, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

admin admin

কি আছে ভারতের আসাম রাজ্যের মুসলমানদের ভাগ্যে ?

প্রকাশ: ২০১৮-০১-০২ ১২:০১:৩০ || আপডেট: ২০১৮-০১-০২ ১২:০৫:০৯

Spread the love

কি আছে ভারতের আসাম রাজ্যের মুসলমানদের ভাগ্যে ?
আবুল কাশেম,আরটিএমনিউজ২৪ডটকম:
কি আছে ভারতের আসাম রাজ্যের মুসলমানদের ভাগ্যে ? কেন এমন নির্মমতার বলি বানানো হচ্ছে তাদের ?

রোহিঙ্গাদের মত পরিণতি যেন আসামের মুসলমানদের না হয় । এমন আশাবাদ আসাম মুসলমানদের।

আসামের বাংলাভাষী মুসলমানেরা সেই ১৯৫০ সাল থেকেই বারে বারে আক্রমনের মুখে পড়েছেন। সেই ভয়াবহ চরুয়া খেদা দাঙ্গায় একটি মুসলমান গ্রামেই আটশো মানুষকে কুপিয়ে হত্যা করার ঘটনা নিজের চোখে দেখেছিলেন গবেষক ভাস্কর নন্দী।

তিনি লিখেছিলেন, “দাঙ্গার আতঙ্কে হাজার হাজার মানুষ পূর্ব পাকিস্তানে পালিয়ে গিয়েছিলেন। নেহরু-লিয়াকত চুক্তি অনুযায়ী তাঁদের ভারত ফেরত নেয় ঠিকই কিন্তু সীমান্ত পেরনোর সময়ে সঠিক নথিপত্র দেওয়া হয় নি। আর ওই শরণার্থীরা ফেরত আসার আগেই ১৯৫১ সালে আসামে জাতীয় নাগরিক পঞ্জী বা National Register of Citizenship (NRC) তৈরী হয়ে যায়। তাই বহু বাংলাভাষী মুসলমানেরই আর সেই NRC তে নাম ওঠে নি।“ আর সেই সুবাদে নয়ের দশক থেকে বহু বাংলাভাষী মুসলমানকেই সন্দেহজনক ভোটার বা D Voter, অর্থাৎ সন্দেহজনক বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারী বলে চিহ্নিত করা হয়ে গেছে।

আসাম চুক্তি অনুযায়ী ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের পরে যাঁরা আসামে এসেছেন, তাঁদেরই বিদেশী বলে চিহ্নিত হওয়ার কথা। কিন্তু বরপেটার নারায়নগুড়ি গ্রামের এক প্রধান শিক্ষক আমজাদ আলি বলছিলেন, “বাবার ১৯৩৭ সালে আসামে ম্যাট্রিক পাশ করার সার্টিফিকেট থাকা স্বত্ত্বেও তাঁকে সন্দেহজনক ভোটার অর্থাৎ সন্দেহজনক বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারী বলে চিহ্নিত করা হয়েছিল।“ সন্দেহজনক ভোটার বলে চিহ্নিত হয়েছেন লক্ষ লক্ষ মানুষ- বেশীরভাগই বাংলাভাষী মুসলমান।

২০১২ সালে মুসলমানদের হামলার ছবি

এই কথিত বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারী বা বিদেশীদের ভারত ছাড়া করার কথা সবসময়েই বলে এসেছে উগ্র অসমীয়া জাতীয়তাবাদী শক্তিগুলো। সেই দাবীকেই সামনে নিয়ে এসেছে ভারতীয় জনতা পার্টি। লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে নরেন্দ্র মোদী বারে বারেই আসামে এসে বিদেশী চিহ্নিতকরণ আর বিতারণের হুমকি দিয়ে গেছেন। কিন্তু কে যে আসলে ভারতীয় বাংলাভাষী মুসলমান আর কে কথিত অনুপ্রবেশকারী তা জানার একমাত্র উপায় NRC যেটা হালনাগাদ করার কাজটাই গত ৬৫ বছরে করা হয় নি।

অথচ, মুসলমানদের পক্ষে যারাই আন্দোলন করেছে, তাদের অনেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে দুনিয়া থেকে, এমন অভিযোগ করে করিমগঞ্জ প্রবীণ এক সাংবাদিক জানিয়েছেন নিহত মুসলিম নেতা রফিকুলের কথা।

নিহত মুসলিম ছাত্রনেতা রফিকুল ইসলাম

তিনি বলেন আসামের মুসলমানদের পক্ষে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রনেতা রফিকুল ইসলামকে হত্যা করেছিল হিন্দু উগ্রবাদীরা ।

সেই মুসলিম ছাত্র নেতা রফিকুল ইসলাম বলেছিলেন,
এনআরসি হালনাগাদ হয়ে গেলে বিদেশী ইস্যুও থাকবে না, তখন বিভিন্ন দলের রাজনীতি চলবে কী করে!

সেই কর্ম সম্পন্নে উঠে পড়ে লেগেছে বিজেপি ও অন্যান্য হিন্দু মৌলবাদীরা ।

৩০ থেকে ৪০ লাখ ‘অবৈধ বাংলাদেশীকে’ আসাম থেকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হতে পারে, এমন আশংকা প্রকাশ করেছে বাংলাভাষী মুসলিমরা ।

ঠিক সেই কথা জোরেশোরে প্রচার করে চলেছেন আসাম সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তারা।

এদিকে ভারতের বিভিন্ন পত্রিকায় আসামের মুসলমানদের বের করে দেওয়ার খবর ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত হচ্ছে।

গত কদিন আগে প্রতিবেদন ছাপিয়েছে বিবিসি বাংলা ।

বর্তমানে আসামে বসবাসকারী বাংলাভাষী মুসলিমদের মধ্যে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে।

আসামের সাংবাদিক অমল গুপ্ত জানিয়েছে, রোববার (৩১ ডিসেম্বর ১৭) দিবাগত মধ্যরাতে আসাম রাজ্য সরকার নাগরিকত্ব বিষয়ক ন্যাশনাল রেজিস্ট্রার অব সিটিজেনস’-এর প্রথম খসড়া তালিকা প্রকাশ করে।

এর আগে অমল গুপ্ত বলেন, বিভিন্ন পরিসংখ্যান থেকে ধারণা করা হচ্ছে, নাগরিকদের জাতীয় রেজিস্ট্রার এনআরসি এই খসড়ায় শুরুতেই তালিকা থেকে ৩০-৪০ লাখ মুসলমান বাদ পড়বেন। এতে আসামে আড়াই কোটির মতো জনগোষ্ঠীর মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে মুসলিম অধ্যুষিত বারপেটা, ধুবরি, করিমগঞ্জ, কাচারসহ বিভিন্ন এলাকায়।

রোববার রাতে এমন ‘অবৈধ নাগরিকদের’ প্রাথমিক খসড়া তালিকা প্রকাশ করেছে আসাম সরকার। এটা অবৈধ অভিবাসী বিতাড়নের প্রাথমিক প্রক্রিয়া।
যদি এমনটা হয় তাহলে স্বল্প সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ আরেকটি বড় আন্তর্জাতিক ধকলের মুখে পড়তে পারে।

নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, আসামের রাজ্য সরকার রোববার মধ্যরাতে নাগরিকত্ব বিষয়ক প্রথম খসড়া ‘ন্যাশনাল রেজিস্টার অব সিটিজেনস’ (এনআরসি) তালিকা প্রকাশ করেছে। এটি ভেরিফাই করা ভারতীয় নাগরিকদের প্রাথমিক তালিকা। এ তালিকা প্রকাশ করেন ভারতের রেজিস্ট্রার জেনারেল শৈলেশ।

মধ্যরাতের ওই সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, নাগরিকত্বের জন্য ৩ কোটি ২৯ লাখ মানুষ আবেদন করেছিলেন। তার মধ্যে এক কোটি ৯০ লাখের ডকুমেন্ট যাচাই করে তাদেরকে ভারতের বৈধ নাগরিক হিসেবে সনাক্ত করা হয়েছে। বাকিদের নাম যাচাই বাছাই করা হচ্ছে। তিনি বলেন, এই ভেরিফিকেশন সম্পন্ন হওয়ামাত্র আমরা আরেকটি খসড়া প্রকাশ করবো।

অন্যদিকে আর্শ্চয্যজনক হলে সত্য ১৯৩৭ থেকে আসামে বসবাসরত অনেক বাংলাভাষী মুসলমাকে বাংলাদেশী তকমা লাগিয়ে দেয়া হচ্ছে।
দ্রুত সম্পন্ন করা হচ্ছে নাগরিকত্ব প্রক্রিয়া ।
আসামের রাজ্য সরকার এন আর সিতে বেশ জনবল নিয়োগ দেওয়া শুরু করেছে ।

১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষের স্বাধীনতার সময় বাংলাদেশের সিলেট ও আসামের করিমগঞ্জের ভাগাভাগি ও আন্দোলনের ইতিহাস সাক্ষী হয়ে আছে আসামের মুসলমানদের পক্ষে ।

অথচ এইসব দলিল বা চুক্তিকে আমলে নিচ্ছে না ধর্মনিরপক্ষ দাবীদার ভারত সরকার ।

সরকারের এমন কর্মকান্ডে শংকা আর উৎকন্ঠার পাশাপাশি ক্ষোভে পুষে উঠছে আসামের মুসলমানরা ।

আন্তর্জাতিক সংস্থা সমূহ ও বাংলাদেশের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন আসামের মুসলিম সংস্থাগুলি।

Logo-orginal