, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

admin admin

নড়াইলের গুয়োখোলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শতাধিক ছাত্রীর সাইকেল চালিয়ে স্কুলে যাতায়াত

প্রকাশ: ২০১৭-০৫-২৯ ০৭:০৩:১৫ || আপডেট: ২০১৭-০৫-২৯ ০৭:০৩:১৫

Spread the love
নড়াইলের গুয়োখোলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শতাধিক ছাত্রীর সাইকেল চালিয়ে স্কুলে যাতায়াত
নড়াইলের গুয়োখোলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শতাধিক ছাত্রীর সাইকেল চালিয়ে স্কুলে যাতায়াত

আরটিএমনিউজ২৪ডটকম, নিউজ ডেস্ক:   নড়াইল সদর উপজেলার গুয়োখোলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শতাধিক ছাত্রী এখন ছেলেদের মতোই সাইকেল চালিয়ে স্কুলে যাতায়াত করে। তারা দেখিয়ে দিয়েছে মেয়েরাও সব কিছু করতে পারে। তাদের এখন আর ভ্যানের জন্য অপেক্ষা করে সময় নষ্ট করতে হয় না। বাবা-মায়ের কাছ থেকে বাড়তি টাকাও নিতে হয় না। রাস্তায় বখাটেরাও আগের মতো উত্ত্যক্ত করার সুযোগ পায় না।

সাইকেল চালিয়ে যাতায়াত করায় প্রথমদিকে অনেকইে নানা রকম মন্তব্য করেছে। কিন্তু সবকিছু উপেক্ষা করে ওরা এখন নিয়মিত ও সময়মতো স্কুল উপস্থিত হতে পারছে। পড়াশোনা ভালো হওয়ায় বিদ্যালয়ের ফলও ভালো। আগামীতে বাল্যবিয়ে, ইভটিজিং, নারী নির্যাতনসহ সমাজ থেকে সকল প্রকার কুসংস্কার দূর করার প্রত্যয় নিয়ে ওরা এগিয়ে চলেছে।

নড়াইল শহর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে গুয়োখোলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি ১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠিত। বর্তমানে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় তিনশ। বিদ্যালয়টি নড়াইল সদর ও যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় অবস্থিত। দুটি উপজেলার মালিয়াট, বাকলি, হাতিয়াড়া, গুয়োখোলা, বেনাহাটি, কমলাপুরসহ এগারোটি গ্রামের ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা করে।

দুই জেলার সীমান্তবর্তী হওয়ায় এই এলাকাটি অনেকটা অবহেলিত এবং অধিকাংশ রাস্তাঘাট কাঁচা। প্রায় ছয় কিলোমিটার দূরের শিক্ষার্থীরাও এই বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে। বিদ্যালয়ের ছাত্ররা সাইকেল চালিয়ে স্কুলে যাতায়াত করলেও ছাত্রীদের ভ্যান বা হেঁটে স্কুলে আসা যাওয়া করতে হতো। দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে স্কুলের শিক্ষক ও অভিভাবকদের যৌথ প্রয়াসে মেয়েদের সাইকেল কিনে দেওয়া হয়। চার বছর আগে প্রথমত কয়েকজন ছাত্রী সাইকেল নিয়ে স্কুলে যাতায়াত শুরু করে। পরবর্তীতে এর সংখ্যা দিন দিন বাড়তে থাকে। বর্তমানে শতাধিক ছাত্রী নিয়মিত সাইকেলে যাতায়াত করে। এসব ছাত্রী তাদের বান্ধবীদেরও সাইকেলের পেছনে বসিয়ে স্কুলে আসা যাওয়া করে।

বিদ্যালয়ের ছাত্রী মালিয়াট গ্রামের সেজুতি রায় বলে, ‘আমি ৫ কিলোমিটার দূর থেকে স্কুলে আসি। কিন্তু স্কুলে সাইকেল গ্যারেজ না থাকায় কিছুদিন আগে আমাদের বান্ধবীদের দুটি সাইকেল চুরি হয়ে যায়। স্কুলে একটি সাইকেল গ্যারেজ নির্মাণের প্রয়োজন।’

অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী দীপ্তি পাঠক বলে, ‘আগে ভ্যানে করে স্কুলে আসতে হতো। তখন বাবা-মায়ের অনেক টাকা খরচ হতো। ভ্যান না পাওয়ায় অনেক সময় হেঁটে স্কুল আসতে সময় অনেক নষ্ট হয়ে যেতো। কিন্তু এখন আর কোনো সমস্যা হয় না। আমরা নিয়মিত ক্লাস করতে পারি এবং পড়াশোনাও ভালো হচ্ছে। তবে সাইকেল চালিয়ে যাতায়াতের সময় রাস্তার অন্যান্য যানবাহন সাইড দিতে চায় না। অনেকে ব্যঙ্গ করে। কয়েকদিন আগে মোটরসাইকেলের ধাক্কায় আমাদের দুজন ছাত্রী গুরুতর আহত হয়েছে।’

নবম শ্রেণীর ছাত্রী শান্তনা গুপ্ত বলে, ‘আমার বাড়ি বাকলি গ্রামে। বাড়ি থেকে স্কুলের দূরত্ব ৫ কিলোমিটার। এক সময়ে ভ্যানে ও হেঁটে স্কুলে চলাচল করতাম। তখন ঠিকমতো ক্লাস ধরতে পারতাম না। বাবা-মার ভ্যান ভাড়া বাবদ অতিরিক্ত টাকা দিতেও অসুবিধা হতো। তখন আমরা কয়েকজন ছাত্রী মনে করলাম ছেলেরা যদি সাইকেল চালিয়ে স্কুলে আসতে পারে তাহলে আমরা কেন পারব না? তখন থেকে স্যার ও আমাদের বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলে সাইকেল কেনার সিদ্ধান্ত নেই। বাড়িতে ও গ্রামের ফাঁকা জায়গায় সাইকেল চালানো শিখে আমরা কয়েকজন স্কুলে আসা যাওয়া শুরু করলাম।’

দশম শ্রেণীর ছাত্রী খুশি সিকদার বলে, ‘এই স্কুলে ১১টি গ্রামের ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা করে। ছেলেদের মতো মেয়েরাও সাইকেল চালিয়ে স্কুলে আসে। আমরা প্রথমদিকে সাইকেল চালাতে লজ্জা পেতাম। এখন আমরা অনেক সাহসী। আমরা দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে এগিয়ে যাব। এলাকার বাল্যবিয়ে, ইভটিজিং, নারী নির্যাতনসহ সমাজ থেকে সব প্রকার কুসংস্কার দূর করতে সকলে কাজ করে যাব।’

এই স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র সোহাগ গুপ্ত বলে, ‘আমাদের স্কুলের ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েরাও সাইকেল চালিয়ে আসে। স্কুলে আসা যাওয়ার পথে বখাটেরা তাদের উত্ত্যক্ত করার চেষ্টা করলে আমরা ছেলেরা প্রতিহত করি। অনেক সময় স্যারের সহযোগিতা এবং ওইসব বখাটেদের বাবা-মায়ের কাছে অভিযোগ করি।’

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রবীন্দ্রনাথ ম-ল বলেন, ‘গুয়াখোলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থিত। এই স্কুলে প্রায় তিনশ ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা করে। এর মধ্যে ১৪৩ জন ছাত্রী। এই স্কুলের মেয়েরা ৫-৭ কিলোমিটার দূর থেকে স্কুলে আসে। তাদের হেঁটে আসতে অনেক সময় লাগে এবং ক্লান্ত হয়ে পড়ে। যার কারণে ক্লাসে পাঠদানে মনোযোগী হতে পারে না। আমরা ও অভিভাবকরা আলোচনা করে মেয়েদের সাইকেল চালনায় অনুপ্রেরণা দিয়েছি। তাদের বলেছি, ছেলেরা যদি সাইকেল চালিয়ে আসতে পারে, তাহলে মেয়েরা কেন পারবে না। তখন অভিভাবকদের সম্মতিতে ছাত্রীদের সাইকেল কিনে দেয় তাদের অভিভাবকরা। এখন ওরা নিয়মিত সাইকেল চালিয়ে স্কুলে যাতায়াত করে। সাইকেল নিয়ে স্কুলে আসতে এখন সময় কম লাগছে, অর্থের সাশ্রয় হচ্ছে এবং নিয়মিত ও সময়মতো স্কুলে উপস্থিত হতে পারছে। যার কারণে বিদ্যালয়ের শিক্ষার মানও বেড়েছে।

এ বছর ওই বিদ্যালয় হতে সব ছাত্রছাত্রীই বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পরীক্ষা দিয়ে শতভাগ পাস করেছে। তবে অবকাঠামো সমস্যার জন্য সাইকেল রাখার জায়গা নেই এবং শিক্ষার্থীদের পাঠদানও ব্যাহত হচ্ছে। উৎসঃ আমাদের সময় ।

Logo-orginal