admin
প্রকাশ: ২০১৭-০৬-০৫ ১২:০১:১২ || আপডেট: ২০১৭-০৬-০৫ ১২:০১:১২
আরটিএমনিউজ২৪ডটকম, চট্টগ্রামঃ এখন থেকে যারা ব্যাংকে কমপক্ষে এক লাখ টাকা রাখবেন, বছর শেষে তাদের আবগারি শুল্ক গুনতে হবে? এবারের বাজেটে আবগারি শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাব করে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘১ লাখ টাকা থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত কেউ ব্যাংকে রাখলে তাকে আবগারি শুল্ক দিতে হবে ৮০০ টাকা, ১০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকা পর্যন্ত কেউ আমানত রাখলে তাকে আবগারি শুল্ক আরোপ করা হবে ২ হাজার ৫০০ টাকা, ১ কোটি থেকে ৫ কোটি টাকা অ্যাকাউন্টে রাখলে তার ওপর আবগারি শুল্ক আরোপ করা হবে ১২ হাজার টাকা। এছাড়া ব্যাংকে ৫ কোটি টাকার ওপরে রাখলে তাতে আবগারি শুল্ক আরোপ করা হবে ২৫ হাজার টাকা। প্রতিবেদন দৈনিক আজাদীর ।
গত ১ জুন জাতীয় সংসদে এই নতুন নিয়মের প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। কোনো একাউন্টে একবার ১ লাখ টাকা ঢুকলেই তার ওপর আবগারি শুল্ক কাটা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ব্যাংকগুলোর আমানতের গড় সুদ ৫ দশমিক ১ শতাংশের মধ্যে। বর্তমানে মূল্যস্ফীতির হার ৫ থেকে সাড়ে ৫ শতাংশ। এখন ব্যাংকে এক লাখ টাকা আমানত থাকলে বছর শেষে যে ৫ হাজার টাকা পাওয়া যাবে, তার মধ্যে উৎসে কর আবগারি শুল্ক ও মূল্যস্ফীতি বাবদ কেটে রাখার পর মূল মূলধনই কমে যাবে আমানতকারীর।
এতে নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ বেশি বিপদে পড়বে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। সেই সাথে ব্যাংকগুলোতে গ্রাহক সংখ্যাও কমে যাবে। এ নিয়ে ব্যাংক গ্রাহকদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। সাধারণ মানুষ সব কিছু বাদ দিয়ে এখন এই বিষয়টি নিয়েই আলোচনা করছেন। কেউ কেউ বলছেন, এখন আমাদের বোধ হয় আবার মাটির ব্যাংকের যুগে ফিরে যতে হবে।
অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন আহমেদও এর বিরোধিতা করেন। তিনি বলেন, ১ লাখ টাকার সিলিংটা ঠিক নয়। সাধারণ নিম্নবিত্ত মানুষও তার বিপদের সময়ের জন্য এক লাখ টাকা ব্যাংকে রাখেন। এটা অনেক বেশি টাকার জন্য হতে পারে। কারণ তারা বিনিয়োগ করতে পারেন অন্য খাতে।
সিপিডি মনে করে, এই বাজেটের ফলে মধ্যবিত্তের ওপর চাপ বাড়বে, মূল্যস্ফীতি বাড়বে। সিপিডির ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য গত শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বাজেটে যে কর ও ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে,তাতে উৎপাদন ব্যয় বাড়বে, বাড়বে ভোগ ব্যয়। এর ফলে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাবে। এতে নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ সবচেয়ে বেশি চাপে পড়বেন।
এই সিদ্ধাতে হতাশ নাসিরাবাদের গৃহিণী তানিয়া সুলতানা। ক্ষোভের সাথে তিনি বলেন, এমনিতেই আমাদের মতো মধ্যবিত্তের সংসার চলে না। এখন ব্যাংকের জমানো টাকার ওপরও অভিশাপ নেমে এসেছে। এ রকম হলে তো ব্যাংকে জমানো টাকা নিয়ে নিজেদেরই ব্যবসায় নামতে হবে। এতে অন্তত ক্ষতির চেয়ে লাভের পথ দেখা যাবে। নয়ত ব্যাংকের শুল্ক দিতে দিতেই আসল টাকা শেষ হয়ে যাবে।
স্কুল শিক্ষিকা ফারজানা বলেন, কয়েক মাসের মধ্যে সঞ্চয়পত্রের সুদের হারও কমবে শুনছি। অনেক কষ্ট করে ব্যাংকে টাকা জমাই? পরিবারের বিপদে,ছেলেমেয়ের লেখাপড়া, চিকিৎসার কাজে লাগে? এখন এই টাকাও কেটে নেবে? এটা কোনোভাবে মেনে নেয়া যায় না?
এতদিন বছরের যেকোনো সময় একাউন্টে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত ডেবিট ও ক্রেডিটের ক্ষেত্রে আবগারি শুল্ক আরোপ করা হত না। এখন ১ লক্ষ টাকার একাউন্টের ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য হবে। অর্থাৎ ব্যাংকে এক লাখ টাকার বেশি থাকলে এখন আগের চেয়ে বেশি কর দিতে হবে সরকারকে। বছরের যেকোনো সময় ব্যাংক হিসেবে এক লাখ টাকা ক্রেডিট হলে এতদিন ৫০০ টাকা আবগারি শুল্ক কাটা হত। নতুন অর্থবছরের বাজেটে শুল্ক ৮০০ টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে।
এদিকে নতুন নিয়মের কারণে গ্রাহক হ্রাসের শংকা বিরাজ করছে সরকারি–বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে। বাজেটে নতুন এই নিয়মের কারণে সাধারণ মানুষ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে মন্তব্য করে সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড আগ্রাবাদ শাখার ভাইস প্রেসিডেন্ট সৈয়দ মো. সোহেল বলেন, বড় বড় ব্যবসায়ী বা ধনীদের জন্য অতিরিক্ত আবগারি শুল্ক তেমন প্রভাব ফেলবে না। তবে এক শ্রেণির গ্রাহক কমে যাবে। যদিও সেটা এখন বোঝার উপায় নেই। তিনি বলেন, কোনো একাউন্টে একবার ১ লাখ টাকা জমা হলেই তার ওপর আবগারি শুল্ক কাটা হবে। যেহেতু বছরের শেষ দিকে আবগারি শুল্ক কাটা হবে, তাই বছর শেষে বোঝা যাবে এর প্রভাব।
তিনি জানান, এখনো বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এ ব্যাপারে কোনো দিক নির্দেশনা আসেনি। তাই সবার মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া থাকলেও কয়েক দিনের মধ্যে এর প্রভাব কেমন সেটা বোঝা সম্ভব নয়।
সোনালী ব্যাংক লিমিটেডের আগ্রাবাদ কর্পোরেট ব্রাঞ্চের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এবারের বাজেটের নতুন সিদ্ধান্ত নিয়ে এখনো কোনো অর্ডার আসেনি। তাই এর প্রভাবও এখন বোঝা যাবে না। যদিও নতুন নিয়মের কারণে সাধারণ মানুষের মাঝে ক্ষোভ দেখা যাচ্ছে। তবে এর প্রভাব বুঝতে হলে বছরের শেষ সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
উল্লেখ্য, অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতার পর জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এনবিআরের এক প্রজ্ঞাপনে ব্যাংক হিসাবে ১ লাখ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত আবগারি শুল্ক ১ হাজার টাকা দেখানো হয়েছে। এছাড়া ২০ হাজার টাকা থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত আবগারি শুল্ক ১৫০ টাকার পরিবর্তে ২০০ টাকা দেখানো হয়েছে। সর্বোচ্চ সীমা ৫ কোটি টাকার ঊর্ধ্বের জন্য ৩০ হাজার টাকা আবগারি শুল্ক উল্লেখ করা হয়েছে, যা অর্থমন্ত্রীর বক্তৃতায় ২৫ হাজার টাকা বলা হয়েছিল। তেমনি ১০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকা পর্যন্ত আবগারি শুল্ক ৩ হাজার টাকা এবং ১ কোটি থেকে ৫ কোটি পর্যন্ত আবগারি শুল্ক ১৫ হাজার টাকার কথা উল্লেখ আছে। অর্থমন্ত্রীর বক্তৃতায় ওই অংক ছিল ২ হাজার ৫০০ টাকা ।