, শুক্রবার, ৩ মে ২০২৪

admin admin

এমপি লিটন হত্যাকাণ্ডের তদন্ত” নিতে পারে নাটকীয় মোড়,

প্রকাশ: ২০১৭-০১-০৩ ১৭:৪৯:১২ || আপডেট: ২০১৭-০১-০৩ ১৭:৪৯:১২

Spread the love
এমপি লিটন হত্যাকাণ্ডের তদন্ত" নিতে পারে নাটকীয় মোড়,
এমপি লিটন হত্যাকাণ্ডের তদন্ত” নিতে পারে নাটকীয় মোড়,

 

আরটিএমনিউজ২৪ডটকম, অনলাইন ডেস্কঃ গাইবান্ধা-১ আসনের সরকারি দলের সংসদ সদস্য (এমপি) মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন হত্যাকাণ্ডের তদন্ত যে কোনো সময় নাটকীয় মোড় নিতে পারে। বিশেষ করে কিলিং মিশনের অল্প কিছুক্ষণ আগে লিটনের বাড়ি পুরোপুরি খালি হয়ে যাওয়ার বিষয়টি গোয়েন্দাদের ভাবিয়ে তুলেছে। হাইভোল্টেজ তদন্তের এমন জটিল প্লাটফরমে বাড়ির এক গৃহকর্মী ও দুই ব্যক্তিগত গাড়িচালকের ভূমিকা নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এছাড়া ঘটনার দিন দুপুরের পর থেকে বাড়িতে দর্শনার্থীর সংখ্যা কমে যাওয়া এবং লিটনের সম্পূর্ণ একা হয়ে পড়ার বিষয়টিকে রহস্য উন্মোচনের অন্যতম প্রধান সূত্র হিসেবে মনে করা হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে এমপির ৬ ঘনিষ্ঠভাজনকে জিজ্ঞাসাবাদের সিদ্ধান্তের কথা জানা গেছে। হত্যাকাণ্ডে ৭.৬৫ মডেলের পিস্তল ব্যবহার করা হয়, যা সাধারণত টার্গেট কিলিংয়ের জন্য জঙ্গিগোষ্ঠীগুলো ব্যবহার করে থাকে বলে জানিয়েছে পুলিশ। তদন্ত সংশ্লিষ্ট একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে র্যাবের গোয়েন্দা শাখার পরিচালক লে. কর্নেল আবুল কালাম আজাদ যুগান্তরকে বলেন, চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচনে আমরা সর্বোচ্চ প্রযুক্তিগত কৌশল ব্যবহার করছি। সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের মোবাইল ফোনের কললিস্ট পরীক্ষা করা হচ্ছে। আশা করছি, স্বল্প সময়ের মধ্যেই খুনিদের আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে। হত্যাকাণ্ডে ঘনিষ্ঠজনদের জড়িত থাকার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে গাইবান্ধা জেলার পুলিশ সুপার আশরাফুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, সব বিষয় মাথায় রেখে তদন্ত করা হচ্ছে। তবে এখনও নিশ্চিত করে কোনো কথা বলার সময় আসেনি।

গত বছরের শেষ দিন ৩১ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় নিজের বাড়িতে গুলি করে হত্যা করা হয় গাইবান্ধা-১ আসনের সরকারি দলের সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনকে। তিন যুবক ঘরের ভেতর ঢুকে খুব কাছ থেকে এমপিকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। এর পরদিন রোববার ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ ঢাকায় আনা হয়। সোমবার ঢাকায় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় জানাজা শেষে গাইবান্ধায় নেয়া হয় লিটনের লাশ। সেখানে তৃতীয় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তার লাশ দাফন করা হয়। দেশের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করে তোলার জন্য পরিকল্পিতভাবে সংসদ সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

হঠাৎ বাড়ি খালি কেন : হত্যাকাণ্ডের আগে লিটনের বাড়ি প্রায় পুরো খালি হয়ে যাওয়ার দৃশ্যপট তদন্তকারী কর্মকর্তাসহ স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনকে ভাবিয়ে তুলেছে। বাড়ি খালি কেন- এমন প্রশ্নের উত্তর মেলাতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা। এই প্রশ্নের আগুনে নতুন করে ঘি ঢালছে এমপির দুই গাড়িচালক ও এক গৃহকর্মীর রহস্যজনক গতিবিধি। গোয়েন্দা সূত্র বলছে, এমপির দুই চালক সার্বক্ষণিক বাড়িতে থাকলেও ঘটনার আগে তারা বাড়ির বাইরে চলে যান। এছাড়া হত্যাকাণ্ডের মাত্র ১০ মিনিট আগে বাড়ির সার্বক্ষণিক গৃহকর্মী সৌমিত্রের ডিম আনতে বাইরে চলে যাওয়ার ঘটনাও অস্বাভাবিক বলে মনে করা হচ্ছে। এদিকে ঘটনার দিন দুপুর থেকে এমপির সঙ্গে কোনো সাক্ষাৎপ্রার্থীর দেখা না হওয়ার বিষয়টি ঘিরেও রহস্য দানা বাঁধছে।

আলোচনায় ১৯ কোটি টাকা : লিটন হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করতে গিয়ে বেরিয়ে আসছে একের পর এক নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য। তদন্ত সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, এমপি কিছুদিন আগে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক থেকে ১৯ কোটি টাকা ঋণ নেন। এই টাকা দিয়ে তিনি এলাকায় কোল্ডস্টোরেজ নির্মাণ করেন। বিপুল পরিমাণ এই ব্যাংক ঋণ ও পারিবারিক অর্থসম্পদ নিয়ে সংসদ সদস্যের সঙ্গে তার নিকটাত্মীয়দের মনোমালিন্য চলছিল। এ মনোমালিন্যের সূত্র ধরে তৃতীয় কোনো পক্ষ এ হত্যাকাণ্ড ঘটাতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সূত্র জানায়, লিটন জামায়াত-শিবিরের কট্টর বিরোধী বলে এলাকায় পরিচিত ছিলেন। গাইবান্ধায় জামায়াত নেতা গোলাম আযমের সমাবেশ পণ্ড করে দেয়ার ঘটনার মধ্য দিয়েই লিটন মূলত জেলা আওয়ামী লীগে নেতৃত্বের সাড়িতে আসেন। অথচ তার শ্বশুর সৈয়দ মোশারফ হোসেন মুক্তিযুদ্ধের সময় গাইবান্ধা জেলা শান্তি কমিটির সদস্য ছিলেন। জামাইয়ের এমন বিপরীতমুখী রাজনৈতিক অবস্থানের কারণে তিনি পারিবারিকভাবে কিছুটা কোণঠাসা ছিলেন।

নজরদারিতে ৬ ঘনিষ্ঠজন : হত্যাকাণ্ডের পেছনে জামায়াত-শিবির বা জঙ্গি কানেকশনের বাইরে পারিবারিক কলহকেও গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত চলছে। সূত্র জানায়, এরই মধ্যে লিটনের দুই গাড়িচালক ও গৃহকর্মী সৌমিত্রকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এছাড়া তার দুই শ্যালক বেদারুল ইসলাম, তারিকুল ইসলাম, স্ত্রী খুরশিদ জাহান স্মৃতি, বড় ভাই বদরুল কারিমিন বাদল এবং বাড়ির কেয়ারটেকার ইউসুফ আলীকে গোয়েন্দা জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি করা হতে পারে। এরই মধ্যে তাদের ওপর গোয়েন্দা নজরদারি চালানো হচ্ছে বলে জানিয়েছে সূত্র। এমপি লিটনের ছেলের বডিগার্ড মাজেদুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, সন্ধ্যার পর তিনি তিনজন লোককে এমপির সঙ্গে তার বসার ঘরে কথা বলতে দেখেন। এ সময় তিনি ঘরের বাইরে পাহারায় ছিলেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘তিনজন লোকের সঙ্গে কথা বলার একপর্যায়ে এমপি সাহেব আমাকে পান আনতে বলেন। আমি পান আনার জন্য ভেতর বাড়িতে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরই গুলির শব্দ পাই। দৌড়ে এসে দেখি, ওই তিনজন লোক অস্ত্র হাতে পালিয়ে যাচ্ছে। তারা বেশ কয়েকটি ফাঁকা গুলিও ছোড়ে।’

তোরা বাড়ি চলে যা : ঘটনার কয়েকদিন আগ থেকেই আশপাশে ভাড়াটে খুনিদের অবস্থান নেয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ। যুগান্তরের গাইবান্ধা প্রতিনিধি গোবিন্দলাল দাস জানান, গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের বামনডাঙ্গায় এমপির দোতলা বাড়ির সামনে বিশাল খেলার মাঠ আছে। ঘটনার দিন দুপুরের পর থেকে ওই মাঠে ১৪-১৫ জন কিশোর ক্রিকেট খেলছিল। এ কিশোরদের প্রায় প্রত্যেককে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। এদের মধ্যে জুয়েল রানা নামে এক কিশোর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কার্যালয়ে জবানবন্দি দেয়। এতে সে জানায়, দুপুরের পর থেকে দুটি মোটরসাইকেলে করে ৫ যুবক এমপির বাড়ির আশপাশে ঘোরাফেরা করছিল। বিকাল ৪টার দিকে ওই পাঁচ যুবকের একজন তাদের বলে, ‘এই তোরা এখানে কী করিস? তোদের খেলতে হবে না। তোরা বাড়ি যা।’ তখন জুয়েল তাদের বলে, ‘তোমরা কারা? আমাদের খেলতে নিষেধ করার তোমরা কে?’ এরপর মোটরসাইকেল আরোহী যুবকরা সেখান থেকে চলে যায়। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) অতিরিক্ত ডিআইজি সাঈদুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, ঘটনার রহস্য উন্মোচনের জন্য স্থানীয় অনেকের সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছে। সোমবারও ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে তিনি লিটনের পরিবারের সদস্যসহ একাধিক প্রত্যক্ষদর্শীর সঙ্গে কথা বলেন। তাদের মধ্যে লিটনের নিকটাত্মীয় শামীম আরা স্মৃতি, ভাগ্নি মারুফা সুলতানা শিমু পিবিআইয়ের জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, ‘তারা খুনিদের দেখতে পায়নি। তারা শুধু বিকট গুলির শব্দ শোনেন। শব্দ শুনে বেরিয়ে এসে তারা এমপিকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় দেখতে পান।

হত্যাকাণ্ডে ৭.৬৫ মডেলের পিস্তল ব্যবহার : গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ থানার পুলিশ জানায়, এমপি লিটনের বাসা থেকে যে দুটি গুলির খোসা উদ্ধার করা হয়েছে তা ৭.৬৫ মডেল পিস্তলের। এ মডেলের পিস্তল কারা ব্যবহার করে- এমন প্রশ্নের জবাবে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের এডিসি আবদুল মান্নান জানান, এ ধরনের অস্ত্র বিভিন্ন সন্ত্রাসী গ্র“প ব্যবহার করে থাকে। গুলশানে হামলার পর এ মডেলের ৪টি পিস্তল উদ্ধার করা হয়। কল্যাণপুরে অভিযানেও একই অস্ত্র পাওয়া যায়। সর্বশেষ আশকোনায় এ মডেলের ৩টি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, টার্গেট কিলিংয়ের জন্য ওই মডেলের অস্ত্র নিউ জেএমবি ব্যবহার করে থাকে।সুত্রঃ যুগান্তর ।

Logo-orginal