, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

admin admin

২০১৭ সাল বাংলাদেশের ‘ব্যাংক কেলেঙ্কারির বছর

প্রকাশ: ২০১৮-০১-১৩ ১৯:৪৭:৫২ || আপডেট: ২০১৮-০১-১৩ ১৯:৪৭:৫২

Spread the love

২০১৭ সাল বাংলাদেশের ‘ব্যাংক কেলেঙ্কারির বছর
আরটিএমনিউজ২৪ডটকম, ঢাকা: সদ্য সমাপ্ত ২০১৭ সাল বাংলাদেশের অর্থনীতির ক্ষেত্রে ‘ব্যাংক কেলেঙ্কারির বছর’ হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। এই পরিস্থিতি চলতি ২০১৮ সালেও তেমন কোনো পরিবর্তন হবে না বলে মনে করছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ।

প্রতিষ্ঠানটির বিশেষ ফেলো ড.দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, দেশের ব্যাংকিং খাতের বর্তমান অবস্থা আগের তুলনায় এখন আরো বেশি নাজুক। সরকার যদি এখুনি কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ না করে তাহলে তার প্রভাব চলতি বছরেও থাকবে। এর সাথে নতুন ব্যাংকের অনুমোদন আরো ঝুঁকি সৃষ্টি করবে।

তিনি আরো বলেন, দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বেশ খানিকটা চাপের মধ্যে পড়েছে। ফলে সামষ্টিক অথনৈতিক ব্যবস্থা দুর্বল হচ্ছে।

বাংলাদেশ অর্থনীতি ২০১৭-২০১৮, প্রথম অন্তর্বর্তীকালীন পর্যালোচনা-শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন।

আজ শনিবার সিরডাপ মিলনায়নের বাংলাদেশ উন্নয়নে স্বাধীন পর্যালোচনার আওতায় এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে সিপিডি।

প্রতিবছর দুই থেকে তিনবার এই পর্যালোচনা করা হয় বলে এ সম্পর্কিত আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিং বলেন প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন।

সিপিডি’র রিচার্স ফেলো তৌফিক ইসলাম খান অন্তর্বর্তীকালীন পর্যালোচনা প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, রাজনৈতিক বিবেচনায় দেয়া ব্যাংকগুলো বেশ কয়েকটি থেকে বিদেশে অর্থপাচার করা হয়েছে বলে খবর রেরিয়েছে। এ বিষয়ে সরকার কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। কয়েকটি ব্যাংকে ঋণের ওপর ব্যক্তির প্রাধান্য বিস্তারের ঘটনা ঘটেছে। রাজনৈতিক বিবেচনায় অনুমোদন পাওয়া ব্যক্তি খাতের নতুন ব্যাংক কার্যকর হতে পারেনি। ব্যাংকখাতের সংস্কার বিষয়ে আমাদের পক্ষ থেকে যা বলা হয়েছিল তা বাস্তবায়িত হয়নি। উপরন্তু পুঁজি সঞ্চালন করে ব্যাংকগুলোকে বাঁচানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। একই সময় ঋণ খেলাপির পরিমানও বেড়েছে। আমাদের কাছে মনে হয়েছে এ সব অবস্থা থেকে উত্তোরণের জন্য অর্থমন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বের গুণগত পরিবর্তন আনা জরুরি।

তিনি বলেন, দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি কিছুটা নাজুক অবস্থায় রয়েছে। চলতি হিসেবে ভারসাম্য নেগেটিভ হয়ে গেছে। এই পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যাবে। তাই এখন সময় এসেছে একটি রক্ষণশীল অর্থনৈতিক পরিস্থিতির দিকে এগিয়ে যাওয়া এবং টাকার স্থিতিশীলতা বজায় রাখা।

অর্থনৈতিক বিষয়ে পর্যালোচনা প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছরে ব্যক্তিখাতের বিনিয়োগের তেমন কোনো উন্নতি হয়নি। যা ২৩ শতাংশের ঘরেই রয়ে গেছে। দেশে দারিদ্র কমার হারও কমে গেছে। দেশে যে হারে প্রবৃদ্ধি হচ্ছে সেই হারে দারিদ্রতা কমছে না। কিন্তু বেড়ে গেছে আয় বৈষম্য, দেশে সবচেয়ে গরীব মানুষ আরো গরীব হয়েছে। আর সবচেয়ে ধনী মানুষ আরো ধনী হয়েছে। সবচেয়ে গরীব মানুষের আয় ৬০ ভাগ কমে গেছে। অন্যদিকে, সবচেয়ে ধনী মানুষদের আয় ৬০ ভাগ বেড়ে গেছে। সুদের হার হ্রাস পেলেও তা ছোট রফতানিকারকদের কোনো সুবিধা দেয়নি। গত বছর খাদ্যশস্য আমদানিতে ব্যয় হয়েছে ৬০ কোটি মার্কিন ডলার। অন্যদিকে, কটন আমদানির প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭৫ ভাগ। এটি একটি চিন্তার জায়গায়। কারণ যে হারে কটন আমদানি হয়েছে সে হারে তা তৈরি পোশাকখাতে কোনো ভূমিকা রাখেনি। এক্ষেত্রে দেখতে হবে কটন আমদানির নামে মুদ্রা পাচার হচ্ছে কি না।

দারিদ্র কমার হার কমে গেছে
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো’র (বিবিএস) সাম্প্রতিক খানা জরিপ (হাউসহোল্ড এক্সপেনডেচার) উদ্ধৃতি দিয়ে সিপিডি’র পর্যালোচনায় উল্লেখ করা হয়, ২০১০-২০১৬ সময়কালে প্রতিবছর দারিদ্র কমার হার ছিল এক দশমিক দুই শতাংশ। কিন্তু ২০০০-২০০৫ ও ২০০৫-২০১০ সময়কালে এই হার ছিল যথাক্রমে এক দশমিক আট ও এক দশমিক সাত শতাংশ। এই সময়কালে জিডিপি প্রবৃদ্ধি সাথে কাঙ্খিত মাত্রায় কর্মসংস্থান হয়নি। ২০১০-২০১৬ সময়কালে জিডিপি প্রবৃদ্ধি গড়ে সাড়ে ছয় শতাংশ হলে একই সময় কর্মসংস্থানের হার ছিল এক দশমিক নয় শতাংশ। এ সময় সিপিডি’র তৌফিক প্রশ্ন রাখেন- দেশ কি তা হলে একটি ‘কর্মসংস্থানহীন’(জবলেস) প্রবৃদ্ধির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

চলতি অর্থবছরের রাজস্ব আয় বিষয়ে পর্যালোচনা প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আয়ের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়, তার পরিপ্রেক্ষিতে সিপিডি’র পক্ষ থেকে এর আগে বলা হয়েছিল- বছর শেষে রাজস্ব আদায়ের ঘাটতি হতে পারে ৪৩ হাজার কোটি টাকা থেকে ৫৫ হাজার কোটি টাকা। সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী জাতীয় সংসদে বলেছেন, জুলাই-নভেম্বর প্রাপ্তি রাজস্ব প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৮ শতাংশ। এ পরিস্থিতিতে বাজেটে দেয়া রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে বছরের বাকি সময় রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধি করতে হবে ৪৮ শতাংশ।

রোহিঙ্গা
বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতির ওপর রোহিঙ্গা ইস্যু মারাত্মক চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করছে উল্লেখ করে সিপিডি’র প্রতিবেদনে বলা হয়- রোহিঙ্গাদের জন্য গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত প্রয়োজন হবে ৮৮ কোটি ২০ লাখ মার্কিন ডলার।

রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের বিষয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সাম্প্রতিক চুক্তির কথা উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, যদি প্রতিদিন ৩০০ রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফিরিয়ে নেয়া হয় (এসমময় নতুন করে কোনো রোহিঙ্গা আসবে না বা তাদের পপুলেশন গ্রোথ থাকবে জিরো) তবে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া আটলাখেরও বেশি রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে প্রয়োজন পরবে সাত বছর। আর এজন্য প্রয়োজন হবে ৪৪৩ কোটি ৩০ লাখ মার্কিন ডলার। অন্য দিকে পুপলেশন গ্রোথ ও নতুন করে যদি রোহিঙ্গা এদেশে আসে আর প্রতিদিন ৩০০ করে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন করা হয় হয় তবে সব রোহিঙ্গা ফেরত পাঠাতে সময় লাগবে আট বছর এবং ব্যয় হবে ৫৮৯ কোটি ৪০ লাখ ডলার। আর প্রতিদিন ২০০ করে রোহিঙ্গা ফেরত পাঠানো হলে সময় লাগবে ১২ বছর এবং ব্যয় হবে এক হাজার ৪৫ কোটি ৬০ লাখ ডলার।

পর্যালোচনা প্রতিবেদনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সিপিডি বিশেষ ফেলো প্রফেসর মোস্তাফিজুর রহমান, গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। উৎসঃ নয়া দিগন্ত ।

Logo-orginal