়িত হয়। এমপির নামে যে ৩০০ মেট্রিক টন বা বেশি বরাদ্দ থাকে সেগুলোতে আমাদের কিছুই করার থাকে না। তিনি যেভাবে বরাদ্দ দেন সেভাবেই থাকে। এমপি তার নিজস্ব প্যাডে এ প্রকল্প বাস্তবায়নের চিঠি পাঠান। সেখানে আমাদের হস্তক্ষেপ করার কোনো সুযোগ নেই। অদৃশ্য কোনো প্রকল্প থাকলে ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ থাকে না। তবে, এমপি সাধারণ বরাদ্দ তালিকায় অন্তর্ভুক্তির জন্যও সুপারিশ করেন।’

Logo-orginal