, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

Avatar 1prewettmary1987

আম ছাড়াই আমের জুস বিক্রি করছে প্রাণ গ্রুপ!

প্রকাশ: ২০১৭-১০-২১ ০৬:২১:২৮ || আপডেট: ২০১৭-১০-২১ ০৬:২২:৪০

Spread the love

1508505572

আরটিএমনিউজ২৪ডটকম: প্রাণ কোম্পানি ‘ফ্রুটিক্স’ নামে যে আমের জুস বাজারে বিক্রি করছে তার মধ্যে ঘনচিনি ও স্যাকারিন সহ ক্ষতিকর দ্রবাদি রয়েছে শতকরা ৯৫ শতাংশের বেশি। এই জুসে শতকরা ৫ শতাংশও আমের উপাদান নেই। ‘ফ্রুটিক্স’-এ আমের উপাদান কী পরিমাণ রয়েছে তা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর এমনই প্রতিবেদন এসেছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে।

পরীক্ষার পর বুয়েটের দেয়া প্রতিবেদনে দেখা যায় ‘ফ্রুটিক্স’-এ আমের উপাদান রয়েছে মাত্র ৪ দশমিক ৮ শতাংশ। প্রতিটি ফুড ড্রিংকসে অন্তত ১০ শতাংশ ফলের রস থাকার নিয়ম থাকলেও সেটি ভঙ্গ করেই তৈরি করা হচ্ছে জুস। প্রায় একই চিত্র আকিজের আফি, হাশেম ফুডের সেজান ও এএসটি লিমিটেডের ম্যাংগো কিং জুসেও। এসব কোম্পানির আমের জুসেও আম নেই।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) রাসায়নিক পরীক্ষায় জুস তৈরির এমন ভয়াবহ এ চিত্র ফুটে উঠেছে।

বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ বাজার থেকে সংগ্রহকৃত উল্লেখিত চারটি ম্যাংগো জুসের নমুনা বুয়েটে পাঠানোর পর গত ১৭ অক্টোবর বুয়েট রাসায়নিক পরীক্ষা হয়। পর

বুয়েট যে রিপোর্ট দিয়েছে তাতে দেখা যায়, প্রতিটি ফুড ড্রিংকসে ১০ শতাংশ ফলের রস থাকার নিয়ম থাকলেও এসব জুসে তা নেই।

এ সম্পর্কে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য মাহবুব কবীর বলেন, বুয়েটে রাসায়নিক পরীক্ষার রিপোর্ট পাওয়ার পর প্রাণ, আকিজ, হাশেম ফুড ও এএসটি লিমিটেডের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বিএসটিআইকে গত ১৮ অক্টোবর চিঠি দেয়া হয়েছে। বুয়েটের পরীক্ষায় প্রাণ কোম্পানির ফ্রুটিক্স জুসে পাল্পের পরিমাণ পাওয়া গেছে শতকরা ৪ দশমিক ৮। আকিজ গ্রুপের আফিতে এর পরিমাণ শতকরা ৬ দশমিক ২। হাশেম ফুডের সেজানে ৫ দশমিক ৪ এবং এএসটি লিমিটেড নামক কোম্পানির ম্যাংগো কিং-এ পাল্পের পরিমাণ শতকরা ৪ দশমিক ৪। বিএসটিআই এর নিয়ম অনুযায়ী প্রতিটি জুসে কমপক্ষে শতকরা ১০ ভাগ পাল্প বা সংশ্লিষ্ট ফলের রস থাকা বাধ্যতামূলক।

প্রসঙ্গত, বাজারে যে সব ফলের জুস পাওয়া যায় তার বেশিরভাগই ভেজাল। কাপড় তৈরির রঙ, ঘনচিনি ও স্যাকারিন দেয়া হয় জুসে। আর আম বা ফলের রসের বদলে দেয়া হয় মিষ্টি কুমড়া। ভেজালমিশ্রিত এই জুস শিশু ও গর্ভবতী মায়েদেরে জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।

আম ছাড়াই আমের জুস কিভাবে বিএসটিআই-এর অনুমোদন নিয়ে বাজারে বিক্রি করা হলো এমন প্রশ্নের জবাবে বিএসটিআই-এর এক কর্মকর্তা জানান, কোমল পানীয় বা জুসে এমনভাবে ভেজাল মেশানো থাকে যে, রাসায়নিক পরীক্ষা ছাড়া বোঝার উপায় থাকে না।

তিনি বলেন, যেকোনো খাদ্য ও পানীয় বাজারে বিক্রি করার আগে বিএসটিআইয়ের অনুমোদন লাগে। জুস উৎপাদনের শুরুতে ভালো মানের নমুনা দিয়ে পরীক্ষা করিয়ে সার্টিফিকেট নেওয়া হয়। অতি মুনাফা করতে গিয়ে পরে ব্যবসায়ীরা নিম্ন মানের জুস তৈরি করেন। ছয় মাস পরপর নমুনা পরীক্ষার নিয়ম আছে। কিন্তু নানা ব্যস্ততা এবং লোকবলের অভাব থাকায় বিএসটিআই তা করতে পারে না। তারপরও বিএসটিআই নিয়মিত অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে।

খাদ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, কোমল পানীয় ও জুসের নামে আমরা যা পান করছি তা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। জুসে ব্যবহার করা হচ্ছে নিষিদ্ধ সোডিয়াম সাইক্লামেট, কাপড়ের রং, সাইট্রিক এসিড ও প্রিজারভেটিভ (সোডিয়াম বেনজোয়িক ও পটাশিয়াম)। অম্লতা বাড়াতে ফসফরিক এসিড এবং ঠান্ডা রাখতে ইথিলিন গ্লাইকল মেশানো হচ্ছে।

জুসের নামে এসব পানীয় দীর্ঘদিন পানের ফলে ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, হৃদরোগ, গ্যাস্ট্রিক, আলসার, দাঁতের ক্ষয়, কিডনির সমস্যাসহ নানা রোগ হতে পারে। শিশু ও কিডনি রোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের পানীয় মানবদেহের জন্য।ভয়াবহ হয়ে দেখা দিচ্ছে। ১০ বছর আগেও দেশে কিডনি রোগীর সংখ্যা ছিল ৮০ লাখ। এখন এ সংখ্যা দুই কোটির বেশি এবং তাদের অর্ধেকই শিশু। এ ছাড়া দেশে বছরে অন্তত ৮৪ হাজার মানুষ নতুন করে ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে। কৃত্রিম সুগন্ধি মেশানো এসব পানীয় গর্ভবতী ও বৃদ্ধদের জন্যও ক্ষতিকর।

Logo-orginal