, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

admin admin

সরকারের অবহেলায় থামছে না প্রবাসী শ্রমিকদের কান্না”

প্রকাশ: ২০১৭-০৭-২২ ১৪:৪২:২৩ || আপডেট: ২০১৭-০৭-২২ ১৪:৪৫:৩৮

Spread the love
সরকারের অবহেলায় থামছে না প্রবাসী শ্রমিকদের কান্না"
সরকারের অবহেলায় থামছে না প্রবাসী শ্রমিকদের কান্না”

আবুল কাশেম, আরটিএমনিউজ২৪ডটকম, কুয়েতঃ প্রবাসীদের রেমিটেন্স বাংলাদেশের জন্য সোনার হরিণ, প্রবাসীরা আমাদের সূর্য সন্তান ।

স্বাধীনতার পর থেকে অবধি দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধকরনে প্রবাসীদের ত্যাগের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ইতিহাসের পাতায় জায়গা করে নিয়েছে ।

কিন্তু পরিতাপের বিষয় তাদের যথাযথ মূল্যায়ন, সম্মান, প্রবাসে নিরাপত্তা এবং অধিকার আদায়ে কূটনৈতিক সহায়তা দিতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে আমাদের মিশন ও সরকার ।

অথচ, জাতীয় সব ক্ষেত্রে কোটা পদ্ধতিতে সুবিধা নিচ্ছে শ্রেণীভুক্ত সুবিধাভোগীরা ।ব্যতিক্রম শুধু প্রবাসীদের ক্ষেত্রে ।

বাংলাদেশী প্রবাসীরা সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় দিনযাপন করছেন মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে ।

বকেয়া বেতন, অহেতুক বেতন কর্তন, অতিরিক্ত শ্রম আদায়, নিম্ন মানের বাসস্থান, এছাড়া একামা নবায়ন ফি আদায় ইত্যাদি সমস্যা গুলি প্রবাসী বাংলাদেশিদের মাথাব্যথার কারণ ।

সবচেয়ে আতংকের কারণ, বকেয়া বেতন-ভ্রাতা দাবী করলেই নেমে আসে দেশে পাঠিয়ে দেওয়ার হুমকি । একই অভিযোগে গত কয়েক মাসে শুধু কুয়েত থেকে এক কাপড়ে দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে বেশ কজন শ্রমিককে ।

যাহা দৈনিক মানবজমিনসহ দেশের সবকটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত হয়েছে ।

 

অন্যদিকে, সউদী আরব, কুয়েত, আমিরাত, বাহরাইন, মালেশিয়া,  ইরাক, লিবিয়া, সিরিয়া, মালদ্বীপসহ ইউরোপের বহুদেশে প্রবাসীরা চরম দুর্বিসহ জীবন যাপন করছে। এ সব দেশে বন্দী আছে হাজারো শ্রমিক। যারা কাজ করছেন তাদের অনেকেই বৈষম্য আর জুলুম-নির্যাতনের শিকার।অভূক্ত শ্রমিকের খবর আজ নতুন নয় । এই যেন এই হতভাগাদের নিয়তি ।

তাদের জন্য বাংলাদেশ সরকার কি করছে?এই প্রশ্ন প্রবাসীদের ?

 

অথচ, দেশের ভিতরে গ্রামে গ্রামে যে দালাল চক্র লোভে ফেলে নিরীহ শ্রমিকদের ভিটেমাটি বিক্রী করে বিদেশ গিয়ে বিপদে ফেলছে তাদের দৌড়াত্ম বন্ধে কি কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছে? যে দেশের মানুষ কাজের সন্ধানে নৌকায় করে বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে মালয়েশিয়া-থাইল্যান্ড যায়; যে দেশের মানুষ নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও ইঞ্জিন চালিত নৌকায় ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপ যাওয়ার চেস্টা করে সে দেশের জনসংখ্যা কি কোনো সমস্যা? এটাতো জনসংখ্যা নয় জনশক্তি।

বিপুল এই জনশক্তিকে কাজে লাগাতে না পারার দায় কার?

দেশের কয়েকটি বেসরকারি টেলিভিশন প্রবাসীদের নিয়ে নিয়মিত অনুষ্ঠান করেন। ওই সব অনুষ্ঠানে প্রবাসে কর্মরতদের উপস্থিত করে তাদের কথাবার্তাসহ সরাসরি ফোন করে বিদেশীদের মতামত প্রচার করা হয়।

ওই সব অনুষ্ঠানে প্রবাসে কর্মরতদের দুঃখ দুর্দশার কাহিনী শুনলে চোখের পানি ধরে রাখা কঠিন।

মানুষগুলো পশুর মতো জীবন যাপন করে দেশে রেমিটেন্স পাঠাচ্ছে। তারা জীবনের ঝুকি নিয়ে বিদেশে গিয়ে ১২ ঘন্টা থেকে ১৮ ঘন্টা রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে কাজ করছেন; ঠিক মতো বেতন পাচ্ছেন না; পদে পদে মানবাধিকার লংঘিত হচ্ছে; অথচ সে দেশে বাংলাদেশের দূতাবাসগুলো থেকে সহায়তা পাচ্ছেন না।

অথচ ভারত, ফিলিপাইন, শ্রীলংকা এমনকি নেপালের প্রবাসী শ্রমিকরা ওই সব দেশে রাষ্ট্রীয় পৃষ্টপোষকতা পাওয়ায় তারা নির্বিঘ্নে কাজ করছেন এবং সুন্দর জীবন যাপন করছেন।

এইসব দেশের রয়েছে শক্তিশালী কূটনৈতিক । রয়েছে আলাদা কমিটি, যারা নিয়মিত তদারকির করে তাদের শ্রমিকদের সমস্যা । মাত্র লক্ষাধিক টাকা খরচ করে মধ্যপ্রাচ্যে আসে এইসব দেশের শ্রমিকরা।

ব্যতিক্রম বাংলাদেশীরা, ৬/৭ লাখ টাকা খরচ করে স্বপ্নের বিদেশে পা রাখেন আমাদের শ্রমিকরা ।

মধ্যপ্রাচ্য এমন অনেক কোম্পানি আছে যাহারা শুধুমাত্র বাংলাদেশী ভিসার দালালদের ভিসা বিক্রি করার জন্য কোম্পানি খুলেছে ।

ফলে ফলাফল হয় মানবতার চরম লংঘন, নাই বেতন, নাই খাবার, নেই কেউ খোঁজ নেওয়ার ।

 

তাহলে প্রবাসী শ্রমিকদের নিয়ে বাংলাদেশের ভ্রুক্ষেপ নেই কেন? জনগণের ট্রাক্সের টাকায় পরিচালিত বিদেশে স্থাপিত বাংলাদেশের দূতাবাসের কর্মররতা কি কাজ করছেন?

ভুলে যাবেন না,  সম্পদের সুষ্ঠু ও সর্বোচ্চ ব্যবহারের ওপর নির্ভর করে কোনো জাতির আর্থসামাজিক উন্নতি। তবে মানবসম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার ছাড়া কোনো দেশের কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অর্জন করা সম্ভব নয়। আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদের প্রাচুর্য নেই, কিন্তু মানবসম্পদে বাংলাদেশ সম্পদশালী

তাই মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসীদের সমস্যা সমাধান সরকারের আন্তরিকতা ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত পারে এই খাতকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা এবং প্রবাসীদের চোখের পানি থামাতে।

যেমন: * দেশের বৃহত্তম স্বার্থে সময়োপযোগী  প্রবাসী শ্রমিক আইন প্রণয়ন করা ।

* মধ্যপ্রাচ্য দেশগুলির সাথে সম্মানের সহিত শ্রমিকদের অধিকার ও ভিসার খরচ নির্ধারণে চুক্তি করা ।

* দেশে ও  বিদেশে ভিসা বিক্রির সাথে জড়িত চক্রকে সনাক্ত করা ।

* প্রতারকদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনা ।

*  সর্বোচ্চ এক লক্ষ টাকার মধ্যে ভিসার মূল্য নির্ধারণ ও কঠোর নজরদারি করা ।

* বাংলাদেশী দূতাবাস  গুলিতে দক্ষ ও সৎ কূটনৈতিক নিয়োগ দেয়া এবং শ্রম সচিবদের ২ বছর পর পর বদলী করা ।

* পররাষ্ট্র বিষয়ক সাবেক কূটনৈতিকদের নিয়ে শক্তিশালী মনিটারিং কমিটি গঠন ।

* দূতাবাসে প্রবাসীদের হয়রানি ও দুর্ব্যবহার বন্ধ করা ।

* দেশের বিমানবন্দরে হয়রানি বন্ধ করে, যথাযথ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা ।

* বিদেশ যেতে আগ্রহী শ্রমিকদের দক্ষ করতে বিশেষ উদ্যোগে প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়িয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা ।

 

Logo-orginal