, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

admin admin

এই বার্সা কি সেই বার্সা

প্রকাশ: ২০১৭-০২-১৫ ১২:১৬:৪২ || আপডেট: ২০১৭-০২-১৫ ১২:১৬:৪২

Spread the love

 

এই বার্সা কি সেই বার্সা
এই বার্সা কি সেই বার্সা

আরটিএমনিউজ২৪ডটকম, ক্রীড়া ডেস্কঃ কাল রাতে খেলা না দেখে থাকলে সকালবেলা ঘুম ঘুম চোখে দেখা স্কোরলাইনটা নিশ্চয়ই বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়েছে আপনার। কড়া লিকারের চা খেয়ে ঘুম তাড়িয়েও লাভ হয়নি। যা দেখেছেন তা সত্যিই। চ্যাম্পিয়নস লিগের নকআউট পর্বের শুরুতেই ‘নকআউট’ প্রায় হয়েই গেছে পাঁচবারের চ্যাম্পিয়নরা। সংবাদ দৈনিক প্রথম আলোর ।

 

নপিএসজির মাঠে কাল তারা হেরেছে ৪-০ ন। ফিরতি লেগে নিজেদের মাঠে প্রায় অসম্ভব এক লড়াইয়ে নামতে হবে লুইস এনরিকের দলকে। চ্যাম্পিয়নস লিগের ইতিহাসে নকআউট পর্বে কেউ এখনো গোলের ঘাটতি পুষিয়ে ফিরে আসতে পারেনি।
দুই ‘বার্থডে বয়’ নিজেরাই নিজেদের উপহার বুঝে নিলেন বার্সেলোনার কাছ থেকে। প্রথমত অবশ্যই দুর্দান্ত অ্যাঙ্গেল ডি মারিয়া। রিয়াল মাদ্রিদের কাছ থেকে পাওয়া অবহেলা সুদে-আসলে ভালোবাসায় ভরিয়ে দিয়েছে তাঁকে পিএসজির সমর্থকেরা। তিনিও ফিরিয়ে দিচ্ছেন অনেক কিছুই। কাল জোড়া গোল করেছেন এই আর্জেন্টাইন উইঙ্গার। জন্মদিনটা এডিনসন কাভানির দারুণ গেছে। একটি গোল পেয়েছেন তিনি। অন্যটি জার্মান উইঙ্গার ড্রেক্সলারের।
আসল কারিগর ডি মারিয়াই। ১৮ মিনিটে যেন জাতীয় দলের অধিনায়ক লিওনেল মেসিকে বুঝিয়ে দিতে চাইলেন, ‘দেখো, দুর্দান্ত ফ্রি কিক কীভাবে নিতে হয়, তা আমিও জানি।’ তাঁর ৫৫ মিনিটে করা গোলটিও ‘মেসি-সুলভ’। ডি বক্সের মাথায় জটলার মধ্য থেকে আচমকা নেওয়া এক বাঁকানো শটে। 
এর আগে ড্রেক্সলার মিসাইল গতির এক পাল্টা আক্রমণ থেকে ৪৪ মিনিটে ২-০ করে ফেলেছিলেন। ম্যাচ এক ঘণ্টায় গড়ানোর ৫ মিনিট আগেই ৩-০। এতেও যদি বার্সা ‘একটি অ্যাওয়ে গোল হলেও তো হয়’—এমন আশায় বসে থাকে, তা ভেঙে দিলেন কাভানি। ৭১ মিনিটে বার্সার জালে ঢুকে গেল ‘এক হালি’ গোল!
উনাই এমেরি তাঁর কোচিং ক্যারিয়ারে এর আগে ২৩ দেখায় বার্সেলোনাকে মাত্র একবার হারাতে পেরেছিলেন। কিন্তু সেভিয়াকে টানা তিন ইউরোপা লিগ জেতানোর পর বড় অঙ্কের বেতন দিয়ে এই স্প্যানিশ কোচকে পিএসজি কেন প্যারিসে নিয়ে এসেছে, এমেরি যেন সেটিই সবাইকে কাল দেখিয়ে দিলেন। অনেকবারই কৌশল দিয়ে বার্সার ঘাম–ছোটানো এমেরির হাতে এবার যথেষ্ট রসদও ছিল। আর তাতেই বার্সাকে রীতিমতো গুঁড়িয়ে দিলেন। যে বার্সার খেলা দেখে কাতালান মিডিয়ায় এরই মধ্যে আর্তরব উঠে গেছে—হায় বার্সা, এ কোন বার্সা!
বার্সাকে নিয়ে মাতম করার অর্থ কিন্তু নয় পিএসজির কৃতিত্বকে আড়াল করে ফেলা। আড়াল করা যাবে না লুইস এনরিকের দুর্বল রণকৌশলও। সময়ের স্বার্থেই বার্সার টিকি-টাকা ফুটবলে খোলস বদলে ফেলেছিলেন বার্সাকে ট্রেবল জেতানো এই কোচ। তাতে কেউ আপত্তি করেনি। কিন্তু বার্সার হৃৎপিণ্ড মাঝমাঠকে কীভাবে যেন ধ্বংস করে ফেললেন এই এনরিকে!
হাফ ফিট আন্দ্রেস ইনিয়েস্তার সঙ্গে নামিয়ে দিলেন আন্দ্রে গোমেজকে! পেছনে সার্জিও বুসকেটস। বার্সার মাঝমাঠটা কাল বলতে গেলে ছিলই না। ফলে নিজেদের রক্ষণ থেকে মাত্র কয়েক সেকেন্ডে বার্সার রক্ষণে ঢুকে পড়েছে পিএসজি। আর টর্নেডো গতির এই আক্রমণগুলোর ধাক্কা সামলানোর সাধ্য ছিল না বার্সা-রক্ষণের। এমনকি টের স্টেগেন বার্সার জার্সিতে তাঁর অন্যতম সেরা খেলাটা খেলেও হজম করলেন ৪ গোল!
মেসিকে মনে হলো ‘আর্জেন্টিনার মেসি’। যিনি ঠিক বুঝে উঠতে পারছেন না ওপরে খেলবে নাকি নিচে। ওপরে এমএসএনের বারুদ জ্বলছে না, যেখানে তাঁর থাকাটা বেশি জরুরি। আবার এমএসএনকে জ্বালাতে হলে অসাড় মাঝমাঠেও থাকা চাই তাঁর। দুইয়ের কোনোটাই না হয়ে শেষ পর্যন্ত মেসির গায়ের জার্সিটা ধীরে ধীরে যেন আকাশি নীল-সাদার ডোরাকাটা হয়ে উঠছিল।
সত্যি বলতে কি, বার্সা আরও গোল খেলেও অবাক হওয়ার কিছু ছিল না। এমনকি প্রথমার্ধেই তারা খেয়ে যেতে পারত চার গোল। ৪৫ মিনিটেই ১১টি শট, এর সাতটিই গোলমুখে। টের স্টেগেন অন্তত দুটি দুর্দান্ত সেভ না করলে পরের ৪৫ মিনিট ‘না খেললেও’ চলত।
এখন তো দেখা যাচ্ছে পরের লেগটা না খেললেও চলে। কঠিন সমীকরণ তো সেটিই বলছে। এমেরি যতই বলুন, দ্বিতীয় লেগে ঘুরে দাঁড়ানোর সামর্থ্য বার্সেলোনার আছে, এটিকে তাঁর ‘বিনয়’ কিংবা ‘ভদ্রতা’ হিসেবে ধরে নিতেই পারেন। অন্তত নিজেদের পুনর্জাগরণের পর দুবার বার্সার কাছে হেরে বিদায় নেওয়া প্যারিসের দলটি এবার ‘ফেবারিট’ হিসেবে কাল নিজেদের যেভাবে প্রতিষ্ঠিত করে ফেলল, তাতে বার্সার মাঠে গিয়ে তাদের ৫ গোল (অন্তত ৪ গোল) খাওয়ার কোনো শঙ্কা নেই। এর মধ্যে বার্সার জালে একটি ‘অ্যাওয়ে’ গোল দিতে পারলে তো হিসাব আরও জটিল হয়ে উঠবে।
আর তাই, আপনি যদি বার্সা সমর্থক হয়েও থাকেন, ফিরতি লেগটা কবে হবে, সেই তারিখ জেনে আর কী করবেন!

Logo-orginal