, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

Avatar 1prewettmary1987

লাগাতার ধর্মঘটে ব্যাহত হচ্ছে দেশের শিক্ষা কার্যক্রম

প্রকাশ: ২০১৮-০৩-১৮ ০৮:৫১:০৬ || আপডেট: ২০১৮-০৩-১৮ ০৮:৫২:৪১

Spread the love
লাগাতার ধর্মঘটে ব্যাহত হচ্ছে দেশের শিক্ষা কার্যক্রম

আরটিএমনিউজ২৪ডটকম: বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্মঘট চলছে। আড়াই মাস ধরে চলমান আন্দোলনের কোনো সুরাহা এখনো হয়নি। ফলে শিক্ষক-কর্মচারীদের লাগাতার ধর্মঘটে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম। প্রথমদিকে স্মারকলিপি, বিক্ষোভ মিছিলের মধ্যে আন্দোলন সীমাবদ্ধ থাকলেও গত ১১ মার্চ থেকে লাগাতার ধর্মঘটে যান শিক্ষকরা। ১৪ মার্চ ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয় মহাসমাবেশ। এরপর সরকারের পক্ষ থেকে ব্যক্তিগতভাবে সমাঝোতার ইঙ্গিত আসলেও অফিসিয়ালি কোনো প্রস্তাব এখনো আসেনি বলে জানান আন্দোলনরত শিক্ষক নেতারা। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত লাগাতার ধর্মঘট চলবে বলে হুমকি দেন তাঁরা।

শিক্ষাবিদরা বলছেন, দীর্ঘদিনের বৈষম্য আর অব্যবস্থাপনার ফলেই এমন অচলাবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে। এসব সমস্যা সমাধানে সরকার কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে যাবে।

শিক্ষা ব্যবস্থাকে জাতীয়করণসহ ১১ দফা দাবি নিয়ে গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর থেকে আন্দোলন শুরু করেন বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীরা। জাতীয় পর্যায়ের ৯টি সংগঠনের সমন্বয়ে ‘শিক্ষক-কর্মচারী সংগ্রাম কমিটির’ ব্যানারে এই আন্দোলনের শুরু। জানুয়ারি থেকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে অর্থমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রী বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান, মিছিল-সমাবেশ চললেও সরকারের পক্ষ থেকে দাবি আদায়ে কোনো সংকেত না পেয়ে ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে লাগাতার ধর্মঘটে যান শিক্ষকরা। চার দিনের মাথায় ২৮ ফেব্রুয়ারি সংবাদ সম্মেলন করে এসএসসি পরীক্ষার জন্য ধর্মঘট স্থগিত করা হয়। জেলা পর্যায়ে বিক্ষোভ মিছিলসহ আবারো ১১ মার্চ থেকে ধর্মঘটের ডাক দেন শিক্ষক-কর্মচারীরা। ধর্মঘটের মধ্যেই ১৪ মার্চ ঢাকায় লক্ষাধিক শিক্ষক নিয়ে মহাসমাবেশ হয়।

শিক্ষক নেতৃবৃন্দের অভিযোগ, নানা ধরনের হয়রানি সত্ত্বেও মহাসমাবেশ সফল হয়েছে। ঢাকায় লক্ষাধিক শিক্ষকের উপস্থিতি এই আন্দোলনের যৌক্তিকতা প্রমাণ করেছে। শিক্ষক নেতাদের বক্তব্য, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ধর্মঘট চলবে।

আন্দোলনের কারণ অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৭ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে জাতীয় শিক্ষক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। শিক্ষকরা সম্মেলনে তাদের দাবির কথা উত্থাপন করলে শিক্ষামন্ত্রী ঘোষণা দেন, শিক্ষক-কর্মচারী নেতৃবৃন্দের সাথে অফিসিয়ালি বসে দাবির ব্যাপারে কথা বলে সমাধান করবেন। কিন্তু পরবর্তীতে অনেকবার চেষ্টার পরও শিক্ষামন্ত্রীর সাড়া না পেয়ে আন্দোলনে নামে সংগঠনটি।

দীর্ঘদিন ধরে নানান বৈষম্যের কারণে এই আন্দোলনের জন্ম হয়। এর মধ্যে অন্যতম হলো পদোন্নতি বৈষম্য, বেতন স্কেল বৈষম্য, ভাতা বৈষম্য এবং পেনশন বৈষম্য। আন্দোলন শুরু হওয়ার পর সরকারের পক্ষ থেকে সাড়া না মেলায় আন্দোলন আরো জোরদার হয়েছে।

বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতি চট্টগ্রাম শাখার সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আবু তাহের চৌধুরী বলেন, ‘আমরা যৌক্তিক দাবি আদায়ের জন্য আন্দোলন করছি, তাও আবার সহনশীল প্রক্রিয়ায়। সেখানে সরকারের এমন ভূমিকা সত্যিই আমাদের অবাক করেছে। ২০ তারিখ পর্যন্ত অপেক্ষা করছি কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত মোতাবেক। এরপর আরো কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে সরকার আমাদের বাধ্য করবে।’

শিক্ষক সংগ্রাম কমিটির প্রধান সমন্বয়ক অধ্যক্ষ আসাদুল হক পূর্বদেশকে বলেন, ‘১৪ মার্চ ঢাকায় মহাসমাবেশের মাধ্যমে আমরা সরকারকে দেখাতে সক্ষম হয়েছি যে, এই আন্দোলন কোনো বিচ্ছিন্ন বা স্বাধীনতা বিরোধী শিক্ষক গোষ্ঠির আন্দোলন নয়। রাতে বাসের চাবি কেড়ে নেওয়া, শহীদ মিনারের সামনে সমাবেশ করতে না দেওয়ার পরও লক্ষাধিক শিক্ষকের উপস্থিতি জানান দিয়েছে আমাদের চাওয়া কতটুকু যৌক্তিক।’

তিনি ১৩ মার্চের রাতের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে বলেন, ‘আমরা হাজার খানেক স্বেচ্ছাসেবক শিক্ষক নিয়ে পরের দিনের সমাবেশের দায়িত্ব বন্টন করছিলাম। তখন পুলিশ এসে হঠাৎ বলে, আমাদের অনুমতি নেই! শহীদ মিনারের সামনে বসা যাবে না। অথচ এর আগে আমরা অনেক সমাবেশ করেছি। কোনদিন লিখিত অনুমতি নিতে হয়নি। এবারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য থেকে মৌখিক অনুমতি নিয়ে সমাবেশ করার কথা ছিলো । কিন্তু তা পুলিশ করতে দেয়নি। আমাকে রাতে সেখান থেকে শাহাবাগ থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। বলা হয়, তাদের কাছে গোয়েন্দা রিপোর্ট রয়েছে যে, পরের দিনের সমাবেশে একটি রাজনৈতিক চাল হবে। সেখান থেকে শিক্ষকরা আর ঢাকা ছেড়ে যাবে না। ফলে তারা এমন সিদ্ধান্ত নেয় বলে জানায় পুলিশ। রাত ১২টার দিকে আমাকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ফোন করে আশা দিলেন, আমাদের সাথে আলোচনার ব্যবস্থা করা হবে। এরপরও আমাকে প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ করার কথা বলেন তিনি। শিক্ষকরা রাতেই আন্দোলন করার হুমকি দিলে আমাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।’

তিনি বলেন, ‘পরের দিন সমাবেশ হয়। এতো বাধা-বিপত্তির পরেও শিক্ষকদের এমন উপস্থিতি আমাকে অবাক করেছে। আমার আন্দোলনের ইতিহাসে এমন শিক্ষক সমাগম দেখিনি। বেলা দেড়টার দিকে আন্দোলন কর্মসূচি সমাপ্ত করা হয়। কিন্তু ১০টার দিকে কিছু সময় ছাড়া আর আমাদের মাইক ব্যবহার করতে দেয়া হয়নি। শুনেছি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দেশের বাইরে রয়েছেন এবং শিক্ষা মন্ত্রী হাসপাতালে। আশা করছি, ২০ তারিখের আগে সরকার আলোচনায় বসবে এবং আমাদের দাবি মেনে নিবে। অন্যথায় এই আন্দোলন থামবে না। দরকার হলে শিক্ষাব্যবস্থাকে অচল করে দেওয়া হবে।’

পূর্বদেশ

Logo-orginal