, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

admin admin

রোহিঙ্গা মুসলমানদের গণহত্যার বিরুদ্ধে মদিনায় সাংবাদিকদের প্রতিবাদ সভা

প্রকাশ: ২০১৭-১০-১১ ১১:৫১:০১ || আপডেট: ২০১৭-১০-১১ ১১:৫১:০১

Spread the love
রোহিঙ্গা মুসলমানদের গণহত্যার বিরুদ্ধে মদিনায় সাংবাদিকদের প্রতিবাদ সভা
রোহিঙ্গা মুসলমানদের গণহত্যার বিরুদ্ধে মদিনায় সাংবাদিকদের প্রতিবাদ সভা

নিজস্ব প্রতিবেদক, আরটিএমনিউজ২৪ডটকম, মদিনা: মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে সরকারি মদদে নির্বিচারে গণহত্যা ও রোহিঙ্গা মুসলিমদের জাতিগত নিধনযজ্ঞের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সভা করছে মদিনা সাংবাদিক পরিষদ।
গত ৯ই অক্টোবর স্হানীয় সময় রাত ১০টা ৩০ মিনিটে মদিনায় যাইকা মেহরান হোটেল মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। আয়োজিত প্রতিবাদ সভায় সভাপতিত্ব করেন মদিনা সাংবাদিক পরিষদের সভাপতি মূসা আব্দুল জলিল।
সংগঠনের সভাপতি আরটিভি মদিনা প্রতিনিধি সাংবাদিক মুছা আব্দুল জলীলের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক, এনটিভি মদিনা প্রতিনিধি সাংবাদিক মোহাম্মাদ আলী রাশেদের সঞ্চালনায় এ প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
প্রধান অতিথি ছিলেন তইবা ইউনিভার্সিটির শিক্ষক, মদিনা আরটিভি দর্শক ফোরামের সভাপতি প্রফেসর ডক্টর মন্জুরুল হক চৌধুরী।
বিশেষ অতিথি ছিলেন মদিনা বাংলাভিশন দর্শক ফোরামের সভাপতি আব্দুস সামাদ আজাদ ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মুহাম্মাদ সোহাগ আহমদ।
অনুষ্ঠানের প্রধান আলোচক ছিলেন মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও বিচার ব্যবস্থা এবং ইসলামী রাষ্ট্র বিজ্ঞানের এমফিল গবেষক, প্রবাসীকাল ডটকম এর সম্পাদক ও মদিনা সাংবাদিক পরিষদের সহসভাপতি, বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ যাকারিয়্যা মাহমূদ।
তিনি রোহিঙ্গা মুসলিমদের ইতিহাস-ঐতিহ্য ও তাদের উপর নেমে আসা স্মরণ কালের বীভৎস এবং নির্মম অত্যাচারের বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেন।
প্রধান আলোচক তার আলোচনায় বলেন:
মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর বৌদ্ধ সন্ত্রাসী ও সরকারি সামরিক জান্তা বাহিনী যৌথভাবে সরাসরি হত্যাকাণ্ড চালাচ্ছে। গত একমাসে প্রায় তিন হাজারেরও অধিক রোহিঙ্গা মুসলিমকে অত্যন্ত নির্মম ও পাশবিক কায়দায় হত্যা করা হয়েছে। হাজার হাজার নারীর ইজ্জত লুণ্ঠন করা করা হয়েছে।
মায়ের সামনে মেয়েকে, মেয়ের সামনে মাকে, স্বামীর সামনে স্ত্রীকে ধর্ষণ করে নির্বিচারে হত্যা করেছে মগদস্যু বাহিনী। বার্মার বৌদ্ধরা সন্ত্রাসী, খুনি, এরা মানবতার শত্রু । এই অসভ্যরা মুসলিমদের ঘরবাড়ি, মসজিদ, মাদরাসাগুলোকে জ্বালিয়ে দিয়েছে । দা, ছোরা দিয়ে কুপিয়ে, জীবন্ত আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করেছে মানুষদের। এখনো করছে। থেমে নেই ওদের নির্মমতার শয়তানী উল্লাস।
এই সন্ত্রাসী জালিমদের অত্যাচারে সেখানকার মুসলিমরা দেশ তাগে বাধ্য হচ্ছে, এ পর্যন্ত প্রায় পাচ লক্ষ রোহিঙ্গা মুসলিম বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।
তিনি আরো বলেন: মিয়ানমারে পাশবিক এই হত্যাকাণ্ড অতীতের যে কোনও সময়ের চেয়ে ভয়ঙ্কর, মর্মান্তিক ও মর্মন্তুদ। বার্মার লাল পোশাকের মগ সন্ত্রাসীদের পৈশাচিক আর নির্মমতার কোনও নজির সভ্য জগতের কোথাও নেই। প্রতিদিন নাফ নদীতে ভাসছে নির্যাতিত মুসলিম শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণী, বৃদ্ধ নারী- পুরুষের লাশ আর লাশ।
তিনি আরো বলেন: আরাকানের মুসলিমরা আমাদের ভাই। এরা নিপীড়িত অসহায় মজলুম। এরা মুহাজির। এদের আশ্রয় দেওয়া আমাদের ঈমানী দায়িত্ব।
তিনি বলেন: রোহিঙ্গারা যদি মুসলিম না হয়ে অন্য কোন ধর্মের হতো আর এটি যদি হতো কোন মুসলিম দেশে তাহলে কি তথাকথিত মানবাধিকারের ধ্বজাধারীরা এভাবে বোবা শয়তানের ন্যায় নীরবতা পালন করতো? কোথায় আজ জাতিসংঘ? কোথায় ওআইসি? কোথায় মুসলিম বিশ্বের নেতৃবৃন্দ?
তিনি বলেন: রোহিঙ্গা মুসলিম গণহত্যার উস্কানিদাতা অংসান সুচির বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাস বিরোধী আইনে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব, মৌলিক স্বাধীনতা ও মানবাধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে।
প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে বলেন:
মিয়ানমারে রোহিঙ্গা গণহত্যা হালাকু খানের বাগদাদ ধ্বংসের নির্মমতাকেও হার মানিয়েছে। তারা আরাকানের মুসলমানদের সেদেশ থেকে বিতাড়িত করতেই গণহত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন, বাড়ি-ঘরে অগ্নিসংযোগ করে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছে। শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অং সান সুচীও রোহিঙ্গা নিধনে প্রত্যক্ষ ভূমিকা পালন করছেন, শুধু নিন্দা নয় বরং মিয়ানমার সরকারকে গণহত্যা ও নিপীড়ন বন্ধে বাধ্য করতে বিশ্ববাসীকে ঐক্যবদ্ধ ও কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে।
সভায় অন্যান্য বক্তারা বলেন:
মিয়ানমার সরকার মুসলমান শুন্য দেশ গড়তে চায়। তাই তারা সেনা বাহিনী ও উগ্র বৌদ্ধদের দিয়ে নির্বিচারে রোহিঙ্গা নারী,পুরুষ ও শিশুদের হত্যা করছে। বিশ্বজুড়ে বৌদ্ধ সম্প্রদায় ‘জীব হত্যা মহাপাপ’ বলে বাণী প্রচার করলেও মিয়ানমারের বৌদ্ধরা মুসলমান হত্যাকে হত্যাকে মনে করছে পূণ্য। তবুও এই হিংস্র বৌদ্ধদের জঙ্গি বলা হয় না। নির্যাতিত মুসলমানরাই আজ বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসী তকমার শিকার। আমরা জাতিসংঘ, ওআইসিসহ আর্ন্তজাতিক সম্প্রদায়কে দ্রুততম সময়ে রোহিঙ্গা গণহত্যা বন্ধে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে জরুরী পদক্ষেপ গ্রহণের আহবান জানাচ্ছি।
সভা শেষে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের উপর সব ধরনের অন্যায়-অত্যাচার-জুলুম থেকে মুক্তি ও বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর সার্বিক কল্যাণ কামনা করে দেশ জাতির সঙ্কট নিরসনে মহান আল্লাহ্‌ পাকের দরবারে বিশেষ দুআ করা হয়।

রা/১১১০১৭

Logo-orginal